মুড়ি-মুড়কির মতো অ্যান্টিবায়োটিক খেলে প্রয়োজনের সময় তা কাজে লাগে না৷ আবার অনেক জীবাণু অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধ করতে শিখে যায়৷ জার্মান বিজ্ঞানীরা ‘বিষে বিষক্ষয়' করতে জীবাণুর মধ্যেই জীবাণুনাশক ব্যবহার করার উদ্যোগ নিচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
হাসপাতালের জীবাণু মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে৷ প্রচলিত ওষুধ সাধারণত এ সব ক্ষেত্রে কাজ করে না৷ বিপজ্জনক ব্যাক্টিরিয়া সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ করে বলে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে৷ বন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তানিয়া শ্নাইডার বলেন, ‘‘গোটা বিশ্বেই অ্যান্টিবায়োটিক-রেজিস্টেন্ট জীবাণুর দাপট বেড়ে চলেছে৷ এর ফলে শুধু সংক্রামক রোগ নয়, গোটা চিকিৎসাশাস্ত্রের উপরই প্রভাব পড়ছে৷ ভেবে দেখুন, কেমোথেরাপি, অঙ্গ প্রতিস্থাপন, ইমপ্লান্ট – অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়া এ সব সম্ভবই নয়৷''
অর্থাৎ দ্রুত নতুন এজেন্টের প্রয়োজন রয়েছে৷ এর জন্য মাটির ব্যাক্টিরিয়ার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে৷ কারণ তারা অন্যান্য ব্যাক্টিরিয়া থেকে আত্মরক্ষা বা তাদের মোকাবিলা করতে স্বাভাবিক অ্যান্টিবায়োটিক এজেন্ট উৎপাদন করে৷ কিন্তু এখনো পর্যন্ত ৯৯ শতাংশ মাটির ব্যাক্টিরিয়া মানুষের কাছে অজানা রয়ে গেছে৷ ল্যাবের পরিবেশে তাদের বংশবৃদ্ধি ঘটে না৷ বন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. টিল শেবারলে বলেন, ‘‘গবেষণাগারে আমরা হয়তো ব্যাক্টিরিয়া প্রজননের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারি না৷ তারা প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও মাটির মতো অবস্থা পায় না৷ তাই সেই পরিবেশের অভাবে ল্যাবে তাদের বংশবৃদ্ধি ঘটাতে পারি না৷''
অতিরিক্ত ওষুধ সেবন মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে
বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের ঔষুধ সেবনে মৃত্যু – এরকম খবর প্রায়ই সংবাদের শিরোনাম হতে দেখা যায়৷ ঘুমের ওষুধ, ব্যথা বা অন্য ওষুধ একটা, দুটো করে খেতে শুরু করে অনেকের এক সময় নেশা হয়ে যায়৷ ছবিঘরে পাবেন ওষুধে আসক্তি থেকে ফেরার উপায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. May
নীরব নেশা
ঘুম আসছেনা বা মনটা উতলা, অশান্ত৷ ভয়, উত্তেজনা বা খুব অস্থির লাগছে৷ এসব ক্ষেত্রে অনেকেই মনে করেন, ওষুধ সেবন করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে৷ আর এভাবেই শুরু৷ ঘুমের ওষুধ এবং সেডেটিভ অর্থাৎ নিস্তেজ বা শান্ত রাখার ওষুধ অনেকে সেবন করেন এর ভয়াবহ পরিণতির কথা না ভেবেই৷ জার্মানিতে আনুমানিক ১.২ মিলিয়ন মানুষ এসব ওষুধের ওপর নির্ভরশীল৷ এই নেশাকে বলা হয়ে থাকে ‘নীরব আসক্তি’৷
ছবি: picture alliance/Arco Images GmbH
মদ্যপান করার চেয়েও তাড়াতাড়ি নেশা এনে দেয়
‘‘অনেকের ক্ষেত্রেই রোগী এবং ডাক্তার খেয়ালই করেন না যে এসব ওষুধ রোগীকে ৪ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যেই সেই ওষুধের ওপর নির্ভরশীল করে তোলে৷’’ একথা বলেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ব়্যুডিগার হলৎসবাখ৷ তিনি আরো জানান, কিছু ঘুমের ওষুধ এবং সেডেটিভ মদ্যপান করার চেয়েও বেশি তাড়াতাড়ি আসক্তি বা নেশা এনে দেয়৷
ছবি: Fotolia/Paul Schwarzl
কম ডোজ থেকেও সাবধান !
