প্রাণিজগতের ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে ব্যাঙের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ অথচ নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যে কমে যাচ্ছে ব্যাঙের সংখ্যা৷ তাই এ ধরনের প্রাণীকে বাঁচিয়ে রাখার উদ্যোগ নিয়েছেন জার্মানির বন শহরের বিজ্ঞানীরা৷
বিজ্ঞাপন
প্রাণিজগতের ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে ব্যাঙের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ অথচ নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যে কমে যাচ্ছে ব্যাঙের সংখ্যা৷ তাই এ ধরনের প্রাণীকে বাঁচিয়ে রাখার উদ্যোগ নিয়েছেন জার্মানির বন শহরের বিজ্ঞানীরা৷
খাদ্যশৃঙ্খলে সক্রিয় অবস্থান ছাড়াও বৃষ্টিপাত থেকে শুরু করে ভূমিকম্প, প্রকৃতির নানা ওঠা-পড়ার পূর্বাভাস দিতে পারে এই ছোট্ট প্রাণীটি৷ এ জন্যই একে ‘এনভায়রনমেন্টাল ব্যারোমিটার' বলা হয়৷ অথচ ব্যাঙ সংরক্ষণে সেভাবে কোনো চেষ্টা নজরেই পড়ে না৷ প্রতি বছর শীত শেষে যখন বসন্ত আসে, ব্যাঙেরা শীতঘুম শেষ করে গর্তের বাইরে বেরিয়ে পড়ে মিলনের জন্য৷ এই স্থানান্তরণের সময়েই রাস্তায় প্রচুর ব্যাঙ গাড়ি চাপা পড়ে৷ জানালেন জার্মান বিজ্ঞানী ক্রিস্টিয়ান শামেলা৷
জঙ্গলে সাপ, ব্যাঙ খেয়ে সেনা প্রশিক্ষণ!
থাইল্যান্ডে শুরু হয়েছে ‘কোবরা গোল্ড’ ট্রেনিং৷ থাই সেনার সঙ্গে মিলে কুচকাওয়াজ করছে মার্কিন সৈন্য৷ রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার সৈন্যরাও৷ মূলত জঙ্গলে কীভাবে বেঁচে থাকতে হয়, তারই প্রশিক্ষণ হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
কেউটের রক্ত
ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন সৈন্যবাহিনীর অপদস্ত হওয়ার অন্যতম কারণ ছিল, জল-জঙ্গলের যুদ্ধে তাঁরা প্রশিক্ষিত ছিল না৷ অনেকটা ভিয়েতনামের মতোই জঙ্গল থাইল্যান্ডে৷ মার্কিন সেনা সেখানে জঙ্গলে বেঁচে থাকার প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেছে৷ সেখানেই এক মার্কিন সৈন্য কেউটে সাপের রক্ত পান করছেন৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
প্রশিক্ষণ পর্ব
থাই সেনা আধিকারিক দেখাচ্ছেন, কীভাবে জঙ্গলে কেউটে সাপ ধরতে হয়৷ এবং তারপর বিষ বের করে সেই সাপ খেতে হয়৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
রক্তপানের পর
কাজটা মোটেই সহজ নয়৷ সাপ মেরে সেই রক্ত পান করা৷ কঠিন সেই কাজটা করে স্বভাবতই খুশি মার্কিন সেনা কর্মকর্তা৷ দিনভর সেই রক্ত লেগে ছিল তাঁর শরীরে এবং পোশাকে৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
অ্যামবুশ
দক্ষিণ কোরিয়া এবং মার্কিন সেনারা একত্রে নিয়েছে সমুদ্রের ধারে অ্যামবুশ করার প্রশিক্ষণ৷ জাহাজ থেকে নেমেই কীভাবে শত্রুর সঙ্গে লড়াই শুরু করে দিতে হয়, তা শেখানো হয়েছে তাঁদের৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
