টিসিবিকে কিভাবে আরো কার্যকর করা যায়? এর উত্তর পেতে হলে টিসিবির কার্যত অকার্যকর হওয়ার কারণগুলো জানতে হবে৷
বিজ্ঞাপন
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন মনে করেন, সরকার ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কাজ করে বলেই টিসিবি দুর্বলতা কাটাতে পারছে না৷
ডয়চে ভেলে: টিসিবি কখন শুরু হয়েছিল? উদ্দেশ্য কী ছিল? কেন বন্ধ হয়ে গেল? এসএমনাজেরহোসেন: স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু টিসিবি শুরু করেছিলেন৷ এটা ছিল রাষ্ট্রীয় বাণিজ্য সংস্থা৷ এর উদ্দেশ্য ছিল বাজারে পণ্য সরবরাহ করে, ন্যায্য মূল্যে পণ্য দিয়ে বাজারকে ঠিক রাখা৷ ব্যবসায়ীরা যাতে এককভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে৷ কিন্তু ব্যবসায়ীরা শুরু থেকেই টিসিবির বিরোধিতা করে আসছিল৷ তাদের স্বার্থ ক্ষুন্ন হবে সেই কারণে টিসিবি বন্ধ করতে সব চেষ্টা চালায়৷ পরে টিসিবির কার্যক্রম বলতে গেলে বন্ধই হয়ে যায়৷ এখন আবার চালু হয়েছে৷
টিসিবি তো পণ্য আমদানি করে সরাসরি বাজারেও দিতো৷ সেটা কি এখন হচ্ছে?
না, সেটা এখনকার টিসিবির বড় ধরনের দুর্বলতা৷ যে উদ্দেশ্যে টিসিবি শুরু হয়েছিল, এখন আর সেই উদ্দেশ্যে নেই৷ এখন স্থানীয় বাজার থেকে তারা কয়েকটি পণ্য কিনে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করছে৷ এতে বাজারের পণ্যের ওপরই নতুন করে চাপ পড়ছে৷ ভর্তুকি দিচ্ছে৷ যদি আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে আনতো টিসিবি, তাহলে বাজারে এর একটা প্রভাব পড়তো৷
‘সরকারের ধারণা, ব্যবসায়ীরাই আসল শক্তি’
টিসিবি তো এখন আর পণ্য আমদানি করে না৷ করলে কী হতো?
যেসব পণ্য আমদানি করা প্রয়োজন, তা যদি টিসিবিও আমদানি করতো তাহলে এখানকার বাজারে সরবরাহ ঠিক থাকতো৷ কিন্তু টিসিবি যা করছে, তাতে কিন্তু বাজারে সরবরাহ ব্যবস্থায় কোনো প্রভাব পড়ছে না৷
টিসিবি এক কোটি পরিবারকে কম দামে চার-পাঁচ ধরনের পণ্য কেনার সুযোগ দিচ্ছে৷ বাজারে তার কি কোনো প্রভাব আছে?
কিছু প্রভাব পড়ছে৷ এক কোটি পরিবারের কাছে পণ্য যাচ্ছে৷ তবে এটা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে দিলে বাজারে অনেক বেশি প্রভাব পড়তো৷
হঠাৎ করে কার্ড দেয়া হলো৷ এটাকে রেশন কার্ডের মতো স্থায়ী করা যায়?
আমরা বলেছিলাম এরকম ট্রাকে সেল না করে বিভিন্ন এলাকায় ন্যায্য মূল্যের দোকান করার কথা৷ এর বিপরীতে কার্ড দেয়া হবে৷ নিয়ম অনুযায়ী পণ্য কিনবে৷ এটা যখন যেমন প্রয়োজন সেভাবেও করা যায়৷ রেশন কার্ডও করা যায়৷ আমাদের এখানেও আগে ছিল৷ কেউ মনে করতে পারেন আমরা ধনী হয়ে গেছি, আমাদের এগুলোর দরকার নাই৷ কিন্তু এখনো পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর জন্য এই ব্যবস্থা আছে৷ তাই নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য এটা করা যায়৷ আমাদের পাশের দেশেও আছে৷
সরকার টিসিবির পণ্য ছাড়াও ভ্যাট কমিয়েছে, আরো উদ্যোগ নিয়েছে, তারপরও কি গ্রহণযোগ্য মাত্রায় পণ্যের দাম কমেছে?