অনেকে হয়তো দিনে মাত্র একটি ট্যাবলেট সেবন করেন৷ কাজেই বুঝতেই পারেন না যে তারা ধীরে ধীরে ওষুধে আসক্ত হচ্ছেন৷ ওষুধে এক-আধদিন বিরতি দিলেই কেমন যেন শরীর খারাপ বা ঘুমের সমস্যা হয়৷ তখন আবার ওষুধ খেতে হয়৷ এটাই যে আসক্তি, প্রথমে তা বেশিরভাগ মানুষই বোঝেন না৷
ছবি: Fotolia/Yuri Arcurs
ওষুধ সেবনের আগে চারটি বিষয়ে গুরুত্ব দিন
প্রথমত, শুধু স্বাস্থ্যের জন্য খুবই দরকার হলেই ওষুধ খাবেন এবং ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে এবং এর কোনো বিকল্প চিকিৎসা আছে কিনা ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিন৷ দ্বিতীয়ত, ওষুধ যতটুকু ডোজ দরকার, ঠিক ততটুকুই খাবেন৷ তার চেয়ে একটুও বেশি নয়!
ছবি: Colourbox
পরামর্শ
তৃতীয়ত, ওষুধ অল্প সময়ের জন্য – অর্থাৎ চার সপ্তাহের কম সময় সেবন করুন৷ চতুর্থত, ওষুধ চট করে ছেড়ে না দিয়ে আস্তে আস্তে ওষুধের মাত্রা কমিয়ে দিন৷ তবে অবশ্যই এ নিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলে৷ পরামর্শ ডা. হলৎসবাখ-এর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. May
5 ছবি1 | 5
মার্কিন গবেষকরা প্রথম বার প্রাকৃতিক পরিবেশে এমন অপরিচিত মাটির ব্যাক্টিরিয়ার বংশবৃদ্ধি ঘটাতে পেরেছেন৷ তাঁরা অনেকগুলি খোপ সহ একটি চিপ তৈরি করেছেন, যার মধ্যে মাটির ব্যাক্টিরিয়া বিচ্ছিন্নভাবে বংশবৃদ্ধি করতে পারে – অবশ্যই তাদের চেনা পরিবেশে৷ সেই কলোনি-গুলিকে পরে ল্যাবে নিয়ে গিয়ে ব্রিডিং চালিয়ে যাওয়া এবং তাদের অ্যান্টিবায়োটিক প্রভাব পরীক্ষা করা সম্ভব৷
১০,০০০ ব্যাক্টিরিয়ার উপর পরীক্ষা চালিয়ে গবেষকরা এমনটি একটি প্রজাতি খুঁজে পেয়েছেন, যেটি ‘টেইক্সোব্যাকটিন' নামের অত্যন্ত কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক পদার্থ সৃষ্টি করে৷ বন বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের বিজ্ঞানীরা এখন এই পদার্থের কার্যপ্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছেন৷ অধ্যাপক তানিয়া শ্নাইডার বলেন, ‘‘টেইক্সোব্যাকটিন একইসঙ্গে একাধিক জায়গায় ব্যাক্টিরিয়ার কোষের খোলস উৎপাদন প্রক্রিয়ার উপর হামলা চালায়৷ সেই খোলসের উপকরণের উপর সুনির্দিষ্ট হামলা চালায়৷ ফলে তার বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়৷ ফলে সেটি দুর্বল হয়ে পড়লে ব্যাক্টিরিয়া মরে যায়৷''
ব্যাক্টিরিয়া কোষ বা রোগের প্যাথোজেন সাধারণত প্রতি ২০ মিনিটে বিভক্ত হয়ে যায়৷ শরীরে রোগের জীবাণু ভরে যায়৷ প্রত্যেকবার বিভাজনের আগে প্যাথোজেন-কে কোষের নতুন প্রাচীর তৈরি করতে হয়৷ ব্যাক্টিরিয়ায় টেইক্সোব্যাকটিন দিলে কোষের প্রাচীর তৈরি বন্ধ হয়ে যায়৷ তখন কোষগুলি ফেটে গিয়ে মরে যায়৷ রোগ আর ছড়িয়ে পড়তে পারে না৷
