জায়েন্ট স্কুইকার ফ্রগ ঘানার একটি বিরল প্রজাতির ব্যাঙ৷ কিন্তু সেই ব্যাঙকে বাঁচানোর প্রচেষ্টাই ঘানার একটি গ্রামের অধিবাসীদের চোখ খুলে দিয়েছে: ব্যাঙ বাঁচানোর জন্য প্রয়োজন জঙ্গলকে বাঁচানো, যার অর্থ পরিবেশকে বাঁচানো৷
বিজ্ঞাপন
ঘানায় ব্যাঙ বাঁচানোর চেষ্টা
06:00
ঘানার সুই রিভার রিজার্ভ ফরেস্টে ট্রেক করা খুব সহজ নয়৷ কিন্তু এই পরিবেশ সংরক্ষণকারীরা এসেছেন একটা বিশেষ কাজে৷ গবেষক গিলবার্ট আডুম তাঁর কিছু মার্কিনি সতীর্থদের নিয়ে একটি বিশেষ ধরনের ব্যাঙের খোঁজ করছেন৷ আডুম মাত্র কয়েক বছর আগে এই প্রজাতিটি আবিষ্কার করেন৷
মাইকেল জানালো, সে একটি ব্যাঙ খুঁজে পেয়েছে৷ আর মাত্র ৩০টি এ ধরনের ব্যাঙ বেঁচে আছে বলে মনে করা হয়৷ সাবধানে হাতে নিতে হয়৷ এ ধরনের ব্যাঙ আজ প্রথম দেখা গেছে৷ তবে এটি অন্য প্রজাতির৷
পরিবেশ সংরক্ষণকারী গিলবার্ট আডুম জানালেন,‘‘আমরা প্রতি মাসে এক বা দুই সপ্তাহ এখানে কাটাই এই ব্যাঙের খোঁজে৷ যেমন এবার আমরা জুন মাসে শুরু করেছি....কিন্তু একটা ব্যাঙ খুঁজে পেতে চার মাস সময় লেগে গেছে৷ এই দেখুন!’’
খুঁজে পাওয়া কিছু অদ্ভুত প্রাণী
অনেক প্রাণী এবং উদ্ভিদই বিলুপ্ত হয়েছে কিংবা হওয়ার অপেক্ষায় আছে৷ পাশাপাশি খুশির খবর, নতুন কিছু গাছ ও প্রাণীর সন্ধানও পাওয়া যাচ্ছে৷ ছবিঘরে দেখুন বিজ্ঞানীদের খুঁজে পাওয়া সেরকম কয়েকটি উদ্ভিদ ও প্রাণীর ছবি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Bolland/SUNY College of Environmental Science and Forestry
যে মাকড়সা চাকার মতো ঘোরে
নিউ ইয়র্কের সিরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা কয়েকশ বিচিত্র উদ্ভিদ ও প্রাণী থেকে দশটিকে সেরা হিসেবে বেছে নিয়েছেন৷ সেরা দশে এ ধরণের মাকড়সাও আছে৷ এই মাকড়সা দেখতে সাধারণ হলেও স্বভাবে অদ্ভুত৷ কেউ তাদের আক্রমণ করতে পারে বুঝলেই এরা গাড়ির চাকার মতো দ্রুত ঘুরতে শুরু করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/I. Rechenberg, Technical University Berlin/SUNY College of Environmental Science and Forestry
যে ব্যাঙ ডিম পাড়ে না
ব্যাঙ ডিম পাড়ে৷ অর্থাৎ তারা স্তন্যপায়ী৷ কিন্তু এমন ব্যাঙ-ও খুঁজে পাওয়া গেছে যারা সরাসরি বাচ্চা দেয়৷ ছবির এই ব্যাঙদুটোর মধ্যে ডান দিকেরটি স্ত্রী ব্যাঙ আর এই স্ত্রী ব্যাঙ সরাসরি বাচ্চা প্রসব করে, পৃথিবীর অন্য ব্যাঙদের মতো কখনো ডিম পাড়ে না৷ এ কারণেই অদ্ভুত প্রাণীদের তালিকায় স্থান পেয়েছে এই ব্যাঙ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. A. McGuire/SUNY College of Environmental Science and Forestry
কাঠি নয়, পোকা
