ব্যস্ত সড়কের কাছে যারা বাস করেন, তাদের বেশিরভাগের ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রমজনিত সমস্যায় ভোগার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি৷ ক্যানাডার গবেষকদের গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিজ্ঞাপন
সোমবার সকাল ৮টা৷ আপনি বনানী থেকে কারওয়ান বাজার যাবেন৷ আপনার কত সময় লাগতে পারে? রাস্তা খালি থাকলে ৩৫ থেকে ৪৫ মিনিট৷ আর যানজট হলে ৩ ঘণ্টাও হতে পারে হতে পারে ৪ ঘণ্টা৷ সাম্প্রতিক সময় রাজধানী ঢাকার যানজট এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে, ছুটির দিনেও রাস্তা খালি থাকে না৷ আর যানজট হোক বা না হোক গাড়িতে হর্ন দেয়া যেন বাধ্যতামূলক৷ একদিনে ঢাকায় গাড়ির সংখ্যা দিন দিন বাড়ায় বায়ু দূষণ বাড়ছে সেই সাথে বাড়ছে শব্দ দূষণও৷ আর এর ভুক্তভোগী সবচেয়ে বেশি তারা যাদের বসবাস ব্যস্ত রাস্তার পাশে-ক্যানাডার সাম্প্রতিক গবেষণাও একই কথা বলছে৷
ক্যানাডার গবেষকরা দেখেছেন, ব্যস্ত সড়কগুলোর ৫০ মিটারের মধ্যে বসবাসকারীদের ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি ৩০০ মিটার দূরে থাকাদের তুলনায় ৭ শতাংশ বেশি৷ ক্যানাডার ইনস্টিটিউট ফর ক্লিনিকাল ইভালুয়েটিভ সায়েন্সেস এর সহকর্মীদের নিয়ে গবেষণাটি করেছেন পাবলিক হেল্থ অন্টারিও-র পরিবেশ বিশেষজ্ঞ রে কোপস৷
ডিমেনশিয়া বা ভুলে যাওয়ার রোগ থেকে বাঁচতে যা করবেন
ডিমেনশিয়া বা ভুলে যাওয়ার রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে৷ শুধু জার্মানিতেই ডিমেনশিয়া বা আলৎসহাইমায় ভুগছেন ১৬ লাখ মানুষ৷ মানসিকভাবে সক্রিয় থাকলে এই রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন দু’জন জার্মান বিশেষজ্ঞ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Weigel
নিয়মে খানিকটা ব্যতিক্রম
‘মানুষ অভ্যাসের দাস’ অর্থাৎ মানুষ রুটিনমাফিক কাজ করতেই পছন্দ করে৷ সকালে দাঁত ব্রাশ করা, গোসল, নাস্তা এই কাজগুলো একই নিয়মে করে থাকে৷ এতে ভাবা বা চিন্তার কোনো প্রয়োজন হয়না৷ তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই কাজগুলো প্রতিদিন একই নিয়মে না করে মাঝে মাঝে একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে করুন৷ তাহলে কোনো বড় ধরণের পরিবর্তন ছাড়াই ব্রেনের ট্রেনিং হয়ে যাবে৷
ছবি: Colourbox/G. Dolgikh
সামাজিকভাবে সক্রিয় থাকুন
সামাজিক অনুষ্ঠান, বন্ধুবান্ধব বা পারিবারিক আলোচনায় শুধু চুপচাপ বসে না থেকে সক্রিয়ভাবে আলোচনায় অংশ নেয়ার পরামর্শ দেন আলৎসহাইমার বিশেষজ্ঞ৷ তাছাড়া যে কোনো ধরণের স্বেচ্ছাসেবীর কাজ করার পরামর্শও দেন৷ ডিমেনশিয়া বিশেষজ্ঞ ডা. টোবিয়াস হার্টমান জানান, সাহায্য করার মনোভাব মানুষকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখে এবং সেখানে বিভিন্ন ধরণের কাজ করা ও জানার সুযোগ থাকে৷
ছবি: DW/A. Mong
বন্ধুত্বের যত্ন নিন
ডা.মাথিয়াস লিন্ডেনাউ বলেন, ‘‘বন্ধুরা কথা বলার সময় তাদের হাসি, বিরক্তিবোধ, গলার আওয়াজ বা সন্তুষ্টভাবের দিকে ভালো করে লক্ষ্য রাখুন৷ দেখবেন এতে আপনার ব্রেন বা মস্তিষ্ক বেশ সক্রিয় হয়ে উঠবে৷ বিশেষ করে খেয়াল করবেন, বিজ্ঞান এবং পরিবেশ বিষয়ক আলোচনা করার সময়৷ এসব বিষয় মস্তিষ্ক ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারলে তা পরের আলোচনায় অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে দেয়ায় মধ্য দিয়ে মস্তিষ্কের বড় ধরণের ট্রেনিং হয়৷’’
ছবি: Fotolia
শারীরিক চেকআপ
রক্তচাপ এবং ডায়েবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নিয়মিত চেকআপ করতে হবে৷ আর অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে ও হাঁটা-চলা করে শরীরের ওজন ঠিক রাখতে হবে৷
ছবি: Bundesarchiv
ভালো চিকিৎসা