না, কমেনি৷ ব্যবসায়ীরা অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়িয়েছে৷ আর যে পণ্যের তারা দাম বাড়িয়েছে তা আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার আগে আমদানি করেছে৷ তা-ও আবার আর্ন্তজাতিক বাজারে দাম বাড়ার হারের চেয়ে বেশি হারে বাড়িয়েছে৷ মার্কেটে পণ্য মজুদ আছে, তারপরও তারা বাড়িয়েছে৷
সরকার তো সয়াবিন তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের সিন্ডিকেটের কথা বলছে৷ তাদের কি সরকার চেনে না?
সরকার চিনবে না কেন? সরকার তো ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কাজ করে৷ সরকারের ধারণা, ব্যবসায়ীরাই আসল শক্তি৷ ফলে যারা সিন্ডিকেট করে, তাদের কিছু হয় না৷ দুই বছর আগে পেঁয়াজ নিয়ে যারা কারসাজি করেছিল, তাদের তালিকা তৈরি করেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি৷ সরকার তো সাধারণ মানুষের কথা ভাবে না৷ তারা ব্যবসায়ীদের কথা ভাবে৷
যুদ্ধের কারণে মূল্যবৃদ্ধিতে বিভিন্ন দেশের উদ্যোগ
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার কারণে বিভিন্ন দেশে খাবারের দাম বেড়ে গেছে৷ ফলে গরিবরা তো বটেই, মধ্যবিত্তরাও বিপদে পড়েছেন৷ এই অবস্থায় নাগরিকদের কষ্ট লাঘবে এগিয়ে এসেছে কিছু দেশ৷
ছবি: REUTERS
অন্যতম শীর্ষ রপ্তানিকারক রাশিয়া, ইউক্রেন
বিশ্বের মোট গম রপ্তানির ২৫ শতাংশ করে রাশিয়া ও ইউক্রেন৷ সূর্যমুখী তেল রপ্তানিতেও শীর্ষ দেশ ইউক্রেন৷ এছাড়া বার্লি ও ভুট্টা রপ্তানিতে বিশ্ব বাণিজ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ ইউক্রেন৷ এদিকে রাশিয়ার গ্যাস, তেল ও সারের উপর অনেকখানি নির্ভরশীল ইউরোপ৷
ছবি: Olena Mykhaylova/Zoonar/picture alliance
ক্ষুধা পরিস্থিতিতে ‘বিপর্যয়ের’ আশঙ্কা
জাতিসংঘের সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বা ডাব্লিউএফপির মোট খাদ্য সহায়তার প্রায় ৫০ শতাংশ আসে ইউক্রেন থেকে৷ যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনে শস্য চাষে প্রতিকূলতা তৈরি হওয়ায় বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা পরিস্থিতিতে ‘বিপর্যয়’ নেমে আসতে পারে বলে মনে করছে সংস্থাটি৷ যুদ্ধ শুরুর আগে ৩৮টি দেশের প্রায় চার কোটি ৪০ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষে পড়ার আশঙ্কায় ছিল বলে জানিয়েছিল ডাব্লিউএফপি৷
ছবি: Valentin Sprinchak/dpa/TASS/picture alliance
ইউরোপীয় ইউনিয়ন
যুদ্ধের অর্থনৈতিক প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়তে ইইউ সদস্য দেশগুলোর কৃষকদের চার হাজার ৭২৫ কোটি টাকা অর্থ সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে৷ ইইউর কৃষকরা রাশিয়ার সারের উপর অনেকখানি নির্ভরশীল৷ যুদ্ধের আগেই সারের দাম বেড়ে গিয়েছিল৷ এছাড়া শূকর শিল্পসহ কৃষি ও মৎস খাতেও সহায়তার প্রস্তাব করেছে ইইউ৷ আরো বেশি জমিতে অস্থায়ী ভিত্তিতে ফসল চাষেরও অনুমতি দেয়া হচ্ছে৷