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কিছু পরামর্শ
সবাইকেই কোনো না কোনো সময় ওষুধ খেতে হয়৷ কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রেই ওষুধের অপ্রীতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে৷ এতে ভীত না হয়ে রোগীরা যেন সতর্ক হতে পারেন, সেরকম কিছু পরামর্শ পাবেন এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আয়রন ট্যাবলেট যন্ত্রণাদায়ক
আয়রন ট্যাবলেট খালি পেটে খেলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়৷ কিন্তু এতে আবার পাকস্থলীতে সমস্যা দেখা দেয় বা পেটব্যথা হয় বা খারাপ লাগে অনেকেরই৷ তাই ‘‘খালি পেটে আয়রন ট্যাবলেট না খেয়ে সকালের নাস্তার সাথে সেবন করুন৷’’ এই পরামর্শ জার্মানির লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের কম্পাউন্ডার, মানে ফার্মেসি কর্মী৷
ছবি: Fotolia/Picture-Factory
রাতে যদি ঘুম ভেঙে যায়
এমন অনেক নতুন রোগী আছেন, যাঁদের ‘ব্লাড সুগার’ বা ডায়াবেটিস কমানোর ওষুধ খাওয়ার পর রাতে ঘন ঘন বাথরুমে যেতে হয়৷ আসলে অনেক ওষুধের মধ্যেই মূত্রবর্ধক প্রভাব থাকে৷ যাঁদের এ সমস্যা হয়, তাঁদের জন্য পরামর্শ – রাতের ওষুধটি একটু আগেই খেয়ে নিন৷ তবে সব রোগী সমান নন৷ তাই রোগী আর অন্য আরো কোনো ওষুধ খান কিনা, সেটাও জানা দরকার৷
ছবি: Gina Sanders - Fotolia.com
ট্যাবলেট সেবনের পর ডায়রিয়া
ওষুধ খাওয়ার পর ডায়রিয়া বা পেট খারাপ হয় অনেকের৷ ওষুধের মধ্যএ থাকা ‘ল্যাকটোজ’-এর কারণেই সাধারণত এমনটা হয়৷ অর্থাৎ তাঁদের ল্যাকটোজের অ্যালার্জি রয়েছে৷ এক্ষেত্রে ডাক্তার বা ফার্মেসি কর্মীদের সাথে আলোচনা করে ট্যাবলেটের বদলে ক্যাপসুল বা তরল ওষুধ দেয়া যেতে পারে৷ অবশ্য অ্যান্টিবায়োটিক সেবনেও এরকম হতে পারে৷ এ অবস্থা তিন দিনের বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন৷
ওষুধ সেবনে চোখ জ্বালা
কিছু ওষুধ সেবনে চোখ জ্বালা করে, চোখটা শুকিয়ে যায় বা পানি গড়ায়৷ বিশেষ করে যাঁরা ‘কন্ট্যাক্ট লেন্স’ ব্যবহার করেন৷ যে কোনো ফার্মেসিই চোখের জন্য ড্রপ পাওয়া যায়, এক্ষেত্রে সেগুলোর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে৷
ছবি: Fotolia/Africa Studio
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভয় নেই
