কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ২০ জন বিদেশিকে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ আগেও একটি ব্যাংকের এটিএম কার্ড জালিয়াতিতে একজন জার্মানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ তাই সাইবার নিরাপত্তার ত্রুটি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সোমবার জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০ কোটি ডলার চুরির ঘটনায় জড়িত ২০ জন বিদেশি নাগরিককে শনাক্ত করার কথা৷
ঐ ২০ জন শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন্স, চীন ও জাপানের নাগরিক বলে সিআইডির সংবাদ সম্মেলনে জানান হয়৷ সংবাদ সম্মেলনে সিআইডর কর্মকর্তারা দাবি করেন, ঐ ২০ জনের নাম পরিচয় জানা গেলের তারা তদন্তের স্বার্থে এখন তা প্রকাশ করছেন না৷
তবে বিদেশি নাগরিকদের সঙ্গে বাংলাদেশি নাগরিকরাও জড়িত বলে সিআইডি সন্দেহ করছে৷ এদের সম্পৃক্ততা স্পষ্ট করার জন্য এখন কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শাহ আলম৷
সাইবার অপরাধের বিভিন্ন ধরন
ইন্টারনেটের ব্যবহার যত বাড়ছে তত বাড়ছে সাইবার অপরাধের ঘটনা৷ ফলে আর্থিক ক্ষতি থেকে নানা রকমের হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনলাইন ব্যবহারকারীরা৷ এমনই কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে এখানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পরিচয় চুরি
আজকাল অনলাইনে কেনাকাটা করছেন অনেকে৷ এরজন্য নাম, ঠিকানা, ই-মেল, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য ইত্যাদি দিতে হয়৷ সমস্যাটা সেখানেই৷ যেসব ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো নয়, সেখানে এই তথ্যগুলো দিলে তা অপরাধীর কাছে চলে যাবার সম্ভাবনা থাকে৷ সেক্ষেত্রে অপরাধী আপনার তথ্য ব্যবহার করে আপনার ক্রেডিট কার্ড শূন্য করে দিতে পারে৷ কারণ আপনার যে পরিচয় চুরি হয়ে গেছে!
ছবি: picture alliance/maxppp/S. Mortagne
স্প্যাম ও ফিশিং
একদিন ই-মেল খুলে দেখলেন আপনি অনেক টাকার লটারি জিতেছেন৷ সেটা পেতে আপনাকে কিছু তথ্য দিতে বলা হচ্ছে৷ হঠাৎ করে বড়লোক হওয়ার লোভে আপনি সেই তথ্যগুলো দিয়েও দিলেন৷ ব্যস, যা হবার হয়ে গেছে৷ পরে দেখলেন টাকা পাওয়ার বদলে আপনার কাছে যা আছে সেটাও চলে যাচ্ছে! অর্থাৎ আপনি ফিশিং-এর শিকার হয়েছেন৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/McPHOTOs
ব়্যানসমওয়্যার
উন্নত বিশ্বে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে৷ অপরাধীরা ম্যালওয়্যার ঢুকিয়ে অন্যের কম্পিউটারের ফাইলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়৷ তারপর ঐ কম্পিউটার ব্যবহারকারীকে বার্তা পাঠায় এই বলে যে, ফাইল ফেরত পেতে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/ZB/T. Eisenhuth
সাইবার মবিং বা সাইবারবুলিং
হয়ত মজা করার জন্য কিংবা ইচ্ছে করে একজনকে কষ্ট দিতে তার বন্ধুরা একজোট হয়ে হয়রানি করে থাকে৷ বাস্তবে স্কুল-কলেজে এমনটা হয়ে থাকে৷ আজকাল ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়ে ওঠায় ভার্চুয়াল জগতে এমন ঘটনা ঘটছে৷ কিন্তু অনেক সময় বিষয়টি আর মজার পর্যায়ে না থেকে ভয়ানক হয়ে ওঠে৷ ফলে যাকে নিয়ে মজা করা হচ্ছে সে হয়ত এমন কিছু করে ফেলে যা কারও কাম্য থাকে না৷
ছবি: Sylvie Bouchard - Fotolia.com
ম্যালভার্টাইজিং
ধরুন আপনি কোনো ওয়েবসাইটে আছেন৷ সেখানে একটি বিজ্ঞাপন দেখে ক্লিক করলেন৷ ব্যস আপনার কম্পিউটারে একটি কোড ডাউনলোড হয়ে গেল৷ এটি কোনো নিরীহ কোড নয়৷ অপরাধীরা এর মাধ্যমে আপনাকে হয়রানির পরিকল্পনা করবে৷ সুতরাং...৷
ছবি: Getty Images
ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড স্কিমিং
রেস্টুরেন্ট, সুপারমার্কেটের বিল পরিশোধ, এটিএম থেকে টাকা তোলা, অর্থাৎ এমন কোথাও যেখানে আপনার ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডকে যন্ত্রের মধ্যে ঢোকাতে হয় সেখান থেকেও তথ্য চুরি হতে পারে৷ এটাই কার্ড স্কিমিং৷ স্কিমার যন্ত্রের মাধ্যমে এই তথ্য চুরি করা হয় বলে এর এমন নামকরণ হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Baltagiannis
ফোন ফ্রড
অচেনা কোনো নম্বর থেকে (বিশেষ করে বিদেশ থেকে) মিসড কল পেলে সঙ্গে সঙ্গে কলব্যাক না করাই ভালো৷ কারণ কে জানে হয়ত ফোন ফ্রড অপরাধীরা এই কলটি করেছিলেন৷ আর আপনি কলব্যাক করতে যে টাকা খরচ করলেন তার একটি অংশ পেয়ে গেল অপরাধীরা!
