ধর্মীয় অবমাননা বা ব্লাসফেমি আইনকে পাকিস্তানের শীর্ষ ধর্মীয় নেতা ও ইসলামিক দলগুলো ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করছে৷ মানবাধিকার কর্মীরা এর নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এর ফলে তা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং হত্যাকাণ্ডে রূপ নিচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
চলতি মাসে কোরান অবমাননার অভিযোগে এক খ্রিষ্টান দম্পতিকে ১,৫০০ মানুষ পিটিয়ে হত্যা করে তাঁদের শরীর জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে ছুড়ে ফেলে দেয়৷ ঐ ঘটনার পরদিন এক পুলিশ ব্লাসফেমি আইনের আওতায় বন্দি এক ব্যক্তিকে কুড়াল দিয়ে কোপ মেরে হত্যা করে৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে আইনটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যাক্তিগত বিরোধের জেরে কাজে লাগানো হচ্ছে৷ ব্লাসফেমি আইন ভঙ্গকারীদের যারা হত্যা করেছে বা হত্যা প্ররোচনায় উদ্বুদ্ধ করেছে, তাদের আজ পর্যন্ত কোনো শাস্তি হয়নি৷
আইনজীবী আসমা জাহাঙ্গীর সংবাদ সংস্থা এএফপি-কে বলেছেন, ‘‘এ ঘটনার পর ইতিবাচক দিক হলো আলেম ওলামা এবং জামায়াত-ই-ইসলামী দলসহ বেশ কিছু দল এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে৷ আমার মনে হয়, এটা একটা বড় ধরনের পরিবর্তন এবং আমাদের এটাকে স্বাগত জানানো উচিত৷''
পাকিস্তানে এখনো নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা, বৈষম্য, নির্যাতন এবং কারাভোগ খুব সাধারণ ঘটনা, যা মানবাধিকার কর্মীদের কাছে উদ্বেগের বিষয়৷ আসমা জাহাঙ্গীর বলেন, একটা সময় ছিল যখন নারী অধিকার এখানে পশ্চিমাবিশ্বের ধারণা হিসেবে গণ্য হত, তবে এখন মানুষ নারী অধিকার নিয়রে আলোচনা করে৷ রাজনৈতিক দল এবং ধর্মীয় দলগুলো এ নিয়ে কথা বলছে৷
অ্যাসিড সন্ত্রাস!
একটা সময় বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই আসতো নারীর ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপের খবর৷ এমন বর্বরোচিত হামলা এখনও হয় কিছু দেশে৷ কয়েকটি দেশ ঘুরে জার্মান ফটোগ্রাফার অ্যান-ক্রিস্টিন ভোর্ল-এর তোলা ছবি নিয়ে আজকের ছবিঘর৷
ছবি: DW/M. Griebeler
বাংলাদেশের ফরিদা
ফরিদার স্বামী ছিলেন ড্রাগ এবং জুয়ায় আসক্ত৷ ঋণের দায়ে একসময় বাড়িটাও বিক্রি করে দেয় নেশাগ্রস্ত লোকটি৷ রেগেমেগে ফরিদা বলেছিলেন, এমন স্বামীর সঙ্গে আর ঘর করবেন না৷ সেই রাতেই হলো সর্বনাশ৷ ঘুমন্ত ফরিদার ওপর অ্যাসিড ঢেলে দরজা বন্ধ করে দিল পাষণ্ড স্বামী৷ যন্ত্রণায় চিৎকার করছিলেন ফরিদা৷ প্রতিবেশীরা এসে দরজা ভেঙে উদ্ধার করে তাঁকে৷
ছবি: Ann-Christine Woehrl/Echo Photo Agency
মায়ের স্নেহে, বোনের আদরে...
