চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র পিপলস ডেইলি সরাসরি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর তীব্র সমালোচনা করেছে৷ কমিউনিস্ট পার্টির এই মুখপত্রের মতে, তাঁর আচরণের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় বিশ্বাসযোগ্যতা বিপন্ন হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট' নীতির আওতায় বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তাঁর দেশের প্রতি যাবতীয় ‘অন্যায়' দূর করতে চান৷ তাঁর দাবি, এতকাল গোটা বিশ্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অন্যায় সুবিধা ভোগ করে এসেছে৷ এর ফলে মার্কিন শ্রমিক ও কোম্পানিগুলির ক্ষতি হয়েছে৷ তিনি সেই ‘বৈষম্য' দূর করতে একের পর এক শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছেন৷ একাধিক পণ্যের আমদানির উপর শুল্ক চাপিয়ে তিনি ইউরোপ, চীনসহ গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সহযোগীদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চান৷ তারপর দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে অ্যামেরিকার জন্য সুবিধাজনক শর্তে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ঢেলে সাজাতে চান৷
সবকিছু অবশ্য ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছে না৷ বিশেষ করে চীন তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে৷ অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে পালটা শাস্তিমূলক পদক্ষেপের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মুক্ত বাণিজ্য কাঠামোর সুরক্ষায় সে দেশ নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে এসেছে৷ শুধু জুলাই মাসেই অ্যামেরিকা ও চীন পরস্পরের উপর প্রায় ৩,৪০০ কোটি ডলার মূল্যের শাস্তিমূলক শুল্ক চাপিয়েছে৷ অদূর ভবিষ্যতে ওয়াশিংটন চীন থেকে আমদানির উপর নতুন করে আরও ১,৬০০ কোটি ডলারের শুল্ক চাপানোর ইঙ্গিত দিয়েছে৷ এমন বাণিজ্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সামগ্রিকভাবে বিশ্ব বাণিজ্যের উপর কুপ্রভাবের আশঙ্কাও বেড়ে চলেছে৷
এতকাল ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনা করলেও সরাসরি ব্যক্তি হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে আক্রমণ করেনি চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম৷ এবার পিপলস ডেইলি সংবাদপত্রের বৈদেশিক সংস্করণের এক সংবাদভাষ্যে সেই অভূতপূর্ব কাণ্ড দেখা গেল৷ তাদের মতে, ‘স্ট্রিট ফাইটার' বা রাস্তার যোদ্ধার মতো ট্রাম্প ছলনার নাটক করে ভয়ভীতি দেখিয়ে কিছু সুবিধা আদায় করতে চাইছেন৷ কিন্তু বাকিরাও সেই নাটকের অংশ হবে, এমন সাধ মোটেই পূর্ণ হবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছে কমিউনিস্ট পার্টির সংবাদপত্র৷ প্রেসিডেন্টকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে লেখা হয়েছে, যে ‘ব্যবসা আর দেশ চালানো এক নয়'৷ তাঁর এমন আচরণের কারণে রাষ্ট্র হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় বিশ্বাসযোগ্যতা বিপন্ন হচ্ছে বলেও সাবধান করে দেওয়া হয়েছে৷
ট্রাম্প নিজে অবশ্য এমন সমালোচনা সত্ত্বেও অবিচল রয়েছেন৷ বরং তাঁর কৌশলে প্রত্যাশার তুলনায় বেশি ফল পাওয়া যাচ্ছে বলে দাবি করছেন তিনি৷ আত্মবিশ্বাসে ভরপূর ট্রাম্প শনিবার এক টুইট বার্তায় চীনের পুঁজিবাজারে দরপতনের উল্লেখ করে এমন মন্তব্য করেন৷ তাঁর মতে, নতুন করে আলোচনার মাধ্যমে বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করলে অ্যামেরিকার পুঁজিবাজার নাটকীভাবে চাঙ্গা হয়ে উঠবে৷
এসবি/ডিজি (রয়টার্স, এএফপি)
যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা
২০১৭ সালে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩৭৫ বিলিয়ন ডলার৷ ঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করেছে৷ চীন পালটা জবাব দিচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/Minneapolis Star Tribune
তদন্তের ঘোষণা
২০১৭ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার কয়েকদিন পর মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইটহাইজার বাণিজ্য ক্ষেত্রে চীনের অন্যায় আচরণের তদন্তের ঘোষণা দেন৷ ১৯৭৪ সালের বাণিজ্য আইনের ৩০১ ধারা অনুযায়ী, মার্কিন প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়াই কোনো দেশের উপর শুল্ক আরোপ করতে পারেন৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
চীনের প্রতিনিধি প্রেরণ
গত মার্চ মাসে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তাঁর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা লিউ হে-কে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠান৷ সেখানে তিনি মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী স্টেভেন মানুশিন ও বাণিজ্য প্রতিনিধি লাইটহাইজারের সঙ্গে বৈঠক করেন৷ এই সময় বাণিজ্য ক্ষেত্রে উত্তেজনা প্রশমন নিয়ে দুই পক্ষ কথা বলে৷ লিউ হে এখন চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী৷
ছবি: Reuters/J. Lee
চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ
চলতি বছরের ২২ মার্চ ৬০ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ চীনা পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করা হবে বলে জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ চীনের বিরুদ্ধে তিনি মেধাসত্ত্ব চুরির অভিযোগ আনেন৷
ছবি: Reuters/J. Ernst
চীনের জবাব
পালটা প্রতিক্রিয়া হিসেবে চীনও ৫০ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়৷ যুক্তরাষ্ট্রের মতোই তারা এসব পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হবে বলে জানায়৷ ট্রাম্প সমর্থক ভোটাররা বেশি বাস করেন এমন সব রাজ্যের সয়াবিন, মাংস, হুইস্কিকে শুল্কের আওতায় আনার কথা জানায় চীন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা?
গত এপ্রিলে যাত্রীবহণকারী গাড়ি আমদানির উপর শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেয় চীন৷ এ ধরনের গাড়ির উপর ধার্য থাকা শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হবে বলে জানায় দেশটি৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua/Li Xueren
হুমকি স্থগিত
মে মাসের ২০ তারিখে মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী স্টেভেন মানুশিন জানান, দুই দেশ বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে৷ তাই যুক্তরাষ্ট্র আপাতত চীনা পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের বিষয়টি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান তিনি৷
ছবি: Reuters/A.P. Bernstein
আবারও ঘোষণা
শুল্ক আরোপ স্থগিত রাখার তিন সপ্তাহ পর ট্রাম্প প্রশাসন আবারও ৫০ বিলিয়নের সমপরিমাণ চীনা পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়৷ পালটা প্রতিক্রিয়া হিসেবে চীনও সমপরিমাণ মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করে৷
ছবি: picture-alliance/MediaPunch/CNP/C. Kleponis
কার্যকর
অবশেষে ১৫ জুন যুক্তরাষ্ট্র জানায় যে, ৬ জুলাই থেকে ৩৪ বিলিয়নের সমপরিমাণ চীনা পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে৷ চীন বলেছে, এর ফলে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য যুদ্ধ’ শুরু হতে পারে৷ বিষয়টি নিয়ে তারা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে বলেও জানায় চীন৷