আসল নাম আনা সোরোকিন৷ বয়স ২৮৷ জন্ম মস্কোতে৷ ১৬ বছর বয়সে জার্মানিতে আসেন৷ প্রায় নয় মাস তিনি নিউইয়র্কের ব্যাংক, অভিজাত হোটেল আর বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন৷ এখন যেতে হচ্ছে কারাগারে৷
বিজ্ঞাপন
আনা সোরোকিন প্রতারণার সময় নিজের নাম হিসেবে আনা ডেলভি ব্যবহার করেন৷ আশেপাশের সবাইকে জানিয়েছিলেন যে, উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি প্রায় ৬৭ মিলিয়ন ডলারের মালিক৷ তাঁর বাবা একজন কূটনীতিক বলেও সবাইকে জানান তিনি৷ যদিও এখন জানা যাচ্ছে, তাঁর বাবা আসলে একজন সাবেক ট্রাকচালক, যিনি এখন ছোটখাটো একটি ব্যবসা করছেন৷
যা যা করেছেন
২০১৬ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৭ সালের আগস্ট পর্যন্ত নিউইয়র্কের অভিজাত এলাকায় থেকে সবার সঙ্গে প্রতারণা করেন সোরোকিন৷ এই সময় তিনি বেশ কিছুদিন অভিজাত হোটেলে থেকেছেন, তারকাদের সঙ্গে ওঠাবসা করেছেন, দামি পোশাক পরে শিল্প প্রদর্শনীর উদ্বোধনীতে গেছেন৷ শুধু তাই নয়, নিজে একটি ভিজ্যুয়াল আর্ট সেন্টার গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ব্যাংক থেকে ২২ মিলিয়ন ডলারের ঋণ পাওয়ারও চেষ্টা করেছেন৷ তবে সফল হননি৷ অবশ্য আরেকটি ব্যাংক থেকে ঠিকই এক লক্ষ ডলারের ঋণ পেতে সমর্থ হন তিনি - যা পরে ফেরত দিতে পারেননি৷
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কায় বিশ্বের অন্যতম সেরা ধনী ওয়ারেন বাফেটের সম্মেলনে যোগ দিতে প্রাইভেট জেট ব্যবহার করেন আনা সোরোকিন৷ এই বিমানযাত্রার ভাড়া ৩৫ হাজার চারশ ডলারও তিনি পরিশোধ করেননি৷
সোরোকিনের প্রতারণা থেকে তাঁর বন্ধুরাও বাদ পড়েননি৷ রাচেল ডেলোয়াচ উইলিয়ামস নামের এক বান্ধবীকে তিনি মরক্কো সফরে নিয়ে গিয়েছিলেন৷ কথা ছিল, পুরো সফরের টাকা সোরোকিন বহন করবেন৷ অথচ বান্ধবী উইলিয়ামসকেই ৬২ হাজার ডলার বিল পরিশোধ করতে হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল৷ অবশ্য আদালত সোরোকিনকে এই অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়েছে৷
আলোচিত কয়েকটি শিল্পকর্ম চুরির কথা
২০১৭ সালের মার্চে জার্মানির বার্লিনের একটি মিউজিয়াম থেকে ১০০ কেজি ওজনের একটি স্বর্ণমুদ্রা চুরি হয়৷ ছবিঘরে থাকছে মূল্যবান কয়েকটি শিল্পকর্ম চুরির কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. K. Techt
মোনালিসার হাসি হারিয়ে গিয়েছিল
১৯১১ সালে ফ্রান্সের ল্যুভর মিউজিয়াম থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত পোর্ট্রেট লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির ‘মোনালিসা’ চুরি হয়ে গিয়েছিল৷ ভিনসেঞ্জো পেরুজ্জিয়া নামের ইটালির এক তরুণ মিউজিয়ামের কর্মীর পোশাক পরে নিজের কোটের মধ্যে পেইন্টিংটি লুকিয়ে নিয়ে গিয়েছিল৷ ১৯১৩ সালে পুলিশ এটি উদ্ধার করে৷