অ্যাসিডে ঝলসে যাওয়ার সময় ফরিদা ছিলেন ২৪ বছরের তরুণী৷ ১৭টি অস্ত্রোপচারের পর এখন কিছুটা সুস্থ৷ তবে সারা গায়ে রয়েছে দগদগে ঘায়ের চিহ্ন৷ পুড়ে যাওয়া জায়গাগুলোর ত্বক মসৃণ রাখতে প্রতিদিন মালিশ করে দেন মা৷ নিজের কোনো বাড়ি নেই বলে মায়ের সাথেই বোনের বাড়িতে থাকেন ফরিদা৷
ছবি: Ann-Christine Woehrl/Echo Photo Agency
উগান্ডার ফ্লাভিয়া
ফ্লাভিয়ার ওপর এক আগন্তুক অ্যাসিড ছুড়ে মেরেছিল ৫ বছর আগে৷ আজও ফ্লাভিয়া জানেন না, কে, কেন তাঁর ওপর হামলা চালালো৷ বিকৃত চেহারা নিয়ে অনেকদিন ঘরেই ছিলেন৷ বাইরে যেতেন না৷ এক সময় ফ্লাভিয়ার মনে হলো, ‘‘এভাবে ঘরের কোণে পড়ে থাকার মানে হয় না৷ জীবন এগিয়ে চলে৷ আমাকেও বেরোতে হবে৷’’
ছবি: Ann-Christine Woehrl/Echo Photo Agency
আনন্দময় নতুন জীবন
এখন প্রতি সপ্তাহে একবার সালসা নাচতে যায় ফ্লাভিয়া৷ আগের সেই রূপ নেই, তাতে কী, বন্ধুদের কাছে তো রূপের চেয়ে গুণের কদর বেশি! ফ্লাভিয়া খুব ভালো নাচ জানেন৷ তাই একবার শুরু করলে বিশ্রামের সুযোগই পান না৷ এভাবে পরিবার আর বন্ধুদের সহায়তায় আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন ফ্লাভিয়া৷
ছবি: Ann-Christine Woehrl/Echo Photo Agency
ভারতের নীহারি
নীহারির বয়স তখন ১৯৷ একরাতে আত্মহত্যা করার জন্য আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন নিজের শরীরে৷ স্বামীর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন থেকে মুক্তি পাওয়া জরুরি মনে হয়েছিল তখন৷
ছবি: Ann-Christine Woehrl/Echo Photo Agency
নতুন রূপ
যে ঘরটিতে বসে নীহারি তাঁর চুল ঠিক করছেন এটা ছিল বাবা-মায়ের শোবার ঘর৷ এখানেই নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন৷ দেয়াশলাইয়ের বাক্সে একটা কাঠিই ছিল৷ তা দিয়েই আগুন জ্বালিয়েছিলেন শরীরে৷ তবে এখন আর দুর্বল মনের মেয়েটি নেই নীহারি৷ নিজেকে সামলে নিয়ে একটা সংস্থা গড়েছেন৷ সংস্থাটির নাম, ‘পোড়া মেয়েদের রূপ’৷
ছবি: Ann-Christine Woehrl/Echo Photo Agency
পাকিস্তানের নুসরাত
দু-দুবার অ্যাসিড ছোড়া হয়েছে নুসরাতের ওপর৷ প্রথমে স্বামী আর তারপর দেবর৷ ভাগ্যগুণে বেঁচে আছেন নুসরাত৷ ভালোই আছেন এখন৷
ছবি: Ann-Christine Woehrl/Echo Photo Agency
আশার আলো
দু-দুবার অ্যাসিড হামলার শিকার হওয়ায় মাথার অনেকটা চুলও হারিয়েছেন নুসরাত৷ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে মাথার ক্ষতস্থান পুরোপুরি সারিয়ে চুল এবং আগের হেয়ারস্টাইল ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি৷
ছবি: Ann-Christine Woehrl/Echo Photo Agency
বন্ধুদের মাঝে...
নিজের ভাবনা, যন্ত্রণার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে কিংবা গল্প করতে প্রায়ই অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন (এএসএফ)-এ যান নুসরাত৷ সেখানে এমন অনেকেই আসেন যাঁদের জীবনও অ্যাসিডে ঝলসে যেতে বসেছিল৷ এখন সকলেই জানেন, তাঁরা আর একা নন৷
ছবি: Ann-Christine Woehrl/Echo Photo Agency
9 ছবি1 | 9
ব্লাসফেমি আইন
ধর্মীয় বিদ্বেষ সৃষ্টিকারী বক্তব্য বা অবমাননাকর আচরণের বিচারের জন্য যে আইন, সেই আইনের নামই ব্লাসফেমি৷ ব্লাসফেমি আইনে ইসলাম ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্যের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে৷ পাকিস্তানের ৯৭ শতাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী৷ পাকিস্তানে অনেক বছর ধরেই বলবৎ এই আইনটি৷
পাকিস্তানে ব্লাসফেমি আইনে অভিযুক্ত হওয়া এবং বিচারের মুখোমুখি হওয়া কোনো নতুন ঘটনা নয়, অস্বাভাবিক ঘটনাও নয়৷ পাকিস্তানের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বক্তব্য অনুযায়ী কত লোক যে প্রতি বছর এই অভিযোগে অভিযুক্ত হন তাঁর কোনো নির্ভরযোগ্য হিসেব পর্যন্ত নেই৷ কেননা গ্রামাঞ্চলে এ সব অভিযোগ আনা হয় সবচেয়ে বেশি৷ অনেকেই এগুলো মানবাধিকার সংগঠনের গোচরে পর্যন্ত আনেন না৷