ভারতে কোনো ব্যক্তি যদি স্বেচ্ছায় পরস্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হন, তবে চলতি ব্যভিচার আইনে শুধু তিনিই শাস্তি পাবেন৷ ছাড় পেয়ে যাবেন নারী৷ এটাও এক ধরনের লিঙ্গ বৈষম্য৷ তাই আইনের এই ধারা খতিয়ে দেখতে চায় শীর্ষ আদালত৷
বিজ্ঞাপন
প্রায় দেড়শ' বছরের পুরানো৷ ঐ আইনের সংশ্লিষ্ট দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি পরস্ত্রীর সঙ্গে স্বেচ্ছায় যৌন সম্পর্ক করেন তাহলে সেটা ধর্ষণ নয়, ব্যভিচার হিসেবে গণ্য হবে৷ সেক্ষেত্রে শাস্তি হবে শুধু পুরুষেরই৷ পাঁচ বছর পর্যন্ত জেল এবং জরিমানা হতে পারে তাঁর৷ চলতি আইনের দণ্ডবিধিতে পুরুষ ব্যভিচারী এবং নারী তাঁর শিকার – এভাবেই দেখা হয়েছে৷ তাই মহিলারা ছাড় পাবে৷ অবশ্য ঐ যৌন সম্পর্কে মহিলার স্বামীর সম্মতি থাকলে সেটা ব্যভিচার বা ধর্ষণ হিসেবে গ্রাহ্য হবে না৷ ভিক্টোরিয়ান যুগের এই আইনের মানসিকতা নিয়ে গত সপ্তাহে প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের বেঞ্চ৷ বিবাহিতা মহিলার স্বামীর মত থাকা মানে কী? স্ত্রী কি স্বামীর সম্পত্তি না পণ্য? নাকি তাঁর অধীনস্থ আত্মপরিচয়হীন পুতুলমাত্র? সুপ্রিম কোর্ট মনে করে, এখন উপলব্ধি করার সময় এসেছে যে পুরুষ ও নারী সব দিক থেকেই সমান৷ সংবিধানেও সমানাধিকার দেওয়া হয়েছে৷ তাই সুপ্রিম কোর্ট এখন দেশের প্রচলিত ব্যভিচার আইনের দু'টি দিক খতিয়ে দেখবে৷ এক, এই আইনের ৪৯৭ ধারায় পুরুষ ব্যভিচারী এবং নারী তাঁর শিকার – এটার যৌক্তিকতা৷ দুই, মহিলার স্বামীর তাতে মত থাকলে সেটা ব্যভিচারই নয়৷ বিষয়টির জটিলতা হলো, সেকেলে পুরুষতান্ত্রিকতার নামে মহিলাদের করুণার পাত্রী হিসেবে দেখা এবং ছাড় দেওয়া কতটা যুক্তিসম্মত?
ডিভোর্স – কেন? বিয়ে টিকিয়ে রাখার উপায়ই বা কী?
অনেকের কাছে ‘বিয়ের’ দিনটি জীবনের সবচেয়ে সুন্দর ও স্মরণীয় দিন হলেও ডিভোর্সের হার দিনদিন বেড়ে চলেছে, প্রায় সর্বত্রই৷ কিন্তু কী কারণে? ডিভোর্সের হার কমানোর কোনো উপায় আছে কি?
