৬৪ বছর আগের একটা গোল৷ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের সবচেয়ে দুঃসহ স্মৃতি৷ আয়োজক হিসেবে আরেকটি আসর শুরু করার আগে ব্রাজিলকে সেদিনের কথা মনে করিয়ে দিলেন আলসিডেস গিজ্জা৷
বিজ্ঞাপন
এ পর্যন্ত পাঁচবার বিশ্বকাপ জিতেছে ব্রাজিল৷ ১৯৫৮ সালে পেয়েছিল প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ৷ কিন্তু এ আনন্দ আট বছর আগেই পাওয়ার কথা ছিল৷ ১৯৫০-এর আসরে ব্রাজিল ছিল আয়োজক, ফাইনালে তারাই ছিল ফেবারিট৷ ড্র করলেই চ্যাম্পিয়ন – এমন সহজ হিসেব ভণ্ডুল করে দিয়েছিল একটি গোল৷ ম্যাচ শেষ হতে তখন দশ মিনিটও বাকি নেই৷ ডান প্রান্তে বল পেলেন ২৩ বছর বয়সি টগবগে তরুণ আলসিডেস গিজ্জা৷ মার্কারকে কাটিয়েই নিলেন দারুণ এক শট৷ গোল রক্ষক ‘ডাইভ' দেয়ার আগেই বল জড়ালো জালে – গোল! ব্রাজিলকে ২-১ গোলে হারিয়ে উরুগুয়ে চ্যাম্পিয়ন৷
সেই গিজ্জার বয়স এখন ৮৭৷ তাঁর দেশ উরুগুয়ে আর একবারও বিশ্বকাপ জিততে পারেনি৷ অন্যদিকে ব্রাজিল পাঁচবার জিতে হয়ে গেছে বিশ্বকাপ ইতিহাসের সফলতম দল৷ তারপরও ওই একটি গোল নিয়ে আলোচনার শেষ নেই৷ ১৯৫০ বিশ্বকাপের ৬৪ বছর পরও তাই গিজ্জার কাছে জানতে চাও হয় একটি কথা, ‘‘ব্রাজিলের বিপক্ষে সেই গোল করার পর আপনার কেমন লেগেছিল?''
দল জিতেছে, জিতে বিশ্বকাপের মতো আসরে সেরা হয়েছে, ভালো তো লাগবেই৷ আনন্দে মন তো নেচে উঠবেই৷ কিন্তু বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে গিজ্জা জানিয়েছেন, সেদিন বয়স কম ছিল বলে গোলের মাহাত্ম্যটা নাকি খুব ভালো বুঝতে পারেননি তিনি৷ বিশ্বকাপ শেষে যেখানেই গিয়েছেন, সেখানেই তাঁকে ঘিরে ধরেছে উরুগুয়ের ফুটবলপাগল মানুষ৷ সবার একটাই কথা, ‘‘তুমি আমাদের নায়ক৷ তুমি আমাদের বিশ্বকাপ এনে দিয়েছো৷'' ৬৪ বছর পরও তাঁকে শুধু ওই একটি কারণেই খুব বেশি সম্মানের চোখে দেখে সবাই৷
২০১৪ বিশ্বকাপে যাঁদের জ্বলে ওঠার সম্ভাবনা
২০১৪ সালের বিশ্বকাপকে সেরা টুর্নামেন্টে পরিণত করায় রোনাল্ডো আর মেসির ভূমিকা থাকতেই পারে৷ কিন্তু আরো ১০ লুকানো রত্ন রয়েছে, যাঁরা সুযোগ পেলেই দেখাতে পারেন তাঁদের কেরামতি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
খোয়াদভো আসামোয়া (ঘানা)
সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে অসাধারণ দক্ষতা ঘানার এই ফুটবলারের৷ ২৫ বছর বয়সি এই খেলোয়াড় তাই মাঠে হয়ে উঠতে পারেন প্রতিপক্ষের বিভীষিকা৷ ২০১০ সালের মতো ঘানা যদি তাদের সেরাটা দিতে পারে, এক্ষেত্রে অবশ্যই ভূমিকা রাখবেন আসামোয়া৷
ছবি: Marco Bertorello/AFP/Getty Images
পল পগবা (ফ্রান্স)
অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ ফুটবলে পল পগবা অসাধারণ কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন৷ স্যার আলেকজান্ডার ফার্গুসনের মুখেও এই ফুটবলারের প্রতি প্রশংসা উচ্চারিত হয়েছে৷ তাঁর সিদ্ধান্তেই এই কিশোর ফুটবলার বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েছেন৷ শক্তিশালী এই খেলোয়াড় যে বিশ্বকাপে মাঠ মাতাবে, তা বোধহয় বলাই যায়৷
ছবি: Marco Bertorello/AFP/Getty Images
অ্যাডাম লালানা (ইংল্যান্ড)
এবার বিশ্বকাপে ইংলিশ শিবিরের শিরোপা জেতার আশা অনেকটাই বেশি৷ ২০১৩/১৪ মৌসুমে লালানা যে আভিজাত্য এবং দক্ষতার সাথে খেলেছেন, তা এককথায় অসাধারণ৷ তাই এই মিডফিল্ডারের পায়ের জাদু দেখার অপেক্ষায় থাকবেন অনেকেই৷
ছবি: Getty Images
মিরালেম পিয়ানিচ(বসনিয়া)
