আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে জার্মান নির্বাচন পর্যাপ্ত গুরুত্ব পেয়েছে৷ আঙ্গেলা ম্যার্কেলের জয়ের মতোই কট্টর দক্ষিণপন্থি এএফডি দলের উত্থানও দেশ-বিদেশের কার্টুনিস্টদের নজর এড়ায়নি, যদিও ব্যঙ্গের সঙ্গে মিশেছে কিছুটা দুশ্চিন্তা৷
বিজ্ঞাপন
‘জার্মানির জন্য বিকল্প’ বা এএফডি দলের নির্বাচনি সাফল্য যেমন জার্মানিতে, তেমনই বহির্বিশ্বে সকলকে সচকিত করেছে৷ এ ধরনের একটি কট্টর দক্ষিণপন্থি দল জার্মান সংসদে আসন গ্রহণ করতে চলেছে ঠিক তখন, যখন ম্যার্কেলের সিডিইউ-সিএসইউ দল বিপুল ভোট হারিয়ে মাত্র ৩৩ শতাংশে নেমে গেছে৷ জার্মানির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে যা একটি ভূমিকম্প বিশেষ, বহির্বিশ্বে তা স্বভাবতই চিন্তার বিষয়, কেননা, জাতীয়তাবাদ জার্মানির ইতিহাসে এক অন্য স্বাক্ষর রেখে গেছে৷ অধিকাংশ কার্টুনিস্টের কাছে জার্মান নির্বাচনের পর চ্যান্সেলর ম্যার্কেল একটি বারুদের পিপের উপর বসে আছেন, যে পিপেটির নাম হলো এএফডি৷
অস্ট্রেলিয়ার কার্টুনিস্ট ডেভিড রো ‘অস্ট্রেলিয়ান ফাইন্যান্সিয়াল রিভিউ’-এর জন্য যে কার্টুনটি এঁকেছেন, তাতে ম্যার্কেল তাঁর ড্রেসিং টেবিলে বসে নিজের হিটলারি গোঁফ ঠিক করছেন! ইঙ্গিত: এএফডি-র সাফল্যের ফলে ম্যার্কেলকে এবার আরো বেশি দক্ষিণপন্থি হতে হবে৷
ভিয়েনার কার্টুনিস্ট মারিয়ান কামেনস্কি'র ব্যঙ্গচিত্রে জার্মান সংসদীয় নির্বাচনের তিন বিজয়ীকে দেখানো হয়েছে: মাঝে প্রথম স্থানে ম্যার্কেল, তাঁর ডানদিকে দ্বিতীয় স্থানে মার্টিন শুলৎস – কিন্তু তৃতীয় স্থানে একটি নাৎসি স্বস্তিকার উপর দাঁড়িয়ে রয়েছেন এএফডি দলের আলেক্সান্ডার গাউলান্ড, যিনি সকলের মাথা ছাড়িয়ে গেছেন৷
প্রখ্যাত ইটালীয় ব্যঙ্গচিত্রশিল্পী পাওলো লম্বার্দি-র কার্টুনে জার্মানির এক ইহুদি বাসিন্দা ‘জার্মানির জন্য বিকল্পের’ পতাকা দেখে ভাবছেন, ‘আমার বিকল্প হলো ইসরায়েল৷’
‘পেনিওয়াইজ’ নামের এক কার্টুনিস্টের কল্পনায় এএফডি হলো স্টিফেন কিং-এর ‘ইট' উপন্যাসের সেই অভিশপ্ত ভাঁড়...
জার্মান রূপকথার এক নামকরা চরিত্র সেই রাজকন্যা, সাতপুরুষ তোষকের নীচে একটি কড়াইশুঁটি থাকলেও যার ঘুম হতো না৷ জার্মানির রাজনৈতিক ব্যঙ্গচিত্রশিল্পী হাইকো সাকুরাই-এর কার্টুনে ম্যার্কেল হয়েছেন সেই দুলালি রাজকন্যা, আর কড়াইশুঁটি হয়েছে এএফডি নামের একটি বোমা!
