প্যারিসে হামলা নিয়ে ফেসবুক আর টুইটারে অনেকে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন৷ বাংলাদেশের ফেসবুক ব্যবহারকারীরা তাঁদের প্রোফাইল ছবি হিসেবে ফ্রান্সের পতাকা ব্যবহার করে প্যারিসবাসীর প্রতি সমবেদনাও জানাচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম টুইট করে হামলায় নিহত ও তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন৷
আনিকা লিখেছেন, তিনি মনে করতেন বাংলাদেশ নিরাপদ নয়৷ কিন্তু এখন দেখছেন বিশ্বের কোথাও শান্তি নেই৷
বাংলাদেশও কি প্যারিসের মতো জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর হামলার শিকার হতে পারে কিনা, সে বিষয়ে টুইটারে চলছে একটি জরিপ৷
এদিকে, প্রতিক্রিয়া দেখানোর ক্ষেত্রে বিভেদ নিয়েও চলছে আলোচনা৷ যেমন প্যারিসের ঘটনায় ফেসবুক ‘সেফটি চেক' অপশন চালু করলেও বৈরুতে একই রকম হামলা হলেও এই সেবা চালু না করায় ফেসবুকের সমালোচনা করেন অনেকে৷ পরবর্তীতে অবশ্য এর উত্তর দিয়েছেন ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক সাকারবার্গ৷ তিনি বলেন, যাঁরা এ ব্যাপারে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন তাঁরা ঠিকই করেছেন৷ এখন থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ (যেটা এতদিন করা হত বলে জানান সাকারবার্গ) ছাড়াও মানবসৃষ্ট দুর্যোগের ক্ষেত্রেও এই অপশন চালু করা হবে জানান তিনি৷
সেফটি চেক ছাড়াও প্রোফাইল ছবিতে ফ্রান্সের পতাকা জুড়ে দেয়ার অপশন দিয়েছে ফেসবুক৷ এ বিষয়েও সমালোচনা চলছে৷ তবে বৈরুতের ক্ষেত্রে ফেসবুক এই অপশন চালু করলেও বাংলাদেশের কতজন মানুষ সেটা করতেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নাজমুল ইসলাম৷ কয়েকটি উদাহরণ ও পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘‘সভ্যতার মাপকাঠিতে প্যারিস বৈরুতের হাঁটুর সমান বয়সি হলেও আমাদের চোখে প্যারিস অনন্যা, প্যারিস রমনীয়, প্যারিস রোমান্টিক, শিল্প সাহিত্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবী৷ সেই তুলনায় বৈরুত বা সিরিয়ার চাকচিক্য কোথায়?''
তবে শুধু প্রোফাইল ছবি পরিবর্তন করে যে কেউ মানবতবাদী হতে পারে, সেটা তিনি মনে করেন না৷
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ‘মতামত-বিশ্লেষণ' বিভাগে কলামিস্ট চিররঞ্জন সরকারের একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘মৌলবাদ নিয়ে অনেকেই খেলতে পছন্দ করেন৷ কিন্তু কাল সাপ কারও পোষ মানে না৷ তালেবানদের এক সময় সিআইএ ও পেন্টাগন সাহায্য-সহযোগিতা ও অস্ত্র-প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তুলেছিল৷ সেই তালেবানরা একসময় ঠিকই আমেরিকার ওপর মরণ-কামড় বসিয়েছে৷ একইভাবে আইএস জঙ্গিদেরও অ্যামেরিকাসহ কোনো কোনো পশ্চিমি দেশ মদদ ও সমর্থন দিয়ে বর্তমান পর্যায়ে নিয়ে এসেছে৷ কিন্তু এরা যে গোটা বিশ্বের জন্যই হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে, সংশ্লিষ্টরা তা ভেবে দেখছেন বলে মনে হয় না৷ কাজেই মৌলবাদীদের ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স' নীতি ঘোষণা ও কার্যকর করতে হবে অস্তিত্বের স্বার্থেই, তা না হলে সবাইকেই মূল্য দিতে হবে৷''
আইএস কী, কোথায় এবং কেন?