ছবি: Jelena Djukic Pejic/DW
জার্মানি
৯০ দিনের জন্য বেশ কিছু ভর্তুকি ও ছাড়ের ঘোষণা করা হয়েছে৷ যেমন পেট্রোলের ক্ষেত্রে লিটার-প্রতি ৩০ সেন্ট এবং ডিজেলের ক্ষেত্রে লিটার-প্রতি ১৪ সেন্ট কম গুনতে হবে৷ সেই সঙ্গে তিন মাস ধরে মাসে মাত্র নয় ইউরো মূল্যে বাস-ট্রাম ব্যবহার করা যাবে৷ এছাড়া আয়করদাতারা এককালীন ৩০০ ইউরো পর্যন্ত হাতে পাবেন৷ সন্তানপ্রতি ১০০ ইউরো বাড়তি ভাতাও দেওয়া হবে৷ স্বল্প আয়ের পরিবারগুলির জন্যও ভর্তুকির ঘোষণা করেছে জার্মান সরকার৷
ছবি: Sabine Kinkartz/DW
ফ্রান্স
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ মঙ্গলবার জানিয়েছেন, দ্রব্যমূল্যের বাড়তি মূল্যের ক্ষতি পোষাতে গরিবদের বিশেষ চেক দেয়ার কথা ভাবছেন তিনি৷
ছবি: John Thys/AFP/Getty Images
মিশর
মিশরে কয়েক দশক ধরে ভর্তুকি মূল্যে রুটি বিক্রি হচ্ছে৷ ফুড কার্ড থাকা ব্যক্তিরা এই দামে রুটি কিনতে পারেন৷ মোট জনসংখ্যার (প্রায় দশ কোটি ২০ লাখ) প্রায় ৬০ ভাগ এই সুযোগ নিয়ে থাকে৷ ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রুটির দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকার ভর্তুকি ছাড়া যে রুটি বিক্রি হয় তার দামও নির্ধারণ করে দিয়েছে৷ এছাড়া মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে সুদের হারও বাড়িয়েছে দেশটি৷
ছবি: picture alliance/dpa
বাংলাদেশ
গত রোববার থেকে এক কোটি পরিবারের জন্য কার্ডের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে৷ একটি পরিবারকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত দুইবার করে দুই লিটার সয়াবিন তেল, চিনি ও মসুর ডাল দুই কেজি এবং পেঁয়াজ সর্বনিম্ন দুই কেজি কেনার সুযোগ দেয়া হচ্ছে৷ তাদের কাছে সয়াবিন তেল ১১০ টাকা লিটার, মসুর ডাল প্রতি কেজি ৬৫ টাকা, চিনি ৫৫ টাকা, পেঁয়াজ কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে৷ উপরের ছবিটি নারায়ণগঞ্জ থেকে তোলা৷
ছবি: Munir uz Zaman/AFP
কিউবা
রুটি থেকে শুরু করে টুথপেস্ট - অনেক কিছু কম দামে কেনার জন্যই কিউবানদের লাইনে দাঁড়াতে হয়৷ ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এবার কিউবানদের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে কম দামে জ্বালানি তেল কিনতে দেখা গেছে৷ উপরের ছবিটি সোমবার তোলা৷
ছবি: REUTERS
যুক্তরাষ্ট্র
ওয়াশিংটন পোস্টের সোমবারের এক প্রতিবেদন বলছে, খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ায় ফুড ব্যাংকগুলোতে মার্কিনিদের ভিড় বাড়ছে৷ বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটে সহায়তা হিসেবে ২.৬৫ বিলিয়ন ডলার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷ তবে সেই পরিমাণ আরো বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন দেশটির আইনপ্রণেতারা৷