শরীরের কোনো সমস্যা থাকার কারণে যদি কোনো ওষুধ খেতে হয়, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন৷ জেনে নিন সে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মস্তিষ্কে কোনো রকম নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে কিনা৷ সেরকম হলে এক্ষেত্রে বিকল্প ওষুধের কথা ভাবতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Zentralbild
পানি শরীরকে সচল রাখে
পানির অভাব হলে শরীরে অস্বস্তিভাব দেখা দেয়৷ তাই যথেষ্ট পানি পান করতে হবে৷ এক্ষেত্রে ‘প্লেন’ পানি, গ্রিন টি বা সবুজ চা এবং বিভিন্ন ফল বা সবজির চা পান করাই শ্রেয়, তবে অবশ্যই চিনি ছাড়া ৷ বলা বাহুল্য, বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের পানির পিপাসা কমে যায়, তাই সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে৷
ছবি: Colourbox/Odilon Dimier/AltoPress/Maxppp
ঘুম খুব জরুরি
মানুষের ঘুমের সময়ই মস্তিষ্ক নানা বিষয় ‘সেভ’ করে৷ আর পাশাপাশি বিষক্রিয়া বা টক্সিন বের করে দিয়ে মস্তিষ্ককে আবর্জনা মুক্ত করে৷ তাই ভালো ঘুম প্রয়োজন৷ আর সেজন্য চাই বেডরুমে যথেষ্ট আলো বাতাস এবং স্বাস্থ্যসম্মত বিছানার ম্যাট্ট্রেস, চাদর, বালিশ ইত্যাদি৷ প্রতিটি মানুষের রাতে কমপক্ষে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানো দরকার৷
ছবি: Colourbox
মানসিক চাপ দূরে রাখুন
শুধুমাত্র স্ট্রেসের কারণে কখনো ডিমেনশিয়া হয় না৷ তবে মানসিক চাপ ডিমেনশিয়া বা ভুলে যাওয়া রোগকে ত্বরান্বিত করতে পারে৷ তাই মানসিক চাপকে কখনো হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়৷ মানসিক চাপ কমাতে যে কোনো ধরণের মেডিটেশন বা ইয়োগা করা উচিৎ৷
ছবি: Colourbox/D.Vietrov
ইতিবাচক চিন্তা
বয়স বাড়বে, সমস্যা দেখা দেবে এই ভাবনা সকলের মাথায়ই থাকা উচিৎ৷ এ নিয়ে ভয় বা চিন্তার কিছু নেই৷ উদ্বেগহীন এবং হাসি-খুশিভাবে সময় কাটানো নিঃসন্দেহে যে কোনো মানুষকে ডিমেনশিয়া রোগ থেকে দূরে রাখতে সহায়তা করতে পারে৷ তাছাড়া মাঝে মাঝে ক্রসওয়ার্ড, পাজল বা শব্দের ধাঁধার মতো খেলাও খেলা যেতে পারে মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখতে৷ এই পরামর্শগুলো দিয়েছেন ডিমেনশিয়া বিশেষজ্ঞ ডা. টোবিয়াস হার্টমান এবং ডা.মাথিয়াস লিন্ডেনাউ৷
ছবি: drubig-photo - Fotolia
9 ছবি1 | 9
তিনি সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ‘‘বায়ু দূষণ মানুষের রক্তপ্রবাহে মিশে যায়, যার ফলে হৃদরোগের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়৷ এছাড়া ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনাও বহুগুণে বেড়ে যায়৷ দূষিত পদার্থগুলো রক্তের মাধ্যমে মস্তিষ্কে প্রবেশ করে নিউরোলজিক্যাল বা স্নায়বিক সমস্যা সৃষ্টি করে৷''
মস্তিষ্কের রোগ থেকে ডিমেনশিয়া হয়, বিশেষত আলৎসহাইমার রোগের কারণে, এর ফলে মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং স্মৃতি বিঘ্নিত হয়৷ এছাড়া চিন্তা-ভাবনা, আচরণ, দিক নির্দেশন এবং দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক কাজকর্মে তা প্রভাব ফেলে৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ২০১৫ সালে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত মানুষের মোট সংখ্যা ৪ কোটি ৪৭ লাখ৷ এই সংখ্যাটা খুব দ্রুত বাড়ছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি৷
গবেষণা দলটি অন্টারিও-র ৬৫ লাখ মানুষের তথ্য রেকর্ড করেছে, যাদের বয়স ২০ থেকে ৮৫ বছর৷ ২০০১ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে এলাকাটির দুই লাখ ৪৩ হাজার ৬১১ মানুষের স্মৃতিভ্রম ধরা পড়ে৷ এরপর তারা এদের মধ্যে কতজন ব্যস্ত সড়কের আশেপাশে ছিলেন, তা নির্ধারণ করেন৷ পোস্টাল কোড ব্যবহার করে এই পরীক্ষাটি করেন তারা৷ পাবলিক হেল্থ অন্টারিও-র গবেষক হং চেন জানালেন, নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড এবং অতি সূক্ষ কনা মানুষের ডিমেনশিয়ার প্রধান কারণ৷ প্রতি বছর ৭৭ লাখ মানুষ নতুন করে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বলেও জানান তিনি৷
