ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ: ঢাবি থেকে তারাকান্দা
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীকে পোশাকের কারণে হেনস্তার পর ক্যাফেটেরিয়ায় পুরুষ কর্মীকেও হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে হাফপ্যান্ট পরে কাজ করার কারণে৷
বৃদ্ধ হালিম উদ্দিন আকন্দের চুল-দাড়ি জোর করে কেটে দেয়ার ঘটনাটি চার মাস আগের৷ কয়েকদিন আগে সেই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় শুরু হয়। সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু পুলিশ এখনো নির্বিকার৷ পুলিশের দাবি, যারা কাজটি করেছে, তারা ঢাকার টিকটক গ্রুপ, হিউম্যান সর্ভিস বাংলাদেশ-এর সদস্য। কিন্তু ৭০ বছর বয়সি হালিম উদ্দিন আকন্দ ও তার পরিবারের সদস্যরা ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেন, ভিডিওতে যাদের দেখা গেছে, তাদের সঙ্গে স্থানীয় আট-নয়জনও ছিলেন। ‘নির্দিষ্ট পোশাক’ ছাড়া ভিডিওতে যাকে দেখা গেছে, সে স্থানীয় বলে জানান তারা। আকন্দ পরিবার জানায়, ওই ব্যক্তিরা এখনো এলাকায় আছে। ‘বাড়াবাড়ি না করা’র হুমকি দিচ্ছে তারা। ঘটনার পর হুমকি দিয়ে সামাজিক বিচারও বন্ধ করা হয়েছিল বলে জানান হালিম উদ্দিন আকন্দ ও তার পরিবারের সদস্যরা৷
হেনস্তার শিকাররাই হুমকির মুখে
হালিম উদ্দিন আকন্দ অভিযোগ করেন, " বাইরের যে দুইজন লোক, তারাসহ আট-নয়জন লোক ছিল সেদিন। তাদের মধ্যে এলাকার নয়ন এবং মজনুও ছিল। তারা এখনো এলাকায় আছে। পুলিশ তাদের ধরছে না। তারা আমাকে ভয় দেখাচ্ছে। বলছে, যে-কোনো সময় মেরে ফেলবে। ”
"তারা ওইদিন বাজারে আমাকে ধরে জোর করে চুল-দাড়ি কেটে দেয়। আমি জলিল মেম্বারের বাড়ি যাচ্ছিলাম। বাজারে তখন লোক কম ছিল। আমি তখন আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছি। এখনো আল্লাহর কাছে বিচার চাই,” বলেন তিনি।
ওই ঘটনার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এখনো অসুস্থ। তেমন কোনো কাজ-কর্ম করতে পারেন না। তার কথা, "তারা আমার মান-ইজ্জত মেরে দিয়েছে। ”
হালিম উদ্দিন আকন্দ ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার কোদালিয়া কাশিগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় কবিরাজ। হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহ পরান (রহ.)-এর ভক্ত ও নকশবন্দিয়া তরিকার অনুসারী তিনি। ৩৭ বছর ধরে চুলে জটা রাখছিলেন। কাশিগঞ্জ বাজারে ওই ঘটনা ঘটে। বাজার তার বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে।
তার ছেলে হাবিবুর রহমান আকন্দ ডয়চে ভেলেকে বলেন," যারা দাড়ি-চুল কেটেছে, তাদের মধ্যে ঢাকার লোক আছে, এলাকার লোকও আছে। এলাকার লোকজন ঢাকা থেকে ওই লোকজনকে নিয়ে আসে। এলাকার যারা ছিল, তাদের মধ্যে আছেন জয়নুদ্দিন, নয়ন মুন্সি, মজনু, বারেকসহ আরো কয়েকজন। তাদের বাসা বাজারের কাছেই। তারা বাজারেই থাকে। ”
"চার মাস আগে ঘটনার পর আমরা স্থানীয় নেতাদের কাছে বিচার চাই। কিন্তু তখন বিচার পাইনি। ওইদিন রাতে বিচার চাওয়ার পরে ৬০-৭০ জন লোক আমাদের বাড়িতে এসে হুমকি দেয়। বলে, ‘যদি বিচার বসাও তাহলে লাশ পড়ে যাবে। তোরা লাশ চাস, না বিচার চাস?' তখন নেতারা বললেন, ‘বিচার দরকার নাই। যা হয়েছে, হয়েছে। বিচার করলে এখানে খুনোখুনি হবে।' আমরা থানায় যেতে চাইলে তারাই আমাদের থানায় যেতে দেয়নি। কোথাও আমাদের এ নিয়ে কথা বলতেও নিষেধ করে দেয়।,” বলেন তিনি।
ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর পুলিশ একবার তাদের বাড়িতে এসেছিল বলে জানান হালিম উদ্দিন আকন্দ। পুলিশকে পুরো ঘটনা এবং স্থানীয় যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের নাম জানানো হয় বলে জানান তার ছেলে হাবিবুর রহমান আকন্দ। কিন্তু পুলিশ এতদিনেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ টিপু সুলতান ডয়চে ভেলেকে বলেন, " আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তবে স্থানীয় কেউ এই ঘটনার সাথে যুক্ত আছে কিনা তা আমাদের জানা নেই। যারা করেছে, তারা ঢাকা থেকে এসেছিল। তারা টিকটকার, হিউম্যান সর্ভিস বাংলাদেশ- নামের একটি গ্রুপের সদস্য। তারা এখানকার কেউ নয়।” তার দাবি, " ভিডিও ভাইরাল হওয়ার আগে আমরা জানতাম না। এলাকায় যে তাদের এখনো হুমকি দেয়া হচ্ছে, তাও আমি জানি না।”
ময়মনসিংহ বাউল সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম বলেন, " আসলে বিষয়টি গত চার মাস ধরে হুমকি দিয়ে ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল। স্থানীয়ভাবে সালিশও করতে দেয়া হয়নি।”
"আমরা বাউলরা সারা দেশেই ভয়ের মধ্যে আছি। চুল কেটে দেয়ার ঘটনা আগেও ঘটেছে। কয়েকদিন আগে ময়মনসিংহে একটি মাজারেও হামলা চালানো হয়।”
ব্যক্তির স্বাধীনতা এবং কথিত মানবসেবী
ঢাকার ‘হিউম্যান সর্ভিস বাংলাদেশ' নামের সংগঠনটির অফিসে এখন কেউ নেই। তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ। অবশ্য তাদের এক নেতা ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করা ভিডিওতে তাদের এই কাজকে ‘মানব সেবা' বলে দাবি করেছেন। তবে এর মাধ্যমে কোনো ভুল হয়ে থাকলে ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি। এই সংগঠনটির স্লোগান হলো, " তোমরা সৎ কাজের প্রতিযোগিতা করো।'' তাদের ফেসবুক পোস্টেদেখা যায়, জোর করে চুল-দাড়ি কেটে দেয়ার কাজ তারা আরো করেছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান মুফতি সোহরাব হোসেন আশরাফি নামের এক ব্যক্তি বলে জানা গেছে।
শুধু 'হিউম্যান সার্ভিস বাংলাদেশ'-এর লোকজনই নয়, জোরপূর্বক মানুষের চুল-দাড়ি কেটে দেন - এমন আরেকজনের খোঁজ পাওয়া গেছে। তিনি হলেন কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার বাইশগাঁও গ্রামের মাহবুবুর রহমান। 'মাহবুব ক্রিয়েশন' নামে একটি ফেসবুক পেজ ও 'স্ট্রিট হিউম্যানিটি' নামে আরেকটি ওয়েবপোর্টালে তিনি নিয়মিত মানুষের চুল-দাড়ি কেটে দেওয়ার ভিডিও পোস্ট করে আসছেন। সেসব ভিডিওর একটিতে একজন নারীর চুল কেটে দিতেও দেখা গেছে।
বাউলের চুল-দাড়ি রাখা ‘বারণ', ঢাবির ক্যাফেটিরায় বারণ হাফপ্যান্ট
বাউলদের চুল কেটে দেয়ার ঘটনা বাংলাদেশে আগেও ঘটেছে। ২০১১ সালের ৪ এপিল রাজবাড়ির পাংশা উপজেলায় খাবাসপুরে ২৮ জন বাউলকে ‘তওবা' পড়িয়ে তাদের চুল ও গোঁফ কেটে দেয়া হয়েছিল। মুফতি রিয়াজ নামের এক ব্যক্তি ছিলেন ওই ঘটনার মূল হোতা। ২০২১ সালে বগুড়ার শিবগঞ্জে কিশোর বাউল শিল্পী মেহেদী হাসানের মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয়।