ছবি: Fotolia/Jens Klingebiel
ডিভোর্সের কারণ
সুখে, দুঃখে সারাজীবন একে-অপরের সঙ্গী থাকা – সেকথা ভেবেই তো বিয়ে! কিন্তু বিয়ের পর যতদিন যায়, বেরিয়ে আসে দু’জনের মধ্যকার নানা অমিল৷ এগুলোই এক সময় ডিভোর্সের কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷ ‘কমিউনিকেশন গ্যাপ’ বা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বোঝাবুঝির অভাব, পরকীয়া প্রেম, অতৃপ্ত যৌনজীবন, নির্যাতন, অহংকার, সন্তান মানুষ করা নিয়ে মতভেদ, সংসারের কাজে অনীহা ইত্যাদি কারণে তালাক হয় জার্মানিতে৷
ছবি: Fotolia/Marco Scisetti
কমিউনিকেশন গ্যাপ
২০১৪ সালে জার্মানিতে ১ লাখ ৬৬ হাজারের বেশি ডিভোর্স হয়েছে৷ ডিভোর্সের কারণগুলোর মধ্যে প্রথমেই রাখা হয়েছে ‘কমিউনিকেশন গ্যাপ’, অর্থাৎ বিবাহের বন্ধনকে বন্ধুত্বপূর্ণ ও ঘনিষ্ঠ করতে যতটা কথাবার্তা ও আবেগ অনুভূতি বা ভালোবাসার প্রকাশ বা আলোচনা দরকার, তা না হওয়াকে৷ এর ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়, দূরত্ব বাড়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পরকীয়া প্রেম
দাম্পত্যজীবনের প্রথম শর্তই হলো ‘বিশ্বাস’ আর সেটা যদি না থাকে তাহলে অবশ্যই তা তালাকের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে৷ দাম্পত্যজীবনকে ছেলেখেলা ভেবে অনেকেই অন্য নারী বা পুরুষের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যায় কিংবা পুরনো প্রেমের সম্পর্ককে আবার জিইয়ে তোলে৷ এমনটা হলে স্বাভাবিকভাবেই অপরজনের পক্ষে তা মনে নেওয়া সম্ভব হয় না, ফলে বিয়েটা ডিভোর্সে গিয়ে শেষ হয়৷
ছবি: picture-alliance /dpa/Armin Weigel
যৌনজীবন অতৃপ্ত হলে
শারীরিক ভালোবাসা বা যৌনসুখের দাম্পত্যজীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে৷ এই সুখের কমতি বা ভাটা পড়লে অনেকক্ষেত্রেই দেখা দেয় সমস্যা৷ আমাদের দেশে দম্পতিদের শোবার ঘরের এই সমস্যার কথা নিয়ে বাইরে আলোচনা করা না হলেও, জার্মানি বা পশ্চিমা বিশ্বে সরাসরি তা আলোচনায় আসে৷ অতৃপ্ত যৌনসুখের কারণে অনেক সংসারই ভেঙে যায় জার্মানিতে৷
ছবি: Fotolia/drubig-photo
কাজ ভাগাভাগি না করা
চাকরি বা নিজস্ব একটা পেশা এখানে স্বামী-স্ত্রী দু’জনেরই রয়েছে৷ পাশাপাশি বাজার, রান্না, ঘরদোর পরিষ্কার, বাগান করা, আতিথেয়তা, সন্তানদের দেখাশোনা – সংসারের কাজ তো আর কম নয়! এ সব কাজ দু’জনে মিলেমিশে করলে যত সহজে করা সম্ভব, একজনের পক্ষে তা সম্ভব নয়৷ যদি এ সব কাজ শুধুমাত্র একজনকে করতে হয়, তাহলেই দেখা দেয় সমস্যা৷ অর্থাৎ এটাও বিবাহবিচ্ছেদের একটা কারণ৷
ছবি: Konstantin Yuganov - Fotolia.com
আমিই সব
অনেক স্বামী বা স্ত্রী নিজের মতামত বা ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে তাঁর হবি, আনন্দ, সুখের জন্য যা যা দরকার সবই করেন৷ কিন্তু উল্টোদিকে তাঁর সঙ্গীর সখ বা ইচ্ছার কোনো মূল্যই দিতে চান না৷ ফলে অন্যজনের পক্ষে এই স্বার্থপরতা বা একগুঁয়েভাব বেশি দিন সহ্য করা সম্ভব হয় না৷ ফলাফল – ডিভোর্স! অর্থাৎ একে-অপরের প্রতি শ্রদ্ধবোধ না থাকলে সম্পর্ক বেশি দিন টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়!
