আকরাম খান৷ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক এবং জাতীয় দলের সাবেক ক্যাপ্টেন৷ তিনি একই সঙ্গে ক্রিকেট পরিচালনা বোর্ডেরও চেয়ারম্যান৷
বিজ্ঞাপন
বোর্ডের সাথে ক্রিকেটারদের সম্পর্ক এবং বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে তিনি কথা বলেছেন ডয়চে ভেলের সঙ্গে৷
ডয়চে ভেলে: ক্রিকেট বোর্ডের সাথে ক্রিকেটারদের সম্পর্ক কী? বোর্ডের দায়িত্ব কী?
আকরাম খান: এটা আসলে একটি পরিবারের মত৷ পরিবারে যেরকম হয় সেরকমই৷ একটা কোড অব কন্ডাক্ট আছে বোর্ডের৷ কোনটা করা যাবে৷ কোনটা করা যাবেনা৷ এটার মাধ্যমে দুই পক্ষই কাজ করে৷ বোর্ডের আরো অনেক দায়িত্ব আছে৷ এখন আপনারা যেমন সাকিবকে চেনেন৷ ক্রিকেট নিয়ে ভাবেন৷ এখন অনেকেই খেলছেন ন্যাশনাল টিমে৷ তার আগে ধরেন সাত-আট বছর বোর্ড ওদের তৈরি করেছে৷ নার্সিং করেছে৷ বোর্ডের প্রচেষ্টাতো অনেক বেশি থাকে৷ তার এক্সপোজার অত বেশি হয়না৷
‘‘মাঝখানে একটা ভুল হয়েছিল’’
বোর্ডের এখন নিয়ম হলো মিডিয়াতে কোনো নেগেটিভ কথা বলা যায়না৷ কর্পোরেটে যা হয়৷ বোর্ড এখন সেরকমই৷
বোর্ড কি তাহলে ক্রিকেটারদের মনিটরিং অর্গানাইজেশন?
হ্যাঁ৷ বোর্ড ক্রিকেটের জন্য সব করে৷
ফ্যামিলির মত হলে তার চুক্তি, খেলা সবই কি বোর্ড নিয়ন্ত্রণ করে?
হ্যাঁ৷ সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে৷ বিদেশে কে কোথায় খেলছে বোর্ডকে জানানো হয়৷ প্লেয়াররাও জানায়৷ ফ্রাঞ্চাইজি সব কিছুই বোর্ডের জানার বাইরে হয়না৷ ক্রিকেটারদের বেতন, ম্যাচ ফি সবই বোর্ড ঠিক করে৷
এখন বোর্ডের সাথে ক্রিকেটারদের সম্পর্ক কেমন? আপনি কিভাবে দেখেন?
না, এখন ভালো৷ মাঝখানে একটা ভুল হয়েছিল৷ ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল৷ সেটাতো এখন ভালো হয়ে গেছে৷ ঠিক হয়ে গেছে৷
আপনি ক্রিকেটারদের ধর্মঘটের কথা বলছেন?
হ্যাঁ৷
ক্রিকেটারদের দাবি ধর্মঘট ছাড়া মিটোনোর সুযোগ ছিল কিনা?
