প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছিল গ্রিস৷ সব ব্যাংক বন্ধ থাকায় জনজীবনেও পড়েছিল দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থার প্রভাব৷ অবশেষে ব্যাংকগুলো খুলেছে৷ ধীরে ধীরে চলতে শুরু করছে গ্রিস৷
বিজ্ঞাপন
গত তিন সপ্তাহ গ্রিসের ব্যাংকগুলো পুরোপুরি বন্ধ ছিল৷ এ সময়ে এটিএম থেকে দিনে মাত্র ৬০ ইউরো পর্যন্ত তুলতে পারতেন গ্রাহকরা৷ সোমবার থেকে সব ব্যাংক আবার খুলে দেয়া হয়েছে৷ ফলে প্রতিদিন লম্বা লাইনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ৬০ ইউরো তুলে শুধু সেই দিনের প্রয়োজন মেটানোর আর দরকার নেই৷ এখন থেকে সপ্তাহে ৪২০ ইউরো পর্যন্ত তোলা যাবে৷ সপ্তাহে মোট টাকার অঙ্ক না বাড়লেও ব্যাংক খোলায় প্রতিদিনের ঝক্কিটা কমলো৷ ব্যাংক খুললেও দেশের বাইরে টাকা পাঠানো এবং নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা এখনো বন্ধ রয়েছে৷
তিন সপ্তাহ পর ব্যাংক খুলে দেয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে স্বাভাবিক করার উদ্যোগ হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর শর্ত অনুযায়ী অর্থনৈতিক সংস্কারও ধীরে ধীরে শুরু করছে গ্রিস৷ সোমবারই ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইসিবি)-কে গ্রিসের অতীত ঋণের কিস্তি হিসেবে ৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ইউরো পরিশোধ করার কথা৷ ইইউ-এর কাছ থেকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ হিসেবে প্রাপ্য ৭ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ইউরো থেকে এই অংক পরিশোধ করবে গ্রিস৷
গ্রিসে এখনো পর্যটকের ভিড়!
গ্রিসের এখন খুব খারাপ সময়৷ সব ব্যাংক বন্ধ৷ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে দাতাদের ঋণের আশায় বসে আছে সরকার৷ এ অবস্থাতেও সংকটগ্রস্ত দেশ গ্রিসে যাচ্ছেন বহু মানুষ৷ কেন যাচ্ছেন? সেখানে যেতে তাঁদের ভয় বা দুশ্চিন্তা হচ্ছে না?
ছবি: DW/H. Flores
বিমানবন্দরে গ্রিসমুখী যাত্রীদের ভিড়
গ্রিসের জিডিপির ১৮ শতাংশ আসে পর্যটন খাত থেকে৷ প্রায় ৯ লাখ মানুষ কাজ করেন পর্যটন খাতে৷ তাই গ্রিসের চরম সংকটের সময়ের পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে গ্রিস৷ নইলে এ সময়েও জার্মানির ড্যুসেলডর্ফ বিমানবন্দরে এত মানুষ গ্রিসে যাওয়ার জন্য ভিড় জমাতো?
ছবি: DW/H. Flores
পরিবারের টান...
ফোটিওস মাটেন্টসোগ্লু বললেন, ‘‘আমি গ্রিসে যাচ্ছি দাদা-দাদির সঙ্গে দেখা করতে৷ গ্রিস আমার খুব পছন্দের দেশ৷ তবে বসবাসের জন্য গ্রিসের চেয়ে জার্মানিই ভালো৷’’ মাটেন্টসোগ্লু জার্মানিতেই থাকেন৷ তবে তাঁর অনেক নিকটাত্মীয় এখনও গ্রিসেই থেকে গেছেন৷
ছবি: DW/H. Flores
‘বাড়ির মতো প্রিয় কিছু হয় না’
জার্মানিতে পড়াশোনা করেন নেফেলি ভিটু৷ তাঁরও বাবা-মা’সহ পুরো পরিবার থাকে গ্রিসে৷ তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার আগে নেফেলি বললেন, ‘‘বাড়িতে যাচ্ছি৷ যত কিছুই হোক নিজের বাড়ির মতো প্রিয় কিছু তো আর হয় না৷’’
ছবি: DW/H. Flores
খেলোয়াড় খোঁজার কাজে...
বুন্ডেসলিগার ফুটবল ক্লাব শালকে ০৪-এর ‘স্কাউট’ আন্দ্রে ইয়োখুম৷ গ্রিসে অনুষ্ঠিত হচ্ছে উয়েফা অনুর্ধ-১৯ ফুটবলের আসর৷ সে আসর দেখতেই গ্রিসে যাচ্ছেন আন্দ্রে৷ উদ্দেশ্য – তরুণ, প্রতিভাবান খেলোয়াড় খোঁজা৷ ক্লাবের স্কাউটদের কাজই তো সেটা!
