রাখাইন রাজ্যের একটি গ্রামে বৌদ্ধরা সেখানকার সাতশ’ মুসলিমের ঐ গ্রামে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে৷ সপ্তাহে মাত্র দু’বার সেখানে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে মুসলমানদের৷ ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সংকটে রয়েছেন তাঁরা৷
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় পর্যবেক্ষক এবং ত্রাণকর্মীরা বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেষা উত্তরাঞ্চলের রাখাইন রাজ্যে আবারও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন৷ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে সেখানকার অধিবাসী, ত্রাণকর্মী ও পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন, ‘‘জে ডি পিন গ্রামের মুসলমানরা গত তিন সপ্তাহ ধরে খাবার, পানি ও কাজ করার জন্য এলাকার বাইরে যেতে পারছেন না৷
পুলিশ জানিয়েছে, রাখাইনের বৌদ্ধ গ্রামবাসীরা রোহিঙ্গাদের কাছে খাবার বিক্রি না করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে৷ তবে ঐ অঞ্চলে ইচ্ছেমত ঘোরাঘুরি এবং কাজে যেতে বাধা দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন৷ পুলিশ সদরদপ্তরের মুখপাত্র কর্নেল মাইও থু সই জানিয়েছেন, ‘‘আমার ধারণা এঁদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে আর সেই কারণে তাঁরা নিজেরাই বাইরে যেতে চাইছে না৷''
রোহিঙ্গা মোনিটরিং গ্রুপের ক্রিস লিউয়া জানালেন, ‘‘জে ডি পিন গ্রামের বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে যে কোনো মুহূর্তে এখানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হতে পারে৷''
জে ডি পিন গ্রামে পাঁচ হাজার অধিবাসীর বাস৷ রয়েছে একটি মসজিদ ও বৌদ্ধদের মনাস্ট্রি৷ গত মাস থেকে বেড়া দিয়ে ৭০০ রোহিঙ্গাদের ঐ গ্রামে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করেছে বৌদ্ধরা৷ ফলে ভেতরে থাকা বাজার, মসজিদ, মিঠা পানির পুকুরে যেতে পারছে না মুসলিম অধিবাসীরা৷ জুলাইতে পাশের একটি গ্রাম থেকে এক বৌদ্ধ নিখোঁজ হওয়ার পর একই সময় তিনজন রোহিঙ্গার লাশ পাওয়া যায়৷ ঐ নিখোঁজ বৌদ্ধ ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে মুসলিমদের ঐ গ্রামে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বৌদ্ধরা-রয়টার্সকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোহিঙ্গা জানিয়েছেন এই কথা৷
পুলিশকে এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলে তারা বলেন, গত সপ্তাহে তারা ব্যাপারটি জেনেছেন, সপ্তাহে দু'দিন ১৫ জন রোহিঙ্গাকে পানি ও অন্যান্য বাজার সংগ্রহের জন্য ঐ গ্রামে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়৷ শুক্রবার দু'পক্ষ একসাথে বসে এ ব্যাপারে একমত হয়েছে বলে জানান তিনি৷
বাংলাদেশে জন্ম নেয়া রোহিঙ্গা শিশুরা
মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন৷ অনেক গর্ভবতী মা বাংলাদেশে এসে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
স্বামীর খবর জানেন না তিনি
রামিদা বেগমের স্বামীকে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী৷ এরপর তাঁদের বাড়িঘরও পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷ তার সপ্তাহখানেক পর পালিয়ে বাংলাদেশে চলে যান তিনি৷ ফলে স্বামীর খবর এখন জানেন না রামিদা৷ ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখে যখন ছবিটি তোলা হয় তখন তাঁর কন্যার বয়স ছিল ১০ দিন৷ তখনও মেয়ের কোনো নাম দেয়া হয়নি রামিদার৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
এই শিশুর বাবাকে হত্যা করা হয়েছে
স্বামীকে মিয়ানমারের সেনারা হত্যা করায় বাবামা-র সঙ্গে বাংলাদেশে চলে যান ১৮ বছরের নূর কায়েস৷ কোলে তাঁর ২৬ দিনের সন্তান, যার এখনও কোনো নাম দেননি তিনি৷ ছবিটি ৯ ফেব্রুয়ারি তোলা৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
সাত দিনের মেয়ে
ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখে যখন ছবিটি তোলা হয় তখন আসমত আরার মেয়ের বয়স ছিল মাত্র সাত দিন৷ মাসখানেক আগে তিনি প্রতিবেশীদের সঙ্গে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে যান৷ বাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার আগে তাঁর শ্বশুরকেও হত্যা করা হয়৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
