1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ব্যাটারিচালিত রিকশা চলবে: প্রধানমন্ত্রী

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২০ মে ২০২৪

প্রধানমন্ত্রী নিজেই শেষ পর্যন্ত ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন আজ। ফলে ১৫ মে থেকে ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে শুরু হওয়া অভিযান সোমবার দুপুরের পর স্থগিত হয়ে গেছে।

ব্যাটারিচালিত রিকশা
ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত রিকশাছবি: Sazzad Hossain/DW

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের(ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ড. খ মহিদ উদ্দিন বলেন,"আমরা সরকারি নির্দেশনা মতো কাজ করি। এখন আর অভিযান হবে না। তবে ব্যাটারিচালিত রিকশা মূল সড়কে চলতে পারবে না। মূল সড়কের সংযোগ সড়কে চলবে।”

এই অভিযানের বিরুদ্ধে ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চালক ও মালিকেরা কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন। রোববার তারা মিরপুর এলাকায় সড়ক অবরোধ, যানবাহন ভাঙচুর, পুলিশ বক্সে হামলা ও মেট্রোরেল স্টেশনে তালা লাগিয়ে দেয়। সকালেও তারা রামপুরা এলাকায় সড়ক অবরোধ ও ভাঙচুর করে। মঙ্গলবার তাদের সচিবালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ছিল।

ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ জানায়, তারা হাইকোর্টের নির্দেশে এই অভিযান শুরু করেছিলো। তবে হাইকোর্ট এই নির্দেশ দেন কয়েক বছর আগে। আপিলের পর শুধু মহাসড়ক এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে ইজিবাইক ও থ্রি হুইলার চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু এই ধরনের যনবাহন বিআরটিএর অনুমোদন বা লাইসেন্স প্রাপ্ত নয়।

বিআরটিএ ১৯ মে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিলো ব্যাটারি বা মোটরচালিত রিকশা বা ভ্যান বা অনুরূপ শ্রেণির থ্রি-হুইলার ঢাকা মহানগরীতে চলাচলের কারণে সড়ক নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ অনুযায়ী ব্যাটারি বা মোটরচালিত রিকশা বা ভ্যান বা অনুরূপ শ্রেণির থ্রি-হুইলার চালানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিআরটিএর উপপরিচালক (আইন) তানভীর আহমেদ সিদ্দকী জানান যান্ত্রিক যেকোনো যানবাহন  সড়কে চলাচলের জন্য বিআরটিএর লাইসেন্স, রুট পারমিট ও ফিটনেস নিতে হয়। আইনে ব্যাটারিচালিত রিকশা বা ইজবাইকের অনুমোদন দেয়ার কোনো বিধান নাই।

সড়ক পরিবহন ও যোগাযোগন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দুপুরে জানান,"শুধুমাত্র ঢাকা শহরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের অনুমতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্টের কথা  বিবেচনা করে এই নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।”

তবে দেশের ২২টি মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে সারা বাংলাদেশে ৪০ হাজার ইজিবাইক ও ব্যাটারি চালিত রিকশা  আছে। এরমধ্যে ঢাকা শহরে আঝে সাত-আট লাখ। এইসব যন্ত্রচালিত রিকশার কোনো নিবন্ধন দেয় না বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ(বিআরটিএ)। ঢাকাসহ কোনো সিটি কর্পোরেশনও তাদের লাইসেন্স দেয় না। মূলত স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, পরিবহন শ্রমিক নেতা ও সমিতিও পুলিশ মিলে অর্থের বিনিময়ে এই ধরনের যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করে।

‘কোনটার পারমিশন বিআরটিএ দেবে তা আমাদের দেখার বিষয় নয়’

This browser does not support the audio element.