ব্যাঙ খাওয়া
শুধু সাপ নয়, জ্যান্ত ব্যাঙ এবং অন্যান্য কীটপতঙ্গ কীভাবে ধরে খেয়ে ফেলতে হয়, তারও প্রশিক্ষণ হয়েছে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, আস্ত একটি ব্যাঙ খেয়ে ফেলছেন এক মার্কিন সেনা৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
বালির প্রশিক্ষণ
মার্কিন সেনা এবং থাই সেনা একত্রে বালির ওপর যুদ্ধের নানা কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছে৷ একত্রে কুচকাওয়াজও হয়েছে৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
হাতের উপর শুঁয়ো
জঙ্গল যুদ্ধে বনের পশুপাখি এবং কীটপতঙ্গের সঙ্গে যুঝে চলতে হয় সৈন্যদের৷ কীভাবে বিছে, শুঁয়োপোকার মতো কীটদের সঙ্গে জীবন কাটাতে হয়, তারও প্রশিক্ষণ হয় থাইল্যান্ডে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি বিছেকে হাতের উপর দিয়ে যেতে দিচ্ছেন কয়েকজন মার্কিন সৈন্য৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
7 ছবি1 | 7
বন শহরের একটি এনজিও-তে ক্রিস্টিয়ান সহ আটজন বিজ্ঞানী বিপন্ন ব্যাঙদের বাঁচানোর কাজটিই করেন৷
উভচর প্রাণীর গবেষক তথা রাইন-এর্ফ্ট বায়োলজি স্টেশন নামক গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানী ক্রিস্টিয়ান শামেলার আক্ষেপ, ‘‘বড় বড় প্রাণী নিয়ে অনেক গবেষণা হয়৷ অথচ বিপন্ন ব্যাঙ বা ফায়ার স্যালামান্ডার সংরক্ষণের কোনো চেষ্টাই কারও নেই৷ যথেচ্ছ পরিমাণে কীটনাশকের ব্যবহার, জঙ্গল সাফ করে বসতি গড়ে ওঠা, দূষণ, কোথাও আবার অ্যাসিড বৃষ্টি বা যুদ্ধ – এ সব নানা কারনে উভচর প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে চলেছে৷ ফলে খাদ্যশৃঙ্খল নষ্ট হওয়া থেকে বাস্তুতন্ত্র ভেঙে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে৷ আর তা হলে শুধুই উভচরপ্রাণী নয়, তার ভয়ংকর প্রভাব পড়বে জীবজগতেও৷''
কিন্তু রাস্তায় গাড়ি চাপা পড়ার হাত থেকে ব্যাঙকে বাঁচানোর উপায় কী? বড় রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ করা যাবে না, সেটা ছোট রাস্তার ক্ষেত্রে করা যেতে পারে৷ তাই এ ব্যাপারে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা নেয় রাস্তার নীচে তৈরি সুড়ঙ্গ৷ এগুলি ব্যবহার করে ব্যাঙ সহজেই রাস্তা পার করতে পারে৷ তবে নতুন রাস্তা তৈরির সময়েই এই সুড়ঙ্গ তৈরি করতে হয়৷
বন বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োলজি বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র ক্রিস্টিয়ান জানালেন, ‘‘আমরা যেটা করি সেটা সবচেয়ে সহজ৷ ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নাগাদ বিশেষভাবে তৈরি বেড়াগুলি রাস্তার ধারে ধারে দিয়ে রাখি৷ এতে ব্যাঙ বা অন্য উভচর সেটা ডিঙিয়ে রাস্তায় যেতে পারে না৷ এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত এগুলো এমন করে দেওয়া থাকে৷''
