হংকং শহরে নিজস্ব জায়গা বড় সমস্যা৷ ছোট ফ্ল্যাটে অনেক মানুষ একসঙ্গে থাকতে বাধ্য হন৷ আরাম পেতে অনেকেই দূরে ছোটেন৷ শহরের মাঝেই একটি ক্যাফে নীরবতার মধ্যে বিশ্রামের অভিনব সুযোগ করে দিচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্রাম ও আরামের জায়গা হিসেবে হংকং-এর কথা কেউ ভাবে না৷ সেখানে দিনে-রাতে কখনোই শান্ত পরিবেশ পাওয়া বড় চ্যালেঞ্জ৷ অনেক পর্যটক শহরের ভিড়ভাড়, হই-হট্টগোল দেখে রোমাঞ্চিত হলেও স্থানীয় মানুষের কাছে তা মোটেই তেমন সুখকর নয়৷ আগে থেকে টেবিল বুক না করলে রেস্তোরাঁয় প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়৷ সপ্তাহান্তে এত ভিড় যে ঠিকমতো হাঁটাচলা করাই কঠিন৷ দোকানবাজারে খুব ভিড়৷ কিন্তু একটু বাইরের দিকে গেলেই এমন হই-হট্টগোল এড়ানো যায়৷
হংকং শহরে কিছু শান্ত জায়গা আছে বটে, কিন্তু সে সব এলাকা বড়ই দুর্গম৷ কিন্তু শহরের কিছু মানুষ শহরের কোলাহল এড়াতে বেশ দূরে যেতেও প্রস্তুত৷ কিন্তু হাইকার হিসেবে মিং কিং ওয়ং মনে করেন, গ্রামের দিকেও ভিড় বাড়ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘মিডিয়ার কারণেই প্রায় এমনটা ঘটে৷ পাঠকরা হংকং-এর এমন সুন্দর জায়গার কথা জেনে অবাক হন৷ কিন্তু সে সব জায়গা এত পর্যটক সামলাতে পারে না৷ একবার কোনো জায়গা বিখ্যাত হলেই মানুষের ঢল নামে৷''
গ্রামের দিকে যাবার আরেকটি কারণ হলো, শহরের সবুজ এলাকায়ও আর তিলধারণের জায়গা নেই৷ মিং কিং ওয়ং বলেন, ‘‘বলতে পারেন, হংকং-এর মানুষ তো নিজেদের বাড়িতেই থাকতে পারেন৷ কিছু লোক তা পারলেও অনেককে ক্ষুদ্র ফ্ল্যাটে পরিবারের সবার সঙ্গে থাকতে হয়৷ এত সীমিত জায়গায় আরাম করা কঠিন৷''
বার্লিনের ক্যাফে সংস্কৃতি
হংকংয়ের গ্রাফিক শিল্পী চ্লে কা কেই ইয়াউ সম্প্রতি বার্লিনে এসেছিলেন৷ বার্লিনের বিভিন্ন ক্যাফেতে সময় কাটান তিনি৷ ছবিও আঁকেন৷ তাঁর সেই স্কেচ এখন বার্লিনের কফি হাউস খোঁজার বিশ্বস্ত গাইড৷
ছবি: Chloe Ka Kei Yau
ওরা, ক্রুৎসবার্গ
ওরানিয়েনপ্লাৎসের ‘ওরা’ বার্লিনের অন্যতম থিম ক্যাফে৷ আগে এই ক্যাফের জায়গায় একটি ওষুধের দোকান ছিল৷ পরবর্তীকালে ওষুধের দোকান ক্যাফেতে পরিণত হলেও, পুরনো অনেক জিনিসই রেখে দেওয়া হয়৷ পুরনো সিঙ্ক, ঘড়ি, ক্যাবিনেট সবই রেখে দেওয়া হয়েছে আগের মতো৷ কাঠের কাউন্টারে মোমবাতির আলোয় কফি অন্যরকম এক অনুভূতি তৈরি করে৷ ক্যাফের কর্মীরা বন্ধুত্বপূর্ণ৷ খাবারও ভালো৷
ছবি: Chloe Ka Kei Yau
কাফে কানেল, নয়-কোলন
বার্লিনের নয়-কোলন অঞ্চলে রয়েছে এই ক্যাফেটি৷ টেম্পলহফার ফেল্ডের কাছে৷ অর্থাৎ, পুরনো বিমানবন্দরের কাছে৷ কাফে কানেলে ঢুকলে সময়ের নিয়ম গুলিয়ে যায়৷ নানা ধরনের কফি এবং পেস্ট্রি পাওয়া যায় এখানে৷ সবচেয়ে বড় কথা, এই ক্যাফেতে ঢুকলে মনে হয় নিজের বাড়ি৷
ছবি: Chloe Ka Kei Yau
রোমার্স, নয়-কোলন
চলতি হাওয়ার পন্থি এই ক্যাফে কখনও বিমর্ষ করে না৷ লোকে বলে শহরের সেরা চায়ে লাতে পাওয়া যায় এখানে৷ সঙ্গে অসাধারণ দেখতে এবং খেতে কেক৷ বার্লিনে এলে অবশ্যই একবার এখানে ঢুঁ মারা উচিত৷ তবে দেরি করা যাবে না৷ দ্রুত এদের খাবার ফুরিয়ে যায়৷