অনুমোদন না থাকলেও এই ধরনের যানবাহন, এর যন্ত্রাংশ এবং ব্যাটারি আদানিতে কোনো বাধা নাই।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন,"যন্ত্রাংশ তারা কী কাজের জন্য আমদানি করে তা তো আমরা জানি না। আর ব্যাটারিতো নানা কাজে লাগে। থ্রি হুইলার আমদানি নিষিদ্ধ নয়। তবে কোনটার পারমিশন বিআরটিএ দেয় কোনটা দেয় না তা তো আমাদের দেখার বিষয় নয়।”

ব্যাটারিচালিক রিকশা ও ইজিবাইককে কেন্দ্র করে সারাদেশে একটি চাঁদাবাজ চক্র গড়ে উঠেছে। মিরপুর এলাকায়ই মাসে দেড় কোটি টাকা চাঁদা দিতে হয় বলে জানান ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা মালিক ও শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম। তিনি বলেন,"আমরা প্রতিটি ব্যাটারিচালিত রিকশায় মাসে এক হাজার ৮০০ টাকা করে চাঁদা দিই। মিরপুর বাউনিয়া বাধ এলাকায় এটা স্থানীয় কয়েকজন যুবলীগ নেতা এটা নিয়ন্ত্রণ করেন। আমাদের ওই টাকার বিনিময়ে ডিজিটাল স্টিকার( নমুনা ডয়চে ভেলের সংগ্রহে আছে) দেয়া হয়। বিনিময়ে তারা থানা পুলিশ ও ট্রাফিকের ঝামেলা সামলানোর দায়িত্ব নেয়।”

এখানে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীও ঢুকে গেছেন। তারা ২০-২৫টি ব্যাটারিচালিত রিকশা কিনে ভাড়া দিচ্ছে। প্রতিটি রিকশার ভাড়া আট ঘন্টায় ৩০০ টাকা। কেউ কেউ এনজিও থেকে ঋণ নিয়েও এই ব্যবসায় খাটিয়েছেন। তাদের একজন আরমান হোসেন জানান তিনি ১০টি রিকশা নামিয়েছেন একটি এনজিও থেতে ঋণ নিয়ে। তিনি জানান, "একটি রিকশা তৈরি করতে ৭০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা খরচ। হয়। আরো কিছু খরচ আছে যা পুলিশ ও নেতাদের দিতে হয়। আর তাদের মাসে মাসে টাকা দিতে হয়।”

বাংলাদেশ পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. হানিফ খোকন বলেন," এই ব্যাটারিচালিত রিকশার পেছনে আছে পুলিশ এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা এবং কিছু পরিবহন শ্রমিক নেতা। আমাদের হিসাবে প্রতিটি ব্যাটারিচালিত রিকশা থেকে মাসে দুই হাজার টাকা চাঁদা নেয়া হয়।  দেশে এই ধরনের যানবাহন আছে কমপক্ষে ৪০ লাখ। সেই হিসাবে মাসে ৮০০ কোটি টাকা চাঁদা ওঠে। যারা এটা পরিচালনা করে তারা সংঘবদ্ধ।”

খোরশেদ আলম বলেন,"আমাদের কোনো অনুমোদন ও লাইসেন্স না থাকায় তারা এই সুযোগ নেয়। আমরা বাধ্য হয়ে চাঁদা দিচ্ছি। তবে প্রধানমন্ত্রী এখন যদি আমাদের লাইসেন্সের ব্যবস্থা করেন তাহলে এই চাঁদাবাজদের হাত থেকে আমরা রেহাই পাব।”

অতিরিক্ত কমিশনার ড. খ মহিদ উদ্দিন বলেন,"যেহেতু এইগুলোর কোনো রেজিষ্ট্রেশন নাই তাই ঢাকা শহরে কতগুলো আছে তা বলা কঠিন। তবে ধারণা করি ঢাকা ও আশপাশ এলাকায় কমপক্ষে পাঁচ লাখ হবে।” তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন,"যেখানে কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না সেখানে নানা ধরনের চক্র গড়ে উঠবে এটাই স্বাভাবিক।

