1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ব্যাংক জালিয়াতি ফুলে ফেঁপে উঠছে ভারতে

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

নীরব মোদী থেকে বিক্রম কোঠারি-‌কাণ্ডে ভারতের অর্থমন্ত্রী থেকে প্রধানমন্ত্রী সব ঘটনায় দোষ চাপিয়েছেন সংশ্লিষ্ট নজরদারি সংস্থাগুলির ঘাড়ে৷ বিষয়টি স্পষ্ট যে, নরেন্দ্র মোদী সরকার দেশের বৃহত্তম ব্যাংক কেলেঙ্কারির দায় নিতে নারাজ৷

Indien Ansturm auf Bank Umtausch von Rupien Scheinen
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Kakade

পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকে ১১,৪০০ কোটি এবং রোটোম্যাক কর্তার ৪ হাজার কোটি টাকার জলিয়াতি নাকি হিমশৈলের চূড়ামাত্র!‌ পিএনবি‌ কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার জানিয়েছে, জালিয়াতির পরিমাণ আরও ১,৩২৩ কোটি টাকা বেশি হতে পারে৷ ফলে এই দুর্নীতির শিকড় যে অনেক গভীরে তা বলাই বাহুল্য৷

নীরব মোদী-‌কাণ্ড সামনে আসতেই চোঠের সামনে ভেসে উঠছে আরও একগুচ্ছ তালিকা৷ গুজরাটের সানন্দে ন্যানো কারখানার জন্য টাটাদের ৩৩ হাজার কোটি টাকা পাইয়ে দেওয়া৷ গুজরাটেই আদানিদের ১৬ হাজার একর জমি, প্রতি বর্গমিটার ১ টাকা ৩০ পয়সা দামে দেওয়া (‌বাজার দর ১১০০ টাকা)‌৷ ওই গুজরাটেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আনন্দীবেন প্যাটেলের নিকটাত্মীয়কে ৪২২ একর জমি, ৯২ শতাংশ‌ কম দামে৷ মহারাষ্ট্রে চিক্কি কেলেঙ্কারি৷ পঙ্কজা মুন্ডের সৌজন্যে বেশি দামে বাদামের তক্তি কেনা, ক্ষতি ৭০০ কোটি টাকা৷ রাজস্থানে খনি কেলেঙ্কারি৷ আনুমানিক ক্ষতি ৪৫ হাজার কোটি৷ মধ্যপ্রদেশে ব্যাপম কেলেঙ্কারি৷ ছত্তিশগড়ে রেশন কেলেঙ্কারি, ক্ষতি ৩৬ হাজার কোটি টাকা ইত্যাদি৷

বিশ্বনাথ চক্রবর্তী

This browser does not support the audio element.

সামনে এসেছে রাফাল চুক্তির তথ্যও৷ একটি বিমানের দাম ছিল ৫০০ কোটি টাকা, ছিল প্রযুক্তি বিনিময়ের চুক্তি, হ্যাল তৈরি করতে পারত৷ প্রধানমন্ত্রী প্যারিস গেলেন৷ তারপর ফ্রান্স থেকে রাফাল বিমান কেনার নতুন চুক্তিতে দাম দাঁড়াল ১৬৪০ কোটি৷ বিমান কিনতে খরচ প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা৷ এরপর ১১,৪০০ কোটির ব্যাংক কেলেঙ্কারি৷ নীরব মোদী ও তাঁর মামা মেহুল চোকসি ভারত ছেড়ে পগার পার৷ মোদী জমানাতেই ব্যাংককে ৯০০০ কোটি টাকা ফাঁকি উড়ে গেছেন বিজয় মালিয়া৷ ললিত মোদী ফেরৎ আসেননি৷ তিনি হজম করেছেন ৪৬৮০ কোটি৷ এই তিনজনই গায়েব করেছেন ২৫ হাজার কোটি৷ প্রাথমিক হিসেব, ব্যাংক থেকে এভাবেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ৮৪ হাজার কোটি টাকা৷