কিছুদিন আগেও এই পোকাগুলোকে কেউ পাত্তা দেয়নি৷ গাছপালার সঙ্গে এরা এমনভাবে মিশে যেত যে, দেখে মনে হতো একটা কাঠি পড়ে আছে৷ ২৫ সেন্টিমিটারের মতো দীর্ঘ, বাদামী রংয়ের এই পোকাগুলোর এখন খুব কদর৷ প্রথম দর্শনে কাঠি মনে হয় এমন এই পোকাগুলোর সম্পর্কে আরো জানতে গবেষণা শুরু করেছেন ভিয়েতনামের টাম-দাও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Kneubühler/SUNY College of Environmental Science and Forestry
রঙীন শামুক
জাপানের সমুদ্রে খুঁজে পাওয়া গেছে খুব সুন্দর এক ধরণের শামুক৷ ১৭ থেকে ১৮ মিলিমিটারের মতো বড় এই শামুকের গায়ে থাকে লাল, নীল, সাদা এবং সোনালী রংয়ের ছোপ৷ অনেকে বলছেন, এগুলোই নাকি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর শামুক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Bolland/SUNY College of Environmental Science and Forestry
বুদ্ধিমান পিঁপড়া
এই পিঁপড়াগুলো ডিম পাড়ার সময় হলে অদ্ভুত একটা কাজ করে৷ ডিম পাড়ার জায়গাটা শুরুতে খড়কুটো দিয়ে ঘিরে ফেলে৷ তারপর সেখানে একটা মৃত মাকড়সা এনে রাখে৷ লার্ভা বা শূককীটের খাবার হিসেবে রাখা হয় এই মাকড়সা৷ আর ডিম পাড়ার জায়গার পাশেই ছোট একটা ঘরের মতো করে, সেখানে মৃত পিঁপড়া এনে এনে জড়ো করা হয়৷ অনাহূত কোনো অতিথি এসে যাতে অনিষ্ট করতে না পারে সেই ব্যবস্থা করতেই নাকি মৃত পিঁপড়া জমিয়ে রাখা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Staab
5 ছবি1 | 5
গিলবার্ট আডুমের কাজ জায়েন্ট স্কুইকার ফ্রগদের নিয়ে৷ এই ব্যাঙদের নিয়ে তাঁর গবেষণার জন্য দূর দূর দেশ থেকে তাঁর ডাক এসেছে৷ আডুম বললেন, ‘‘আমি ব্যাঙ ভালোবাসি আর সেই ভালোবাসার কারণেই আমি জার্মানিতে এসেছি, বার্লিনে এসেছি৷’’
বার্লিনে
আডুম এসেছেন বার্লিনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে দেড় বছরের জন্য, গবেষণার কাজে৷ মিউজিয়ামটির সংগ্রহে পশ্চিম আফ্রিকার নানা উভচর জীব আছে, ব্যাঙেরা যাদের মধ্যে পড়ে৷ ঘানার জীববিজ্ঞানী আডুম ম্যাপ তৈরির জন্য জিআইএস পদ্ধতি ব্যবহার করতেও শিখে গেছেন৷
ঘানার জায়েন্ট স্কুইকার ফ্রগ আর অন্যান্য সব প্রজাতির ব্যাঙ জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা সামলে উঠতে পারছে তো? আডুম তা নিয়ে গবেষণার জন্য হুমবল্ট ফাউন্ডেশনের একটি ফেলোশিপ গ্র্যান্ট পেয়েছেন৷ আডুম বলেন, ‘‘আমার জ্ঞান দারুণভাবে বেড়েছে৷ ঘানায় প্রায় ৮০ রকমের ব্যাঙ পাওয়া যায়৷ এখানে তাদের প্রায় সবার নমুনা আছে৷ আমি তাদের সব ক'টিকে পরীক্ষা করেছি৷ আর এই নতুন ম্যাপগুলোর ফলে আমি জানি ঠিক কোথায় কোন ব্যাঙ পাওয়া যায়৷ কাজেই আমার অনেক লাভ হয়েছে৷ এই ফেলোশিপের মতো আর কিছু থেকে আমি এতটা পাইনি৷’’
ডিম থেকে বাচ্চা বের হওয়ার অবিশ্বাস্য কাহিনি
