1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা মৌলিক অধিকার

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
২৫ আগস্ট ২০১৭

ব্যক্তি জীবনের গোপনীয়তা রক্ষা নাগরিকের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে৷ রায় দিয়েছে ভারতের শীর্ষ আদালত৷ মোদী সরকারের অবস্থান এর বিপরীতে থাকায় রায়টিকে একযোগে স্বাগত জানিয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো৷

Indien Recht auf Privatsphäre- Aadhar Karte
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Das

ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার ভারতীয় নাগরিকদের সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার৷ এক ঐতিহাসিক রায়ে সুপ্রিম কোর্টের নয় সদস্যের একটি সাংবিধানিক বেঞ্চ এ কথা জানায়৷ ব্যক্তিগত সম্পর্ক, পারিবারিক জীবন, বিবাহ এবং যৌন ইচ্ছা-অনিচ্ছা ইত্যাদি এর মধ্যে পড়ে৷ বলা হয়েছে, গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার সংবিধানের ২১ নং ধারায় সুরক্ষিত এবং বেঁচে থাকার প্রাকৃতিক নিয়মেই তা সংবিধানের অঙ্গ৷ জীবনে বেঁচে থাকার অধিকারের মতোই সহজাত৷ রায়ে এ কথাও বলা হয়ল যে গোপনীয়তার অর্থ নিরঙ্কুশ অধিকার নয়৷ তবে এর অর্থ ব্যক্তিজীবনে অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপও নয়৷ এ জন্য ডেটা বেস সুরক্ষার দিকে সরকারকে নজর নিতে হবে, নিশ্ছিদ্র করতে হবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা৷ ব্যক্তি বিশেষের স্বার্থ এবং সরকারের বৈধ প্রয়োজনের মধ্যে বজায় রাখতে হবে একটা ভারসাম্য৷

সুপ্রিম কোর্টে পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চে প্রথম আধার কার্ড নিয়ে মামলা ওঠে৷ আধারকার্ড হলো নাগরিকদের বায়োমেট্রিক পরিচয়পত্র৷ তখন প্রশ্ন ওঠে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা নাগরিকের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে কিনা৷ এর চূড়ান্ত ফয়সালার জন্য বিষয়টি পাঠানো হয় সুপ্রিম কোর্টের ন'জন সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চে গত ১৮ই জুলাই৷ তিন সপ্তাহ ধরে পক্ষে এবং বিপক্ষে জোর যুক্তিতর্ক, সওয়াল জবাবের পর শীর্ষ আদালত সর্বসম্মতভাবে এই সিদ্ধান্তে আসেন৷ এই রায়ের ভিত্তিতেই হবে আধার কার্ড সংক্রান্ত মূল মামলার শুনানি পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে৷ সরকার এ যাবত বলে এসেছে, আধার কার্ডের জন্য নাগরিকদের একান্ত ব্যক্তিগত জীবনের খোঁজ খবর প্রকাশ্যে আসবে না৷ অধিকার খর্ব হবে না৷ কার্যত, এটা মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে না৷ এবার অবস্য এই রায়ে তা উলটে গেল৷ দলমত নির্বিশেষে সবাই এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে৷ এমনকি সরকারও তা মেনে নিয়েছে৷

কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শীর্ষ আদালতের রায় সরকারের অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ৷ সংবিধানের ২১ নং ধারা অনুসারে নাগরিকের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার সমর্থন করে সরকার, কিন্তু সেটা হবে যুক্তগ্রাহ্য বিধি-নিষেধের আওতায়৷ কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী মোদী সরকারকে শাণিত আক্রমণ করে বলেন, ব্যক্তিস্বাধীনতা খর্ব করার সরকারি ঔদ্ধত্য এবার বন্ধ হবে৷ কংগ্রেসকে পালটা বিদ্ধ করে আইনমন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ বলেন, ব্যক্তি স্বাধীনতার রেকর্ড কংগ্রেস জমানায় কি ছিল? জরুরি অবস্থাকালে জেলে কেউ মারা গেলে বলা হতো, কিছু করার নেই৷ এই তো কংগ্রেস শাসনের রেকর্ড৷ তাই কংগ্রেসের মুখে ব্যক্তিস্বাধীনতা বেমানান৷ কংগ্রেস জোট সরকারের আমলেই আধার কার্ড চালু হয়, আইনি রক্ষাকবচের সংস্থান ছাড়াই৷ বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ মনে করেন, এই রায়ে মোদী সরকার জোর ধাক্কা খাবে৷ বামদলগুলিও ঐ একই কথা বলেছে৷