ছবি: picture alliance/Mary Evans Picture Library
সবচেয়ে বেশি চুরি হওয়া পেইন্টিং
ডাচ শিল্পী রেমব্রেন্ডট-এর আঁকা পোর্ট্রেট ‘জ্যাক থ্রি ডি গাইন’ ব্রিটেনের ডালউইচ পিকচার গ্যালারি থেকে এক বার, দু’বার নয়, চার বার চুরি হয়েছে৷ ১৯৬৬ সালে প্রথম বার চুরির পর ১৯৭৩, ১৯৮১ ও ১৯৮৬ সালেও চুরি হয়েছিল এই পোর্ট্রেট৷ তবে ভাগ্য ভালো যে প্রতিবারই এটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
পুলিশের বেশে চুরি
১৯৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বস্টনের ইসাবেলা স্টুয়ার্ড গার্ডনার মিউজিয়াম থেকে একসঙ্গে ১৩টি পেইন্টিং চুরি হয়ে যায়৷ দুই ব্যক্তি পুলিশের বেশে ঢুকে সেগুলো চুরি করেন৷ ছবিতে যেটি দেখতে পাচ্ছেন, তার নাম ‘কনসার্ট’৷ চুরি যাওয়া পেইন্টিংগুলোর মধ্যে এটিও ছিল৷ আজও মিউজিয়ামে চুরি যাওয়া পেইন্টিংগুলোর ফ্রেম খালি অবস্থায় রেখে দেয়া হয়েছে৷
ছবি: Gemeinfrei
ফান গখের শিল্পকর্ম চুরি
১৯৯১ সালে আমস্টারডামের ফান গখ মিউজিয়াম থেকে ২০টি পেইন্টিং চুরি হয়ে গিয়েছিল৷ অবশ্য মাত্র ঘণ্টাখানেক পরেই সেগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল৷ তবে চোরদের ধরতে কয়েক মাস লেগে যায়৷ এক ব্যক্তি প্রথমে নিজেকে মিউজিয়ামের একটি বাথরুমে আটকে রেখেছিলেন৷ পরে একজন প্রহরীর সহায়তায় সেগুলো চুরি করেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Van Weel
নিরাপত্তা প্রহরীকে পরাভূত করে
২০০৩ সালে দুই ব্যক্তি স্কটল্যান্ডের ড্রামলানরিগ ক্যাসেলের প্রহরীদের পরাস্ত করে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির ‘ম্যাডোনা অফ দ্য ইয়ার্নউইন্ডার’ নিয়ে যায়৷ ঐ শিল্পকর্মের দাম ছিল প্রায় ৭০ মিলিয়ন ইউরো৷ প্রায় চার বছর পর ২০০৭ সালে গ্লাসগো থেকে এটি উদ্ধার করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মিউজিয়ামে সশস্ত্র হামলা
এক্সপ্রেশনিস্ট এডভার্ড মুঙ্কের ‘দ্য স্ক্রিম’ ও ‘ম্যাডোনা’ নামের দুটি পেইন্টিং ২০০৪ সালে অসলোর মুঙ্ক মিউজিয়াম থেকে নিয়ে গিয়েছিল দুই সশস্ত্র ডাকাত৷ অস্ত্রের মুখে তারা দর্শণার্থীদের সামনে থেকেই পেইন্টিং দুটি নিয়ে গিয়েছিল৷ পুলিশ পরে সেগুলো উদ্ধার করতে পারলেও ‘দ্য স্ক্রিম’ এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যে পরে সেটি আর সম্পূর্ণ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Munch Museum Oslo
ইউরোপের সবচেয়ে বড় শিল্পকর্ম চুরির ঘটনা