তালাকের কারণ টাকা
সংসারে প্রয়োজনীয় টাকা অভাবে যেমন তালাক হয়, আবার প্রচুর টাকা থাকলেও বিবাহবিচ্ছেদ হতে পারে৷ দু’টি স্বতন্ত্র মানুষের আলাদা জগত থাকতে পারে, কিন্তু সেই জগত দু’টির একটা মেলবন্ধন জরুরি৷ অতিরিক্ত অর্থ অনেকসময় এটা হতে দেয় না৷ কারণ অতিরিক্ত টাকা-পয়সা কিভাবে সংসার, সন্তান বা অন্য কিছুতে খরচ করা হবে, তা নিয়েও শুরু হতে পারে ঝগড়া৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/McPHOTO
‘ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স’
বাড়িতে শারীরিক অথবা মানসিক নির্যাতন করাকে ‘ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স’ বলা হয়৷ মানসিক নির্যাতন সেভাবে প্রমাণ করা না গেলেও, শারীরিক নির্যাতন তার প্রমাণ রেখে যায়৷ এই নির্যাতনের স্বীকার হয় সাধারণত নারীরাই৷ এই যন্ত্রণা ও অত্যাচার বেশি দিন সহ্য করা সম্ভব হয় না৷ তাই এ থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই ডিভোর্সের আবেদন করে থাকেন জার্মানিতে৷
ছবি: Fotolia/detailblick
বাংলাদেশে ডিভোর্সের কারণ
২০১৪ সালে শুধুমাত্র ঢাকার দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনেই ডিভোর্সের সংখ্যা ছিল ৫,৪১৮টি৷ বাংলাদেশে ডিভোর্সের হার দ্রুতগতিতে বাড়ার অন্যান্য কারণের পাশাপাশি জি বাংলা, স্টার প্লাসের মতো টিভি চ্যানেল, অতি আধুনিকতা, সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাবকে দায়ী করছেন ডয়চে ভেলের ফেসবুক বন্ধু মোহাম্মদ নূরসহ বেশ কয়েকজন৷
সন্তান না হওয়া, বড় কোনো অসুখ, যৌন সমস্যা, অন্য দেশে থাকতে চাওয়ার মতো বিশেষ কারণ হলে হয়ত বিবাহবিচ্ছেদ রোধ করা সম্ভব নয়৷ তবে বিবাহবিচ্ছেদের কারণ যদি, ভালোবাসা, আবেগ, ভুল বোঝাবুঝি, সন্তান মানুষ করা ইত্যাদি কারণ হয়, তাহলে দু’জন কিছুটা সচেতন ও আগ্রহী হলে বিবাহবিচ্ছেদ আটকানো যেতে পারে৷
ছবি: picture alliance / Markus C. Hurek
সংসার টিকিয়ে রাখতে ভালোবাসার যত্ন
একে-অপরকে নিয়ে খানিকটা ভাবুন, কাজের স্বীকৃতি দিন, সমালোচনা না করে মাঝে-মধ্যে একে-অপরের প্রশংসা করুন, কাজ ভাগাভাগি করে নিন৷ সবচেয়ে বড় কথা দু’জনে মিলে সব কিছু প্ল্যান করুন, আলোচনা করুন আর সে আলোচনায় মাঝে মাঝে সন্তানদেরও সাথে নিন৷ ভালোবাসা গাছের মতো৷ যত্নে ভালোবাসায় তা ফুলে-ফলে ভরে উঠবে৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/G. Fischer
ঝগড়া এড়িয়ে চলুন
ডেনমার্কের কোপেনহাগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে বের করেছেন, যাঁরা খুব বেশি ঝগড়া করেন, তাঁদের অকালমৃত্যুর ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় দুই থেকে তিনগুণ বেশি৷ ঝগড়া অবশ্য শুধু ডিভোর্সের কারণই হয় না, মৃত্যুকেও এগিয়ে আনে৷ আর সন্তানের সামনে তো ঝগড়া নয়ই৷ এতে সন্তানের মধ্যে যেমন মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, তেমনই কমে যেতে পারে মা-বাবার প্রতি শ্রদ্ধাবোধও৷
ছবি: goodluz - Fotolia
প্রয়োজনে ক্ষমা চেয়ে নিন
ভুল মানুষ করতেই পারে৷ তাই স্বামী বা স্ত্রী যদি কোনো ভুল বা অন্যায় করে থাকে, তাহলে সেটা একে-অপরকে জানিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিন৷ দু’জনে দু’জনের প্রতি বিশ্বাস রাখুন৷ অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনোরকম গোপনীয়তা যেন না থাকে৷ তবে তার মানে অন্যের ওপর নজর রাখা কিন্তু একেবারেই নয়৷ অন্যের স্বাধীনতাকে মর্যাদা দিন৷ ভুলে যাবেন না যে, বিশ্বাসই দাম্পত্যজীবনের মূল ‘চাবিকাঠি’৷