কয়েক দশক ধরে রাজধানী দিল্লিতে কর্মরত প্রবীন সাংবাদিক শরদ গুপ্তার কথায়, ‘‌‘‌নরেন্দ্র মোদী নিজেকে দেশের চৌকিদার বলে দাবি করতেন৷ বলতেন, ‘‌‌দেশের অর্থ বিদেশে যেতে দেবো না৷' এখন যখন একের পর এর আর্থিক দুর্নীতি হচ্ছে, তখন তিনি চোখ বন্ধ করে রেখেছেন৷ নীরব মোদী, রোটোম্যাকের কোঠারি সিবিআই-এর ২০১৭-‌১৮ সালে মোট সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা নীরব মোদীকে ঋণ দিয়েছে পিএনবি৷ অর্থাৎ এনডিএ আমলেই৷ এরপরও মোদীজি ও তাঁর দল দাবি করছে, এই সব দুর্নীতি বিরোধীদের পাপ!‌ তাহলে উনি কার এবং কীসের চৌকিদার?‌ এছাড়াও শেষতম দুর্নীতিতে দেখা যাচ্ছে, নীরব মোদীর ছোট ভাই মুকেশ আম্বানির বোনের জামাই৷ রোটোম্যাক কর্তা (‌৪ হাজার কোটির দুর্নীতি)‌ বিক্রম কোঠারির ছেলে আবার গৌতম আদানির ভাইয়ের জামাই৷ গোটা বিশ্ব জানে, আম্বানি ও আদানি নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ৷ এর অর্থ হলো, দুর্নীতিগ্রস্তরা মোদী ঘনিষ্ঠ৷ অন্যদিকে, দু'‌মাস পরেই কর্ণাটকের নির্বাচন৷ বলা যেতে পারে, বিরোধীদের হাতে শক্ত হাতিয়ার আছে৷ এখন দেখার, বিরোধী শিবির সেই হাতিয়ার দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করতে পারে কিনা৷''

  

 এর আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকের তরফে বলা হয়, অবৈধভাবে ১১,৪০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল হীরে ব্যবসায়ী নীরব মোদী ও তাঁর কোম্পানি৷ এই নিয়ে ধরপাকড় শুরু হয়৷ গ্রেপ্তার করা হয় পিএনবি-‌র কয়েকজন আধিকারিককে৷ এরপর নীরব মোদীর কোম্পানির অধিকারিক তথা দেশের সবচেয়ে বড় শিল্পপতি মুকেশ আম্বানির খুড়তুতো ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে, ললিত মোদী থেকে বিজয় মালিয়া এবং সর্বশেষ নীরব মোদী৷ পর পর আর্থিক কেলেঙ্কারি হয়েছে গত চার বছরে৷ অপরাধীরা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন৷ মোদী সরকার কী করেছে?

৫ মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব৷ ওই অধিবেশনে নীরব ও পিএনবি কেলেঙ্কারি নিয়ে সরকার তথা প্রধানমন্ত্রীর জবাব চেয়ে এক জোট বিরোধী শিবির যে সরব হবে, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছে বিজেপি৷ এই আক্রমণের মোকাবিলা কীভাবে করা যায়, সেই কৌশল তৈরিতেই এখন মরিয়া শাসক দল৷

আসা যাক বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর কথায়৷ ছেলে জয় শাহর ব্যবসা এক লাফে বাড়ল কীভাবে?‌ তা নিয়ে ক্রমাগত প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা৷ তবে সে প্রসঙ্গ এড়িয়ে কংগ্রেসকে পালটা খোঁচা দেওয়ার পথেই বেশি সাচ্ছন্দ বোধ করছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ৷ তাঁর টার্গেট পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিং৷ নীরব মোদী, বিক্রম কোঠারি কাণ্ডে বিরোধীদের আক্রমণে জেরবার বিজেপির সামনে অস্ত্র হিসেবে উঠে এসেছে ব্যাংক প্রতারণায় অমরেন্দ্রর পরিবারের জড়িয়ে থাকার অভিযোগ৷ আর একে সামনে রেখেই সোমবার কংগ্রেসকে নিশানা করেছে বিজেপি৷

শরদ গুপ্তা

This browser does not support the audio element.