হং চেন বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও নগরায়নের কারণে অনেককেই প্রধান সড়কগুলোর আশপাশে বসবাস করতে হচ্ছে৷ ‘‘যে কারণে রাস্তার কোলাহলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডিমেনশিয়া৷ সড়কের কাছাকাছি থাকার কারণে যদি এ ধরনের সামান্য ক্ষতিও হয়, তাহলে তা জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় ঝুঁকির পথ উন্মুক্ত করবে৷''
এপিবি/ডিজি (এপি, এএফপি, রয়টার্স)
স্মৃতিভ্রম এড়াতে যা করবেন
আপনি কিংবা আপনার প্রিয় কারো কি মাঝে মাঝে স্মৃতিভ্রম হচ্ছে? অর্থাৎ হঠাৎ করে কারো নাম, কোথায় থাকেন বা এমন অন্যকিছু মনে পড়ছে না? এ সব কি ডিমেনশিয়া বা আলৎসহাইমারের লক্ষণ? এ সব এড়াতে যা করবেন জেনে নিন৷
ছবি: Colourbox
দায়িত্বপূর্ণ কাজের মূল্য
যে ব্যক্তি কর্মক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে কাজ করে এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখে, অর্থাৎ বিভিন্ন কাজের পরিকল্পনা বা কৌশল নির্ধারণ ইত্যাদি করে, তাদের বুড়ো বয়সে আলৎসহাইমার বা স্মৃতিভ্রম হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে৷ এই তথ্য জানা গেছে জার্মানির লাইপসিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের করা এক গবেষণা থেকে৷
ছবি: Creativa/Fotolia.com
কলা খান, আলৎসহাইমাকে দূরে রাখুন
কলায় যে উপাদান রয়েছে তা কোষের ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করে৷ এই তথ্যটি উঠে এসেছে দক্ষিণ কোরিয়ার গিয়ংসাং ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণার থেকে৷ জানা গেছে, কলা আলৎসহাইমারের মতো যে কোনো স্নায়ুর রোগকে প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে৷ তবে কলা খেতে হবে একদম তাজা অবস্থায়, নরম কলা নয় কিন্তু!
ছবি: Colourbox
নিয়মিত ব্যায়াম করে রোগকে দূরে রাখুন
ক্যানাডায় করা এক গবেষণা থেকে জানা গেছে ব্যায়াম শুধু শরীর নয়, মস্তিষ্ককেও সুস্থ ও সচল রাখে৷ যারা কোনোদিন ব্যায়াম করেননি তাদের তুলনায়, যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেছেন বা করেন তাদের শরীরের রক্তসঞ্চালন এবং মস্তিষ্ক অনেক বেশি সচল থাকে৷ শুধু তাই নয়, খেলাধুলা করা বাচ্চরাও পরীক্ষায় ফলাফল ভালো করে৷ তাই নিয়মিত শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করলে আলৎসহাইমারের মতো রোগ কম হয়৷
ছবি: Colourbox
সংগীত মস্তিষ্ককে সচল রাখে
গান বা সংগীত যে মানুষের মস্তিষ্ককে তরুণ রাখে, সেকথা বিভিন্ন গবেষণার ফল থেকে আমরা আগেও জেনেছি৷ তবে আলৎসহাইমার রোগে যারা ভুগছেন, তারা নিয়মিত ‘মিউজিকের’ সাথে সম্পৃক্ত হলে তাদের সুস্থ হওয়াও কিছুটা সহজ হয়৷ হ্যাঁ, আলৎসহাইমার রোগ নিয়ে ফিনল্যান্ডের হেলসিংকি বিশ্ববিদ্যালয়ের করা এক গবেষণা থেকে জানা গেছে এই তথ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Szenes
সচেতনতার কিছু উপায়
মানুষের মস্তিষ্কই যদি সুস্থ না থাকে, তাহলে আর সুস্থ থাকার মূল্য কী? বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, তথ্য-প্রযুক্তির যুগ হলেও মাঝে মাঝে হাতে লিখুন৷ কড়া ওষুধপত্র সেবন থেকে দূরে থাকুন৷ কেমব্রিজের গবেষকরা এমন বিভিন্ন অনুশীলনের মাধ্যমে স্মৃতিশক্তি বাড়ানো বা ধরে রাখা সম্ভব বলে জানিয়েছেন৷ তাছাড়া সুস্থ মস্তিষ্কের জন্য আখরোট, সামুদ্রিক মাছ, গ্রিন টি, টমেটো ইত্যাদি খাওয়া-দাওয়ার ভূমিকা তো রয়েছেই৷
ছবি: Colourbox
5 ছবি1 | 5
এ বিষয়ে আপনি কি কিছু বলতে চান? তাহলে লিখুন নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