ছবি: Colourbox/Kzenon
13 ছবি1 | 13
এর আগে তিন তিনবার একই ইস্যু নিয়ে শীর্ষ আদালতে আর্জি জানানো হয়৷ কিন্তু প্রতিবারই আদালতে তা খারিজ হয়ে যায়৷ যেমন ১৯৮৫ সালে সোমিত্রি বিষ্ণুর মামলায় বিষ্ণুর স্বামী তাঁর স্ত্রীর অন্য পুরুষের সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত থাকার অভিযোগে ডিভোর্স চান৷ বিষ্ণুর আইনজীবী নলিনী চিদাম্বরম ৪৯৭ ধারাকে লিঙ্গ বৈষম্য, আইনি স্বেচ্ছাচারিতা এবং পুরুষতান্ত্রিকতার দৃষ্টান্ত বলে সওয়াল করেন৷ তিনি বলেন, যে যুক্তিতে বিষ্ণুরস্বামী ডিভোর্স চাইছেন, সেই যুক্তিতে কোনো স্ত্রী তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করবেন, এমন অধিকার তাঁকে দেওয়া হয়নি৷ শুধু তাই নয়, বিবাহিত পুরুষ অন্য কোনো অবিবাহিত মহিলার সঙ্গে যৌন সম্পর্কে থাকলেও পুরপুরুষের বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না৷ এর সহজ অর্থ দাঁড়ায়, বিবাহ-বহির্ভূত দৈহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্বামী আইনের চোখে ধরা ছোঁয়ার বাইরে৷ তত্কালীন ভারতের প্রধান বিচারপতি ওয়াই. ভি চন্দ্রচূড়ের এজলাসে সেই আর্জি আবেগতাড়িত বলে খারিজ হয়ে যায়৷ শুধু বলা হয়, অবিশ্বাসী স্বামীর বিরুদ্ধে সামাজিক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে৷ কারণ অপরের স্ত্রীকে প্রলোভিত করা সমাজের চোখে ঘৃণ্য৷
এরও আগে ১৯৫৪ সালে ইউসুপ আবদুল আজিজ ব্যভিচার মামলায় পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ রায় দিয়েছিল যে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারায় সংশ্লিষ্ট মহিলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার সংস্থান রাখা হয়নি৷ এর জন্য আইন প্রণেতাদের বিশেষ সংস্থান রাখতে হবে৷ ১৯৮৮ সালে রেবতী মামলার বিচারকদের রায়, পুরুষেরই শাস্তি হওয়া উচিত৷ কারণ সে মহিলার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলে দাম্পত্য জীবনের পবিত্রতা নষ্ট করেছে৷ কাজেই স্ত্রী যেমন ব্যভিচারী স্বামীকে জেলে পাঠাতে আদালতে যেতে পারেন না, তেমনি স্বামীও বৌয়ের বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অভিযোগে তাঁকে জেলে পাঠাতে পারেন না৷
শাশ্বতী ঘোষ
বিশিষ্ট নারীবাদী শাশ্বতী ঘোষ কী বলছেন? এ বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘দু'টো ক্ষেত্রেই লিঙ্গ সাম্য বজায় রাখা উচিত৷ অর্থাৎ মেয়েদেরও আদালতে যাবার অধিকার থাকা উচিত৷ আর মেয়েরা যদি বৈবাহিক সম্পর্কে থাকাকালীন অন্য সম্পর্কে জড়ান, তাহলে সেটারও দায়িত্ব নিতে হবে তাঁকে৷ অর্থাৎ তাঁরও বিচার হওয়া উচিত৷ আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে আমি এটাই বলতে পারি যে, দু'দিক থেকেই ‘জেন্ডার জাস্টিস' আইন হওয়া উচিত৷'' বলা বাহুল্য, ১৮২৯-৩০ সালে যখন বর্তমান আইন তৈরি হয়েছিল তখন মেয়েদের পরিসরটাকে ঘর বলে মনে করা হতো আর স্বামী বা পুরুষের পরিসরটা মনে করা হতো বাইরে৷ মেয়েদের ঘর সংসারটা সুরক্ষিত রাখতে বৈবাহিক সম্পর্কটা সুরক্ষিত রাখতেই তৈরি হয়েছিল এই আইন৷
