শুধু কথা বলা নয়, গান গাওয়ার সময়েও করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে৷ কয়েকজন গায়ককে নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে গবেষকরা মাস্ক, শারীরিক দূরত্ব, ভেন্টিলেশন ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
গান গাওয়ার সময় এয়ারোসোল কতদূর উড়ে যেতে পারে? সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে জার্মানির এর্লাঙেন বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরীক্ষার ১৪ দিন পরেও দুই বিজ্ঞানী তথ্যের মূল্যায়ন করে চলেছেন৷ দেখা গেল, এয়ারোসোল যেদিকে প্রসারিত হচ্ছে, সেখানে সাধারণত অন্য গায়কদের উপস্থিত থাকার কথা৷ মিউনিখের এলএমইউ হাসপাতালের মাটিয়াস এশটারনাখ বলেন, ‘‘এক থেকে দেড় মিটার দূরত্বে অনেকেই ছিলেন৷ অর্থাৎ কয়ারে সমবেত সংগীতের সময় দেড় মিটার দূরত্ব অবশ্যই বড় কম৷''
জার্মানির বাভেরিয়া রাজ্যে গানের সময় দুই মিটার দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম চালু রয়েছে৷ তাছাড়া রিহার্সালের সময় সীমিত রাখতে হয় এবং নিয়মিত জানালা খুলে বাতাস ঢোকার ব্যবস্থা করতে হয়৷ এ ক্ষেত্রে দুই বিজ্ঞানীর পরামর্শ কী? মাটিয়াস এশটারনাখ মনে করেন, ‘‘একেবারে নিশ্চিত হতে হলে বার বার এয়ারোসোল পুরোপুরি দূর করতে হবে৷ কারণ গান গাইলে বার বার নতুন এয়ারোসোল তৈরি হয়৷ তাই লাগাতার ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা সেরা উপায়৷ সেটা থাকলে হয়তো দুই বা আড়াই মিটার ব্যবধানের কথা ভাবা যেতে পারে৷ অনেক শখের সংগীতগোষ্ঠীর পক্ষে সেটা নিশ্চিত করা বেশ কঠিন৷''
মুখের পাশের অংশে এয়ারোসোলের বিস্তারের মাত্রাও তাঁরা পরিমাপ করেছেন৷ ডানে বা বামের প্রতিবেশীদের তুলনায় সামনের গায়কদের থেকে আরও বেশি দূরত্ব বজায় রাখতে হবে৷ গানের সময় বড় ড্রপলেটের ক্ষেত্রে স্বরবর্ণ ও ব্যাঞ্জনবর্ণের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করাও গবেষণার আরেকটি বিষয় ছিল৷ শ্রোতাদের কানে বোধগম্য করে তোলার জন্য গায়কদের ব্যাঞ্জনবর্ণ উচ্চারণের সময় বিশেষ জোর দিতে হয়৷ মাটিয়াস এশটারনাখ বলেন, ‘‘মঞ্চে যেমনটা ঘটে, সেভাবে আমি খুব স্পষ্ট উচ্চারণ করলে এমনটাও হতে পারে, যে সাধারণ কথোপকথনের তুলনায় কণা আরও দূর পর্যন্ত চলে যায়৷''
মুখের গহ্বর অথবা ঠোঁটের কোণে ব্যাঞ্জনবর্ণ সৃষ্টি হয়৷ সে সময়ে মুখের ভিতরের আর্দ্রতা বড় বিন্দুগুলি টেনে নেয়৷ অন্ধকার ঘরে সেগুলির সংখ্যা ও দূরত্ব মাপা বয়েছে৷ এর্লাঙেন বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ড. স্টেফান ক্নিসবুর্গেস বলেন, ‘‘স্বরবর্ণের ক্ষেত্রে আমরা প্রায় কোনো ড্রপলেট বের হতে দেখি নি৷ ব্যাঞ্জনবর্ণের তুলনায় অতি সামান্য কণা পাওয়া গেছে৷''
মাস্ক পরলে ড্রপলেট আটকানো যায়৷ কিন্তু পেশাদারী সংগীতশিল্পীরা কি মাস্ক পরে আদৌ গান গাইতে পারেন? এক শিল্পী জানালেন, সেটা মোটেই সম্ভব নয়৷ কারণ সংগীত আসলে আবেগ, হৃদয় দিয়ে গাইতে হয়৷ এভাবে গাইতে হলে তিনি বরং অন্য কিছু শিখবেন৷
পরে ফলাফল মূল্যায়ন করে দেখা গেছে যে গান গাওয়ার সময় মাস্ক পরলে বড় ড্রপলেট আটকানো সম্ভব৷ ড. ক্নিসবুর্গেস বলেন, ‘‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাস্কের ধারে অথবা নাকের পাশে খোলা অংশ দিয়ে এয়ারোসোল যে বেরিয়ে এসে গোটা ঘরে ছড়িয়ে পড়ে, পরীক্ষার সময়ে আমরা তা দেখেছি৷''
তবে গবেষকদের মতে, গান গাওয়ার সময় মাস্ক পরলে বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়৷ সামনের ব্যক্তির সঙ্গে আড়াই মিটার ও পাশের ব্যক্তির সঙ্গে দেড় মিটার দূরত্ব অবশ্যই বজায় রাখা উচিত৷ মাঝে প্লেক্সিগ্লাসের প্রাচীর ও লাগাতার ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা রাখলে আরও সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব৷
ডোরোটে রেঙেলিং/এসবি
করোনার বিরুদ্ধে কারা জেতে, কারা জেতে না
ফুটবলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সমানে সমানে লড়ে, কিন্তু এই লড়াইয়ে ব্রাজিল পাত্তাই পায় না৷ ৪৫ বছর আগের এক যুদ্ধের মতো পুঁচকে ভিয়েতনামের কাছে আবার লজ্জা পায় যুক্তরাষ্ট্র৷ করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধের আরো কিছু বিষয় থাকছে ছবিঘরে..
