ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মূল চেতনা ছিলো বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ গঠন৷ সবাইকে নিয়ে এমন একটি রাষ্ট্র গঠন যেখানে থাকবে ন্যায়বিচার, বাকস্বাধীনতা ও ভিন্ন মত চর্চার সুযোগ৷ সেই চেতনা বাস্তবায়ন কতদূর?
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে এখন আলোচিত শব্দ ‘ফ্যাসিবাদ'৷ আওয়ামী লীগ ও তার সমর্থকদের ‘ফ্যাসিবাদী' বলা হচ্ছে৷ এরইমধ্যে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আওয়ামী লীগকেও নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছে৷
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ স্পষ্ট করেই ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দলের কাতারে পড়ে না৷ আওয়ামী লীগ একটি সন্ত্রাসী সংগঠন, ফ্যাসিস্ট দল৷ দেশের মানুষই ৫ আগস্ট তাদের নিষিদ্ধ করে দিয়েছে৷ তাদের নেতারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে৷ আর তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও লুকিয়ে আছে৷''
১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবসে গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে নূর হোসেন চত্বরে আওয়ামী লীগকে কর্মসূচি পালন করতে দেয়া হয়নি৷ আওয়ামী লীগ সন্দেহে অর্ধ শত ব্যক্তিকে মারপিট করে পুলিশে তুলে দেয়া হয়৷ এর আগে ঢাকায় জাতীয় পার্টিকেও সমাবেশ করতে দেয়া হয়নি৷ কাকরাইলে তাদের পার্টি অফিসে হামলা ও আগুন দেয়া হয়েছে৷ জাতীয় পার্টিকে বলা হয়েছে ফ্যাসিবাদের দোসর৷
বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা স্পষ্ট করেই বলছেন মুজিবাদ, ফ্যাসিবাদ ও ফ্যাসিবাদের সহযোগীদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না৷ তাদের কথা, সাংবাদিকদের মধ্যে আছে ফ্যাসিবাদের সহযোগী৷ আর সেই কারণেই তথ্য মন্ত্রণালয় এরইমধ্যে তিন দফায় মোট ১৬২ সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করেছে৷
অন্যদিকে ৫ আগস্টের পর মব জাস্টিসের নামে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন অনেকে৷ আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব বলছে, চলতি বছরের আগস্ট থেকে অক্টোবর এই তিন মাসেই নিহত হয়েছেন ৬৮ জন৷
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা ও চ্যালেঞ্জ
নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা ও সরকারের কিছু চ্যালেঞ্জ নিয়ে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলেছে ডিডাব্লিউ৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP
সিফাত নাহার, চিকিৎসক
স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ওষুধের অপ্রতুলতা, পর্যাপ্ত সরঞ্জামের অভাব, লোকবলের অভাবসহ আরো অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে৷ এসব কারণে আমরা প্রায়ই প্রতিকূলতার সম্মুখীন হই৷ মাঝেমধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়৷ তাই আমার প্রত্যাশা থাকবে, এই সরকার কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকসহ সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করার চেষ্টা করবে৷
ছবি: DW
দীপংকর সরকার দীপু, ভিজুয়াল আর্টিস্ট
বেশিরভাগ মানুষের আস্থা অর্জন, জানমালের নিরাপত্তা বিধান, দুর্নীতিকে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা, সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা- ইত্যাদি সরকারের চ্যালেঞ্জ৷ আর সরকারের কাছে প্রত্যাশা থাকবে তারা যেন দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে আনতে পারেন, দুর্নীতি নির্মূল করতে পারেন, মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারেন ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে পারেন৷
ছবি: DW
সাদিয়া মরিয়ম রূপা, আলোকচিত্রী ও শিক্ষক