নারীবাদী শাশ্বতী ঘোষ ডয়চে ভেলেকে আরও বললেন, অনেকক্ষেত্রে আমরা দেখেছি বহু মেয়ে এই বলে অভিযোগ করছেন যে, স্বামী তাঁদের বন্ধুদের হাতে তুলে দিচ্ছেন৷ সেক্ষেত্রে দেখতে হবে স্বামীর সম্মতি কোন অবস্থায় আছে৷ শুধুই কি স্বামীর সম্মতি নাকি স্ত্রীরও সম্মতি আছে৷ যদি দু'জনের সম্মতি থাকে তাহলে সেটা আদালতের আওতায় পড়বে না৷ এ প্রসঙ্গে তিনি সাহিত্যিক আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের আমি সে ও সখা গল্পটি উল্লেখ করেন, যেখানে স্বামী মনে করেছেন বিবাহিত জীবনের স্বাভাবিক সম্পর্ক ধরে রাখতে সে অক্ষম৷ তাই অন্য পুরুষের সঙ্গে যদি তাঁর স্ত্রী ভালো থাকে, তো থাকুক৷ সেক্ষত্রে কোনো পক্ষই আদালতে যাবে না৷ আর স্ত্রীর যদি সত্যিকারের সম্মতি না থাকে, স্বামী যদি উচ্চাকাঙ্খার বশবর্তী হয়ে, যেমন অর্থ বা বৈভবের জন্য এ কাজ করেন, তাহলে সেটাকে কোনোমতেই সমর্থন করা যায় না৷
আসল প্রশ্ন, চলতি আইনে ব্যভিচার অপরাধ বলে গণ্য হওয়া উচিত কিনা৷ সেজন্য এই আইনটি নতুন করে খতিয়ে দেখা জরুরি৷ এখন অনেক দেশে এটাকে অপরাধ বলে গণ্য করা হয় না৷ জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ মনে করে, যেসব দেশে এই আইন আছে এবং যেখানে মহিলাদের ক্ষেত্রে বৈষম্য করা হয়, সেসব দেশ থেকে এ ধরনের আইন তুলে দেওয়া উচিত৷
সবচেয়ে বেশি বিশ্বাসঘাতক কারা?
নারী কখন অসতী হন? পুরুষ কেন তাঁর স্ত্রীর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেন – সেটা কি তাঁদের জাতি বা দেশের ওপর নির্ভর করে? কনডম তৈরির আন্তর্জাতিক কোম্পানি ‘ডিউরেক্স’ কিন্তু তাদের এক সমীক্ষায় এমনই একটি তালিকা তৈরি করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
থাইল্যান্ড
থাইল্যান্ডের প্রায় ৫১ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো সময় তাদের পার্টনারের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে৷ হ্যাঁ, এমনটাই বলছে সমীক্ষার ফলাফল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ডেনমার্ক
ডেনমার্কের প্রায় ৪৬ শতাংশ নারী-পুরুষ জীবনে অন্তত একবার হলেও জীবনসঙ্গীর সঙ্গে ছলনা করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইটালি
প্রাচীন সভ্যতা আর আধুনিকতার পাশাপাশি মনোরম সমুদ্রসৈকত, আলপাইন লেক, আল্পস পর্বতমালার সমন্বয়ে গঠিত ইটালি পর্যটকদের জন্য এক অনন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য৷ কিন্তু সেই ইটালিরও প্রায় ৪৫ শতাংশ মানুষ বিশ্বাসঘাতক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জার্মানি
ইটালির মতো কর্মনিষ্ঠ জার্মানদের মধ্যেও ছলনার প্রবণতা প্রবল৷ এ দেশেরও মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৫ শতাংশ নারী-পুরুষ জীবনে নিজ পার্টনারকে ঠকিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Joker/A. Stein
ফ্রান্স
ফ্রান্স বললেই মনে পড়ে ভালোবাসার ‘পারি’, মানে প্যারিসকে৷ অথচ এই ভালোবাসা কিন্তু সারা জীবনের জন্য কাউকে ভালোবাসা না-ও হতে পারে৷ একই সময়ে একাধিক মানুষের প্রতি ভালোবাসা কোনো অদ্ভুতুড়ে কাণ্ড নয় ফরাসিদের কাছে৷ আর সে কারণেই হয়ত ফরাসিদের ৪৩ শতাংশ মানুষ নিজের সঙ্গীর প্রতি বিশ্বাসী নয়৷
ছবি: Reuters
নরওয়ে
নরওয়ের মোট ৪১ শতাংশ নারী-পুরুষ দাম্পত্য সম্পর্কে ছলনা বা মিথ্যাচারের আশ্রয় নেয় বলে জানাচ্ছে ‘ডিউরেক্স’-এর এই সমীক্ষা৷
ছবি: picture alliance/ dpa
বেলজিয়াম
বেলজিয়ামের ৪০ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো সময় তাদের পার্টনারের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে৷