দেশে সড়ক দুর্ঘটনার আহত ও নিহত বিবেচনায় শীর্ষে আছে মোটরসাইকেল। এরপরই ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশার অবস্থান। এই যানবাহন দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যা বেশি বলে জানান যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিচার্স ইনস্টিটিউটের সাবেক সহকারি পরিচালক  অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন,"এই ধরনের যানবাহন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ রিকশায় যে মটর লাগানো হয় তার গতির সঙ্গে বডি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আর ব্রেকও আধুনিক নয়। আর যারা চালান তারাও প্রশিক্ষিত নয়। তাই স্থানীয়ভাবে তৈরি এই রকম কমপক্ষে ৩০ ধরনের ব্যাটারিচালিত রিকশা আছে।

"কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এখন এগুলো যে পর্যায়ে গেছে তাতে এগুলো উচ্ছেদ করা সম্ভব নয়। আমরা গবেষণা করে দেখেছি সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা খরচ করলেই এগুলো ত্রুটি এবং ঝুঁকিমুক্ত করা সম্ভব৷”

তিনি বলেন,"ঢাকা শহরে যানবাহন চলাচলের জন্য মোট আয়তনের যে সাত ভাগ রাস্তা আছে তারমধ্যে  এক তৃতীয়াংশ সড়ক গণপরিহন চলার উপযুক্ত নয়।  এই রিকশাগুলোকে আধুনিক করে চালকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সেখানে চলার অনুমতি দেয়া যায়। তবে মহাসড়ক এবং নগরীর মূল সড়কে চলার অনুমতি দেয়া কোনোভাবেই ঠিক হবে না।”

তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন," যদি রিকশা থাকে তাহলে সেটা ব্যাটারিচালিত মানসম্পন্ন রিকশাই থাকা উচিত। এই সময়ে প্যাডেলচালিত রিকশা অমানবিক।”

আর মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন,"প্রধানমন্ত্রী মানবিক দিক বিবেচনা করে হয়তো  ব্যাটারি চালিত রিকশা চলাচলের অনুমতি দিয়েছেন। তবে খেয়াল রাথতে হবে এগুলো যেন মূল সড়ক আর মহাসড়কে উঠে না যায়।”

সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে এই ধরনের রিকশা নিয়ে তিন বছরের একটি পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তার মধ্যে তাদের লাইসেন্স কীভাবে দেয়া যায় এবং ঢাকার  অলিগলিতে কত রিকশার প্রয়োজন তার একটি হিসাব করা। তার ভিত্তিতে ওই লাইসেন্স দেয়া হবে। আর ওই রিকশাগুলোকে ঝুঁকিমুক্ত করার জন্য একটি মডেল এবং যান্ত্রিক স্পেসিফিকেশন নির্ধারণ করা। আর এখন যে পরিমাণ আছে তার চেয়ে বাড়তে দেয়া হবে না।

তবে বড় প্রশ্ন হলো এই ব্যাটারিচালিত রিকশার যন্ত্রাংশ আমদানি এবং তৈরি নিয়ে। একই সঙ্গে কিছু ইজিবাইকও আমদানি হচ্ছে। পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন,"আমরা এখন এই ধরনের রিকশা তৈরির কারখানায় অভিযান চালাবো যাতে আর নতুন রিকশা তৈরি হতে না পারে।” বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন,"এটা শিল্প মন্ত্রণালয়ের বিষয়। তারা এটা দেখতে পারে। এটার বিকাশে আমাদের কোনো ভূমিকা নাই।”

ঢাকায় এখন ১২ লাখের মতো রিকশা আছে।  তারমধ্যে অর্ধেকই ব্যাটারি চালিত। আর এই ১২ লাখের মধ্যে মাত্র এক লাখের অনেক আগে লাইসেন্স দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। সেগুলো অযান্ত্রিক এবং প্যাডেল চালিত।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