সাবেক মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন সেনেটে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট তদন্তে সাক্ষ্য দিতে চান৷ ফলে প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে৷
বিজ্ঞাপন
ইরানের প্রতি ‘রণংদেহী' মনোভাব দেখিয়েও নিজের গদি সামলাতে পারছেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ দেশের সংকটের সময়ে ঐক্যের আশায় পানি ঢেলে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে রোষ কমছে না৷ সংসদের উচ্চ কক্ষ সেনেটেও ইমপিচমেন্ট তদন্তের প্রস্তুতি চলছে৷ তবে সেখানে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় আপাতত কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছেন ট্রাম্প৷
এরই মাঝে সোমবার প্রাক্তন নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন জানিয়েছেন, তলব করলে তিনি সেনেটে সাক্ষ্য দিতে প্রস্তুত৷ ইউক্রেনের উপর প্রেসিডেন্ট অনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন বলে যে অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখতে পারেন বোল্টন৷ কারণ তিনি সে সময়ে হোয়াইট হাউসে ক্ষমতাকেন্দ্রে সক্রিয় ছিলেন৷ বোল্টন গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্যপ্রমাণ পেশ করলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও রিপাবলিকান দলের পক্ষে সেই ধাক্কা অগ্রাহ্য করা কঠিন হয়ে পড়বে৷ উল্লেখ্য, ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী রুডি জুলিয়ানি ইউক্রেনের সরকারের উপর যে চাপ সৃষ্টি করেছিলেন, বোল্টন তার চরম বিরোধিতা করেছিলেন বলে নিম্ন কক্ষের তদন্তের সময় একাধিক সাক্ষী দাবি করেছেন৷
ইউক্রেনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ট্রাম্প ও বোল্টনের তীব্র মতবিরোধ ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়ার গতিপ্রকৃতি বদলে দিতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন৷ নিম্ন কক্ষের তদন্তের সময় বোল্টন অংশ নিতে অস্বীকার করেছিলেন৷ ট্রাম্প প্রশাসন তথ্যপ্রমাণ ও সাক্ষ্য আড়াল করতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন৷ কিন্তু সেই মামলায় সরকারের পরাজয়ের পর বোল্টন সাক্ষী হিসেবে এগিয়ে এসেছেন৷
বিরোধী ডেমোক্র্যাট দল বোল্টনের এই ঘোষণার ফলে নড়েচড়ে বসেছে৷ সেনেটের তদন্ত প্রক্রিয়ায় তাঁরা ট্রাম্প প্রশাসনের তিনজন সক্রিয় কর্মকর্তাকেও তলব করার উদ্যোগ নিচ্ছে৷ সেনেটে ডেমোক্র্যাটিক দলের নেতা চাক শুমার বলেন, রিপাবলিকান দলের সদস্যরা এই চার ব্যক্তিকে তলব করার পথে বাধা সৃষ্টি করলে স্পষ্ট হয়ে যাবে যে তাঁরা গোটা ঘটনা ধামাচাপা দেবার চেষ্টা করছেন৷
রিপাবলিকান দল আগে থেকেই কিছুটা দায়সারা ভাবে ইমপিচমেন্ট তদন্তের কাজ শেষ করার তোড়জোড় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ কোনো সাক্ষী তলব করার বদলে শুধু নিম্ন কক্ষের তদন্তে জমা পড়া তথ্যপ্রমাণ বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে চায় তারা৷ সেনেটে রিপাবলিকান দলের নেতা মিচ ম্যাককনেল এমনই প্রস্তাব দিয়েছেন৷ পরে সাক্ষী তলব করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চান তিনি৷
সেনেটে রিপাবলিকান দলের মাত্র চার জন সদস্য দলের বিরুদ্ধে গিয়ে সাক্ষী তলব করতে রাজি হলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সংকটে পড়তে পারেন৷ সে ক্ষেত্রে ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়ার শেষে ট্রাম্পকে সত্যি ক্ষমতাচ্যুত করা হতে পারে৷
‘ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি’: ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে একনজর
মার্কিন সাংবাদিক মাইকেল উলফের বই ‘ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি’ প্রকাশের আগেই ওয়াশিংটনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে৷ বইতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং হোয়াইট হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার রয়েছে৷ হোয়াইট হাউসের অন্য চিত্র ফুটে উঠেছে এতে৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS/D. Higgins
‘ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি’
মার্কিন সাংবাদিক মাইকেল উলফের নতুন বই ‘ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি: ইনসাইড দ্য ট্রাম্প হোয়াইট হাউস’৷ এই বইয়ের বিশেষ কিছু অংশ মার্কিন এবং ব্রিটিশ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে৷ বইটিতে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে হোয়াইট হাউসের এক অন্য ছবি উঠে এসেছে৷ ম্যাকডোনাল্ড বার্গারের প্রতি ভালোবাসা থেকে ইভানকা’র প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন এমন নানা বিষয় উঠে এসেছে এতে৷
ছবি: picture-alliance/AP/B. Camp
‘মেলানিয়ার চোখে জল’
‘‘নির্বাচনের রাতে, ৮টার একটু পরে, যখন মোটামুটি নিশ্চিত ট্রাম্প হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট, ট্রাম্প জুনিয়র তার বন্ধুকে বলেছিলেন, তার বাবাকে এমন দেখাচ্ছিল, যেন ভূত দেখেছেন৷ মেলানিয়ার চোখে ছিল জল, তবে তা আনন্দের নয়৷ এর এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে হতবাক ট্রাম্পকে এমন দেখাচ্ছিল যেন তিনি ঠিক বিশ্বাস করতে পারছেন না, তাঁকে দ্বিধাগ্রস্ত আর ভীত দেখাচ্ছিল৷’’
ছবি: picture-alliance/AP/V. Mayo
ইভানকা ট্রাম্প প্রথম ‘নারী প্রেসিডেন্ট’?