প্রত্যাশা: পাহাড় থেকে সেনাশাসন হটাতে হবে, পাহাড় দখলমুক্ত করতে হবে৷ ক্ষমতাধর ও আইনপ্রণেতাদের জনগণের কাছে জবাবদিহিতা থাকতে হবে৷ বাকস্বাধীনতা খর্ব করা যাবে না৷ বিচারব্যবস্থাকে স্বাধীন করতে হবে৷ জনস্বার্থবিরোধী সব চুক্তি বাতিল করতে হবে৷
ছবি: DW
আলী আরাফাত জাকারিয়া, লেখক
প্রত্যাশা: রাষ্ট্র সংস্কার, বিশেষ করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার, আইন-শৃঙ্খলা ঠিক করা, পুলিশকে দলীয় রাজনীতি থেকে দূরে রাখা, দুর্নীতি দমন ও ছাত্র হত্যার বিচার করা, আর্থিকখাতে দুর্নীতি করা ব্যক্তিদের বিচার এবং সর্বোপরি নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখা৷ চ্যালেঞ্জ: অর্থনীতি ঠিক করা, সতর্কতার সাথে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে পুলিশ রিফর্ম করা৷
ছবি: DW
ফারহানা শারমিন শুচি, উদ্যোক্তা
স্বচ্ছ সরকার চাই৷ রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ছিল, সেগুলো নির্মূল করতে হবে৷ দীর্ঘদিন ধরে অন্যায়, অবিচার দেখেছি৷ এগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে হবে৷ দুর্নীতিবাজদের সরিয়ে তরুণ প্রজন্মকে নিয়োগ দিতে হবে৷ দুর্নীতি দূর করতে শিক্ষার্থীদের মনিটরিং দরকার৷
ছবি: DW
আমিরুল, প্রকৌশলী
প্রত্যাশা: কথা বলা ও রাস্তায় নামার অধিকার ফিরিয়ে আনা৷ এখন যে পরিস্থিতি সেটা আগে মোকাবেলা করুক, সব স্বাভাবিক করে আনুক এটাই আশা করি৷ প্রাইমারি ফোকাস হওয়া উচিত রাষ্ট্রকে আগে গড়ে তোলা৷ নৈরাজ্য হবার পরে যে অবস্থা বা গত সরকার ১৫ বছর যেভাবে শাসন করেছে এটা থেকে স্বাভাবিক করার জন্য দেশকে একটা শক্তিশালী জায়গায় নেওয়া উচিত৷ অর্থনৈতিক দিক থেকে এবং সকল দিকই যেন ঠিকঠাক করতে পারে৷
ছবি: DW
শিমু আক্তার, শিক্ষার্থী ও ভলিবল খেলোয়াড়
আশা করবো বর্তমান সরকার শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ গড়ার দাবির কথা মাথায় রেখে রাষ্ট্র পুনর্গঠন করবে৷ তবে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করা এই সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে৷
ছবি: DW
আবুল বাশার, শরবত বিক্রেতা
আমি চাই এই সরকার সুন্দরভাবে দেশ পরিচালনা করবে যেন গরিব, ধনী সবাই শান্তিতে বাস করতে পারেন৷ রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতার প্রতি লোভ এই সরকারকে বিপদে ফেলতে পারে বলেও মনে করেন তিনি৷
ছবি: DW
রুপসী চাকমা, শিক্ষার্থী
পার্বত্য চট্টগ্রামে বহুদিন ধরে ‘সেনাশাসন’ চলছে৷ যত ধরনের বৈষম্য তৈরি করা দরকার, সেটা তারা করেছে৷ আমরা সেনাশাসন প্রত্যাহার চাই৷ কল্পনা চাকমার গুমের যে ঘটনা ঘটেছিল তার তদন্ত ও সন্ধান চাই৷ দীর্ঘদিন ধরে যে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা ছিল সেটা নির্মূল করা বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে৷ দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা নির্মূল করে সংস্কার করাই হবে অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ৷
ছবি: DW
জয়নাল, পান বিক্রেতা
সরকারের কাছে আমার প্রত্যাশা, দ্রব্যমূল্য যেন কম থাকে, সাধারণ মানুষ যেন কম দামে খাবার কিনতে পারে৷ তবে মনে হয় দ্রব্যের দাম কমানো অনেক কঠিন হবে৷ অবশ্য সরকার যদি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে, তাহলে হয়তো পারবে৷
ছবি: DW
ইসরাত জাহান ইমু, শিক্ষার্থী
দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সময়ে হয়ে আসা ছাত্র আন্দোলনের সকল দাবি যেন এই সরকার পূরণ করে৷ এছাড়া অফিস-আদালত থেকে শুরু করে সব প্রতিষ্ঠানে গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে হবে৷ কাঠামোগত দুর্নীতি দূর করতে হবে৷ নতুন সংবিধান তৈরি করে প্রশাসনিক কাঠামো এমনভাবে পরিবর্তন করতে হবে যেন পরবর্তী কোনো সরকার আবার স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে না পারে৷
ছবি: DW
11 ছবি1 | 11
‘ঢালাওভাবে প্রেস কার্ড বাতিল গ্রহণযোগ্য নয়'