ওষুধ খাওয়ার ফলে যাঁদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়, তাঁরা ভয় না পেয়ে বরং তাড়াতাড়ি ডাক্তারের সাথে সরাসরি কথা বলুন৷ এছাড়া ফার্মেসি কর্মীদের সাথেও কথা বলতে পারেন৷ ডাক্তারের তুলনায় তাঁদের সময় কিছুটা বেশি থাকায় তাঁরা রোগীকে এ ব্যপারে ভালোভাবে বুঝিয়ে বলতে পারবেন৷ এর সঙ্গে খাওয়া-দাওয়ার অভ্যাস এবং জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন করলেও অনেক সময় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম হতে পারে৷
ছবি: imago
খোলাখুলি কথা বলুন
অনেকেই ওষুদের প্যাকেট থেকে ওষুধ সেবন বা ব্যবহারের নিয়মাবলীতে সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পড়েই ভয়ে পেয়ে যান৷ তবে সবারই যে একই রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে, সেরকম কোনো কথা নেই৷ কারণ প্রতিটি মানুষই আলাদা! তাই ভয় না পেয়ে এ বিষয়ে খোলাখুলি কথা বলুন৷ মনে রাখতে হবে সুস্থ হতেই মানুষ ওষুধ খায়, অসুখে আক্রান্ত হতে নয়৷
ছবি: picture alliance / Arco Images GmbH
ওষুধ ককটেল
‘ওষুধ ককটেল’, অর্থাৎ বিভিন্ন ধরনের ওষুধ একসাথে খেলে এর প্রতিক্রিয়া মারাত্মক হতে পারে৷ তাই নতুন কোনো ওষুধ শুরু করার আগে রোগীর ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন৷ শুধু তাই নয়, ডাক্তারকে এ কথাও জানানো জরুরি যে রোগী অন্য কোনো ওষুধ সেবন করেন কিনা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
গবেষণাগারে এই অ্যান্টিবায়োটিক প্রভাব মাইক্রোস্কোপের নীচে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়৷ ব্যাক্টিরিয়ার যে কোষ বেপরোয়াভাবে বিভাজন করে চলে, তাদের মাঝের অংশে একটা দাগ থাকে৷ সেখানেই পরে কোষের প্রাচীর তৈরি হয়৷ বন বিশ্ববিদ্যালয়ের আনা ম্যুলার বলেন, ‘‘টেইক্সোব্যাকটিন প্রয়োগ করলে কোষের বিভাজন বন্ধ হয়ে যায়৷ বিভাজনের একটা গোটা স্তর থাকে না বলে কোষের প্রাচীর তৈরি হতে পারে না৷''
গবেষণাগারের আধারে ও ইঁদুরের ক্ষেত্রে টেইক্সোব্যাকটিন এমনকি হাসপাতালের ভয়ংকর জীবাণু ও যক্ষ্মার প্যাথোজেনেরও মোকাবিলা করে৷ অ্যানথ্র্যাক্স বা বিভিন্ন আন্ত্রিক রোগের ক্ষেত্রেও এটি কাজ করে৷ টেইক্সোব্যাকটিন যেহেতু কোষের প্রাচীরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ প্রতিরোধ করে, সেহেতু ব্যাক্টিরিয়ার পক্ষে পালটা কৌশল গ্রহণ করা, অর্থাৎ রেজিস্টেন্ট হয়ে ওঠা কার্যত অসম্ভব৷ অধ্যাপক তানিয়া শ্নাইডার বলেন, ‘‘রেজিস্টেন্ট হতে হলে ব্যাক্টিরিয়ার প্রত্যেকটি উপকরণ একই সঙ্গে পরিবর্তন করতে হবে৷ সেটা প্রায় অসম্ভব বলা চলে৷''
টেইক্সোব্যাকটিন-এর নতুন কার্যপ্রক্রিয়া অ্যান্টিবায়োটিক সংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্রে বিশাল এক সাফল্য৷ তবে মানুষের ক্ষেত্রে তার প্রভাব ও প্রতিক্রিয়ার প্রমাণ পাওয়ার জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে৷