‘‘কোনো পুরস্কার পেতে হলে ঝুঁকি নিতে হবে– জ্যারেড এবং ইভানকা এটা মেনে নিয়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করছেন, অন্যদের পরামর্শ মেনে কাজ করছেন৷ দু’জনের মধ্যে যেন এক অলিখিত চুক্তি: ভবিষ্যতে কখনো যদি সুযোগ আসে, ইভানকাই লড়বেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিলারি নন, হবেন ইভানকা৷’’
ছবি: picture-alliance/AP/M. Sohn
ফাস্ট ফুড খেতে লাগে ভালো
‘‘অনেক আগে থেকে ট্রাম্পের মধ্যে একটি চিন্তা কাজ করে যে, কেউ তার খাবারে বিষ মিশিয়ে দিবে– এই চিন্তা থেকেই ম্যাকডোনাল্ডসের খাবার বেছে নিয়েছেন তিনি৷ কেননা, ম্যাকডোনাল্ডসের খাবার আগে থেকেই তৈরি থাকে৷ তাই কেউ জানে না যে ট্রাম্প সেটা খাবেন৷’’
ছবি: Instagram
ব্যাননের তত্ত্ব
‘‘ব্যাননের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শত্রু হলো চীন৷ নতুন শীতল যুদ্ধের প্রথম ফ্রন্ট হলো চীন৷ চীনকে নিয়েই মাথা ঘামানো উচিত, আর কিছু নিয়ে নয়৷ চীনের সঙ্গে যদি সম্পর্ক ঠিক না থাকে, কোনো কিছুই ঠিক থাকবে না৷ পুরো ব্যাপারটা খুব সহজ৷ চীনের বর্তমানে যা অবস্থা, ১৯২৯ থেকে ১৯৩০ সালে জার্মানির নাৎসিদেরও এমন অবস্থাই ছিল৷ চীনারা, জার্মানদের মতোই ভীষণ বাস্তববাদী৷’’
ছবি: picture-alliance/AP/B. Anderson
ব্যানন: ডোনাল্ড জুনিয়র ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’
‘‘ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র, জ্যারেড কুশনার এবং নির্বাচনি প্রচারণার ব্যবস্থাপক পল ম্যানাফোর্ট মনে করেন, ট্রাম্প টাওয়ারের ২৬ তলায় সম্মেলন কক্ষে বিদেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকটি একটি ভালো পরিকল্পনা ছিল৷ সেখানে কোনো আইনজীবী ছিল না৷ এখন যদি আপনার কাছে মনে হয় এটা রাষ্ট্রদ্রোহ না, দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড নয়, তারপরও আমি বলবো, এটা রাষ্ট্রদ্রোহ৷ আমাদের ঠিক সেই মুহূর্তেই এফবিআইকে খবর দেয়া উচিত ছিল৷’’
ছবি: picture-alliance/AP/C. Kaster
‘হেরে গেলেও জিতে জেতেন’
‘‘ট্রাম্প যদি নির্বাচনে হেরেও যেতন, তাহলেও বিখ্যাত হতেন৷ তার মেয়ে ইভানকা এবং জামাই জ্যারেড আন্তর্জাতিক তারকা বনে যেতো৷ স্টিভ ব্যানন হতো টি-পার্টি আন্দোলনের ডি ফ্যাক্টো প্রধান৷ অর্থাৎ হেরে গেলেও তাদের অন্যরকম জয় হতো৷’’