প্রতিদিনই খবরে আইএস৷ কোনোদিন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য, কোনোদিন হয়তো ইরাক বা সিরিয়ায় কোনো অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য৷ আইএস বলছে, ইসলামি খেলাফত কায়েম করার জন্য যুদ্ধে নেমেছে তারা৷ ছবিঘরে আইএস সম্পর্কে কিছু তথ্য....
ইসলামিক স্টেট বা আইএস আসলে কী?
আল কায়েদা থেকে তৈরি হওয়া সুন্নি মুসলমানদের জঙ্গি সংগঠন আইএস৷ সাদ্দাম পরবর্তী সময়ে ইরাকে এবং বাশার আল আসাদের আমলে সিরিয়ায় সুন্নিদের হতাশা থেকেই জন্ম সংগঠনটির৷ আইএস-এর পতাকায় লেখা থাকে, ‘মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর নবী’ এবং ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই৷’
ছবি: AP
আইএস কোথায় সক্রিয়?
শরিয়া আইন অনুযায়ী পরিচালিত হবে এমন রাষ্ট্র, বা ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায় আইএস৷ সিরিয়া এবং ইরাকেই প্রত্যক্ষভাবে সক্রিয় তারা৷ দুটি দেশেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে বেশ বড় অঞ্চল দখল করে নিয়েছে আইএস৷
আইএস কেন আলাদা?
মূলত নিষ্ঠুরতার জন্য৷ শত্রুপক্ষ এবং নিরীহ মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়াতে তারা এমন বর্বরতা এবং নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করে যা আগে কেউ করেনি৷ জবাই করে ভিডিও প্রচার, পুড়িয়ে মারা, বাবার সামনে মেয়েকে জবাই করা এবং তার তার ভিডিও প্রচার, মেয়েদের যৌনদাসী বানানো আর পণ্যের মতো বিক্রি করা – এসব নিয়মিতভাবেই করছে আইএস৷ কোনো অঞ্চল দখলে নেয়ার পর সেখানে শাসন প্রতিষ্ঠায় মন দেয় আইএস৷
ছবি: gebphotography - Fotolia.com
অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক
আইএস যদিও শুধু সিরিয়া এবং ইরাকেই সক্রিয়, তবে বিশ্বের অন্যান্য ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন নয়৷ নাইজেরিয়ার জঙ্গি সংগঠন বোকো হারাম কয়েকদিন আগেই জানিয়েছে, আইএস-কে তারা সমর্থন করে৷ দুটি সংগঠনের মধ্যে একটি জায়গায় মিলও আছে৷ আইএস-এর মতো বোকো হারামও নিষ্ঠুরতা এবং বর্বরতার প্রতিভূ হয়ে উঠেছে৷ অন্য ধর্মের নারীদের প্রতি দুটি সংগঠনের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আচরণই মধ্যযুগীয়৷
ছবি: Getty Images/A. Katib
আইএস-এর অনুসারী কারা?
অনুসারী সংগ্রহের সাফল্যেও আইএস অন্য সব জঙ্গি সংগঠনের চেয়ে আলাদা৷ এ পর্যন্ত অন্তত ২০ হাজার বিদেশী যোদ্ধা আইএস-এ যোগ দিয়েছে৷ তাদের মধ্যে ৪ হাজারই পশ্চিম ইউরোপ এবং উত্তর অ্যামেরিকার৷
আইএস-কে রুখতে অন্য দেশগুলো কী করছে?
