টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স নিয়ে মাঠের বাইরে যত কথা তাতে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন বোর্ড প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন, তার কথা সীমানা ছাড়িয়ে যায়, ‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চাই' অনুষ্ঠানে এমন কথা বলেছেন আলোচকরা৷
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার ‘বাংলাদেশ ক্রিকেটের দুরবস্থার দায় কার'- শীর্ষক এই টকশোতে অংশ নেন তিনজন অতিথি- বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক হোসেন এবং সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক উৎপল শুভ্র ও মোস্তফা মামুন৷ মাঠের বাইরে বোর্ড প্রেসিডেন্ট, খেলোয়াড় এমনকি পরিবারের সদস্যদের মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে উৎপল শুভ্র ও মোস্তফা মামুন দু'জনই বাছাই পর্বে স্কটল্যান্ডের কাছে হারের পর টস নিয়ে বোর্ড প্রেসিডেন্টের মন্তব্যের সমালোচনা করেন৷
মোস্তফা মামুন বলেন, ‘‘মাঠের বাইরে থেকে সবচেয়ে বড় শট খেলেছেন নাজমুল হাসান পাপন৷ তিনি কেন এত কথা বলেন সেটাই আমার প্রশ্ন৷ ওনার কথা সীমানা ছাড়িয়ে যায়৷''
বাংলাদেশের খেলার ব্যর্থতার দায়ও মোটা দাগে ক্রিকেট বোর্ডের ওপর বর্তায় বলে মনে করেন আলোচকরা৷ উৎপল শুভ্র বলেন, কিছু সাফল্য থাকলেও সাবের হোসেন চৌধুরীর পরের প্রেসিডেন্টরা খুব ভালো করতে ব্যর্থ হয়েছেন৷
‘‘নাজমুল হাসান পাপনের ভালোবাসাও জাতীয় দল কেন্দ্রিক৷ এটা ভয়ের জায়গা,'' বলেন তিনি৷ ক্রিকেট নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে ভালো কাজ করা হয় না বলে মনে করেন আলোচকরা৷ ‘‘বেসিক বিষয়গুলো নিয়ে যদি কাজ না করি, তাহলে যতবার দল জিতবে আমরা লাফাবো, যতবার হারবে ততবার দুঃখ পাবো,'' বলেন শুভ্র৷
জাতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ বলেন, ‘‘অনেক জিনিস হয়তো খুব ভালোভাবে চলছে না৷ বর্তমান প্রেসিডেন্টের অধীনে ওয়ানডেতে কিন্তু খারাপ করছে না৷ সাফল্য কিছু আছে৷ তবে অনেক জায়গা আছে, সেগুলো যদি ইমপ্রুভ না করি, তাহলে কাজ হবে না৷''
বোর্ডে একাধিক পক্ষ নিজেদের স্বার্থে দলের হারজিত নিয়ে নানা কথা বলছে উল্লেখ করে ফারুক বলেন, ‘‘এখন দুই তিনটা পক্ষ তৈরি হয়ে গেছে৷ বোর্ড থেকে কোন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা যখন ডিরেক্টলি বলেন, তখন ভয়ঙ্কর সিচুয়েশন তৈরি হয়৷''
আলোচকরা অভিযোগ করেন, বর্তমান বোর্ডে বড়লোকের পরিবারের লোকেরা সদস্য হন৷ তৃণমূলের সংগঠকরা এর সদস্য হন না৷ রাজনৈতিক বিবেচনায় তৃণমূলেও ক্রিকেটের সংগঠক নির্বাচিত হন৷ তাই সত্যিকার ক্রিকেটপ্রেমীরা হারিয়ে গেছেন৷ মোস্তফা মামুন বলেন, ‘‘যদি ক্রিকেট বোর্ডে সত্যিকারের নির্বাচন হয়, সেই সত্যিকারের নির্বাচনের মাধ্যমে যদি পাপনও জেতেন, তাহলে তিনিও সিরিয়াস হবেন৷ বোর্ড সদস্যদের নিজেদের প্রমাণ করে নির্বাচিত হতে হবে৷''
বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দল এখনো ওয়ানডে দলের ছায়ায় রয়ে গেছে উল্লেখ করে আলোচকরা এবারের বিশ্বকাপের পর টি-টোয়েন্টি দলকে ঢেলে সাজাবার পরামর্শ দেন৷
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগের প্রধান খালেদ মুহিউদ্দীন৷
জেডএ/এফএস
বাংলাদেশ ক্রিকেটে ট্রল
বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটার বিভিন্ন সময়ে ট্রলের শিকার হয়েছেন৷ ক্রিকেট খেলা অনেক জনপ্রিয় হওয়ায় সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে পছন্দ করেন সমর্থকরা৷
ছবি: Getty Images/J. Mansfield
চিকিৎসকদের ট্রলের শিকার মাশরাফি
২০১৯ সালে নড়াইলের আধুনিক সদর হাসপাতালে গিয়ে মাশরাফি চার চিকিৎসককে অনুপস্থিত পান৷ এরপর রোগী সেজে তিনি এক চিকিৎসককে ফোন করলে ঐ চিকিৎসক পরে এসে চিকিৎসা নিতে বলেন৷ এরপর নিজের পরিচয় দিয়ে ওই চিকিৎসককে মাশরাফি বলেন, ‘‘এখন যদি হাসপাতালে সার্জারির প্রয়োজন হয়, তাহলে সেই রোগী কী করবে?’’ এই ঘটনায় চিকিৎসকদের একটি অংশের ট্রলের শিকার হয়েছিলেন মাশরাফি৷ পারলে তাকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে দেখাতেও বলেন কেউ কেউ৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Melville
সাকিবের অরেঞ্জ জুস মন্তব্য