যে দাবী গুলো করা হয়েছে তার কিন্তু ৫০ ভাগ কাজ আমরা তার আগেই করে ফেলেছিলাম৷ ওদের উচিত ছিলো ওরা আমাদের কাছে এসে ব্যাপারটা বলত৷ তারপর আমরা না মানলে তারা যেভাবে দাবী করা হয় সাধারণভাবে সেভাবে করতে পারত৷ সেই দাবিটা বেটার হতো৷
অক্টোবরের সাকিব
২০১৯ সালের অক্টোবের শেষ দিনগুলো ভুলতে পারবেন না বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান৷ এ মাসে বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনকে জ্বলন্ত উনুনে চাপিয়েছেন তিনি, নিজেও জ্বলেছেন কড়া আগুনে৷ নিষিদ্ধের আগে-পরের সাকিবকে দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. S. Kodikara
ক্রিকেটারদের ধর্মঘট
ঘরোয়া ক্রিকেটে পারিশ্রমিক বাড়ানো, ক্রিকেটারদের প্রতি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোসহ ১১ দফা দাবিতে সাকিবের নেতৃত্বে গত ২১ অক্টোবর অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে যান ক্রিকেটাররা৷
ছবি: bdnews24.com
বিদ্রোহ নয়
কাউকে কিছু না জানিয়েই ক্রিকেটাররা ধর্মঘটে গেলেও এটিকে বিদ্রোহ হিসেবে দেখেনি কে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড৷ আলোচনার মধ্য দিয়ে দ্রুত সমস্যার সমাধান সম্ভব বলেও জানিয়েছিল বিসিবি৷
ছবি: Getty Images/D. Sarkar
যড়যন্ত্র তত্ত্ব
ক্রিকেটাররা ধর্মঘটে যাওয়ার পরের দিন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এই কর্মসূচির পেছনে বিশেষ মহলের চক্রান্ত রয়েছে বলে দাবি করেন৷ একইসঙ্গে আলোচনার দুয়ার খোলা আছে বলেও জানান তিনি৷
ছবি: bdnews24
'ষড়যন্ত্র নয়, রুটি-রুজির দাবি'
ক্রিকেটারদের আন্দোলনের পেছনে কোনো একটি মহলের ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেয়েছিলেন বিসিবি সভাপতি৷ তবে কোনো ষড়যন্ত্র নয় বরং এই আন্দোলনকে সাধারণ ক্রিকেটারদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার লড়াই বলে জানান ক্রিকেটারদের আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান৷
ছবি: bdnews24.com
ধর্মঘটের অবসান
বিসিবির সঙ্গে বৈঠকে অধিকাংশ দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে ২৩ অক্টাবর ধর্মঘট স্থগিত করেন ক্রিকেটাররা৷ বিসিবি প্রধান জানান, ২৫ অক্টোবর থেকে ভারত সফরের পূর্ব নির্ধারিত ক্যাম্পে যোগ দেবেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা৷
ছবি: bdnews24.com
অনুশীলনে নেই সাকিব
ভারত সফরের আগে বাংলাদেশের প্রস্তুতি ক্যাম্পের প্রথম দিন অধিনায়ক সাকিব অংশ নেননি৷ টি-টোয়েন্টি সিরিজের স্কোয়াডে না থাকলেও অনুশীলনে ছিলেন ওপেনার ইমরুল কায়েস৷ সাকিব কেন অনুশীলনে অনুপস্থিত তখন কেউই তা জানত না৷
ছবি: Getty Images/M. Steele
নিষিদ্ধ সাকিব
ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পাওয়ার পর তা গোপন করায় বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে ২৯ অক্টোবর দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে আইসিসি৷
ছবি: picture-alliance/A. Salahuddin
দুঃখ প্রকাশ সাকিবের
ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব গোপন করে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা পাওয়া সাকিব আল হাসান শাস্তি মেনে নিয়ে আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমে নিজের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে না পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন৷
ছবি: picture-alliance/T. Basnayaka
এমসিসি কমিটি থেকে পদত্যাগ
আইসিসির নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার পর ৩০ অক্টোবর এমসিসি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট কমিটি থেকে সরে দাঁড়ান সাকিব৷ ক্রিকেটের প্রাসঙ্গিক অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা করে এই কমিটি৷ সমসাময়িক ক্রিকেটের আইন-কানুনসহ নানা পরিবর্তন ও ক্রিকেটের ভালো-মন্দ নিয়ে সুপারিশ করে আইসিসিকে৷
