1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বৈশাখি শোভাযাত্রা

১০ এপ্রিল ২০১২

আসছে পহেলা বৈশাখ৷ ঢাকার নাগরিক জীবনে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হয়ে উঠেছে চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা৷ নাগরিক বর্ষবরণকে আরো রঙিন করে তুলতেই চারুকলায় চলছে শোভাযাত্রার বিশাল প্রস্তুতি৷

Bangladeshis participate in a procession to welcome the Bengali New Year in Dhaka, Bangladesh, Saturday, April 14, 2007. Bangladeshis are celebrating Pahela Baishakh, the first day of the Bengali New Year Saturday. (AP Photo/Pavel Rahman)
ছবি: AP

হাতি, ঘোড়া, বাঘের সারি গোছাতে হবে৷ সাজাতে হবে সৈন্য-সামন্তের বহর৷ সেই সঙ্গে থাকতে হবে বাদ্য-বাজনা, ঢোল-করতালের বোল-ও৷ এখানেই শেষ নয়৷ রঙিন মুখোশ, বিরাট সাম্পান, বিকট জন্তু – কী থাকবে না সে শোভাযাত্রায়!

প্রস্তুতি নিয়েই আরো শোনা যাক, এবারের শোভাযাত্রার প্রস্তুতি কাজের সমন্বয়ক, চারুকলার শিক্ষার্থী নবেন্দু সাহা নব'র কাছে ৷

‘‘এবারের উৎসবের মূল থিম হচ্ছে সমুদ্র বিজয়৷ তাই, সমুদ্র বিজয়ের প্রতীকী রূপ হিসেবে শোভাযাত্রায় থাকবে ৪০ ফুট দীর্ঘ একটি সাম্পান৷ সাম্পানের উপরে থাকবে মানুষের কয়েকটি প্রতিকৃতি৷ যাদের হাতে ধরা থাকবে বাংলাদেশের পতাকা৷''

এখানেই শেষ নয়৷ নব্য আরো জানানা, ‘‘সাম্পানের আশে-পাশে থাকবে হাতি, ঘোড়ার বহর৷ থাকবে সৈন্য-সামন্তও৷ ঠিক যে রকমটা দেখা যেতো, সুলতানি আমলে যুদ্ধ বিজয়ের পর৷''

এছাড়া বাংলার বীরত্বকে প্রকাশ করার জন্য থাকবে বাঘের প্রতিকৃতি থাকবে বলেও জানান তিনি৷

বাংলার বিজয়, গৌরব, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের পাশাপাশি এবারের শোভাযাত্রায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গটিও৷

রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের প্রতীক হিসেবে তৈরি করা হয়েছে দেখতে কুৎসিত, কদাকার ও ভয়ানক ধরণের কিছু প্রতিকৃতি৷ শিল্পী শিশীর ভট্টাচার্যের আকুঁনিতে প্রতিকৃতিগুলো ফুটে উঠেছে৷

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে চারুকলা থেকে প্রথম শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয় আজ থেকে প্রায় দুই যুগ আগে৷ সে শোভাযাত্রার মূল উদ্যোক্তা ছিলেন মাহবুব জামিল নামের এক স্বাপ্নিক তরুণ৷

‘‘১৯৮৬ সালে প্রথম আমরা এ ধরণের শোভাযাত্রার আয়োজন করি যশোরে, চারুপীঠ নামে একটি প্রতিষ্ঠান এর পক্ষ থেকে৷ তার পর আমি এম এ পড়তে আসি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে৷ সে সময়, ১৯৮৯ সালে প্রথম মূলত আমার উদ্যোগেই ঢাকা চারুকলা থেকে আয়োজন করা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রার৷''

কিন্তু কেন, কোন স্বপ্ন নিয়ে এই কাজ শুরু করেছিলেন তিনি? এই প্রশ্নের উত্তরে চারুপীঠ এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মাহবুব জামিল বলেন, ‘‘সামাজিকায়নের একটি পথ হিসেবে আমরা বেছে নেই উৎসব উৎযাপনকে৷ পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আমরা মেলার আয়োজন করি৷ যে মেলা গ্রাম ও শহরেরে জীবনের একটা মেলবন্ধন৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘আর বিভিন্ন ধরণের ভিজ্যুয়াল আর্ট ফর্ম যেমন- চিত্রকর্ম, নাটক, সঙ্গীত ইত্যাদিকে মিলাবার জন্য আয়োজন করি মঙ্গল শোভাযাত্রার৷''

শুধু তাই নয়, জামিলের মতে, আমাদের মুসলিম লোক জীবন থেকে ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছিলো সংস্কৃতির ছোঁয়া৷ ‘‘হারিয়ে যাওয়া সেই সঙ্গীত, নৃত্যসহ সংস্কৃতির সকল ধারাকে লোক জীবনে ফিরিয়ে আনতেই এই শোভাযাত্রা৷''

যশোরে চারুপীঠ নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তরুণ জামিল, সে স্বপ্ন আজ অনেকটাই ছড়িয়ে গেছে৷ ঢাকা, চট্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এখন আয়োজন করা হয় শোভাযাত্রার৷ আর যশোরে তো হয়-ই৷ এবারেও যশোরে চলছে বিরাট আয়োজন৷

নাগরিক বর্ষবরণের ক্ষেত্রে দিনে দিনে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠছে মঙ্গল শোভাযাত্রা৷ তবে কিনা, ঠিক এরকম নয়, আরেকটু বড় ক্যানভাসে শোভাযাত্রার স্বপ্নটি দেখেছিলেন জামিল৷

তাঁর ভাষায়, ‘‘একটি জাতীয় উৎসবের জন্য মহাপরিকল্পনা করেছিলাম৷ সেই উৎসবে বাংলাদেশে প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী, নৃত্য শিল্পীদের অংশগ্রহণের কথা ছিলো৷ কথা ছিল বিভিন্ন চরিত্রের পোশাক পরে নাট্যকর্মীদের অংশ নেবে শোভাযাত্রায়৷ কিন্তু চারুকলার অন্য যারা আমার সঙ্গে ছিল, তারা কেউ তখন এ বিষয়ে একমত হয় নি৷ শোভাযাত্রাটিকে তারা চারুকলার বাইরে দিতে রাজি হয় নি৷''

নাগরিক জীবনে লোক সংস্কৃতির স্বপ্ন বুনে দিয়ে জামিল ফিরে গেছেন যশোরে, সেই চারুপীঠ-এ৷ যেখান থেকে তাঁর স্বপ্নের শুরু৷ আজও তিনি সেখানেই আছেন৷

যদিও জামিলের স্বপ্নের পুরোটা অনুবাদ হয় নি কিন্তু যতটুকু হয়েছে, তাই বা কম কী! চারুকলার শোভাযাত্রার কলেবর দিন দিন আরো বড় হচ্ছে৷ বাঙালি লোক জীবনের নানা উপাদান তো আছেই, সেখানে যুক্ত হচ্ছে সামাজিক, রাজনৈতিক ও জাতীয় জীবনের নানা প্রসঙ্গও৷

তাই, বলা যায়, জামিলের স্বপ্ন মরে নি৷ সেই স্বপ্নই আজও বয়ে চলছে চারুকলা পড়তে আসা নতুন প্রজন্ম৷

প্রতিবেদন: আফরোজা সোমা
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