২০০৮ সালে সুইজারল্যান্ডের জুরিখের ব্যুরলে মিউজিয়াম থেকে চারটি পেইন্টিং চুরি গিয়েছিল৷ পেইন্টিংগুলোর মোট মূল্য ছিল ১৮২ মিলিয়ন ডলার৷ ছবিতে ক্লোদ মনে’র ‘পপি ফিল্ড নেয়ার ভিথেই’ দেখতে পাচ্ছেন৷ চুরি যাওয়া পেইন্টিংয়ের তালিকায় এটিও ছিল৷ পরে সবগুলোই উদ্ধার করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
স্বর্ণমুদ্রা চুরি
১০০ কেজি ওজনের এই মুদ্রা চুরি গেছে বার্লিনের বডে মিউজিয়াম থেকে৷ ২০১৭ সালের মার্চে এটি চুরি হয়েছে৷ ‘বিগ ম্যাপল লিফ’ নামে ক্যানাডায় তৈরি এই মুদ্রার উপাদানগত মূল্য প্রায় চার মিলিয়ন ডলার৷ ৫৩ সেন্টিমিটার উঁচু ও ৩ সেন্টিমিটার পুরু এই মুদ্রার সামনের অংশে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ছবি রয়েছে৷ জানালা দিয়ে চোর মিউজিয়ামে প্রবেশ করেছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F.May
8 ছবি1 | 8
তবে অন্যান্য অভিযোগে সোরোকিনকে চার থেকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে নিউইয়র্কের একটি আদালত৷ ২০১৭ সালের অক্টোবরে ধরা পড়ার পর গতমাসে সোরোকিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়৷ এরপর বৃহস্পতিবার তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তি ঘোষণা করা হয়৷
আইনজীবীরা সোরোকিনের বিরুদ্ধে দুই লক্ষ ৭৫ হাজার ডলার চুরির অভিযোগ এনেছিলেন৷ রায়ে কারাদণ্ড ছাড়াও সোরোকিন যাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন তাঁদের দুই লক্ষ ডলার ফেরত দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে৷ এছাড়া তাঁকে ২৪ হাজার ডলার জরিমানাও করা হয়েছে৷
শাস্তি ঘোষণার সময় বিচারক ডিয়ানে কিসেল বলেন, সোরোকিন নিউইয়র্কের ঝলমলে জীবন দেখে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন৷ তবে সোরোকিনের প্রতারণার ধরন দেখে তিনি চমকে গেছেন বলে জানান৷
এদিকে, সোরোকিনের আইনজাবী বলছেন, সোরোকিন কোনো দাগী অপরাধী নন, ‘সমাজের জন্য হুমকি’ও নন, তিনি শুধু কতগুলো ভুল করেছেন৷
যুক্তরাষ্ট্রে কারাদণ্ড ভোগের পর সোরোকিনকে জার্মানিতে ফেরত পাঠানো হবে বলে জানা গেছে৷
নেটফ্লিক্সে সোরোকিনের গল্প
‘স্ক্যান্ডাল’ নামে জনপ্রিয় একটি টিভি শো'র পরিকল্পনাকারী শোন্ডা রিমেস জানিয়েছেন, সোরোকিনের গল্প নিয়ে তিনি নেটফ্লিক্স সিরিজ তৈরি করবেন৷ এছাড়া লেনা ডানহাম নামের আরেকজন জানিয়েছেন, তিনিও সোরোকিনের গল্প নিয়ে নেটফ্লিক্সে অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করছেন৷
এদিকে, মরক্কোতে নিয়ে গিয়ে সোরোকিন যে বান্ধবীর সঙ্গে প্রতারণা করেছিলেন সেই বান্ধবী সোরোকিনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে একটি বই লিখেছেন৷ বইয়ের চুক্তি থেকে তিনি তিন লক্ষ ডলার আয় করবেন৷ এছাড়া তিনি এইচবিও-র কাছে ৩৫ হাজার ডলারে তাঁর গল্পটি বিক্রি করেছেন৷
জেডএইচ/এসিবি (এপি, ডিপিএ)
জার্মানিতে সাইকেল চুরি