এরপরে মাটিতে গর্ত খুঁড়ে বালতি বসিয়ে দেওয়া হয়৷ ৮০০ মিটার লম্বা বেড়ার কাছাকাছি ৩ থেকে ৫ মিটার অন্তর অন্তর এই বালতিগুলো বসান হয়৷ বেড়ার কাছাকাছি ব্যাঙ পৌঁছে গেলে সহজেই বালতি পড়ে যায়৷
প্রাণিজগতে ব্যাঙের ভূমিকা
01:21
বায়ো স্টেশনের স্বেচ্ছাসেবীরা রোজ এই বালতিগুলো নজরদারি করেন৷ বালতিতে ব্যাঙ পড়লেই তাঁরা সেগুলিকে রাস্তা পার করে জঙ্গলে ছেড়ে দেন৷
জার্মানিতে ব্যাঙকে রক্ষা করার জন্য প্রায় ৮০০টি বেড়া ব্যবহার করা হয়৷ এতে সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে৷ তবে চিন্তাও রয়েছে৷ নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়ায় খুবই কমে এসেছে গার্লিক ব্যাঙ এবং হলদে পেট ব্যাঙ৷ সেগুলিকে সংরক্ষণ করার জোরকদমে চেষ্টা চলছে৷
বায়োস্টেশনে এখন সেই কাজই চলছে৷ নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়ার বিভিন্ন জলাশয় থেকে এই দু'টি বিপন্ন প্রজাতির ব্যাঙাচি সংগ্রহ করে আনা হচ্ছে৷ এরপরে কৃত্রিমভাবে সেই ব্যাঙাচির প্রজনন ঘটানো হচ্ছে, যাতে পরিবেশে এই বিরল প্রজাতির ব্যাঙের সংখ্যা বাড়ে৷
নিছক প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা থেকেই বায়োস্টেশনে এই কাজ করেন চার জন তরুণ স্বেচ্ছাসেবী ও আটজন বিজ্ঞানী৷ ব্যাঙের চলার পথকে সুরক্ষিত করে তুলতে তাঁরা সেখানে সাইনবোর্ডও লাগিয়ে রাখেন৷
ভারত, বাংলাদেশের পুকুরে ইদানীং ব্যাঙের সংখ্যা কমে আসছে৷ রাসায়নিকের যথেচ্ছ ব্যবহার এবং দূষণে ব্যাঙ আজকাল তৃতীয় বিশ্বের ক্ষেত খামারেও ব্যাঙের ডাক শোনা যায় না৷ কিন্তু জার্মানির মতো উন্নত দেশে ব্যাঙের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ কী?
ক্রিস্টিয়ান শামেলা জানালেন, ১৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাঁরা কাজটা করছেন৷ সমস্যাটা শুধু তৃতীয় বিশ্বের নয়, সারা বিশ্বের৷ ঠিক একই কারণে জার্মানিতেও ব্যাঙ কমে যাচ্ছে৷ বহু ব্যঙ শুধু গাড়ি চলাচলের কারণে মারা পড়ছে৷ বিশুদ্ধ জল, সংরক্ষিত এলাকা এবং অধিক প্রজনন ছাড়া ব্যাঙ বা এই জাতীয় উভচর বাঁচিয়ে রাখার উপায় নেই৷
জলাশয়ে যেমন ব্যাঙ থাকে তেমনই নানা ধরনের ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গও থাকে৷ ব্যাঙ সেগুলি খেয়ে নেয়৷ ব্যাঙ না থাকলে সেই সব কীটপতঙ্গ মানব জগতের ক্ষতি করবে৷ জিকা ভাইরাস বহনকারী ক্ষতিকারক পতঙ্গ খেয়েও ব্যাঙ আমাদের সুরক্ষিত রাখে৷ এত সব জানার পরেও কি আমরা ব্যাঙের ব্যাপারে সচেতন হবো না?
প্রতিবেদনটি কেমন লাগলো? লিখুন নীচের ঘরে৷
ঘেসো ব্যাঙ, গেছো ব্যাঙ, টমেটো ব্যাঙ...
ব্যাং বাঁচাও দিবস পড়ে প্রতি বছর এপ্রিল মাসের শেষ শনিবারে৷ পৃথিবীতে প্রায় ৪,৮০০ ধরনের ব্যাঙ আছে৷ এখানে তাদের কয়েকটি...