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
অন্যদিকে গত ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশের কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের এটিএম কার্ড জালিয়াতির ঘটনায় জার্মান নাগরিক টোমাস পিটারসহ চারজনের আটক করা হয়৷ তারা এটিএম কার্ড ক্লোন করে ঢাকার বেসরকারি ইস্টার্ন, সিটি, ইউসিবিএল ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের আটটি এটিএম বুথ থেকে ৩৬ জন গ্রাহকের টাকা ২১ লাখ ৬০ হাজার টাকা তুলে নেয়৷ কার্ড ক্লোন করতে তারা ‘স্কিমিং ডিভাইস' বসিয়ে গ্রাহকদের গোপন তথ্য চুরি করে বলে পুলিশ জানায়৷
জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা হাতিয়ে নিতে হ্যাকাররা ব্যাংকের অনলাইন সিস্টেমে ঢুকে ‘সুইফট কোড' হাতিয়ে পেমেন্ট অর্ডার পাঠায়৷ তারপর টাকা গ্রহণ করে ফিলিপাইন্সের একটি ব্যাংক থেকে৷ এ নিয়ে ফিলিপাইন্স এবং শ্রীলঙ্কায়ও তদন্ত হচ্ছে৷
সিআইডির তদন্তের বাইরেও বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি করেছে৷ তবে সেই কমিটি এখনো তাদের তদন্তের অগ্রগতি সংবাদমাধ্যমকে জানায়নি৷
শুভঙ্কর সাহা
এরইমধ্যে এ সব তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংক তথা বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের সাইবার নিরপত্তা দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে৷ প্রশ্ন উঠেছে সাইবার নিরপত্তায় নিয়েজিত ব্যাক্তিদের দক্ষতা ও সততা নিয়ে৷
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এখন কাজ করছি৷ এতে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা নেয়া হচ্ছে৷ সহায়তা নেয়া হচ্ছে সাইবার বিশেষজ্ঞদের৷ আমরা সাইবার নিরপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বাধুনিক সফটওয়ার এবং ডিভাইস সংযোজনের ব্যবস্থা করেছি৷ এই কাজ শেষ হলে আমরা সর্বাধিক ঝুঁকিমুক্ত থাকব বলে আশা করছি৷''
তবে তিনি বলেন, ‘‘শতভাগ ঝুঁকিমুক্ত থাকার নিশ্চয়তা কখনোই দেয়া যায় না৷ কারণ হ্যাকাররাও বার বার কৌশল পরিবর্তন করে৷''
বেসরকারি ব্যাংকের এটিএম কার্ড জালিয়াতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘জালিয়াতি প্রকাশ হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে তিন স্তরের নিরাপত্তা নীতিমালার আদেশ জারি করা হয়েছে৷''
এ সব ব্যবস্থা আগে কেন নেয়া হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘সব বিষয় তো আর আগে বোঝা যায় না৷ আমরা যখন নিরাপত্তা ত্রুটি টের পেয়েছি তখনই ব্যবস্থা নিয়েছি৷''
তথ্য গোপন রাখার সাতটি সহজ উপায়
আধুনিক প্রযুক্তির কারণে মানুষের সুযোগ-সুবিধা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে তথ্য চুরির ঘটনা৷ ফোর্বস জানাচ্ছে কোন সাতটি উপায়ে আপনি খুব সহজেই ব্যক্তিগত তথ্য রক্ষা করতে পারেন৷