বৃহৎ পাখি থেকে শুরু করে সরীসৃপ-এদের ডিম থেকে বাচ্চা বের হওয়ার প্রক্রিয়া বিস্ময়কর৷ এমনই কিছু আশ্চর্যকাহিনি তুলে ধরছে ডয়চে ভেলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/PA Peter Byrne
উট পাখি
পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রজাতি অস্ট্রিচ বা উট পাখি, মাটিতে সবচেয়ে দ্রুতগতির পাখিও এটি৷ একটি মেয়ে পাখি কেবল একটি পুরুষ পাখির সঙ্গে মিলিত হয়, তবে একটি পুরুষ পাখি বহুগামী৷ মা পাখিটি আরও অন্তত চার জন মা পাখির সঙ্গে একটি বাসা বানিয়ে সেখানে ডিম পাড়ে৷ প্রত্যেকে সাধারণত ১৫টি করে ডিম পাড়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Wittek
কিউই পাখি
নিউজিল্যান্ডেই বেশি দেখা যায় এই ধরণের পাখি৷তাই কিউই পাখির কথা প্রসঙ্গ এলেই চলে আসে নিউজিল্যান্ডের নাম৷ কিউইর ডিম সব পাখির মধ্যেই দেহের অনুপাতে সর্ববৃহৎ৷ তাই তার কদরও বেশি৷ এক একটি ডিমের ওজন প্রায় ৫০০ গ্রাম৷ মা পাখি ডিম পাড়ার আগে দেখে মনে হয় তার শরীরের প্রায় পুরো অংশই যেন ডিম৷ আর ডিম থেকে বাচ্চা বের হওয়ার সাথে সাথেই তারা বেশ স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে৷
অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের পেঙ্গুইনদের মতো কষ্টসাধ্য কাজ হয়ত আমাদের বাবা-মা’ও করতে পারবেন না৷ পেঙ্গুইনদের একটি প্রজনন কলোনি আছে৷ নিজের বাসা থেকে সেখানে যেতে তাদের ৫০ থেকে ১২০ কিলোমিটার পথ হাঁটতে হয়৷ প্রতি বছর মাত্র একটি ডিমে তা দিতে পারে মা পেঙ্গুইন৷ তাই ডিম থেকে যখন বাচ্চা বের হয়, সেটা খুবই মূল্যবান মুহূর্ত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হাতি পাখি
পাখি প্রজাতির মধ্যে একসময় সর্ববৃহৎ ছিল এলিফেন্ট বার্ড বা হাতি পাখি, যেটি চার শতক আগে বিলুপ্ত হয়ে গেছে৷ ২০১৫ সালে এর একটি ডিমের খোঁজ পান বিজ্ঞানীরা৷ একটি মুরগীর ডিমের চেয়ে তা প্রায় ২০০ গুণ বড়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
সাপ
মুরগি আগে না ডিম আগে- এ নিয়ে প্রচুর বিবাদ আছে৷ আমরা ভুলে যাই যে সরীসৃপরাও ডিম পাড়ে, যেমন সাপ৷ বেশিরভাগ সাপ ডিম পাড়ার পর ডিম ফোটা পর্যন্ত তাদের জায়গা থেকে নড়ে না, একনাগাড়ে তা দিয়ে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সামুদ্রিক কচ্ছপ
সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তন, অবৈধ বাণিজ্য ও পর্যটনের কারণে সমুদ্রের মা কচ্ছপদের ডিম পাড়াটা খুব কঠিন হয়ে গেছে৷ তাই ডিম পাড়ার জন্য দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে তারা নিরাপদ আশ্রয় বেছে নেয়৷ বালিতে ডিম পাড়ে তারা৷ কিন্তু যদি মানুষ, শব্দ বা অন্য কোনো কারণে বিরক্ত হয়, তাহলে ডিমে তা না দিয়ে তারা সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়ে৷