ছবি: Getty Images/AFP/S. Lima
দেশ অপ্রস্তুত আর প্রেসিডেন্ট একগুঁয়ে হলে যা হয়
চীনে করোনা সংকট দেখা দেয়ার দু’মাস পরও যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাসামগ্রীর ঘাটতি, করোনা টেস্ট শুরু করায় বিলম্ব, ইটালিতে মৃত্যুর মিছিল দেখেও করোনাকে ট্রাম্পের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, মধ্য এপ্রিলেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে চাওয়া- ইত্যাদির উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি৷ বিশেষজ্ঞরা যা চান ট্রাম্প তার ঠিক বিপরীত দিকে হাঁটতে চেয়েছেন৷ ফলাফল পরাশক্তি হয়েও করোনার কাছে নাস্তানাবুদ হওয়া৷
শীতল যুদ্ধের যুগ আর নেই৷ তবে এ যুগেও কমিউনিস্ট শাসিত কিউবা আর যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক মধুর হয়নি ৷ যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃত্যু এক লাখ ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে, অথচ কিউবায় মারা গেছে মাত্র ৮৩ জন৷ হোক না মাত্র এক কোটি ১৪ লাখ মানুষের দেশ, করোনাকে এভাবে বোতলবন্দি করলো কিভাবে তা-ই এখন কৌতুহলের কেন্দ্রে৷ গার্ডিয়ান বলছে, শুরু থেকে সপ্তাহের সাতদিন ঘরে ঘরে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করে তা সম্ভব করেছে কিউবা৷
ছবি: pictrure-alliance/AP Photo/I. Francisco
বিশেষজ্ঞরা স্বেচ্ছাচারিতার কবলে পড়লে যা হয়
লকডাউন প্রশ্নে ট্রাম্পের বিরোধিতা করে কোণঠাসা হয়েছেন জাতীয় অ্যালার্জি ও সংক্রামক রোগ ইনস্টিটিউটের প্রধান ডা, অ্যান্থনি ফাউচি, একই বিষয়ে প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর বিরোধিতা করে দায়িত্ব হারিয়েছেন ব্রাজিলের দুই স্বাস্থ্যমন্ত্রী৷ সামাজিক দূরত্ব মানার সরাসরি বিরোধিতা করা বলসোনারোর দেশও এখন ধুঁকছে৷ গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে কিউবার চেয়ে সত্তর গুন পিছিয়ে আছে ব্রাজিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Lima
ভিয়েতনাম হলে যা হয়
ভিয়েতনামও করোনার বিরুদ্ধে দারুণ সফল৷ দেশ ছোট আর অর্থনীতি দুর্বল হলেও বড় যুদ্ধে ভিয়েতনাম কখনো হারেনি৷ ৩৫ বছর আগে সামরিক যুদ্ধে ব্যর্থ হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, এখন ব্যর্থ হচ্ছে করোনা ভাইরাস৷ দ্রুত সীমান্ত বন্ধ করা, অল্প সময়ে বেশি পরীক্ষা করানো, সামাজিক দূরত্ব, লকডাউন- সব নিয়ম কঠোরভাবে মেনে সফল হয়েছে ভিয়েতনাম৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Hau Dinh
সরকার এবং সরকারপ্রধান অপরিনামদর্শী না হলে যা হয়
জনমনে অসন্তোষ দেখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট বন্ধ করেছিল ব্রাজিল সরকার৷ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তা আবার চালু হয়েছে৷ ফুটবলে তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে আর্জেন্টিনা ২৬ হাজারের মতো সংক্রমণ আর মাত্র ৭৮৭ জন করোনায় মৃত্যু নিয়ে এখনো অনেক ভালো অবস্থায়৷ আর্জেন্টিনার জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে চার কোটি, বিপরীতে ব্রাজিলের জনসংখ্যা ২১ কোটির কাছাকাছি হলেও ব্যবধানটা কিন্তু সেই তুলনায় অনেক বড়!
ছবি: Getty Images
করোনাকে বেশি সময় দিলে যা হয়
করোনা যখন হানা দিলো, তখন পরীক্ষার প্রস্তুতি, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের জোগান- সব কিছুরই ঘাটতি ছিল ইউরোপের দেশটিতে৷ লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব মানতে চাননি অনেকে৷ ফলে বিপদ বেড়েছে দ্রুত৷ এখন পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক৷ এ পর্যন্ত ইটালিতে ৩৪ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ ডাক্তার মারা গেছেন একশ’রও বেশি৷ বেশির ভাগ ডাক্তারই মারা গেছেন পিপিই ছাড়া চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/E. Mattia Del Punta
ছোট দেশও ‘গাইডলাইন’ মানলে যা হয়
প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আর্ডার্ন জানিয়েছেন, নিউজিল্যান্ডে আর করোনায় সংক্রমিত রোগী নেই৷ বিশ্লেষকরা বলছেন মূলত গাইডলাইন মেনে চলার কারণেই এমন সাফল্য এসেছে৷ ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের স্কুল অব ফার্মাসির শিক্ষক ওকসানা পাইসিক বলেন, ‘‘ প্রথমে খুঁজে বের করা, তারপর টেস্ট করা, আইসোলেট করা, প্রত্যেক রোগীকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা, সংক্রমণ ধরা পড়লে কোয়ারান্টিনে পাঠানো- এসব মেনেই নিউজিল্যান্ড সফল হয়েছে৷’’