ছবি: picture-alliance/robertharding/J. Hill
বিশ কোটি বছর
ব্যাঙেরা দুনিয়ায় রয়েছে প্রায় বিশ কোটি বছর ধরে৷ এর মধ্যে তারা দেখিয়েছে, তারা নানা ধরনের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে৷ আজ পৃথিবীতে প্রায় ৫,০০০ প্রজাতির ব্যাঙ আছে৷ কিন্তু মানুষের কার্যকলাপ, পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে ব্যাঙের সংখ্যা ক্রমেই কমে আসছে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/Hecker/Sauer
‘বিষের তীর’ ব্যাঙ
ইংরেজিতে ‘পয়জন ডার্ট ফ্রগ’৷ এ ধরনের ব্যাঙ মধ্য ও দক্ষিণ অ্যামেরিকায় দেখতে পাওয়া যায়৷ এদের পনেরো ধরনের রঙ আর নকশা আছে৷ ব্যাঙটির বিষ আসে তারা যে সব পোকামাকড় খায়, তা থেকে৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
মুখোশ পরা গেছো ব্যাঙ
‘মাস্ক্ড ট্রি ফ্রগ’-কে পাওয়া যায় মধ্য ও দক্ষিণ অ্যামেরিকায়৷ অন্য আরো অনেক প্রজাতির ব্যাঙের মতো মুখোশ পরা গেছো ব্যাঙ তার রং বদলাতে পারে৷ দিনের বেলা বাদামি রঙের ব্যাঙগুলি রাতে সবুজ হয়ে যায়৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/G. Kunz
লালচোখো গেছো ব্যাঙ
একবার দেখলে ভোলার কথা নয়! থাকে মধ্য অ্যামেরিকার গ্রীষ্মপ্রধান জলাভূমি ও পাহাড়ি জঙ্গলে৷ এর চোখগুলো লাল শুধুমাত্র আত্মরক্ষার কারণে৷ দিনের বেলায় ব্যাঙটা যখন ঘুমায়, তখন তার চোখের পাতা চারপাশের সবুজের মতো সবুজ হয়৷ কিন্তু কোনো শত্রু কাছাকাছি এলে লাল চোখ খুলে তাকে ভয় দেখায় এই জীবটি৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/J. Hill
ঘেসো ব্যাঙ
ইংরেজি নাম কমন ফ্রগ বা গ্রাস ফ্রগ, ইউরোপের সর্বত্র পাওয়া যায়৷ ঘেসো ব্যাঙেরা নাকি যে পুকুরে তাদের জন্ম, গন্ধ শুঁকে সেখানে ফিরে যেতে পারে৷ প্রজননের সময় পুরুষ ব্যাঙটা স্ত্রী ব্যাঙের পিঠে দিনের পরে দিন কিংবা সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে সেঁটে থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত না স্ত্রী ব্যাঙটি হাজার-দু’হাজার ডিম পাড়ে৷ পুরুষব্যাঙটি তখন তার উপর নিজের শুক্র দেয়, যা থেকে সপ্তাহ দু’য়েক পরে ব্যাঙাচিদের জন্ম হয়৷
তাই বরফের মধ্যেই স্ত্রী ব্যাঙটির পিঠে চেপে বসে রয়েছে একটি পুরুষ ঘেসো ব্যাঙ৷ দৃশ্যটি জার্মানির৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/K. Wothe
ব্যাঙাচি
ব্যাঙ থেকে ব্যাঙাচি – আবার ব্যাঙাচি থেকে ব্যাঙ হতে বেশ কয়েক সপ্তাহ লেগে যায়৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/C. Wermter
টমেটো ব্যাঙ
থাকে মাদাগাস্কারে৷ চুপচাপ বসে থেকে হঠাৎ জিভ বের করে শিকার ধরে৷ তবে শিকার গলাধঃকরণ করার জন্য টমেটো ব্যাঙকে তার চোখ বন্ধ করে অক্ষিগোলক দু’টিকে ঠেলে তাদের কোটর থেকে বের করে দিতে হয়! অন্য কোনো জীব টমেটো ব্যাঙকে আক্রমণ করলে, তার শরীর থেকে এমন একটা পিচ্ছিল পদার্থ বের হয়, যার ফলে শিকারি শিকার ফেলে পালায়৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/H. Schmidbauer
ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ
গ্রাফিতিটি জার্মানির বাভারিয়া অঞ্চলের৷ এ দেশে ব্যাঙ ডাকে ‘কোয়াক, কোয়াক’, আমাদের দেশে ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ – মানেটা বোধহয় একই দাঁড়ায়...
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/D. u. M. Sheldon