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ উর রহমান বলছেন, ‘‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার আগ পর্যন্ত তাদের সভা করতে দেব না, সমাবেশ করতে দেব না, এটা হতে পারে না৷ আমার কাছে অবাক লাগে এই কথা সরকারের দিক থেকেও বলা হয়েছে৷ প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিবও বলেছেন৷ একটা রাষ্ট্র তো আসলে এভাবে চলবে না৷ রাষ্ট্র চলবে আইন কানুনের মধ্য দিয়ে৷ তাদের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিলেও সেটা আইনত দিতে হবে৷''
‘ঢালাওভাবে প্রেস কার্ড বাতিল গ্রহণযোগ্য নয়’
তার কথা, ‘‘১০ নভেম্বরের কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের কোনো খারাপ উদ্দেশ্যও থাকতে পরে৷ সেটা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দেখবে৷ কয়েকজনকে পিটানো হয়েছে৷ যাদের পিটানো হয়েছে তাদের খারাপ উদ্দেশ্য থাকলে পুলিশে দিন৷ কিন্তু যারা পিটিয়েছে তাদেরও পুলিশে দিতে হবে৷ মব জাস্টিস তো চলতে পারেনা৷''
‘‘এই পরিস্থিতি গণতান্ত্রিক না৷ এবং যে বৈষম্যবিরোধী কথা বলা হচ্ছে তাও না৷ কোনো কিছু বেআইনিভাবে প্রয়োগ করে বৈষম্য দূর হয় না,'' বলেন তিনি৷
ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘‘কিছু সাংবাদিক আছেন যারা বিগত সরকারের স্বৈরাচারী ব্যবস্থায় সহায়তা করেছেন৷ তাদের আমি সাংবাদিকই মনে করি না৷ কিন্তু ঢালাওভাবে যে প্রেস কার্ড বাতিল করা হচ্ছে, এটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়৷''
‘মাহফুজ আলমের বিচার হওয়া উচিত'
অন্যদিকে উপদেষ্টা পরিষদে সর্বশেষ যে তিনজন নতুন উপদেষ্টা শপথ নিয়েছেন তাদের মধ্যে শিল্পগোষ্ঠী আকিজ-বশির গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেখ বশির উদ্দিন এবং চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে নিয়ে এখন চরম বিতর্ক চলছে৷ বসির উদ্দিনকে বাণিজ্য এবং মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত টিকতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে৷ বসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ তার এক ভাই আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন৷ আর মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সমর্থন দিলেও তিনি আগে ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর' ছিলেন৷ আর তার স্ত্রী তিশা একটি সিনেমায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের চরিত্রে অভিনয় করেছেন৷ এই দুইজনের সঙ্গে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের অনকে মন্ত্রীর ছবিও আছে৷
সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, ‘‘ফ্যাসিবাদের দোসর বলে চিহ্নিত করে এখানে একটার পর একটা যে ঘটনা ঘটছে আমি এটাকে গণতন্ত্র বলতে পারি না৷''
‘‘আওয়ামী লীগ সরকার শেষ সময়ে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে৷ কিন্তু তার আগে থেকেই তারা জামায়াতকে মিছিল-মিটিং করতে দেয়নি৷ বলতো তারা স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি৷ এখনো কিন্তু সেই একই ন্যারেটিভ চলছে৷ আমি মনে করি এটা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক চর্চার জন্য কোনো ইতিবাচক নমুনা নয়৷ আপনি যদি মনে করেন তারা ফ্যাসিবাদের দোসর, সেটা তো মামলা করে প্রমাণ করতে হবে৷ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মামলা করে সেটা প্রমাণ করেন৷ তারপরে আদালতের নির্দেশে তাদের কাজ নিষিদ্ধ করেন৷ তার আগে তো পারেন না,'' বলেন তিনি৷
মাহফুজ আলমের বিচার হওয়া উচিত: মাসুদ কামাল
তার কথা, ‘‘বাংলাদেশের মিডিয়া সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় তারা গণহারে প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করছে৷ এটা সাংবাদিকদের একটা সরকারি স্বীকৃতি৷ পেশাদার সকল সাংবাদিকের এটা পাওয়ার অধিকার আছে৷ আগের সরকার সবাইকে দেয় নাই৷ অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক বিবেচনায় দিয়েছে৷ এখন আপনারা সেটা আরো কমিয়ে দিয়েছেন৷ সারজিস আলম তো আগের সরকারের সময় বঙ্গবন্ধুর স্তুতি গেয়ে আড়াই মিনিটের একটি ভিডিও পোস্ট দিয়েছিলো৷ তাহলে সেও কি ফ্যাসিবাদের দোসর?''