Dr. A Mukherjee - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

উল্লেখ্য, সরকার সব কাজেই আধারকার্ডকে বাধ্যতামূলক করেছিল৷ যেমন সামাজিক কল্যাণ প্রকল্প, আর্থিক লেনদেন, বিষয় সম্পত্তি, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, আয়কর রিটার্ন ইত্যাদি৷ তার মানে সব কিছুতেই আধারকার্ড চাই-ই চাই৷ প্রসঙ্গত, আধারকার্ডে থাকে প্রত্যেকের ফিঙ্গার প্রিন্ট এবং কোড নম্বর৷

অবশ্য কোর্টের এই রায় ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্টেরই দেওয়া ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ নং ধারার রায় উলটে দিলো৷ ঐ রায়ে সুপ্রিম কোর্ট সে সময় বলেছিল, দু'জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে যদি স্বেচ্ছায় যৌন সম্পর্ক হয়, সেটাও অপরাধ বলে গণ্য হবে৷ তাই বর্তমান রায়ে স্বভাবতই সমকামীরা খুশি৷

নাগরিক সমাজ কী বলছে? প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ড. অমল মুখোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলেকে বললেন, সুপ্রিম কোর্ট সঠিক রায় দিয়েছে৷ সংবিধানের ২১ ধারায় মানুষের জীবনের অধিকার এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার দেওয়া হয়েছে৷ কাজেই ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অন্তর্ভুক্ত৷ সেই কারণেই শীর্ষ আদালত রায় দিয়েছে যে, গোপনীয়তা নাগরিকের মৌলিক অধিকার৷ আর আধার কার্ড ব্যক্তির পরিচয়ের স্মারক৷ সেটা নিয়ে সত্যিই সরকার বাড়াবাড়ি শুরু করেছিল৷ আধারকার্ডে যে নম্বরটা আছে, সেটার গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার ব্যক্তির আছে৷ কাজেই ভারতীয় সমাজ জীবনে সুপ্রিম কোর্টের এই রায় যে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাবে, তাতে সন্দেহ নেই৷ যখন তখন যে-কেউ এই গোপনীয়তার অধিকার হরণ করতে পারে না৷ অনেক সময় সংবাদপত্র নাম করা ব্যক্তিদের সম্পর্কে গুজব ছড়ায়, সেটা বন্ধ হবে৷

দ্বিতীয়ত, প্রাতিষ্ঠানিক স্তরে যেসব আর্থিক লেনদেন হয় তা কম্পিউটারের যুগে আধুনিক প্রযুক্তি কল্যাণে সবকিছুই সরকার জানতে পারে৷ তবে ব্যক্তিগত স্তরে যেসব লেনদেন হয়, তার ওপর নজরদারি বা খবরদারি করার অধিকার সরকার বা রাষ্ট্রের নেই, ডয়চে ভেলের কাছে এই অভিমতই ব্যক্ত করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. অমল মুখোপাধ্যায়৷

আম জনতার প্রতিক্রিয়া কি ? এক কথায় উচ্ছ্বসিত৷ গোমাংস খাওয়া নিয়ে গণপিটুনির শিকার হতে হবে না৷ কে কী খাবে, কী পরবে, কার সঙ্গে মিশবে, কোন রাজনৈতিক মতাদর্শ গ্রহণ করবে, অর্থাত ব্যক্তি পরিসরের মৌলিক অধিকার স্বীকৃতি পেল৷ শেষ হলো সরকার বা রাষ্ট্রীয় খবরদারির জমানা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