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বেশ কিছু পশ্চিমা এবং আরব দেশ সিরিয়া ও ইরাকে আইএস ঘাঁটির ওপর বিমান থেকে বোমা হামলা চালাচ্ছে৷ বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সিরিয়ায় ১৪২২ এবং ইরাকে ২২৪২ বার হামলা হয়েছে৷ কোনো কোনো সরকার দেশের অভ্যন্তরেও কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে৷ সিরিয়া ফেরত অন্তত ৩০ জন সন্দেহভাজন জঙ্গির বিচার শুরু করবে জার্মানি৷ গত মাসে সৌদি পুলিশও ৯৩ জন সন্দেহভাজন আইএস জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে৷
6 ছবি1 | 6
কাইমুল হক ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘...মানসিক অসুখে আক্রান্ত একুশ শতকের বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষ৷ এই পরিস্থিতিতে বিশ্বনেতাদের সুস্থ উপলব্ধি এবং বিশ্ব রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন ছাড়া আর পথ নেই৷''
তবে মিনহাজ উদ্দিনের কাছে হামলার ঘটনাটি সাজানো নাটক বলে মনে হয়েছে৷ এইচএম বেলাল উদ্দীন লিখেছেন, ‘‘অতীত বিবেচনা করে দেখেন এই সন্ত্রাসী তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ প্রথমে ওদের বিচার করে বিভিন্ন দেশের আক্রমণ বন্ধ করলে এর একটা সমাধান হবে, বিশ্বে এমনিতেই শান্তি ফিরে আসবে৷'' শিশির হোসেন মনে করছেন, সব অ্যামেরিকার চাল৷
যে রাত বিশ্বকে বদলে দিল
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ১৩ই নভেম্বরের সন্ত্রাসী হামলায় কমপক্ষে ১২৯ জন নিহত ও ৩৫২ জন আহত হয়েছে৷ কেঁপে উঠেছে গোটা বিশ্ব৷ বদলে গেছে অনেক কিছু৷
ছবি: Reuters/C. Allegri
প্রাথমিক খবর
জার্মানি ও ফ্রান্সের মধ্যে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ চলাকালীন প্যারিসে হামলার প্রাথমিক খবর আসতে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মানুষের মনে ভয়
খবর পেয়ে প্যারিসের মানুষের মনে ভয় ও আতঙ্ক ছেয়ে যায়৷ কর্তৃপক্ষ মানুষকে বাড়িতেই থাকার পরামর্শ দিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পণবন্দি নাটকের মঞ্চ
বাটাক্লঁ কনসার্ট হলে হেভি মেটাল সংগীত চলাকালীন সন্ত্রাসবাদীরা কিছু মানুষকে পণবন্দি করেছিল৷ রাত একটা নাগাদ পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে৷
ছবি: Reuters/C. Hartmann
বিহ্বল প্রেসিডেন্ট
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন৷ ফুটবল ম্যাচের বিরতির সময়ে তিনি স্টেডিয়াম ছেড়ে গিয়েছিলেন৷ তাঁকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়৷
ছবি: Reuters
স্টেডিয়ামে চাপা আতঙ্ক
ফ্রান্স ও জার্মানির জাতীয় দল এবং দর্শকরা কিন্তু স্টেডিয়াম ছেড়ে যাবার অনুমতি পাননি৷ সে সময়ে তাঁদের মনের অবস্থা কী ছিল, তা অনুমান করা যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Alexandre
হামলাকারীদের দশা
প্রায় সব আততায়ী নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে৷ একজন সীমান্ত পেরিয়ে বেলজিয়ামে প্রবেশ করেছে৷ পুলিশ সূত্র অনুযায়ী হামলাকারীদের মধ্যে কমপক্ষে দু’জন বেলজিয়ামে বসবাস করতো৷
ছবি: Getty Images/K. Tribouillard
আহতদের অবস্থা সংকটজনক
প্যারিসে একাধিক হামলায় আহত অনেক মানুষের অবস্থা সংকটজনক৷ ফলে নিহতদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Bureau
কড়া নিরাপত্তার বেড়াজাল
প্যারিসে হামলার পর আন্তর্জাতিক স্তরেও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে৷ যেমন নিউ ইয়র্কে ফরাসি কনসুলেটের সামনে আরও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/S. Platt
গোটা বিশ্বে সংহতি
নিউ ইয়র্কে ‘ওয়ান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার’-এর অ্যান্টেনায় ফরাসি জাতীয় রং ফুটিয়ে তোলা হয়৷ নিউ ইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো বলেন, ‘‘আমরা ফরাসি জাতির সঙ্গে সংহতির বন্ধনে আবদ্ধ৷’’