মাসুদ কামাল আরো বলেন, ‘‘একজন উপদেষ্টা সংবিধানের অধীনে শপথ নিয়ে বঙ্গভবন থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি নামিয়ে ফেললেন৷ এটা তো তার শপথ ভঙ্গ৷ তিনি তো সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়ে তা ভঙ্গ করলেন৷ কার ছবি থাকবে তা সংবিধানে থাকার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না৷ কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ছবি থাকার কথা তো সংবিধানে এখনো আছে৷ তা তো বাতিল করা হয়নি৷ আপনি এই সংবিধানের অধীনে শপথ নিলেন কেন? আমি তো মনে করি মাহফুজ আলমের বিচার হওয়া উচিত৷''
হাসিনা সরকারের পতনের পর বড় যত ঘটনা
প্রশাসন, বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে নানা পর্যায়ে বেশ কিছু বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের গড়া এ সরকার আরো কিছু বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ছবি: DW
জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত
৬ আগস্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের জনবিভাগের উপ-প্রেসসচিব মো. শিপলু জামানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, তিন বাহিনী প্রধান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
খালেদা জিয়ার মুক্তি
৬ আগস্টই সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানায়। দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২০২০ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্ত থাকলেও গণআন্দোলনে সরকার পতনের পর সাজা থেকে পুরোপুরি মুক্তি পেলেন।
ছবি: Rajib Dhar/AP/dpa/picture alliance
নতুন পুলিশ প্রধান
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের চুক্তি বাতিল করে ৬ আগস্ট নতুন আইজিপি হিসেবে মো. ময়নুল ইসলামকে নিয়োগ দেয়া হয়। পরের দিন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় মো. মাইনুল হাসানকে। এরপর থেকে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার ও উপ-পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের পদে ব্যাপক রদবদল করা হয়েছে।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
অ্যাটর্নি জেনারেলের পদত্যাগ
৭ আগস্ট অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন এবং অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোর্শেদ পদত্যাগ করেন। ১২ আগস্ট পর্যন্ত অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের ৬৭ আইন কর্মকর্তার পদত্যাগের তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশের গণমাধ্যম। ৮ আগস্ট অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামানকে। এরপর ১৩ আগস্ট অতিরিক্ত ৩ অ্যাটর্নি জেনারেল ও ৯ ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের নিয়োগ দেয়া হয়।
ছবি: Samir Kumar Dey
অন্তর্বর্তী সরকার গঠন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবি অনুযায়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে ঘোষণা করেন রাষ্ট্রপতি। ইউনূসসহ মোট ১৭ উপদেষ্টা ৮ আগস্ট শপথ গ্রহণ করেন। ১৬ আগস্ট আরো চার উপদেষ্টা শপথ নেয়ায় উপদেষ্টাদের মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ২১ এ। এদের মধ্যে বিভিন্ন এনজিওর কর্মকর্তারা ছাড়াও রয়েছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা, অর্থনীতিবিদ, শিক্ষক, আমলা এবং আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি।
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP
জামায়াতের উপস্থিতি নিয়ে অস্পষ্টতা