ছবি: DW/H. Flores
‘বেশি করে ইউরো নিয়ে যাচ্ছি’
গ্রিসে এখনও সব ব্যাংক বন্ধ৷ এমন সময় মেয়েদের নিয়ে সেখানে বেড়াতে যাচ্ছেন গিটে ব্রুন্সভিকার৷ গিয়ে অর্থসংকটে পড়লে কে দেখবে? অবশ্য রওনা দেয়ার আগে তিনি বেশ নিশ্চিন্ত হয়েই বললেন, ‘‘সমস্যা নেই, বেশি করে ইউরো নিয়েই যাচ্ছি৷’’
ছবি: DW/H. Flores
‘আশা নিয়েই বাঁচতে হয়’
ক্যাটেরিনা টোপালিডিস রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী৷ রেস্টুরেন্টটি জার্মানিতে৷ তবে ক্যাটেরিনার বাড়ি গ্রিসে৷ গ্রিসের চলমান সংকট তাঁকেও খুব চিন্তায় ফেলেছে৷ তবে যে যা-ই বলুক, ক্যাটেরিনা মনে করেন, গ্রিস এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসবেই৷ এত আশাবাদী হবার কারণ জানাতে গিয়ে খুব সহজ একটি কথা মনে করিয়ে দিলেন ক্যাটেরিনা, বললেন, ‘‘মানুষ তো আশা নিয়েই বাঁচে৷’’
ছবি: DW/H. Flores
‘গ্রিসের মানুষকেই টাকা দেবো...’
আগে থেকে হোটেল ‘বুক’ করলে বেশ কিছু টাকা সাশ্রয় হবে জেনেও হাইকে বোহে তা করেননি৷ কে জানে, জার্মানি থেকে হোটেল বুক করালে পুরো টাকাটা হয়ত ইউরোপীয় কোনো কোম্পানির অ্যাকাউন্টে যাবে, হাইকে যা একেবারেই চান না৷ গ্রিসের এই দুঃসময়ে গ্রিসের মানুষের হাতেই যাতে হোটেল ভাড়ার টাকাটা যায়, সেকথা ভেবে আগাম বুকিং করাননি তিনি৷ হাইকে গ্রিসে গিয়ে কোনো গ্রিক নাগরিকের মাধ্যমেই ভাড়া করবেন হোটেলের রুম৷
ছবি: DW/H. Flores
‘বড় দুর্দিনে যাচ্ছি’
গ্রিসে দু’সপ্তাহ থাকবেন ফ্রেডেরিক ফ্রেসে৷ সব দিক থেকে ভালো প্রস্তুতি নিয়েই যাচ্ছেন৷ তাই সেখানে গিয়ে যে তেমন কোনো অসুবিধায় পড়তে হবে না, এ বিষয়ে তিনি মোটামুটি নিশ্চিত৷ তারপরও খারাপ লাগছে তাঁর৷ বললেন, ‘‘বেড়াতে যাচ্ছি ঠিকই, তবে যাচ্ছি বড় দুর্দিনে...৷’’
ছবি: DW/H. Flores
8 ছবি1 | 8
এছাড়া জনসেবা এবং দ্রব্যমূল্যের ওপর কর বৃদ্ধির প্রক্রিয়াও শুরু হচ্ছে৷ কোকাকোলা, চিনি, কনডম ইত্যাদির মতো কিছু পণ্যের জন্য গ্রিকদের এখন থেকে শতকরা ২৩ ভাগ মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট দিতে হবে৷ তবে ওষুধ, বই-পত্র এবং খবরের কাগজের মতো কিছু পণ্যের মূল্য সংযোজন করের হার কম হবে৷
এদিকে গ্রিস নিয়ে জার্মানিতে এখনো আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে৷ তবে গ্রিসের বিষয়ে জার্মানির অবস্থানে পরিবর্তন আসবে না বলেই জানিয়েছেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ এক টেলিভিশন চ্যনেলকে জার্মানির চ্যান্সেলর বলেছেন, জার্মানি গ্রিসের ঋণ মওকুফ করবে না৷ এআরডি টেলিভিশন নেটওয়ার্ককে ম্যার্কেল এর পাশাপাশি অবশ্য এ-ও বলেছেন যে, ঋণ মওকুফ না করলেও ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানো হতে পারে৷