ছবি: Turtle SOS Cabo Verde
ব্যাঙ
প্রথমে ছবিটি দেখলে মনে হতে পারে, ব্যাঙটি বিষন্ন৷ ব্যাপারটা তা না, একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে ডিমের ওপরে বসে আছে ব্যাঙটি৷ প্রাণীজগতে অন্যান্য প্রাণীদের চেয়ে এরা ভিন্ন৷ বাবা ব্যাঙটি যাকে, মিড ওয়াইফ বলা হয়, সে স্থলে মা ব্যাঙটির সঙ্গে মিলিত হয়৷ তারপর এই ডিমগুলোকে বাবা ব্যাঙটি ৩০ দিন পর্যন্ত বহন করে এবং তা দেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ L. Webbink
কমোডো ড্রাগন
সরীসৃপদের মধ্যে সর্ববৃহৎ প্রজাতি এরা৷ এদের মিলনে অভিনবত্ব আছে, কেননা, পুরো একটি সন্ধ্যা ব্যাপী পুরুষ ও নারী কমোডো ড্রাগন মিলিত হয়৷ তাদের এই রোমান্টিক মিলনের ফলে ডিম থেকে বাচ্চাও বের হয় খুব সুন্দরভাবে, ধীরে সুস্থে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/PA Peter Byrne
8 ছবি1 | 8
ঘানায়
আডুম এখন ঘানায় ফিরে সুই নদীর তীরে সংরক্ষিত অরণ্যে তাঁর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ ব্যাঙেদের প্রকৃতিদত্ত বাসস্থান এখন গাছ কাটার ফলে বিপন্ন হচ্ছে৷ ‘সেভ দ্য ফ্রগস’ নামের মার্কিন এনজিও-র সতীর্থদের গিলবার্ট দেখাচ্ছেন, কাঠ শিল্পের বেপরোয়া গাছ কাটার ফলে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে৷ অনুমোদিত সংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি গাছ কাটা হয়েছে৷ মাটিতে গভীর দাগ বসে গেছে৷ জমিটাই নষ্ট৷ আডুম বললেন, ‘‘এটা আমাদের পক্ষে যুদ্ধের সামিল৷ আমরা ওদের সাথে লড়তে পারি না৷ আমরা স্থানীয় লোকেদের বোঝানোর চেষ্টা করছি যে, এই বনজঙ্গল কাঠ কোম্পানির সম্পত্তি নয়, সরকারেরও নয়, এটা তাদের, স্থানীয় লোকেদের সম্পত্তি৷’’
জঙ্গলের ধারেই ইয়ক্রোম গ্রাম৷ শুধু গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে একত্রে সুই অরণ্য ও সেই সঙ্গে ব্যাঙেদের বাঁচানো সম্ভব৷ গ্রামবাসীরা কোকো চাষ থেকে সংসার চালান৷ নয়তো মধু সংগ্রহ করে৷ এখন তারা শিখছেন, কী করে মৌমাছির চাক বসাতে হয়৷ ব্যাঙ বাঁচানোর প্রচেষ্টা থেকেই এই প্রকল্পের জন্ম৷ মৌমাছিদের ঠান্ডা করার জন্য কী করতে হয়, মৌমাছির চাক কীভাবে পালতে হয়, এই সব শিখছেন তারা৷ আগে তারা জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহের সময় আগুন দিয়ে মৌমাছি তাড়াতেন, যার ফলে গাছ পুড়ে যেতো৷ এখন তারা জঙ্গলের বাইরে মৌমাছি পালতে শিখছেন৷