সরকারের পতনের কয়েকদিন আগে নিষিদ্ধ করা জামায়াতে ইসলামী এখন প্রকাশ্যে৷ দলটির নেতারা রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানেও দাওয়াত পাচ্ছেন৷ জামায়াত বলছে, সরকারের পতনের পর ওই আদেশের আর বাস্তবে কোনো কার্যকারিতা নেই৷ নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, ‘‘বিষয়টি সরকার ও তার নির্বাহী বিভাগের সিদ্ধান্তের ব্যাপার৷'' কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের এক সপ্তাহ পরও নির্বাহী আদেশটি প্রত্যাহার করা হয়নি।
ছবি: Sheikh Ferdous
প্রধান বিচারপতিসহ ৬ বিচারপতির পদত্যাগ
১০ আগস্ট ফুলকোর্ট সভা ডাকার পর তা বাতিল করেন সাবেক প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। এরপর প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিদের পদত্যাগ দাবিতে হাইকোর্ট বিভাগের বর্ধিত ভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। দুপুরের পর থেকে একে একে পদত্যাগ করেন বিচারপতিরা।
ছবি: Suvra Kanti Das/abaca/picture alliance
নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ
১০ আগস্ট রাতেই হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হয়। ১২ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগের আরো চার বিচারপতিকে আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A.M. Ahad
১৫ আগস্টের ছুটি বাতিল
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঘোষিত ১৫ আগস্টের সাধারণ ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৩ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানায়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে 'ব্যাপক ঐকমত্যের' ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ছবি: DW
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পাঁচ দিন পর ১০ আগস্ট পদত্যাগ করেন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। তার জায়গায় নতুন গভর্নর হিসাবে ১৩ আগস্ট নিয়োগ দেয়া হয়েছে আহসান এইচ মনসুরকে। সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৬৭ বছর নির্দিষ্ট থাকায় ৭২ বছর বয়সি আহসান এইচ মনসুরকে নিয়োগ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার সংশোধন করে গভর্নর পদের বয়সসীমা তুলে দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
ছবি: DW
সাবেক মন্ত্রী, উপদেষ্টা গ্রেপ্তার
১৩ আগস্ট গ্রেপ্তার হন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। নিউমার্কেট থানার একটি হত্যা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। ১৫ আগস্ট বিলুপ্ত সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
ছবি: DW
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা
১৪ আগস্ট শেখ হাসিনাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় অভিযোগ দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী এমএইচ তানিম। ৫ আগস্ট সাভারে গুলিবিদ্ধ এবং ৭ আগস্ট মারা যাওয়া নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আলিফ আহমেদ সিয়ামের বাবা বুলবুল কবিরের পক্ষে তিনি এ অভিযোগ দায়ের করেন। বাকি অভিযুক্তদের মধ্যে কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী ও পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন।
ছবি: Munir uz Zaman/AFP/Getty Images
সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান গ্রেপ্তার
১৫ আগস্ট গভীর রাতে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানকে। নিউমার্কেট থানার একটি হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর পর ১৬ আগস্ট তাকে ৮ দিনের রিমান্ডে দিয়েছে। এর আগে ১৩ আগস্ট সেনাবাহিনী থেকে জিয়াউলকে অব্যাহতি দেয়া হয়। ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক ছিলেন তিনি।
ছবি: MOHAMMAD PONIR HOSSAIN/REUTERS
13 ছবি1 | 13
‘ডেমোক্রেটিক প্রিন্সিপাল মেনে এগুলো হচ্ছে না'