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ বিশ্বনাথ চক্রবর্তী মনে করেন, একের পর এক দুর্নীতি ফাঁস হওয়ায় বিজেপি এবং মোদী সরকার সিঁদুরে মেঘ দেখছে৷ কিন্তু বিরোধী দলগুলির মধ্যে একতা এখনও নেই৷ ভবিষ্যতে এর সুবিধা নিতে পারে বিজেপি৷ কারণ হিসেবে তিনি পিএনবি-‌কাণ্ডে সংসদে ‘‌যুগ্ম সংসদীয় কমিটি'‌ গঠন নিয়ে কংগ্রেস ও তৃণমূলের মতানৈক্যের কথা বলেন৷ বলেন, ‘‘‌বাংলায় সারদা, নারদ ইত্যাদি তদন্তে সিবিআই এক ইঞ্চিও নড়ছে না৷ অন্যদিকে, ‌গত এক মাসে মমতা ব্যানার্জি সরাসরি নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করছেন না৷ এটি রাজনৈতিক ইঙ্গিত ছাড়া আর কী হতে পারে!‌'‌'‌

যদি কোনো ভারতবাসী ভেবে থাকেন নীরব মোদী-‌কাণ্ডে শুধুমাত্র ব্যাংক বা সরকারের ক্ষতি হয়েছে, তাহলে বড্ড ভুল হবে৷ সাধারণ নাগরিকের ওপর এই দুর্নীতির প্রভাব কীভাবে পড়তে পারে?‌

প্রথমত, এতবড় দুর্নীতির পর সাধারণের করের টাকা ব্যাংকে চলে যাবে৷ দেশের সাধারণ মানুষের করের টাকা ব্যাংকগুলিকে ‘‌রি-ক্যাপিটালাইজ'‌ করার কাজে ব্যবহার করবে সরকার৷ গত বছর প্রায় ২ দশমিক ১১ লক্ষ কোটি টাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলিকে রি-ক্যাপিটালাইজ করার কাজে ব্যবহৃত হয়েছে৷

দ্বিতীয়ত, আম জনতার পকেটে টান পড়বে৷ পিএনবি-র এই দুর্নীতি সামনে আসার পর ব্যাংকের শেয়ার মূল্য হু গু করে নেমেছে৷ ১৪ ফেব্রুয়ারির পর থেকে ৬০ শতাংশ মূল্য কমেছে৷ শুধু পিএনবি নয়, অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শেয়ার মূল্য উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে৷ এতে একাধারে ব্যাংক নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষও৷

এবং তৃতীয়ত, তাছাড়া ব্যাংকঋণ পাওয়া আরও কষ্টসাধ্য হবে৷ গত ৯ মাসে পিএনবি যা রোজগার করেছে, তার ১০ গুণ টাকা ক্ষতি হয়েছে ব্যাংকের৷ ব্যাংকের মূলধনে টান পড়েছে৷ তাই নতুন করে ঋণ দেওয়া ব্যাংকের পক্ষে আর সম্ভব হবে না, যা পরোক্ষভাবে সাধারণ মানুষের ক্ষতি৷

‘‌‘‌না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা''‌ বলেছিলেন তিনি, নরেন্দ্র মোদী৷ বলেছিলেন, ‘‌‘‌আমাকে আপনারা দায়িত্ব দিন, দেশের চৌকিদার হিসেবে কাজ করব৷''‌ এই মন্তব্যও মোদীরই৷ বিরোধী দলগুলি প্রশ্ন তুলেছে, চৌকিদার কি তবে লুঠের অংশীদার হয়ে গেলেন? এতকিছুর পরেও সংকীর্ণ স্বার্থে দলাদলি করে আসলে বিজেপি‌কেই মদত দিতে পারে কয়েকটি বিরোধী দল৷ কিন্তু কংগ্রেসের মতো প্রদান বিরোধীরা ময়দানে নেমে পড়েছে৷ তাদের বক্তব্য, ২০১৯ সালে মোদীর বিদায় অনিবার্য৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