নরওয়ে হত্যাকাণ্ড
২২ এপ্রিল ২০১২গত বছরের জুলাই মাসে আন্ডার্স ব্রাইভিক ৭৭ জন নিরীহ মানুষের জীবন কেড়ে নেন৷ ব্রাইভিক'কে আটক করা হয় সঙ্গে সঙ্গে, সেই দিনই৷ এ সপ্তাহে শুরু হয়েছে ব্রাইভিক'এর বিচার৷ আদালতে হাজির করা হচ্ছে প্রতিদিনই৷ তাকে পড়ে শোনানো হয়েছে তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ৷ হত্যাকাণ্ডের পুরো কাহিনী তাকে শোনানো হয়েছে, দেখানো হয়েছে বেশ কিছু ভিডিও চিত্র৷ ব্রাইভিক সব শান্তভাবে দেখেছেন এবং জানিয়েছেন যে সেই হত্যাকাণ্ডের জন্য তিনি মোটেই দুঃখিত নন৷ প্রয়োজনে তিনি আবারো তা করবেন৷ তিনি বার বার আদালতে বলতে থাকেন যে তিনি নির্দোষ৷ তিনি কোনো অপরাধ করেননি৷ তিনি জানিয়েছেন যে, ২০০৬ সাল থেকে তিনি এ ধরণের ঘটনার পরিকল্পনা করেছেন৷
সরকারি দপ্তর এবং উটোয়া দ্বীপের পর তার লক্ষ্য ছিল লেবার পার্টির অফিস এবং নরওয়ের রাজ প্রাসাদ৷ আদালতে এই কথাগুলো ব্রাইভিক স্বীকার করেছেন৷ যদি তিনি ধরা না পড়তেন তাহলে এই বোমা বিস্ফোরণগুলো তিনি ঘটাতেন৷
আদালতে সরাসরি এবং খোলাখুলিভাবে এসব স্বীকারোক্তি প্রসঙ্গে ব্রাইভিক'এর আইনজীবি গের লিপেসটাড জানান, ‘‘ব্রাইভিক'এর অধিকার আছে নিজের মত প্রকাশের৷ সব কিছু জানানোর৷ নরওয়ের আইন ব্যবস্থাও তা সমর্থন করে, সেই অধিকার সবাইকে দেয়া হয়েছে৷ এটা মানবাধিকারেরই একটি অংশ৷''
প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন এই ধরণের মনোভাব? ব্রাইভিক মুসলিম বিরোধী – তা তিনি বেশ স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন৷ নরওয়ের সমাজে ইদানিং ‘মাল্টি কালচারাল' বা বিভিন্ন গোত্রের মানুষের বসবাস দেখা যাচ্ছে এবং ক্রমশই তা বাড়ছে৷ তা নরওয়ের জন্য কখনোই সুখকর হতে পারে না৷ এসব বন্ধ করতেই ব্রাইভিক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে জানিয়েছেন৷ তার ভাষ্য মতে যে সব তরুণ-তরুণীদের তিনি হত্যা করেছেন, তারা এসবের বিরোধীতা করছিল না৷ তারা অভিবাসীদের, মুসলমানদের সমাজে গ্রহণ করেছিল, মেনে নিয়েছিল৷ ব্রাইভিক দেশ রক্ষায় মহৎ কাজে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন৷ এবং সেই মহৎ কাজ হল ৭৭ জন মানুষকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা৷
উটোয়া দ্বীপে গত বছরের জুলাই মাসে চলছিল একটি সামার ক্যাম্প৷ সেখানে উপস্থিত ছিল কয়েকশ তরুণ-তরুণী৷ তাদের মধ্যে ৬৯ জন মারা যায়৷ অর্থাৎ বাকিরা বেঁচে যায় প্রাণে৷ তাদের মধ্যেই একজন বিয়র্ন মাগনুস জ্যাকবসেন ইলার৷ সে উপস্থিত ছিল আদালত প্রাঙ্গনে৷ তার কথায়, ‘‘উটোয়া দ্বীপে ব্রাইভিক'কে আমরা যেরকম দেখেছিলাম সেই তুলনায় এই ব্রাইভিক অনেক শান্ত৷ সে চাইলেও আর কারো জীবন কেড়ে নিতে পারবে না৷ এটা নিঃসন্দেহে অনেক স্বস্তির৷''
ব্রাইভিক'এর বিচারকার্যে বার বার তাকে প্রশ্ন করা হচ্ছিল সে একা কাজ করেছে কিনা, তার সঙ্গে কেউ জড়িত ছিল কিনা৷ ব্রাইভিক এর আগে জানিয়েছে সে ‘নাইটস টেম্পলার' গোষ্ঠির সদস্য৷ তবে অনেক অনুসন্ধান করেও এই গোষ্ঠি আসলেই বাস্তবে রয়েছে কিনা তার কোনো হদিস পাওয়া যায় নি৷
বিচারকার্য চলার সময় একজন বিচারক তার নিজস্ব ওয়েবসাইটে জানান যে ব্রাইভিক'এর মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত৷ এ খবর প্রকাশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে বিচারকার্য থেকে সরিয়ে ফেলা হয়৷ বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে আদালত৷ রাষ্ট্র পক্ষের কৌশুলি সিয়াক হাহাইম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমাদের দেশের আইন ব্যবস্থায় অনেক ধরণের কঠিন শাস্তির বিধান রয়েছে৷ যেমন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড৷ অপরাধী কোনোদিনই কারাগার থেকে মুক্ত হবে না৷ মৃত্যুদণ্ড নিয়ে আরেকটি বিতর্কের কোন প্রয়োজন রয়েছে বলে আমি মনে করি না৷ নরওয়েসহ ইউরোপের কোনো দেশেই মৃত্যুদণ্ডের বিধান নেই৷''
তবে আদালতের কৌসুলীরা এখন একটি বিষয় প্রমাণ করতে ব্যস্ত আর তা হল ব্রাইভিক মানসিক ভারসাম্যহীন কিনা৷ যদি তা হয়ে থাকে তাহলে তাকে বাকি জীবন একটি মানসিক হাসপাতালে কাটাতে হবে৷ তবে নিজের স্বীকারোক্তিতে ব্রাইভিক জানিয়েছেন যে, তিনি কম্পিউটার গেইম ‘মডার্ন ওয়ারফেয়ার' এবং ‘ওয়ার্ল্ড অফ ওয়ারক্র্যাফ্ট' নিয়মিত খেলতেন৷ রাইফেল চালাতে এবং গুলি করতে কেমন লাগে সে বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়ার জন্য তিনি এ ধরণের খেলা বেছে নিয়েছিলেন৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার, (এএফপি, রয়টার্স)
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