ছবি: Munir uz Zaman/AFP/Getty Images
ট্রেনিংয়ের সুবিধা
নিষেধাজ্ঞা পেলেও সাকিবকে অনুশীলনের সুযোগ-সুবিধা দেবে বলে বিসিবি জানায়৷ তবে দলের সঙ্গে ট্রেনিং করতে পারবেন না তিনি৷
ছবি: AP
শাস্তি কমানোর আইনি দিক দেখছে বিসিবি
সাকিবের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ কোনোভাবে খানিকটা হলেও কমানো যায় কিনা, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে ৩১ অক্টোবর জানায় বিসিবি৷ বোর্ডের আইনি দল এনিয়ে কাজ করছে বলে বোর্ড থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
এমন মুখ দেখেনি কেউ
নিষিদ্ধ হওয়ার পর বিসিবিতে ৩০ মিনিট ছিলেন সাকিব৷ বিসিবি কর্তাদের সঙ্গে ১৫ মিনিট কথা বলেন, এরপর বিসিবির সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আসেন তিনি৷ লিখিত বক্তব্য শেষে সাকিবকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা৷ বিসিবি প্রধান পাপন সবাইকে থামিয় দিয়ে কথা বলেন, এসময় সাকিব তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রায় মূর্তির মত৷
ছবি: bdnews24.com
ঢাকা পড়ল নক্ষত্র
বাংলাদেশের হয়ে সাকিবের কীর্তিগুলো ক্রিকেট বিশ্বে তাকে কাছে অনন্য করে তুলেছে৷ সব ফরম্যাটেই বাংলাদেশের সেরা এই খেলোয়াড়ের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অর্জনগুলো সেরার সেরাদের তালিকায় নিয়ে গেছে৷ আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় ভক্তদের কাছে নক্ষত্রতুল্য এই ক্রিকেটারর ব্যাট-বল কিছুদিনের জন্য উঠিয়ে রাখতে হবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Dennis
ফিরবেন সাকিব
ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব গোপন করে লম্বা সময়ের জন্য নিষেধাজ্ঞা পাওয়া সাকিব শিগগিরই ক্রিকেটে ফিরবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিসিবি সভাপতি পাপন৷ কঠিন এই সময়ে বিসিবিসহ সর্বস্তরের মানুষও তাঁর পাশে থাকার অঙ্গিকার করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
শুধুই ফেরা নয়
নিষেধাজ্ঞার দিনটিতে সতীর্থদের কাছ থেকে অকুণ্ঠ সমর্থন ও ভালোবাসা পেয়েছেন সাকিব৷ ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা আশা করছেন, নিষেধাজ্ঞা শেষে ২০২৩ সালের বিশ্বকাপে সাকিবের নেতৃত্বেই ফাইনালে খেলবে বাংলাদেশ৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. S. Kodikara
15 ছবি1 | 15
এই ধরণের ঘটনা বোর্ডের সাথে ক্রিকেটারদের সম্পর্ক ও পারফরমেন্সে প্রভাব ফেলে কিনা?
অবশ্যই এতো তো ভুল বোঝাবুঝি হয়৷ প্রভাব ফেলে৷ কিন্তু এবার পরেতো আমাদের মাননীয় বোর্ড প্রেসিডেন্ট খুব সুন্দরভাবে এটা হ্যান্ডেল করলেন৷ এক মিটিং-এ সব কিছু শেষ হয়ে গেছে৷ এখানে আমার মনে হয়না আর কোনো মনোমালিন্য থাকবে৷
অন্যান্য দেশে বোর্ডের সাথে ক্রিকেটারদের সম্পর্ক কি রকম হয়?
আমাদের দেশের মতই৷ সেইম৷ কোড অব কন্ডাক্টও সেইম৷
সাকিবের ক্ষেত্রেওতো একটা ঘটনা ঘটল৷ এটা বোর্ড কিভাবে কাটাবে?
আপনারা নিউজটাতো পড়েছেন, পড়েন নাই? তাহলে বোর্ড কী করবে? ওখানে আকসু হলো আইসিসির একটা বডি৷ যারা ম্যাচ ফিক্সিং বা এগুলোতে জড়িত থাকে তাদের নিয়ে কাজ করে৷ এখানে আইসিসি ছাড়া বোর্ড কিছু করতে পারবেনা৷
ভবিষ্যতে ক্রিকেটারদের জন্য তাহলে এখন বোর্ডের কি করণীয়?
আমরা যখন বয়স ভিত্তিক ১৪ ও ১৫ টিম গঠন করি তখন থেকেই আমরা এই শিক্ষাটা দেই৷ কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ, কোনটা আইসিসিতে ব্যান্ড, কোনটা ব্যান্ড না, কোন ওষুধ খেতে পারবে, কোনটা পারবেনা- এর সব ক্লাস আমরা করাই৷
সাকিব গ্রামীণ ফোনের সাথে চুক্তি করে কি কোনো নিয়ম ভঙ্গ করেছেন?
এধরণের চুক্তি করতে হলে বোর্ড থেকে এনওসি( নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) নিতে হয়৷ সাকিব এনওসি নেন নি৷
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