গ্রিক ব্যঙ্গচিত্রশিল্পী তাসোস আনাস্তাসিউ-এর কার্টুনে নির্বাচনের দিন খবর পড়ছেন এক নিউজরিডার, ‘‘জার্মান নির্বাচন হলো একই ধরণের রাজনীতির দু'টি দলের সংঘাত, যার শেষে ম্যার্কেল সব সময় জেতেন৷’’
ব্যাংককের এক কার্টুনিস্টের দৃষ্টিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যাতে উত্তর কোরিয়ায় কিছু একটা বাঁধিয়ে না ফেলেন, সেটা নিশ্চিত করার জন্যই জার্মান নির্বাচন ও ম্যার্কেলের প্রয়োজন৷
সবশেষে কনস্টান্টিন সানাকাসের একটি কার্টুন, যিনি ‘ডিনো’ নামে আঁকেন৷ নির্বাচনে ম্যার্কেলের জয় হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাঁর পায়ের তলায় করাত দিয়ে নাৎসি স্বস্তিকা চিহ্নের আকারে জমি কেটে নেওয়া হচ্ছে৷
এমনকি ২০১৭ সালের নির্বাচনের আগেও তাঁর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো রাজনীতিবিদদের নিষ্ক্রিয় বা পাশে সরিয়ে দিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ নিজের দল বা বিরোধী দলের অনেক নেতাকেই নানাভাবে ঠেকিয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ANP/R. De Waal
‘কোল গার্ল’ যখন গুরুকে ছাড়লেন
দীর্ঘদিন চ্যান্সেলর পদে থাকে হেলমুট কোল ম্যার্কেলকে মন্ত্রিসভায় প্রথম সুযোগ দিয়েছেন এবং তাঁর উত্থানে সহায়তা করেছিলেন৷ কিন্তু ১৯৯৮ সালে চ্যান্সেলর পদ হারানোর পর ম্যার্কেল এবং সিডিইউ তাঁর বিপক্ষে চলে যায়৷ কোল কিছু সূত্র থেকে নগদ অর্থ সাহায্য নিয়েছিলেন৷ কিন্তু সে সব সূত্রের বিস্তারিত তিনি জানাননি যা দলের জন্য ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেছিলেন সেসময় সিডিইউ’র সাধারণ সম্পাদক আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Altwein
গেয়ারহার্ড শ্র্যোডার – রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সমাপ্তি
২০০৫ সালের নির্বাচনে এসপিডি’র চ্যান্সেলর শ্র্যোডারকে পরাস্ত করেন ম্যার্কেল৷ তবে এই পরাজয়ে শ্র্যোডারের নিজের দাম্ভিকতাও কিছুটা ভূমিকা রেখেছিল৷ সেই নির্বাচনে খুব অল্প ব্যবধানে সিডিইউ’র কাছে হেরে যায় এসপিডি৷ যদিও নির্বাচনের আগে টিভি বিতর্কে তিনি দাবি করেছিলেন, যে জার্মানরা চায় তিনি ক্ষমতায় থাকুন৷ কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি এবং তিনি রাজনীতি থেকে বিদায় নেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার - দীর্ঘদিনের সঙ্গী
শুরুতে ম্যার্কেলের অধীনে চারবছর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার৷ এরপর ২০০৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে তাঁকে চ্যালেঞ্জ করেন সামাজিক গণতন্ত্রীদের এই রাজনীতিবিদ৷ কিন্তু সেই নির্বাচনে সুবিধা করতে পারেনি স্টাইনমায়ারের দল৷ পরবর্তীতে ২০১৩ সালে আবারো ম্যার্কেলের অধীনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন স্টাইনমায়ার৷ আর চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে তিনি জার্মানির প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Kembowski
গ্যুন্টার ও্যটিঙার - পথের কাঁটা দূর হলো
ম্যার্কেল যে শুধু তাঁর সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেন এমন নয়৷ বরং নিজের দলে থাকা সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের লোভনীয় অন্য কোন পদেও পাঠিয়ে দেন৷ তাঁর সহকর্মী বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গ্যুন্টার ও্যটিঙারকে ২০১০ সালে তিনি ইউরোপীয় কমিশনে বড় পদে পাঠিয়ে দেন৷ অথচ ও্যটিঙারের সেই পদ পাওয়ার মতো কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Seeger
রোনাল্ড কখ - বাতিলের তালিকায় ফেলে দেয়া
দুই কারণে রোনাল্ড কখ পরিচিত৷ প্রথমত, তিনি দলাই লামার বন্ধু৷ দ্বিতীয়ত, সরকারের দ্বৈত নাগরিকত্ব চালুর পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কয়েক মিলিয়ন স্বাক্ষর সংগ্রহের জন্য৷ হেসে রাজ্যের এই রাজ্য প্রধান কখনো ম্যার্কেলের উত্থানে বাধা না হলেও হঠাৎ করেই মনে করেছিলেন তাঁকে বার্লিনে বড় পদের জন্য ডাকা হবে৷ কিন্তু ম্যার্কেলকে তাঁকে সেরকম কোন সুযোগ দেননি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ - একজন দুর্ভাগা রাষ্ট্রপতি
ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ম্যার্কেলের প্রথম পছন্দ ছিলেন না৷ কিন্তু ২০১০ সালে হর্স্ট ক্যোলার পদত্যাগ করার পর সিডিইউ বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েনের ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারায় ভুল্ফ সুযোগ পেয়ে যান৷ ভুল্ফ তখন লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের রাজ্যপ্রধান৷ পরবর্তীতে অবশ্য দুর্নীতির দায়ে প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়তে হয় তাঁকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পেয়ার স্টাইনব্রুক – সঠিক মানুষ, ভুল সময়
২০১৩ সালে ম্যার্কেল যখন তাঁর ক্যারিয়ারের তুঙ্গে, তখন এসপিডি থেকে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বেছে নেয়া হয় পেয়ার স্টাইনব্রুক’কে৷ ম্যার্কেলের অধীনে একসময় অর্থমন্ত্রী থাকা এই রাজনীতিবিদের চ্যান্সেলর পদ পাওয়ার সব যোগ্যতাই ছিল৷ কিন্তু সময়টা ঠিক ছিল না৷ ম্যার্কেলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সুবিধা করতে পারেননি তিনি৷