মানুষ হাসপাতালে যায় শরীর সারাতে৷ সেখানে গিয়েই যদি নতুন জীবাণু শরীরে ঢোকে এবং কোনো ওষুধ কাজে না লাগলে কী করা যায়! এমন মারাত্মক ব্যাকটেরিয়া খতম করতে নতুন এক প্রক্রিয়ার পথে এগোচ্ছেন জার্মান বিজ্ঞানীরা৷
বিজ্ঞাপন
ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে নতুন হাতিয়ার
04:06
অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ যে সব জীবাণুর ক্ষতি করতে পারে না, হাসপাতালে সেগুলি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ জীবাণু কোথায় নেই! বিশেষ করে ঠিকমতো হাত না ধুলে সেগুলি আরও ছড়িয়ে পড়ে৷ শুধু জার্মানিতেই বছরে এমন রেজিস্টেন্ট ব্যাকটেরিয়ার কারণে আনুমানিক চল্লিশ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে৷ এই প্রবণতা আরও বাড়ছে৷ ড্যুসেলডর্ফ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হাইকে ব্র্যোৎস-ওস্টারহেল্ট বলেন, ‘‘রেজিস্টেন্ট বা প্রতিরোধক বেড়েই চলেছে৷ এমন মাল্টি-রেজিস্টেন্ট ব্যাকটেরিয়া-কে আমরা এমআরএসএ নামে চিনি৷ এরা খুবই বিপজ্জনক ও শক্তিশালী এবং বিশেষ করে হাসপাতালের মাধ্যমে চারিদিকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে৷''
ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে নতুন হাতিয়ার
04:06
This browser does not support the video element.
এক গবেষক দল সম্প্রতি এমন এক নতুন অ্যান্টিবায়োটিক-এর কাজের বিশ্লেষণ করেছে, যা এমনকি মাল্টি-রেজিস্টেন্ট ব্যাকটেরিয়াও মেরে ফেলতে পারে৷ আডেপ নামের এই প্রাকৃতিক ছোট আকারের প্রোটিন মলিকিউল অনেক রেজিস্টেন্ট ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে৷ ড. সাস বলেন, ‘‘আডেপ এক প্রাকৃতিক উপাদান, যা ব্যাকটেরিয়া দিয়ে তৈরি৷ তারা আবার উৎসের আশেপাশে প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে৷''
গবেষকদল তাই এই অ্যান্টিবায়োটিক-এর কার্য-প্রক্রিয়া খুঁটিয়ে দেখছেন৷ প্রথমেই জানা গেছে, যে আডেপ ব্যাকটেরিয়ার কোষের মধ্যে এমন একটি প্রোটিন ধ্বংস করে দেয়, যা কোষের বংশবৃদ্ধি ঘটায়৷ ড. সাস বলেন, ‘‘এখানে যেমনটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, এই ধরনের প্রোটিন সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার কোষ-বিভাজন স্তরে, অর্থাৎ মাঝখানে থাকে৷ আমরা ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে আডেপ ঢুকিয়ে দিই৷ এর ফলে বংশবৃদ্ধির প্রোটিন আর সেই স্তরে থাকতে পারে না৷ তখন কোষ বিভাজনের প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে, কোষ মরে যায়৷''
কিন্তু এই প্রক্রিয়া ঠিক কী ভাবে ঘটে? সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার কোষের মধ্যে সাধারণত নির্দিষ্ট কোনো প্রতিক্রিয়া ঘটায়৷ এডিইপি তা না করে ব্যাকটেরিয়ার সার্বিক মেটাবলিজমের উপর প্রভাব ফেলে৷ এমন প্রোটিন নির্গত হয়, যা মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া ঘটায়৷