২০২৪ সালের ৮ জুন কুষ্টিয়ার মিরপুরে নিশান আলী নামে এক বাউলের আখড়া ভেঙে দেয় দুর্বৃত্তরা। একই বছরের ২৬ নভেম্বর যশোরে মরমি সাধক ফকির লালন শাহ-র অনুসারীদের এক আখড়া বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের পর সাধুসঙ্গ ও গানের অনুষ্ঠান পণ্ড করা হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে মাজারে হামলার প্রবণতাব্যাপকতা পেয়েছে। বিশ্ব সুফি সংস্থার মুখপাত্র আফতাব আলম জিলানী ডয়চে ভেলেকে বলেন, " আমাদের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ১৮৫টি মাজার, খানকায় হামলা ও আগুন দেয়া হয়েছে। অব্যাহতভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। আমাদের ব্যক্তিগত জীবনও দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। আসলে এটা বাংলাদেশের সুফিবাদ নিশ্চিহ্ন করার একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র,” বলেন তিনি।
পোশাকের কারণে নানাজনকে হেনস্তার ঘটনাও ঘটছে। নারীদের প্রচলিত পোশাক ও হিজাব নিয়ে নানা ধরনের তৎপরতাও দেখা যায় প্রায় নিয়মিত বিরতিতে। গত মার্চ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক নারীকে তার পোশাক নিয়ে হেনস্তা করার পর ভুক্তভোগী নারী শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী মোস্তফা আসিফ অর্ণবকে ওই মামলায় আটকের পর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করলেও ‘তৌহিদী জনতা' পরিচয়ধারী কিছু লোক থানা ঘেরাও করে। থানা থেকে আদালতে পাঠানোর পর অর্ণব জামিন পান। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর পাগড়ি, ফুলের মালা দিয়ে বরণ করা হয় তাকে। অন্যদিকে ওই নারী মামলা প্রত্যাহারে বাধ্য হন।
গত মে মাসে ঢাকার লালমাটিয়ায় একটি চায়ের দোকানে দুই তরুণী ধূমপান করায় কথাকাটাকাটির পর তাদের মব হেনস্তার মুখে পড়তে হয়। পরে পুলিশ ওই দুই তরুণীকে থানার হেফাজতে নিয়ে যায়। সেই ঘটনার পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, " পাবলিক প্লেসে ধূমপান নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই অপরাধ। কেউ যেন ওপেন প্লেসে ধূমপান না করেন।” নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন দেয়ার পর ওই কমিশনই বাতিলের দাবি জানায় হেফাজতে ইসলামসহ কিছু ইসলামী দল। কমিশন প্রধান শিরীন হক রীতিমতো হুমকির মুখে পড়েন।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের ক্যাফেটেরিয়ায় হাফপ্যান্ট পরে কাজ করা নিষিদ্ধ করেন ওই হলের ছাত্র সংসদের ভিপি আজিজুল হক।
ব্যক্তি স্বাধীনতা কোথায়?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. তৌহিদুল হক বলেন, " ময়মনসিংহে এক বৃদ্ধের জোর করে চুল-দাড়ি কেটে দেয়ার মধ্যে আমি স্পষ্টই উগ্রতা দেখতে পাচ্ছি। এটা শুধু তার ক্ষেত্রে নয়, আরো অনেক বাউলের ক্ষেত্রে আগেও ঘটেছে। পোশাকের ক্ষেত্রেও এটা হচ্ছে। এটা ব্যক্তির স্বাধীনতা ও আত্মমর্যাদার বিরুদ্ধে যায়। এটা আইন ও সংবিধানবিরোধী। যে-কানো ব্যক্তির নিজস্ব বিশ্বাস ও জীবনযাপনের পদ্ধতি বেছে নেয়ার অধিকার আছে। সেটা বাধাগ্রস্ত করা যায় না। সরকারের এখানে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।”
তার কথা, " তবে কোনো ব্যক্তি যদি অসুস্থ হন, তার চিকিৎসা করা যাবে। কিন্তু সেটা রাস্তা-ঘাটে জোর করে নেয়। সেজন্য তার পরিবার ব্যবস্থা নেবে। চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবে। আর চিকিৎসক ও চিকিৎসা পদ্ধতি বেছে নেয়ার স্বাধীনতাও তার।”
"তবে আমরা এখন যেটা দেখছি, এতে উগ্রতা ছড়িয়ে পড়বে। ব্যক্তি বা কোনো গোষ্ঠীর ওপর অন্য কোনো গোষ্ঠীর মতবাদ বা ইচ্ছা চাপিয়ে দেয়ার প্রবণতা বাড়বে। এটা গণতন্ত্রেরও পরিপন্থী,” বলেন তিনি।
আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. স্নিগ্ধা রেজওয়ানা বলেন, " এটা শুধু ব্যক্তি স্বাধীনতা ক্ষুন্ন করছে না, মোরাল পুলিশিংও করা হচ্ছে। এটা আসলে ক্ষমতার প্রকাশ এবং এর পিছনে রাজনীতি আছে। যারা এটা করছেন, তারা তাদের মতো করে সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন।”
"বাউলদের মাথা ন্যাড়া করা, নারীদের পোশাক নিয়ন্ত্রণ করা। এখন সেটা পুরুষের দিকেও যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলে তারা ক্যান্টিনে হাফপ্যান্ট পরে কাজ করাতেও বাধা দিচ্ছে। আবার পার্কে ছেলে-মেয়ে বসে থাকলে কিছু গ্রুপ গিয়ে হয়রানি করছে। পুলিশও এই কাজ করছে। ফলে, ব্যক্তির চিন্তা ও পছন্দ অবদমিত হচ্ছে। শুধুমাত্র আইনে ‘ন্যুডিটি' বলে যা চিহ্নিত করা আছে, তা করা যাবে না। তবে সেটাও দেখার দায়িত্ব কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নয়। সেটা যথাযথ কর্তৃপক্ষ দেখবে,” বলেন তিনি।
আর মানবাথিকার কর্মী নূর খান বলেন, " বাংলাদেশে নানা চিন্তা ও মতের লোক আছেন। আছেন নানা বিশ্বাসের মানুষ। বাউলরা লম্বা চুল-দাড়ি রাখেন, জটা রাখেন। সেটা তাদের বিশ্বাসের স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা। যেটা দেখতে পাচ্ছি, একটি গোষ্ঠী নাগরিকদের ব্যক্তি স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত করছে। মানবাধিকারের লঙ্ঘন করছে। পোশাকের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করছে। এটা সরকারকে বন্ধ করতে হবে।”
তার কথা, "এটার নেপথ্যে এক ধরনের মানসিকতা কাজ করছে। এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ করার প্রবণতা কাজ করছে।”
আইন কী বলে?
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, " ময়নসিংহে চুল ও দাড়ি কাটার ঘটনা সরাসরি ফৌজদারী অপরাধ। ওই ঘটনায় ব্যক্তির ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার চুল-দাড়ি কাটা হয়েছে, তাকে জোর করা হয়েছে এবং তাকে আটকে রেখে এটা করা হয়েছে। একই সঙ্গে তার মানহানি করা হয়েছে।” তার কথা, "এটা মানহানি ছাড়াও দণ্ডনীয় অপরাধ- যার শাস্তি সর্বোচ্চ দুই বছরের জেল। আর তাদের শাস্তির আওতায় না আনলে সমাজে বিশৃঙ্খলা আরো বাড়বে। আরো অনেকে এটা করতে উৎসাহিত হতে পারেন।”
তিনি বলেন, "এখানে ব্যক্তির স্বাধীনতা লঙ্ঘিত হয়েছে, যা আমাদের সংবিধান দিয়েছে। পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রেও এই ধরনের জোর-জবরদস্তি অপরাধ,” বলেন তিনি। তার কথা, "এখানে এমন এক সোসাইটি তৈরি হচ্ছে, যেখানে জোর-জবরদস্তি করে নিজের বিশ্বাস, চিন্তা অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এটা বন্ধ না হলে খারাপ পরিণতি হবে।''
অন্যের পোশাক এবং চুল-দাড়ির বিষয়ে হস্তক্ষেপের প্রবণতা সম্পর্কে ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া বলেন, " নাগরিকদের ব্যাক্তিগত বেশভুষার ব্যাপারে রাষ্ট্রও হস্তক্ষেপ করতে পারে না। এটা নাগরিকদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। যতক্ষণ না পর্যন্ত তা আইনগতভাবে মরালিটির ব্যত্যয় না ঘটাবে। ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিশ্বাস, জীবনযাপনে হস্তক্ষেপ কেউ করতে পারবে না।”
"তবে আমরা আগেও দেখেছি বাউলদের চুল কেটে দেয়া হয়। এখনো আবার হচ্ছে। এটা একটি গোষ্ঠী তাদের চিন্তা ও মতবাদ অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয়ার জন্য করে। এটা অপরাধ এবং নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিবারের পরিপন্থী।”