ছবি: Fotolia/davidevison
পাসওয়ার্ড নিজের কাছে রাখুন
কম্পিউটার, স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটের পাসওয়ার্ড যেন কখনই এক না হয়৷ আর ব্যাংক কার্ড-এর সঙ্গে যেন এই পাসওয়ার্ডের মিল না থাকে৷ এছাড়া কম্পিউটার, স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটে কোনো পাসওয়ার্ড লিখে রাখবেন না৷ এর ফলে আপনার তথ্য চুরির সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়৷ বাড়ির বাইরে গেলে এগুলি ‘লক’ করে যাবেন৷
ছবি: Sergey Nivens - Fotolia.com
নামে ‘গুগল অ্যালার্ট’ ব্যবহার করুন
এটা খুব সহজ পন্থা, আপনি যদি দেখতে চান ইন্টারনেটে আপনার সম্পর্কে সবাই কী বলছে৷ সোজা এই ঠিকানায় যান – http://www.google.com/alerts এবং আপনার নাম লিখুন৷ তারপর আপনার নামের বিভিন্ন ধরন লিখে, তার আগে ও পরে ‘কোটেশন মার্ক’ জুড়ে দিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
ব্যবহারের পর লক্ষ্য রাখা
আপনি যদি অন্য কারো কম্পিউটার বা ট্যাবলেট ব্যবহার করেন, তবে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন৷ আপনার পর যিনি সেটা ব্যবহার করবেন, তিনি যাতে আপনার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে না পারে – সেটা খেয়াল রাখুন৷ আপনি যদি এটা করতে ভুলে যান, তাহলে ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে৷
ছবি: AFP/Getty Images
ফোন, ই-মেল বা জিপ কোড ব্যবহার করতে না দেয়া
অচেনা কোনো মানুষ এই নম্বরগুলো জানতে চাইলে, আপনারা দেবেন না৷ দেখা যায় কোনো অফিস তাঁর কর্মীর কাছ থেকে এ সব তথ্য চাইলে, অনেকেই সেচ্ছ্বায় তা দিয়ে দেয়৷ বহু অফিস এ নিয়ে একটি প্রোফাইল তৈরি করে৷ আপনার কিন্তু এ সব তথ্য না দেয়ার অধিকার আছে৷ তাই আপনি যদি এতে স্বাচ্ছ্বন্দ্যবোধ না করেন, তবে দেবেন না৷
ছবি: picture-alliance/ZB
কার্ড নয় ক্যাশ
আপনি যদি চান আপনি যে পণ্যটি কিনছেন, সেই কোম্পানি আপনারা পরিচয় না জানুক, তবে নগদ অর্থে জিনিস কিনুন৷
ছবি: AP
ফেসবুকে নিরাপত্তার জন্য ‘ফ্রেন্ডস’ ব্যবহার করুন
ফেসবুকে সবসময় ‘সিকিউরিটি’ বা নিরাপত্তা পরীক্ষা করুন৷ পোস্ট করার পর লক্ষ্য রাখুন আপনি আপনার ছবি বা মন্তব্য ‘ফ্রেন্ডস’ করে রেখেছেন, নাকি ‘পাবলিক’ করেছেন৷ আপনি যদি ‘স্পেশ্যাল’ নির্বাচন করেন এবং ঠিক করে দেন কে কে আপনার পোস্ট দেখতে পাবে, তবে সেটা আপনার তথ্য নিরাপত্তার জন্য তুলনামূলকভাবে ভালো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Bozoglu
‘হিস্ট্রি’ এবং ‘কুকিস’ মুছে ফেলুন
আপনি সবশেষ কবে এটা করেছেন? আপনি যদি নিশ্চিত না হন, ব্রাউজারে গিয়ে এটা পরিবর্তন করুন৷ ব্রাউজারের ‘প্রাইভেসি সেটিংস’-এ যান, সেখানে ‘নেভার রিমেমবার হিস্ট্রি’ নির্বাচন করুন৷ এর ফলে ইন্টারনেটে আপনাকে ‘ট্র্যাক’ করাটা হ্যাকারদের জন্য কঠিন হবে৷ এছাড়া আপনি ‘অ্যাড অন’-ও ব্যবহার করতে পারেন৷