বৈরুতের গুদামে ভর্তি হেজবোল্লাহর অস্ত্র, দাবি ইসরায়েলের
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০
বৈরুতের গুদামে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র জমা করেছে হেজবোল্লাহ। যে কোনো সময় সেখানে বড় ধরনের বিস্ফোরণ হতে পারে বলে অভিযোগ ইসরায়েলের।
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে রেকর্ড করা বক্তৃতায় অভিযোগ করলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। তাঁর দাবি, বৈরুতে জনবহুল জায়গায় একটি গ্যাস স্টেশনের কাছে গুদামে গোপনে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্রশস্ত্র জমা করে রেখেছে হেজবোল্লাহ। কিছুদিন আগে বৈরুতের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়েছিল। আবার সেখানে ভয়াবহ বিস্ফোরণের সম্ভাবনা প্রবল বলে তাঁর মত।
বক্তৃতার সময় বৈরুতের ম্যাপের উপর লেসার পয়েন্টার দিয়ে নেতানিয়াহু দেখান কোথায় অস্ত্রশস্ত্র জমা করা আছে। তাঁর দাবি, গুদামটি গ্যাস স্টেশন থেকে কয়েক মিটার দূরে। তার ৫০ মিটার দূরে গ্যাস কোম্পানির অফিস। এই এলাকার লোকের কাছে আবেদন জানিয়ে তিনি বলেছেন, ভয়াবহ বিস্ফোরণ হতে পারে এটা যেন তাঁরা মাথায় রাখেন।
ইসরায়েলের সেনার পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, তারা এর আগে বিষয়টি জাতিসংঘকে জানিয়েছিল।
হেজবোল্লাহর পরিচয়
লেবাননের ইরান সমর্থিত আধাসামরিক গোষ্ঠী হেজবোল্লাহ৷ তাদের একটি রাজনৈতিক দল আছে, আছে একটি সামরিক শাখাও৷ সম্প্রতি তাদের শক্তি বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Zaatari
ইতিহাস
১৯৮২ সালে ইসরায়েলের দক্ষিণ লেবানন দখলের প্রেক্ষিতে মুসলিম নেতারা মিলে হেজবোল্লাহ গড়ে তোলেন৷ হেজবোল্লাহ শব্দের অর্থ ‘আল্লাহর দল’৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সাধারণ নাগরিকদের সমর্থন
দক্ষিণ লেবানন থেকে ইসরায়েলকে চলে যেতে বাধ্য করেছিল হেজবোল্লাহ৷ এরপর ২০০৬ সালে ইসরায়েল ও হেজবোল্লাহ আরেক দফা যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল৷ ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ থেকে লেবাননকে রক্ষার কারণে শিয়াপন্থি হেজবোল্লাহর প্রতি সুন্নিসহ অন্য গোত্রের মানুষ ও লেবাননের সমাজে তাদের প্রতি এক ধরনের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Zaatari
ইরান ও সিরিয়ার সমর্থন
শুরু থেকেই দেশ দুটি হেজবোল্লাহকে সামরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমর্থন দিয়ে এসেছে৷ বর্তমানে হেজবোল্লাহর সামরিক শাখা লেবাননের সামরিক বাহিনীর চেয়ে শক্তিশালী এবং সে অঞ্চলে তারা অন্যতম আধাসামরিক গোষ্ঠী হয়ে উঠেছে৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
রাজনৈতিক শাখা
১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চলা লেবাননের গৃহযুদ্ধের পর হেজবোল্লাহ রাজনীতির দিকে মনোযোগ দেয়া শুরু করে৷ হাসান নাসরাল্লাহ (ছবি) ১৯৯২ সালে হেজবোল্লাহর রাজনৈতিক অংশের নেতৃত্বে আসেন৷ বর্তমানে দেশটির শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের একটি বড় অংশ এবং খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য ধর্মীয় গোত্রের সঙ্গে তাদের সখ্য গড়ে উঠেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সশস্ত্র শাখা
গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর অন্যান্য গোষ্ঠীর মতো হেজবোল্লাহ অস্ত্র ত্যাগ করেনি৷ প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরির দলসহ অন্যান্য দলগুলো হেজবোল্লাহকে অস্ত্র ত্যাগের আহ্বান জানালেও তারা তা মানেনি৷ হেজবোল্লাহর যুক্তি, ইসরায়েল ও বাইরের অন্যান্য শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে অস্ত্র প্রয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/AA
সন্ত্রাসী গোষ্ঠী?
যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, ক্যানাডা ও আরব লিগের দেশগুলোর দৃষ্টিতে হেজবোল্লাহ একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী৷ কিন্তু যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন হেজবোল্লাহর বৈধ রাজনৈতিক শাখা ও তাদের সামরিক শাখাকে ভিন্ন চোখে দেখে৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/I. Press
সিরিয়ার যুদ্ধে হেজবোল্লাহ
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অন্যতম সহযোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে হেজবোল্লাহ৷ আসাদের টিকে থাকার পেছনে তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Syrian Central Military Media
শিয়া-সুন্নি উত্তেজনা বৃদ্ধি
অনেক দিন ধরেই লেবাননকে ঘিরে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই চলে আসছে৷ হেজবোল্লাহর রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তিবৃদ্ধি এবং সিরিয়া যুদ্ধে তাদের অংশগ্রহণ লেবাননসহ অত্র অঞ্চলে শিয়া-সুন্নি উত্তেজনা বাড়িয়েছে৷
ছবি: dapd
ইসরায়েলর সঙ্গে নতুন দ্বন্দ্ব?
সিরিয়া যুদ্ধে অংশ নেয়ার মাধ্যমে ইরান ও হেজবোল্লাহ তাদের রাজনৈতিক ও সামরিক প্রভাব বাড়িয়েছে৷ বিষয়টিকে ইসরায়েল হুমকি হিসেবে দেখছে৷ ফলে সিরিয়ায় ইরান/হেজবোল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে বার কয়েক হামলাও করেছে ইসরায়েল৷ ইরান ও হেজবোল্লাহ সিরিয়ায় স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করুক, সেটি চায় না ইসরায়েল৷ ফলে ইসরায়েল ও হেজবোল্লাহর মধ্যে আরেকটি যুদ্ধ শুরুর আশংকা দেখা দিয়েছে, যেখানে ইরানও জড়িয়ে পড়তে পারে৷
ছবি: Getty Images/C. Furlong
9 ছবি1 | 9
ইসরায়েলের এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছে হেজবোল্লাহ। হাসান নাসরাল্লাহ জানিয়েছেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী লেবাননের লোককে উসকানি দিচ্ছেন। যে জায়গার কথা তিনি বলেছেন, সেখানে কোনো অস্ত্রশস্ত্র নেই। তাঁরা ঘনবসতিপূর্ণ জায়গায় ক্ষেপনাস্ত্র মোতায়েন করেন না। তাঁরা জানেন কোথায় ক্ষেপনাস্ত্র মোতায়েন করতে হয়।
হেজবোল্লাহর তরফে এরপর সাংবাদিকদের ওই গুদামে নিয়ে যাওয়া হয়। দেখানো হয়, সেখানে কোনো অস্ত্র নেই। সেটা একটা কারখানা। লোহা কাটা হয়। কয়েকটি গ্যাস সিলিন্ডারও সেখানে রাখা আছে। হেজবোল্লাহর দাবি, এটা একটা বেসরকারি কারখানা মাত্র।
জাতিসংঘে ইরানের প্রতিনিধিও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, জার্মানি, অ্যামেরিকা সহ বেশ কিছু দেশ হেজবোল্লাহকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে মনে করে।