সন্তানদের বাঁচাতে বাংলাদেশে
একমাস বয়সি ছেলে সন্তানের সঙ্গে রাজুমা বেগম৷ যখন বাংলাদেশে আসছিলেন তখন গর্ভবতী ছিলেন তিনি৷ সঙ্গে ১১ মাসের আরেকটি সন্তানও ছিল৷ ‘‘আমি বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছি কারণ মিয়ানমারের ভয়ের মধ্যে ছিলাম৷ আমার সন্তানদের বাঁচাতে চেয়েছি আমি’’, রয়টার্সকে বলেন বেগম৷ ছবিটি ১২ ফেব্রুয়ারি তোলা৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
দেশে ফিরতে আগ্রহী সানোয়ারা
৯ ফেব্রুয়ারি তোলা এই ছবিতে ২৫ দিনের কন্যা কোলে ২০ বছর বয়সি মা সানোয়ারা বেগমকে দেখা যাচ্ছে৷ প্রায় আড়াই মাস আগে স্বামীর সঙ্গে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছেন তিনি৷ এখন আছেন কক্সবাজারের কুতুপালাং আশ্রয়কেন্দ্রে৷ মিয়ানমারের পরিস্থিতি ভাল হলে নিজ ঘরে আবারও ফিরে যেতে চান সানোয়ারা৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে
ফেব্রুয়ারির ৯ তারিখে তোলা এই ছবিতে মারিজানকে তাঁর ২৫ দিন বয়সি কন্যা সন্তান সহ দেখা যাচ্ছে৷ পাশে তাঁর ছেলে৷ মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ঘর পুড়িয়ে দেয়ায় মাসখানেক আগে তাঁরা নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছান৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
কন্যার জ্বর
দু’মাস বয়সি মেয়ের জ্বর কিন্তু মা আরাফা বেগম জানেন না ক্লিনিক কোথায়৷ আড়াই মাস আগে স্বামী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে বাংলাদেশে আসেনি তিনি৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
বাচ্চা পর্যাপ্ত বুকের দুধ পাচ্ছে না
মিনারা বেগমের এক মাস বয়সি সন্তান পর্যাপ্ত বুকের দুধ পাচ্ছে না, কারণ তার মা পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে পান না৷ ফলে স্বাস্থ্যকর না হলেও স্থানীয় বাজার থেকে গুঁড়া দুধ কিনে খাওয়াতে হচ্ছে তাকে৷ ছবিটি ১০ ফেব্রুয়ারি তোলা৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
এলোপাথাড়ি গুলি
১৬ দিনের সন্তান কোলে মা আমিনা৷ ‘‘মাস দেড়েক আগে মিয়ামারের সেনাবাহিনী আমাদের গ্রামে ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে৷ আমি কোনোরকমে প্রতিবেশীদের সঙ্গে পালিয়ে বেঁচেছি৷ তারা আমার চাচা আর ছোটভাইকে ধরে নিয়ে গেছে৷ তারা বেঁচে আছে কিনা জানিনা’’, ৮ ফেব্রুয়ারি রয়টার্সকে কথাগুলো বলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
বয়স মাত্র একদিন
ফাতেমার সন্তানের বয়স মাত্র একদিন৷ ছবিটি ফেব্রুয়ারির ৯ তারিখে তোলা৷ মিয়ানমারে তাদের ঘর পুড়িয়ে দেয়ায় মাস দুয়েক আগে স্বামীর সঙ্গে বাংলাদেশে চলে আসেন৷ এখন তাঁর স্বামী দিনমজুর হিসেবে কাজ করছেন৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
10 ছবি1 | 10
আগস্টের ১০ তারিখে একটি নিরাপত্তা বৈঠকে নেত্রী অং সান সুচি রাখাইনে নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ দেয়ার পর ঐ অঞ্চলে আরও ৫০০ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে৷ এরপর পাশের পাহাড়ি এলাকায় রোহিঙ্গা জঙ্গিদের সন্ধানে অভিযান শুরু করেছে তারা৷ স্থানীয় বাসিন্দাদের পাহাড়ি এলাকায় প্রবেশে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের এক মুখপাত্র৷
সরকার বলছে, তারা ঐ এলাকায় নিরাপত্তা উন্নয়নে কাজ করছে৷ ২০১২ সাল থেকেই মিয়ানমারে সাম্প্রদায়িকতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে৷ সেসময় রাখাইনে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০ মানুষ নিহত হয়, ১ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়৷
রাখাইনে ১১ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিমের বাস, যাদেরকে সেদেশের সরকার নাগরিকতা দিতে নারাজ৷ এমনকি দেশের সব জায়গায় চলাচলের অনুমতি নেই তাদের৷ দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায় তাদের অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী বলে উল্লেখ করে৷ গত বছরের অক্টোবরে রাখাইনে ৯ পুলিশ নিহত হওয়ার পর পুলিশের অভিযান শুরু হয়৷ ঐ অভিযানে রোহিঙ্গাদের উপর হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে মিয়ানমারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে৷ তখন থেকে এ পর্যন্ত ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে৷