ছবি: Chloe Ka Kei Yau
এফ৫, ক্রয়েৎসব্যার্গ
স্পেশালিটি কফি খেতে চাইলে এফ৫ সঠিক নির্বাচন৷ রোস্টেড কফি বিন এবং ওটের দুধ, অসাধারণ কম্বিনেশন৷ সবচেয়ে বড় কথা হলো, এককাপ কফি নিয়ে এখানে দীর্ঘক্ষণ কাটিয়ে দেওয়া যায়৷ চাইলে আড্ডা মারা যায় আশপাশের ক্রেতাদের সঙ্গেও৷
ছবি: Chloe Ka Kei Yau
হোমমেড, ফ্রিডরিশহাইন
সিমোন-ডাখ রাস্তার উপরেই ‘হোমমেড’ ক্যাফে৷ দুপুরবেলা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে এক ঢুঁ মারা যায় এই ক্যাফেতে৷ রঙিন ডেকোরেশনের এই ক্যাফেতে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা যায়৷ বিশেষত, সপ্তাহান্তে এই ক্যাফের মজাই অন্যরকম৷ আড্ডা মারার আদর্শ জয়াগা৷
ছবি: Chloe Ka Kei Yau
ফ্রিডল, প্রেনৎসলাওয়ার ব্যার্গ
কফি নিয়ে যাঁদের পড়াশোনা আছে, তাঁদের অবশ্য গন্তব্য এই ক্যাফে৷ নানাবিধ কফির বিন পাওয়া যায় এখানে৷ সিঙ্গল অরিজিন, ডার্ক ব্লেন্ড, ডিক্যাফ কফির মতো ঐতিহ্যবাহী কফি বিনের সন্ধান পাওয়া যাবে এখানে৷ এছাড়াও এখানে পাওয়া যায় নানারকমের কুকি৷ চাইলে এখানে এসে ব্রাজিলিয়ান ক্যাপুচিনো খেয়ে দেখা যেতেই পারে৷
ছবি: Chloe Ka Kei Yau
পাকোলাট, প্রেনৎসলাওয়ার ব্যার্গ
ঐতিহ্যকে আধুনিক জীবনে ফিরিয়ে আনাই এই ক্যাফের বৈশিষ্ট্য৷ হাতে তৈরি বিনের কফি পাওয়া যায় এখানে৷ রয়েছে অ্যান্টিক কফি এবং চায়ের পাত্র৷ চা, কফির পাশাপাশি নানারকম হাতে তৈরি কেকও পাওয়া যায় এই ক্যাফেতে৷
ছবি: Chloe Ka Kei Yau
শ্নাইডেরাই , প্রেনৎসলাওয়ার ব্যার্গ
ছোট্ট দোকান৷ ভাবনা ছোট্ট নয়৷ রাস্তার এক কোণে এই ক্যাফেতে ঢুকলে মন ভরে যেতে বাধ্য৷ জানালার ধারে বসে কফিতে চুমুক দেওয়ার মজাই আলাদা৷
ছবি: Chloe Ka Kei Yau
8 ছবি1 | 8
হংকং শহরের ব্যস্ত মানুষের জন্য কি নিরুপদ্রব অথচ নাগালের মধ্যে কোনো জায়গা রয়েছে? শহরের ব্যস্ত এক এলাকার মধ্যেই এমন মরূদ্যান রয়েছে৷ ‘স্টিল হাউস' নামের এই ক্যাফেতে নীরবতা কেনা যায়৷ চা-কফি, সঙ্গে কখনো এক টুকরো কেক৷ শান্ত ও নীরব পরিবেশ উপভোগ করতে এর বেশি কিছু অর্ডার করা যায় না৷
‘স্টিল হাউস' ক্যাফের মালিক মিউ চ্যান৷ এই শিল্পীর আশা, এখানে মানুষের মন কিছুটা বিশ্রাম পাবে৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যেকেরই একা থাকার মুহূর্ত ও জায়গার প্রয়োজন৷ ২৪ ঘণ্টা ধরে অন্যের সঙ্গে আদানপ্রদান করতে করতে সবাই জীবনের আসল চাহিদা ভুলে যায়৷''
কিছু গ্রাহক নীরবতার মাশুল গুনতে আপত্তি করেন না৷ তাঁদের মতে, এই ক্যাফে এমন এক অভিনব অভিজ্ঞতা দেয়, যা এমনকি প্রকৃতিও দিতে পারে না৷ যেমন ইয়ান হুই বলেন, ‘‘আমি শহরের উপকণ্ঠে থাকি৷ সেখানে এমনিতেই শান্ত পরিবেশ৷ কিন্তু এখানকার মতো আরাম সেখানে পাই না৷ এটা সত্যি এক অভিনব জায়গা৷ এখানে বসে নীচে মানুষের ভিড় দেখলে অবাস্তব মনে হয়৷''
তবে ব্যস্ত জীবনের বিপরীত মানেই শুধু নীরবতা হতে হবে, এমন নয়৷ অলস দুপুরে সংগীতও শরীর-মন জুড়িয়ে দিতে পারে৷