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন লেজুড়বৃত্তির ছাত্র রাজনীতি চায় না৷ এই ধরনের রাজনীতি তারা নিষিদ্ধ চায়৷ তারা চায় ছাত্র সংগঠন ছাত্রদের দাবিদাওয়া নিয়ে ছাত্র রাজনীতি করবে৷ ক্যাম্পাসগুলোতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সক্রিয়৷ তারা সারাদেশে কমিটিও করছে৷ জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরও সক্রিয় আছে৷ কিন্তু বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলসহ অন্যান্য দলের ছাত্র সংগঠন কাজ করতে পারছে না৷ ছাত্রদলকে ধাওয়াও দেয়া হয়েছে৷
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ওরা তো এখান থেকে একটা রাজনৈতিক দল করার চিন্তা করছে৷ ডেমোক্রেটিক প্রিন্সিপাল মেনে এগুলো হচ্ছে না৷ তারা তো কয়েক ধরনের সংগঠন করছে৷ হয়তো সবমিলিয়ে একটা দল করবে৷ তারা মনে করছে দেশে একটা বিপ্লব হয়েছে৷ তাই তারা সব কিছু তাদের মতো করে করবে৷ এখানে অস্পটতা আছে৷''
আর বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকবলেন, ‘‘তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তো আরো অনেক বড় পলিটিক্যাল কথা বলছে৷ তারা সেকেন্ড রিপাবলিকের কথা বলছে৷ সংবিধান পরিবর্তনের কথা বলছে৷ তাহলে তারা রাজনীতি করতে পারলে অন্যরা কেন পারবে না৷''
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘‘আমার মনে হয় সরকার কনফিউজড যে তারা ফ্যাসিবাদ থেকে গণতন্ত্রের উত্তরণ কীভাবে ঘটাবে, পদ্ধতি বা পন্থা কী হবে৷ তারা বল প্রয়োগে করবে, না পূর্ণ গণতান্ত্রিক উপায়ে করবে৷ তারা যখন দেখছে আওয়ামী লীগ তো বিভিন্নভাবে আছে, তারা মাঠে নামছে৷ তখন তারা মনে করছে এগুলো এখন দমন না করা হলে পরে আর নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না৷ তাদের তো এই অষ্পটতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে৷''
ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘‘আমাদের একটা কথা মনে রাখা দরকার৷ এই সরকারেরও মনে রাখা দরকার৷ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে যে অভিযোগ ছিলো, এই সরকারের বিরুদ্ধেও যদি সেই অভিযোগগুলো করা যায় তাহলে সেটা হবে খুবই হতাশার৷''
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক বলেন, ‘‘ফ্যাসিস্ট রেজিমের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন তারা যাতে আর ফিরে আসতে না পারে তার একটা চেষ্টা আছে৷ এর সঙ্গে চেতনাও আছে, আবেগ আছে৷ কিছুটা বাস্তবতাও আছে৷ এটা করতে গিয়ে একটা বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সব গণতান্ত্রিক দলের অংশগ্রহণে যে সমাজের কথা বলা হচ্ছে সেটা নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে৷''
‘‘আমরা কোনো দল নিষিদ্ধের বিপক্ষে৷ কারণ তাতে ওই দলের প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টি হয়৷ তাদের অপরাধ আড়াল হয়ে যায়৷ আওয়ামী লীগের যাদের বিরুদ্ধে গণহত্যাসহ সুনির্দিষ্ট মামলা আছে তাদেরকে বাদ দিয়ে বাকি যারা আছেন তারা কীভাবে অনুশোচনা করবে, মাফ চাইবে তার ওপর নির্ভর করছে দল হিসাবে তারা কতটা ফিরতে পারবে,'' বলেন তিনি৷
‘আওয়ামী লীগ ছাড়া সবাই স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারছে'
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ মনে করেন, ‘‘এখানে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও তাদের সহযোগী ফ্যাসিস্ট যারা আছে, ভিন্ন মত বলতে যদি তাদের কথা বলেন, তাদের সে সুযোগ নেই৷ তাদের মত যে ভিন্ন মত, সেই চিন্তার সঙ্গে আমি দ্বিমত পোষণ করি৷ কিন্তু এখানে বিএনপি আছে, জামায়াত আছে, আরো অনেক দল আছে, বামপন্থি দল আছে৷ তারা ঠিক মতো মত প্রকাশ করতে পারছে কিনা৷ এখানে আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা ছাড়া আর সবাই স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারছে৷''
‘‘আওয়ামী লীগের আমলে যারা নিয়মিত শেখ হাসিনা সরকারের চাটুকারিতা করতে পারত তাদেরই সচিবালয়ের এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কার্ড দেয়া হতো৷ তাই সেইসব কার্ড বাতিল করে যারা ফ্যাসিস্টের সময়ে নির্যাতিত হয়েছে সেই সাংবাকিদকের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেয়া হবে৷''