২০১৪ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ভালো করতে পারেনি৷ প্রথম আলোকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সাকিব পরে বলেছিলেন, ‘‘টি-টোয়েন্টির জন্য সবচেয়ে বেশি টাকা পায় কারা? গেইল, ডি ভিলিয়ার্স—কী পাওয়ার ওদের খেলায়! জাতিগতভাবেই আমরা শারীরিকভাবে ওদের চেয়ে পিছিয়ে৷ জন্মের পর থেকে আমরা খাই সবজি খিচুড়ি...নরম করে রান্না করা৷ আর ওরা ছোটবেলা থেকে অরেঞ্জ জুস খায়৷’’ এই মন্তব্য নিয়ে পরে অনেক ট্রল হয়েছিল৷
ছবি: Munir Uz Zaman/Getty Images/AFP
ট্রলের শিকারও তামিম
২০১৫ বিশ্বকাপটা ভালো কাটেনি তামিমের৷ তাই সেই সময় অনেক ট্রলের শিকার হতে হয়েছে তাকে৷ একটা ট্রল ছিল এরকম, ‘ম্যাগী নুডুলস সিদ্ধ হওয়ার আগেই তামিম আউট’৷ এসব ঘটনায় ভীষণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন তামিম৷ এক পর্যায়ে বিশ্বকাপ চলার সময় অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাকটিভেট করে রাখতেও বাধ্য হয়েছিলেন৷ তামিমের স্ত্রীকেও গভীর রাতে ফোন করে গালিগালাজ করা হয়েছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Kington
মুশফিকের আয়না
চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার কাছে হারার পর মুশফিক বলেন, ক্রিকেটারদের সমালোচনা যারা করেন, তাদের উচিত আগে আয়নায় নিজের মুখ দেখে নেওয়া৷ এরপর থেকে সামাজিক মাধ্যমে কেউ তাকে ‘আয়নাবাজ’ আবার কেউ ‘আয়নাপুরুষ’ নামে ডাকা শুরু করে৷ এর আগেও বিভিন্ন সময় মুশফিককে নিয়ে ট্রল হয়েছে৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP
ক্যাচ মিস করায় তোপের মুখে লিটন
শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ঐ ম্যাচ দুটো ক্যাচ ধরতে পারেননি লিটন দাস৷ দলের পরাজয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করে সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনা ও ট্রলের শিকার হয়েছেন তিনি৷ এটা করতে গিয়ে অনেকে ধর্মের বিষয়টিও টেনে এনেছেন৷ এছাড়া একদিনের ম্যাচে লিটনের করা চার শতকের তিনটি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হওয়ায়ও অতীতে তাকে নিয়ে ট্রল হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
‘ইমরুল ব্রো’
২০১৯ সালে ভারত সফরে দুই টেস্টে ইমরুল কায়েসের স্কোর ছিল ৬, ৬, ৪ ও ৫৷ সেই সময় ফেসবুকে তাকে নিয়ে অনেকে ট্রল করেছিলেন৷ অবশ্য ঐ সফরের আগে থেকেই তাকে ফেসবুকে ‘ইমরুল ব্রো’ নামে ডাকা হচ্ছিল৷ এ প্রসঙ্গে পরে প্রথম আলোকে তিনি বলেছিলেন, ‘‘অনেক ক্রিকেটার আছে যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে নষ্ট হয়ে গেছে৷ চাপ নিতে পারেনি৷ আমি বলব, যদি আপনারা দেশের ভালো চান, দয়া করে এসব বন্ধ করুন৷’’
ছবি: Getty Images/M. Lewis
গতিদানব
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজন মিডিয়াম পেসার ছিলেন৷ কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে তাকে ‘গতিদানব’ বলে ট্রল করা হয়৷ এ প্রসঙ্গে গত আগস্ট মাসে কালের কণ্ঠকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি মনে করি, যারা এগুলো বলে তারা ক্রিকেটটাই কম বোঝে বেসিক্যালি৷’’
ছবি: Getty Images/R. Kinnaird
‘মি. ইন্টারফেয়ারার’
দলে কাকে রাখা হবে, টসে জিতলে কী নিতে হবে ইত্যাদিসহ বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রায় সব বিষয়েই সিদ্ধান্ত দেন নাজমুল হাসান পাপন৷ সেজন্য সমালোচনার পাশাপাশি তাকে নিয়ে ট্রল হয়েছে৷ তাকে ডাকা হয় মি. ইন্টারফেয়ারার নামে৷ এক পর্যায়ে সেসব কাজ থেকে একটু দূরে সরে গিয়েছিলেন বিসিবি সভাপতি৷ পরে গত ফেব্রুয়ারিতে আবারও আগের রূপে ফেরার কথা জানিয়েছিলেন তিনি৷ তা না হলে নাকি বাংলাদেশের ক্রিকেটের ক্ষতি হচ্ছিল!
ছবি: bdnews24
বিসিবি সভাপতির ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট
এ বছরের শুরুতে বিসিবি সভাপতির নামে ফেসবুকে কয়েকটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে সেসব থেকে ট্রলের ঝড় বয়ে গিয়েছিল৷ আইপিএল খেলতে সাকিবের ছুটি নেওয়া, নাসির হোসেনের বিয়েসহ কিছু ঘটনায় ঐসব আইডি থেকে নানা রকম স্ট্যাটাস ও মন্তব্য পোস্ট করা হয়েছিল৷ পরে বিষয়টি বিসিবির চোখে পড়লে সেগুলো বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হয়৷