কিশোর এই ফুটবলারকে নিয়ে ইটালির মিডিয়ায় বরাবরই মতামাতি৷ বসনিয়ায় এই ফুটবলারকে বলা যায় স্বভাবজাত ফুটবলার৷ অসাধারণ পাস, দূর দৃষ্টি এবং ফুটবল নিয়ন্ত্রণে অসাধারণ দক্ষতা রয়েছে তাঁর৷
ছবি: Getty Images
ইয়োইচিরো কাকিতানি (জাপান)
জাপানের অন্যতম আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার কাকিতানি৷ তাঁর পেস, গতি এবং লিঙ্ক আপের দক্ষতা অসাধারণ৷ ২৪ বছর বয়সি কাকিতানি ব্রাজিল বিশ্বকাপে তাঁর সেরাটা দিয়ে সামুরাই ব্লুদের অনেক এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images
কেভিন দে ব্রয়না (বেলজিয়াম)
বেলজিয়ামের স্বর্ণ প্রজন্মের অন্যতম অংশীদার কেভিন দে ব্রয়না৷ বুন্ডেসলিগায় তাঁর অসাধারণ অভিষেক এখনো মনের মধ্যে গেঁথে আছে ফুটবল ভক্তদের৷ মাত্র ২৩ বছর বয়সি এই শক্তিশালী ফুটবলারের পায়ের জাদু দেখার অপেক্ষায় থাকবেন বিশ্ববাসী৷
ছবি: Getty Images
লুকাস মুরা (ব্রাজিল)
২১ বছর বয়সি এই ফুটবলার ব্রাজিল শিবিরে কয়েক বছর আগে প্রবেশ করেছে৷ ফরাসি ফুটবল ক্লাব পিএসজি-র গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়ারে পরিণত হয়েছেন তিনি৷ আর বিশ্বকাপে ব্রাজিলের আক্রমণ ভাগেও এই প্রতিভাবান ফুটবলারের খেলা দেখার অপেক্ষায় থাকবেন ভক্তরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জেমস রোদ্রিগেজ (কলম্বিয়া)
এ বছর বিশ্বকাপে সবার চোখ থাকবে কলম্বিয়ার দিকে৷ কেননা দক্ষিণ অ্যামেরিকার এই দলটি এখন দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে৷ মোনাকো তারকা রোদ্রিগেজ কাঁধে রয়েছে দলের সব চাপ৷ ২২ বছর বয়সি এই ফুটবলারের গতি এবং খেলার ধরণ অসাধারণ৷ তিনি এই দলের একটি রত্নে পরিণত হয়েছেন৷
ছবি: Getty Images
এদুয়ার্দো ভার্গাস (চিলি)
ফার্গাস এখন ভ্যালেন্সিয়ায় রয়েছেন৷ তবে খুব শিগগিরই স্টুটগার্ডে জার্মান ভক্তরা প্রীতি ম্যাচে তাঁর দেখা পাবেন৷ তবে ২৪ বছর বয়সি প্রতিভাবান এই ফুটবলারের জন্য ব্রাজিল বিশ্বকাপ একটি নতুন দ্বার খুলে দিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইয়োর্দি ক্লাসি (নেদারল্যান্ডস)
ইয়োর্দি ক্লাসির মধ্যে লুকিয়ে আছে সহজাত ফুটবলার৷ নেদারল্যান্ডসের জাতীয় দলের পুরো দায়িত্ব এখন এই মিডফিল্ডার এ কাঁধে৷ মাত্র ২২ বছর বয়সেই ১০০ ম্যাচ খেলার মাইল ফলক ছুঁয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
‘মারাকানাজো' শব্দটি ১৯৫০ বিশ্বকাপ ফাইনালের পরই ঢুকে পড়ে ব্রাজিলিয়ানদের অভিধানে৷ এর মানে ‘মারাকানার ভূত'৷ মারাকানার সেই ফাইনালের কথা উঠলেই ব্রাজিলিয়ানদের মনে জাগে অশুভ আশঙ্কা৷ যে স্মৃতি এখনো সে দেশের প্রতিটি ফুটবলভক্তকে দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করে, তার জন্য দায়ী তো গিজ্জা৷ ব্রাজিলিয়ানদের চোখে তাই গিজ্জাও ভূতের মতো খানিকটা ভয় জাগানো নাম৷
‘‘সেদিনের স্মৃতি এখনো আমার মনে টাটকা৷ আনন্দের সেই মুহূর্তটিতে আমার নিজের পরিবার আর বন্ধুদের কথা মনে পড়ছিল৷ তবে পুরো স্টেডিয়াম যেন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল'' – সাক্ষাৎকারে এভাবেই ব্রাজিলকে আয়োজক হিসেবে বিশ্বকাপ জেতার সুযোগ বঞ্চিত করা গোলটির কথা স্মরণ করেছেন গিজ্জা৷
১৯৫০ বিশ্বকাপ ফাইনালে ব্রাজিল আর উরুগুয়ের হয়ে খেলা খেলোয়াড়দের মধ্যে শুধু গিজ্জাই বেঁচে আছেন৷ বেঁচে আছেন দেশকে বিশ্বকাপ জেতানোর অহঙ্কার নিয়ে৷ তাঁর শট আটকাতে ব্যর্থ মোয়াসির বারবোসা বড় একটা দুঃখ নিয়ে মারা গেছেন ২০০০ সালে৷ ওই একটি গোলের জন্য ব্রাজিলিয়ানরা তাঁর সঙ্গে সারা জীবন নাকি অপরাধীর মতো আচরণ করেছে!