ড. মুহাম্মদ ইউনূস: ‘গরিবের ব্যাংকার’ থেকে সরকারপ্রধান
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস৷ ‘গরিবের ব্যাংকার’ হিসেবে পরিচিত ড. ইউনূসের জীবনের নানা কথা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP
জন্ম
১৯৪০ সালে চট্টগ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস জন্মগ্রহণ করেন৷
ছবি: Abdul Saboor/REUTERS
সবচেয়ে বড় প্রভাব মায়ের
সহায়তার জন্য বাড়ির দরজায় কড়া নাড়া সবাইকে তার মায়ের সাহায্য করার বিষয়টি তার জীবনে সবচেয়ে বড় প্রভাব রেখেছে বলে জানান ড. ইউনূস৷
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
পড়ালেখা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে পড়ালেখা শেষে ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে গিয়েছিলেন৷ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশে ফেরত গিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে যোগ দিয়েছিলেন ড. ইউনূস৷
ছবি: Raphael Lafargue/abaca/picture alliance
মানুষকে সাহায্য করার অনুপ্রেরণা
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি তৈরি হলে ড. ইউনূস কিছু করতে উদ্যোগী হন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার চারদিকে দারিদ্র্য ছিল৷ আমি এ থেকে চোখ ফিরিয়ে রাখতে পারিনি৷ এই অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে অর্থনীতির তত্ত্ব পড়ানো আমার কাছে কঠিন মনে হয়েছিল... আমার চারপাশের মানুষদের আমি সহায়তা করতে চেয়েছিলাম৷’’
ছবি: AP
গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা
গরিব মানুষকে ঋণ দেওয়ার কয়েক বছরের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শেষে ১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠান করেন ড. ইউনূস৷ ২০২০ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংকের গ্রাহকের সংখ্যা ৯০ লাখের বেশি৷ এর মধ্যে ৯৭ শতাংশের বেশি নারী৷
ছবি: AP
নোবেল জয়
ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে গ্রামীণ নারীদের দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য ২০০৬ সালে ড. ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান৷
ছবি: AP
রাজনীতির চেষ্টা ও সরে আসা
২০০৭ সালে ‘নাগরিক শক্তি’ নামে একটি দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন ড. ইউনূস৷ তবে এর কয়েকদিন পর দল গঠনের প্রক্রিয়া থেকে সরে আসেন৷ সেইসময় জাতির উদ্দেশ্যে লেখা এক চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘যাদেরকে সঙ্গে পেলে দল গঠন করে জনগণের সামনে সবল ও উজ্জ্বল বিকল্প রাখা সম্ভব হতো তাদের আমি পাচ্ছি না৷ আর যারা রাজনৈতিক দলে আছেন তারা দল ছেড়ে আসবেন না৷’’
ছবি: AP
গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বের করে দেওয়া
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শেখ হাসিনার আক্রোশের শিকার হতে হয় নোবেল জয়ী এই অর্থনীতিবিদকে৷ গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ এছাড়া তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলাও করা হয়৷
ছবি: Munir uz Zaman/AFP/Getty Images
সামাজিক ব্যবসা ও উদ্যোক্তা তৈরির আন্দোলন
মাইক্রোসফটের বিল গেটস এবং মুহাম্মদ ইউনূস সামাজিক ব্যবসার উপায়গুলোকে বিশ্বব্যাপী কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন৷
ছবি: AP
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম
২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ড. ইউনূসকে দেশটির সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম’ প্রদান করেন৷
ছবি: AP
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা
২০২৪ সালের ৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস৷