ব্যবহারকারীদের অডিও আলাপের প্রতিলিপি তৈরি করতে কয়েকশো ঠিকাদার নিয়োগ দিয়েছে ফেসবুক৷ কিছু ঠিকাদার এই কাজকে ‘অনৈতিক' বলেও আখ্যা দিয়েছেন৷ মার্কিন পত্রিকা ব্লুমবার্গ-এর এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এই তথ্য৷
বিজ্ঞাপন
প্রতিলিপি প্রোগ্রাম পরীক্ষা করতে প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করে না, এমন ব্যক্তিদের দিয়ে ব্যবহারকারীদের অডিও আলাপের প্রতিলিপি প্রস্তুত করেছে ফেসবুক৷ যাদের অডিও এই কাজে ব্যবহার করা হয়েছে তাদেরকে না জিজ্ঞাসা করেই সেসব অডিও রেকর্ড করা হয়েছে বলে ব্লুমবার্গ পত্রিকায় লেখা হয়েছে৷ তবে, অডিওগুলো ঠিক কাদের সেই তথ্য ঠিকাদারদের জানানো হয়নি৷
ফেসবুক অডিও রেকর্ড করে প্রতিলিপি প্রস্তুতের কথা স্বীকার করলেও এই কাজে ইতোমধ্যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে৷ ব্লুমবার্গকে প্রতিষ্ঠানটির এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘অ্যাপল এবং গুগলের মতো আমরাও অডিও রিভিউ করতে মানুষের সহায়তা নেয়ার কাজ এক সপ্তাহেরও বেশি সময় আগে বন্ধ করেছি৷''
প্রসঙ্গত, এর আগে ফেসবুক গোপনে এটির ব্যবহারকারীদের অডিও আলাপ শুনে বিজ্ঞাপন সাজায় বলে গুঞ্জন উঠেছিল৷ কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি সেই গুঞ্জনকে ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব' বলে উড়িয়ে দিয়েছে৷ গতবছর মার্কিন কংগ্রেসে এক শুনানিতেও মার্ক জাকারবার্গ জানান যে তার প্রতিষ্ঠান এরকম কিছু করে না৷
তবে, মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটি অডিও রেকর্ড করার কথা স্বীকার করে বলেছে যে শুধুমাত্র যেসব ব্যবহারকারী তাদের অডিও চ্যাট রেকর্ড করার অনুমতি দিয়েছে, তাদের অডিও রেকর্ড করা হয়েছে৷
ব্লুমবার্গ অবশ্য লিখেছে, ফেসবুক কখনোই তার ব্যবহারকারীদের একথা জানায়নি যে তৃতীয় পক্ষ তাদের অডিও রিভিউ করতে পারে৷
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুক ছাড়াও অ্যামাজন, অ্যাপল এবং গুগলের বিরুদ্ধেও ব্যবহারকারীদের অডিও তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে রিভিউ করানোর অভিযোগ উঠেছে৷ এসব প্রতিষ্ঠান নিজেদের ভয়েস অ্যাসিস্টেন্ট সার্ভিসের উন্নতি ঘটাতে এসব অডিও ব্যবহার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে৷
তবে, এই কাজের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর অ্যাপল এবং গুগল এমনটা আর করা হবে না বলে নিশ্চিত করেছে৷ আর অ্যামাজন জানিয়েছে যে ভবিষ্যতে শুধুমাত্র ব্যবহারকারীদের অনুমতি নিয়ে তারা এমনটা করবে৷
ভবিষ্যতে যা করতে চায় ফেসবুক
শুধু সামাজিক যোগাযোগের সাইট আর বার্তা আদানপ্রদানের অ্যাপে নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখতে চায় না ফেসবুক৷ পাশাপাশি কেনাকাটা, অর্থ লেনদেনসহ অনলাইনকেন্দ্রিক সব সেবাই নিয়ে আসতে চায় প্রতিষ্ঠানটি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Jose Sanchez
এক প্ল্যাটফর্মে সব কিছু