জার্মানিতে প্রতিবছর গড়ে ৩৪০,০০০টি সাইকেল চুরির ঘটনা রেজিস্ট্রার করা হয়৷ তবে ধারণা করা হয়, এই সংখ্যা তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি৷ তবে একটু সতর্ক হলে চোরের হাত থেকে আপনার সাইকেলটি রক্ষা করতে পারেন৷ এবার সেই উপায়গুলোই জেনে নিন৷
ছবি: picture-alliance/Bildagentur-online/Klein
মাত্র তিন মিনিট
একটি সাইকেল চুরি করতে প্রয়োজন মাত্র ‘তিন মিনিট’ বলেন সাইকেল বিশেষজ্ঞ টোমাস গাইসলার৷ মাত্র তিন মিনিটেই নাকি সাইকেলের একটি সাধারণ তালা খুব সহজে খোলা বা ভাঙা যায়৷ ফলে সাধারণ তালা সাইকেল চুরির পথ আরো সহজ করে দেয়৷
ছবি: BilderBox
চোর প্রতিরোধকারী তালা
মজবুত তালা লাগানো দেখলে চোর সতর্ক হয়ে যায়৷ তাই বিশেষ তালা লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে৷ অর্থাৎ এমন তালা লাগাতে হবে, যে তালা চোর খুলতে বা ভাঙতে গেলে অ্যালার্ম বেজে উঠবে৷ যেমন বর্ডো অ্যালার্ম ৬০০০ এ, উইথ ১০০০ ডেসিবেল৷ এই তালাটির মূল্য ১৪০ ইউরো৷
ছবি: MN
অজান্তে চোরকে সাহায্য করবেন না
জায়গা নিরিবিলি হলে চোরের জন্য স্বাভাবিকভাবেই চুরি করাটা আরো সহজ হয়ে যায়৷ তাই সাইকেল স্ট্যান্ড একটু দূরে হলেও, যেখানে মানুষের আনাগোনা নেই বা কম আনাগোনা, সেরকম জায়গায় নিত্যদিনের সাথি প্রিয় সাইকেলটিকে না রাখাই শ্রেয়৷
ছবি: DW/B. Bathke
জায়গা পরিবর্তন করুন!
কর্মস্থলের সামনে কিংবা বাড়ির সামনে একই জায়গায় প্রতিদিন সাইকেল না রাখাই উচিত৷ কারণ সাইকেল চোর নিয়মিত লক্ষ্য রাখে, সাইকেলের মালিক কতক্ষণ বাইরে বা ভেতরে থাকেন৷ আর সেভাবে প্ল্যান করে কোনো সমস্যা ছাড়াই চোর নিশ্চিন্তে আপনার শখের সাইকেলটি নিয়ে পালিয়ে যেতে পারে৷
ছবি: DW/B. Bathke
খোদাই করে রাখুন
ইউরোপে ভালো একটি সাইকেলের মূল্য অনেক সময় পুরনো একটি গাড়ির চেয়েও বেশি পড়ে৷ এ সব ক্ষেত্রে সাইকেলের ওপর নিজের নাম বা নিজের পছন্দের কিছু খোদাই করে লিখিয়ে নিন৷ এতে পুলিশের জন্য আপনার মূল্যবান সাইকেলটি যে চুরি করেছে, তাকে ধরার পথ অনেক সহজ হয়ে যাবে৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Photo/K. Joensson
উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার
দামি সাইকেলে জিপিএস ট্রান্সমিটার লাগানোরও ব্যবস্থা থাকে৷ তাই প্রয়োজনে সেসব ব্যবস্থা নিন৷ কারণ প্রিয় সাইকেল চুরি হয়ে যেখানেই থাকুক না কেন, তা অ্যাপের মাধ্যমে আপনার মোবাইলই জানিয়ে দেবে৷ তবেই বঝুন, চোর পালিয়ে যাবে কোথায়!
ছবি: https://www.musictraveler.com/
ই-বাইক বা ইলেক্ট্রনিক বাইক
আপনার সাইকেলটি যদি ইলেকট্রনিক হয়, তাহলে অবশ্যই সাইকেলের ব্যাটারি-প্যাক সাথে নিয়ে যেতে ভুলবেন না! কারণ ওটা ছাড়া সাইকেল একেবারেই মূল্যহীন, অর্থাৎ চোরের কোনো লাভই হবে না৷