বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং ও এয়ারবাসকে ভর্তুকি প্রদান করা নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের অংশ হিসেবে পনির এবং ওয়াইনের মতো ইউরোপীয় পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছি৷
বিজ্ঞাপন
ইউরোপীয় কমিশনের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ভালডিস ডম্ব্রভস্কিস সোমবার জানিয়েছেন যে ইউরোপে রপ্তানি করা মার্কিন বেশ কিছু পণ্যের উপর শুল্ক ও অন্যান্য জরিমানা আরোপ করতে যাচ্ছে ইইউ, অর্থের হিসেবে যা চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বোয়িংকে অবৈধভাবে ভর্তুকি প্রদান করার প্রতিবাদে এসব শুল্ক আরোপ করছে ইইউ৷ অক্টোবরে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) এক রায়ে এধরনের শুল্ক আরোপের বিষয়টি অনুমোদন দিয়েছে৷ এরপর ইইউভুক্ত বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নতুন শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে একমত হয়৷
বাণিজ্য, শুল্ক ও টয়লেট ব্রাশ: ২০১৯র ব্যবসা চিত্র
যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধ চরমে পৌঁছেছে, ব্রেক্সিট অচলাবস্থা নিরসনেও নেই আশার আলো৷ যুক্তরাষ্ট্রের বিমান নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বোয়িংও তাদের নতুন মডেল ৭৩৭ ম্যাক্স নিয়ে চরম বেকায়দায়৷ দেউলিয়া হয়েছে বিখ্যাত টমাস কুক৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
ট্রাম্প ব্রাশ কেন বেস্টসেলার?
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দারুণ সক্রিয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনর্থক কথার জন্যও কুখ্যাত৷ তার উদ্ভট কর্মকাণ্ডের প্রভাব এমনকি দেশটির ফেডারেল রিজার্ভের উপরও পড়েছে, মন্থর হয়েছে অর্থনীতির চাকা৷ চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করে তিনি দেশি কোম্পানিগুলেও বিপদে ফেলেছেন৷ এই যখন অবস্থা তখন রাগ কমাতেই হয়তো ট্রাম্পের আদলে তৈরি এই টয়লেট ব্রাশের এত চাহিদা৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
পাল্টা-পাল্টি শুল্কারোপ, কবে হবে চুক্তি?
বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দুই দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে গত দুই বছর ধরে যে বাণিজ্য যুদ্ধ চলছে তাতে শুধু তারাই নয় বরং বিশ্বজুড়ে প্রায় সব কোম্পানিকে ফল ভোগ করতে হচ্ছে৷ উভয় দেশ পরষ্পরের পণ্যের উপর চার হাজার ৫০০ কোটি টাকার শুল্কারোপ করেছে৷
ছবি: AFP/M. Medina
হুয়াওয়ে কি শেষ?
চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধের সবচেয়ে বড় বলি সম্ভবত হুয়াওয়ে৷ ট্রাম্প চীনের বৃহৎ এ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্কের উপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন৷ ওই নিষেধাজ্ঞার গ্যাড়াকলে পড়ে অন্যান্য দেশও হুয়াওয়ের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারছে না৷
কোন পথে ব্রেক্সিট?
গত দুই বছর ধরে ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্কোচ্ছেদ প্রশ্নে যুক্তরাজ্যে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা আবসানের পথ এখনো দেখা যাচ্ছে না৷ যদিও আগাম নির্বাচনে আরো বড় জয় নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসা প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন যেকোনো মূল্যে ব্রেক্সিট চান৷ কিন্তু পার্লামেন্ট তাকে সেই পথে কতটুকু সফল হতে দেবেন সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা৷
ছবি: Reuters/F. Lenoir
বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্সের ভবিষ্যৎ কী?
মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানে দুইটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ৩৬০ জনের বেশি আরোহী নিহত হওয়ায় পর বিশ্বের সব এয়ারলাইন বোয়িংয়ের নতুন এ মডেলের বিমান উড্ডয়ন বন্ধ করে দেয়৷ বেশ কয়কজন পাইলটও বিমানটির স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ প্যানেল নিয়ে আভিযোগ করেছেন৷ বোয়িং আপাতত এই মডেলের বিমান উৎপাদন বন্ধ রেখেছে৷
ছবি: AFP/Getty Images/M. Ralston
বাঁচানো যেত কি টমাস কুক?
যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো অবকাশ পর্যটন কোম্পানি টমাস কুককে সেপ্টেম্বরে দেউলিয়া ঘোষণার পর প্রায় দেড় লাখ পর্যটককে দেশে ফেরত আনতে দেশটির সরকারকে নতুন করে ফ্লাইটের ব্যবস্থা করতে হয়েছিল৷ যুদ্ধ পরিস্থিতি ছাড়া কখনো এমনটা করতে হয়নি৷ ১৮৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিটির এ পতন অনেকের কাছেই দারুণ হতাশার৷
ছবি: Reuters/E. Calvo
6 ছবি1 | 6
যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য গতবছরই ইউরোপের বিভিন্ন পণ্যের উপর এধরনের শুল্ক আরোপ করেছিল৷ ওয়াইন, পনির, সিঙ্গেলমল্ট হুইস্কির উপর আরোপ করা সেই শুল্কের পরিমাণ আর্থিক হিসেবে সাত বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো৷ মার্কিন প্রতিষ্ঠান বোয়িং এবং ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠান এয়ারবাসকে ভর্তুকি দেয়া নিয়ে গত ষোল বছর ধরেই ইউরোপের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই বিরোধ চলছে৷
বিশেষজ্ঞরা অবশ্য মার্কিন নির্বাচনে জো বাইডেন জেতার পরপরই ইইউ'র এই ঘোষণায় কিছুটা অবাক হয়েছেন৷ তারা মনে করছেন, এই ঘোষণা আরো কিছুদিন অপেক্ষা করার পর দেয়া যেত কেননা বাইডেন হয়ত বিষয়টি অন্যকোনোভাবে সুরাহার চেষ্টা করতেন৷
জার্মানিতে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স লবি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্ক স্পোর্টোলারি এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমার মনে হয় এই সিদ্ধান্ত অবিশ্বাস্যভাবে স্বল্পদৃষ্টির পরিচয় দিচ্ছে৷ আগামী দু'মাসের মধ্যে দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন বাইডেন৷ আমরা কেন অপেক্ষা করতে পারছি না? এবং একসঙ্গে সামনে আগানোর পথ খুঁজছি না? আমাদের এই ‘টিট ফর ট্যাট’ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে৷’’
স্পোর্টোলারি আশা করছেন, বাইডেন ভূ-রাজনীতিকে বাণিজ্যের সঙ্গে মেলাবেন না ‘‘যা ট্রাম্প করেছেন’’৷ জার্মানির অর্থমন্ত্রী পিটার আল্টমায়ারও একইরকম আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন৷