ইয়ক্রোমে আশার ছোঁয়া লেগেছে৷ আরেকটি প্রকল্পে চেষ্টা চলেছে, গাছ কাটার ফলে যে সব জমি ফাঁকা হয়ে পড়েছে, সেখানে চাষের ব্যবস্থা করার৷ গিলবার্ট আডুম ও তাঁর সংগঠন মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে ইয়ক্রোমের বাসিন্দাদের অরণ্য সংরক্ষণের কাজে লাগাতে পেরেছেন৷ ৩৫ বছর বয়সি গবেষককে আগে শুনতে হতো: ব্যাঙ বাঁচিয়ে কী হবে? কিন্তু ইয়াক্রোমেতে আজ উৎসবের মেজাজ৷ একটি মেয়ে বললো, সে একটি কবিতা আবৃত্তি করবে৷ কবিতার নাম হলো: কত ধরনের ব্যাঙ আছে৷ অনেক ধরনের ব্যাঙ আছে...৷’
গোটা উৎসবটাই ব্যাঙ আর তাদের রক্ষাকর্তাদের ঘিরে৷
জায়েন্ট স্কুইকার ফ্রগ আজ ইয়ক্রোমের মানুষদের কাছে পরিবেশ সংরক্ষণের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
প্রতিবেদন: মাবেল গুন্ডলাখ/এসি
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ
ব্যাঙও এখন বিলুপ্তির হুমকির মুখে
ব্যাঙ ডাকলে একসময় মানুষ বুঝে নিতো বৃষ্টি হবে৷ গ্রামে তো বটেই, শহরেও ছিল ব্যাঙের ছড়াছড়ি৷ সেই দিন আর নেই৷ অনেক ব্যাঙ এখন কমতে কমতে বিলুপ্ত৷ আসুন, দেখে নিই টিকে থাকা ব্যাঙরাজ্যের বর্ণময়তা৷
ছবি: picture-alliance / dpa
ছিল কাতারে কাতার, এখন বিপদ অপার
লাল-চোখ তাদের৷ নাম ডুলেমানোহিলা৷ এ ধরণের ব্যাঙ এখন উভচর (অ্যাম্ফিবিয়ান) প্রাণীদের ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে চলার উজ্জ্বল এক দৃষ্টান্ত৷ নিশাচর এই প্রাণীদের এক সময় ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা যেতো কোস্টারিকা এবং পানামায়৷ এখন থাকার জায়গা কমছে, ছত্রাকজনিত বিশেষ ধরণের ভয়াবহ রোগও হানা দিচ্ছে৷ ফলে লাল-চোখা ব্যাঙেরাও এখন বিলুপ্তির পথে৷সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ১৬৫টি প্রজাতির ব্যাঙ পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে৷
ছবি: Andreas Hertz
মরছে কেন?
কাইট্রিড এক ধরণের ছত্রাক৷ তাদের কারণে ব্যাঙদের যে রোগ হয় সেই রোগের নাম কাইট্রিডিওমাইকোসিস৷ ব্যাঙ কিন্তু শ্বাস-প্রশ্বাসে তাদের গায়ের চামড়া ব্যবহার করে৷ কাইট্রিডিওমাইকোসিস হানা দেয় সেই চামড়ায়৷ পরিণাম- অবধারিত মৃত্যু৷ এমন রোগের কারণও কিন্তু ব্যাঙ৷ আফ্রিকার এক ধরণের ব্যাঙের দেহে এই ছত্রাক আবার নিরাপদে বাস করে৷ ১৯৫০ সালের দিকে মানুষের প্রেগন্যান্সি টেস্টে ব্যবহার করা হতো এই ছত্রাক৷
ছবি: Andreas Hertz
অনিশ্চয়তার পথে এগিয়ে চলা
পানামার এই ব্যাঙটির মতো অনেক ব্যাঙ আছে যারা রেইনফরেস্টে লাফিয়ে লাফিয়ে ঘুরে বেড়ায় বলে একটু বেশি নজর কাড়ে৷ বেশিদিন হয়তো এ অবস্থা থাকবেনা৷ মানুষ গাছ কেটে কেটে বন উজাড় করে দিচ্ছে৷ গাছ না থাকলে ব্যাঙগুলো কোথায় থাকবে? বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ুর পরিবর্তন এবং গাছে অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহারও ব্যাঙের বেঁচে থাকা অসম্ভব করে তুলছে৷