ফেসবুকের সব আ্যপ - মেসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রাম, আর হোয়াটস অ্যাপকে একটি একক ব্যবস্থায় আনতে চান মার্ক সাকারবার্গ৷ এই ব্যবস্থায় ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় বাড়তি জোর দেয়া হবে৷ বার্তা আদানপ্রদান ছাড়াও এটিকে এমনভাবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা তাঁর, যা ‘কথা বলা, ভিডিও চ্যাট, গ্রুপ স্টোরি, ব্যবসা, লেনদেন, বাণিজ্য এবং সব ধরণের ব্যক্তিগত সেবার একটি প্লাটফর্ম হয়ে উঠবে৷’ সম্প্রতি এক ব্লগপোস্টে লিখেছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Jose Sanchez
পেমেন্ট সেবা
আগামী দিনে ফেসবুকের অ্যাপেই মিলবে পেমেন্ট সেবা৷ ধরুন প্রতিষ্ঠানটি পেপালের সাথে জোটবদ্ধ হলো৷ তখন চাইলে অনলাইনে কেনাকাটা, রেস্টুরেন্ট বিল, সরকারি সেবার বিল সবই পরিশোধ করা সম্ভব হবে মেসেজিং অ্যাপ দিয়েই৷ নেয়া যাবে রাইড শেয়ারিং সেবাও৷ অবশ্য এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে মেসেঞ্জারের মাধ্যমে লেনদেনের সুবিধা রয়েছে৷ হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে পরীক্ষামূলক লেনদেন ব্যবস্থা চালু হয়েছে ভারতেও৷
ছবি: Colourbox
নিজস্ব মুদ্রা
ব্যবহারকারীদের অর্থ লেনদেনের সুবিধার জন্য ফেসবুক নিজস্ব ডিজিটাল মুদ্রা তৈরি করছে বলে নিউইয়র্ক টাইমস তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে৷ এ বিষয়ে ফেসবুক বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করেনি৷ তবে নতুন একটি দল বিটকয়েনসহ অন্য ক্রিপ্টোকারিন্সেগুলোর ব্যবহারের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়৷ এটি বাস্তবায়ন হলে অর্থ লেনদেনের জন্য ব্যবহারকারীদের ব্যাংক বা পেপাল অ্যাকাউন্ট লাগবে না৷
ছবি: Imago/Reporters/Eureka
ওয়ান-স্টপ শপ
নিজস্ব ভার্চুয়াল মুদ্রা চালু হলে ফেসবুকের মাধ্যমে অনলাইন কেনাকাটা বা সেবা নেয়ার বড় একটি চ্যালেঞ্জ দূর হয়ে যাবে৷ মেসেজিং অ্যাপ প্লাটফর্মটি তখন পরিণত হবে ‘ওয়ান স্টপ শপে’৷ রেস্টুরেন্ট রিজার্ভেশন, পরিবহন সেবা নেয়া, কিংবা মার্কেটপ্লেস থেকে পণ্য কেনা, সম্ভব হবে সবই৷ এমনকি ভবিষ্যতে অ্যামাজনের মত ই-কমার্স ব্যবসাতেও নামতে পারে ফেসবুক, ধারণা বিশেষজ্ঞদের৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Matthews
আয়ের নতুন উৎস
নতুন এই প্ল্যাটফর্মের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বিজ্ঞাপনের বাইরে আয়ের নতুন নতুন দুয়ার খুলবে ফেসবুকের জন্য৷ কেনাকাটার ক্ষেত্রে তখন সেবাদাতা কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে কমিশন নিতে পারবে তারা৷ যেমনটি এখন অ্যাপল করে থাকে৷ অ্যাপভিত্তিক লেনদেনে তারা ৩০ ভাগ পর্যন্ত অর্থ কেটে রাখে৷
ছবি: Imago/Michael Weber
চ্যালেঞ্জও আছে
ফেসবুকের এই পরিকল্পনা কতটা বাস্তবায়ন সম্ভব, তা নির্ভর করবে ব্যবহারকারীদের আগ্রহের উপর৷ কেননা ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ায় ফেসবুকের উপর আস্থার সংকট রয়েছে৷ তার উপর এই পরিবর্তনের পথে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশের আইনি বাধাও তাদের পেরুতে হবে৷