ত্বকের কয়েকটি রোগ
চর্মরোগে কম-বেশি সবাই ভোগেন৷ গরমকালেই এ জাতীয় রোগ বেশি দেখা দেয়৷ এছাড়া অপরিষ্কার ও ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশে বসবাস চর্মরোগের একটা অন্যতম কারণ৷ নিয়ম মেনে চললে রোগের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
একজিমা
একজিমা হলো ত্বকের এমন একটি অবস্থা যেখানে ত্বকে প্রদাহের সৃষ্টি হয়৷ একেক ধরনের একজিমার লক্ষণ একেক রকম হয়৷ তবে সাধারণভাবে লালচে, প্রদাহযুক্ত ত্বক; শুষ্ক, খসখসে ত্বক; ত্বকে চুলকানি; হাত ও পায়ের ত্বকের মধ্যে ছোট ছোট পানির ফুসকুড়ি ইত্যাদি হলো একজিমার লক্ষণ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
একজিমার কারণ
ডিটারজেন্ট, সাবান অথবা শ্যাম্পু থেকে একজিমার সংক্রমণ হতে পারে৷ অতিরিক্ত গরম বা অতিরিক্ত ঠান্ডা ও স্যাঁতসেঁতে ভেজা আবহাওয়াও একজিমার কারণ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সোরিয়াসিস
এটি ত্বকের একটি জটিল রোগ৷ তবে সোরিয়াসিস কেবল ত্বক নয়, আক্রমণ করতে পারে শরীরের অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেও৷ সাধারণত ত্বকের কোষস্তর প্রতিনিয়ত মারা যায় এবং নতুন করে তৈরি হয়৷ সোরিয়াসিসে এই কোষ বৃদ্ধির হার অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে৷ ত্বকের কয়েক মিলিমিটার থেকে কয়েক সেন্টিমিটার জায়গাজুড়ে এই সমস্যা দেখা দেয়৷
ছবি: Fotolia
আজীবন চিকিৎসা
সোরিয়াসিস রোগ যত পুরোনো হয়, ততই জটিল হতে থাকে৷ তাই দ্রুত শনাক্তকরণ ও চিকিৎসার আওতায় আসা জরুরি৷ আক্রান্ত ব্যক্তিকে আজীবন চিকিৎসা নিতে হয়৷ সোরিয়াসিস বংশগতভাবে হতে পারে৷
ছবি: Fotolia
আর্সেনিকের কারণে চর্মরোগ
আর্সেনিক যুক্ত পানি খেলে ত্বকে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ যেমন ত্বকের গায়ে ছোট ছোট কালো দাগ কিংবা পুরো ত্বক কালো হয়ে যেতে পারে, হাত ও নখের চামড়া শক্ত ও খসখসে হয়ে যেতে পারে৷ এছাড়া ত্বকের বিভিন্ন স্থানে সাদা-কালো দাগ দেখা দেয়াসহ হাত ও পায়ের তালুর চামড়ায় শক্ত গুটি বা গুটলি দেখা দিতে পারে৷
ছবি: DW
চরম পর্যায়
আর্সেনিক যুক্ত পানি পানের শেষ পরিণতি হতে পারে কিডনি ও লিভারের কর্মক্ষমতা লোপ পাওয়া; ত্বক, ফুসফুস ও মূত্রথলির ক্যানসার হওয়া; কিডনির কার্যক্ষমতা লোপ পাওয়া ইত্যাদি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দাদ
শরীরের যে-কোনো স্থান ফাংগাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে একে দাদ বলে৷ এই আক্রমণ মাথার চামড়ায়, হাত-পায়ের আঙুলের ফাঁকে কিংবা কুঁচকিতে হতে পারে৷ এটা ছোয়াঁচে রোগ৷ আক্রান্ত স্থান চাকার মতো গোলাকার হয় এবং চুলকায়৷ মাথায় দাদ দেখতে গোলাকার হয় এবং আক্রান্ত স্থানে চুল কমে যায়৷ প্রতিকার পেতে সাবান ও পানি দিয়ে আক্রান্ত স্থান প্রতিদিন ধুতে হবে৷ এছাড়া আক্রান্ত স্থান শুকনো রাখা জরুরি৷
ছবি: MEHR
পাঁচড়া
শিশুদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যায়৷ পরিষ্কার কাপড়-চোপড় ব্যবহার ও নিয়মিত গোসল করলে খোসপাঁচড়া থেকে রেহাই পাওয়া যায়৷
ছবি: MEHR
ঘামাচি
গরমের সময় ঘামাচি একটি সাধারণ সমস্যা৷ এটি সাধারণত তখনই হয় যখন ঘর্মগ্রন্থির মুখ বন্ধ হয়ে যায়, ঘাম বের হয় না এবং ত্বকের নীচে ঘাম আটকে যায়৷ এর ফলে ত্বকের উপরিভাগে ফুসকুড়ি এবং লাল দানার মতো দেখা যায়৷ কিছু কিছু ঘামাচি খুব চুলকায়৷ ঘামাচি সাধারণত এমনিতেই সেরে যায়৷ তবে ঘামাচি সারানোর জন্য ত্বক সবসময় শুষ্ক রাখতে হবে এবং ঘাম শুকাতে হবে৷
ছবি: imago stock&people
ব্রণ
সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালে এই রোগটি দেখা দেয়৷ তাই একে টিনএজারদের রোগও বলা যেতে পারে৷ ১৮ থেকে ২০ বছরের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে এ রোগটা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়৷ ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে তৈলাক্ত, ঝাল ও ভাজাপোড়া খাবারসহ চকলেট, আইসক্রিম ও অন্যান্য ফাস্টফুড খাওয়া কমাতে হবে৷ এছাড়া বেশি করে পানি ও শাক-সবজি খেতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
10 ছবি1 | 10
বিশেষ এই প্রোটিন-এর নাম ক্লিপ-পি৷ সুস্থ ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে সেটি সহায়ক প্রোটিনের সঙ্গে মিলে ত্রুটিপূর্ণ প্রোটিন রিসাইকেল করে৷ খারাপ প্রোটিনগুলি টুকরো করে ফেলা হয়৷ এই রিসাইক্লিং-এর মাধ্যমে কোষের মধ্যে বেশি বর্জ্য প্রোটিন তৈরি হতে পারে না৷
এই আডেপ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে ঢোকালে সেটি ক্লিপ-পি-র সঙ্গে জুড়ে যায়, তার আকারও বদলে যায়৷ অধ্যাপক ব্র্যোৎস-ওস্টারহেল্ট বলেন, ‘‘আডেপ ক্লিপ-পি-র স্বাভাবিক অবস্থা পুরোপুরি বদলে দেয়৷ তখন সে আর তারা স্বাভাবিক সহযোগীর সঙ্গে কাজ করতে পারে না, তার কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না৷ ফলে সেটি মারণাত্মক অস্ত্র হয়ে ওঠে৷''
আডেপ এমন অনেক রেজিসটেন্ট ব্যাকটেরিয়া-কে কাবু করে, যারা কান, ফুসফুস বা হৃদযন্ত্রের পেশির ক্ষতি করে৷ ভবিষ্যতেও যাতে আডেপ নির্ভরযোগ্যভাবে বিপজ্জনক জীবাণু ধ্বংস করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে নতুন রেজিসটেন্ট তৈরি বন্ধ করতে হবে৷ অন্য অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে তা মেশালে চলবে না৷ অধ্যাপক ব্র্যোৎস-ওস্টারহেল্ট বলেন, ‘‘আপাতত আমরা এমন আদর্শ সহযোগীর খোঁজ করছি, যার সঙ্গে কাজ করলে হাসপাতালে আডেপ-এর কোনো প্রতিরোধক তৈরি হবে না৷''
পশুপাখির উপর আরও পরীক্ষা চালাতে হবে, যাতে তারপর মানুষের উপরেও আডেপ-এর পরীক্ষা সম্ভব হয়৷ এই সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা সফল হলে তখনই এডিইপি ওষুধ হিসেবে বাজারে আনার অনুমতি পাওয়া যাবে৷
বিশেষ ঘোষণা: এই সপ্তাহের অন্বেষণ কুইজে অংশ নিতে ক্লিক করুন এখানে৷