ছবি: Andreas Hertz
‘পরিবেশবিদ’ ব্যাঙ
ব্যাঙওপরিবেশবিদ৷ কথাটা মজা করে বললেও, ভেতরে বড় একটা সত্যি লুকিয়ে আছে৷ বিশ্বের অন্য সব প্রাণীর তুলনায় পরিবেশ-প্রকৃতি সম্পর্কে ব্যাঙ অনেক বেশি স্পর্শকাতর৷ পরিবেশের অনেক পরিবর্তন অনেক আগে টের পায় তারা৷ অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগের খবর আগেভাগে পেয়ে ডেকে ডেকে সবাইকে জানিয়ে দেয়৷ তাই তো ব্যাঙের আরেক নাম, ‘কয়লাখনির খুদে গায়কপাখি’ (ক্যানারিজ ইন দ্য কোলমাইন)৷
ছবি: picture-alliance / dpa
মানুষের বন্ধু
ধেড়ে ব্যাঙ, কুনো ব্যাঙ, গিরগিটিসদৃশ ব্যাঙ, গোলাপি ব্যাঙ- কত রকমের ব্যাঙ যে আছে বলে শেষ করা মুশকিল৷ প্রকৃতির খাদ্যপ্রবাহে ভূমিকা রাখে প্রত্যেকে৷ ব্যাঙ পোকামাকড় খায়, ব্যাঙকে খায় সাপ, পাখি, এমনকি মানুষও৷ মানুষ কি শুধু খায়? কিছু ব্যাঙের শরীরে এমন কেমিক্যাল রয়েছে যা কিনা মানুষের অনেক জটিল রোগ সারাতে সহায়তা করে৷ ছবির এই ব্যাঙের দেহে তো এমন ধরণের বিষ রয়েছে যা মানুষ বহুবছর তিরের ফলায় ব্যবহার করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ব্যাঙ দেয় রং
অনেক ব্যাঙ বিলুপ্ত হচ্ছে, পাশাপাশি নতুন কিছু খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে৷ গতবছর জার্মানভিত্তিক প্রাণীবিজ্ঞানী আন্দ্রেয়াস হেয়ার্টস পশ্চিম পানামায় খুঁজে পেয়েছিলেন ছবির এই ব্যাঙটিকে৷ অদ্ভুত ধরণের প্রাণী৷ গায়ের রং হলুদ, ধরলে আপনার হাতও হলুদ হয়ে যাবে!
ছবি: picture-alliance/dpa
‘অ্যাম্ফিবিয়ান আর্ক’
উভচর এবং সরিসৃপ প্রাণীদের নিয়ে কাজ করেন এমন বিজ্ঞানীদের বলা হয় ‘হারপেটোলজিস্ট’৷ পিএইচডির ছাত্র আন্দ্রেয়াস হেয়ার্টসও একজন হারপেটোলজিস্ট৷ ‘অ্যাম্ফিবিয়ান আর্ক’ নামের এক প্রকল্পের অধীনে কাজ করছেন ল্যাটিন অ্যামেরিকা অঞ্চলের উভচর এবং সরিসৃপ নিয়ে৷ তাঁদের কাজ হলো, কাইট্রিডে আক্রান্ত হওয়ার আগেই ব্যাঙকে বন থেকে তুলে এনে বাঁচিয়ে রাখা৷
ছবি: Sebastian Lotzkat
পুনরাবিষ্কার
ছয় দশক আগে মনে হয়েছিল চোখ ধাঁধানো রঙে রাঙানো এই ব্যাঙগুলো বুঝি চিরতরে হারিয়ে যাবে৷ হারিয়েই গিয়েছিল প্রায়৷ ২০১১ সালে ইসরায়েলের এক রাস্তায় দেখা গেল এমন একটা ব্যাঙ লাফিয়ে বেড়াচ্ছে৷ সযত্নে ধরে আনা হলো৷ সেই থেকে তাদের খোঁজার চেষ্টা আরো প্রবল হয়েছে৷ পাওয়াও গেছে বেশ কিছু৷ এরা কিন্তু আকার-আকৃতিতে একটুও বদলায় না৷ তাই এদের নাম দেয়া হয়েছে, ‘জীবন্ত ফসিল’৷
ছবি: cc-by-sa-3.0/Mickey Samuni-Blank
ফুসফুসহীন উভচর
এই ব্যাঙগুলোর ফুসফুস বলতে কিছু নেই৷ ইন্দোনেশিয়ার বোর্নিও এলাকার রেইনফরেস্টের খরস্রোতা ঝরনায় এদের বাস৷ পরিবেশ দূষণের কারণে এই ব্যাঙগুলোও এখন বিলুপ্তির পথে৷