1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ব্রাজিলের আশ্চর্য গুয়ারানা ফল চাষ

৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

জলবায়ু পরিবর্তনের কুপ্রভাবের প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের অ্যামাজন অরণ্যের গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে৷ সেখানে আদিবাসীদের আশ্চর্য গুয়ারানা ফল চাষের চিরায়ত পদ্ধতি সংরক্ষণ করতে এক অভিনব উদ্যোগ চলছে৷

DW Global Ideas - Farming Cooperative, Brazil
ছবি: DW/D. Urban

ব্রাজিলের অ্যামাজন অববাহিকার কেন্দ্রীয় শহর মানাউস৷ বিশাল নদী ও তার শাখাপ্রশাখা দিয়ে মানুষ ও পণ্য সেখানে আসে৷ মাসে একবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগ গোটা অঞ্চলের চাষিদের নিয়ে অরগ্যানিক পণ্যের হাট আয়োজন করে৷ সেখানে অ্যামাজন এলাকার বিরল ফলও পাওয়া যায়৷

চিরায়ত কৃষিকাজে উৎসাহ

এই হাটের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যামাজনের জঙ্গলে কৃষির কাজে মদত দিতে চায়৷ কৃষি-সমাজবিজ্ঞানী প্রো. ক্লোভেস ফারিয়াস পেরেইরা বলেন, ‘‘ক্ষুদ্র চাষিরা পরিবেশসম্মত পদ্ধতিতে চাষ করে৷ আমরা দেখাতে চাই যে সেই অর্থনীতি আধুনিক ও টেকসই৷ অ্যামাজন এলাকার জাতিগোষ্ঠীগুলি তাদের পণ্য ও কৃষিপদ্ধতিকে সাংস্কৃতিক সম্পদ হিসেবে আগলে রেখেছে৷ এভাবে তারা রেন ফরেস্টের সুরক্ষাও করে চলেছে৷''

ক্রিস্টো জি অলিভেইরা হাটে গুয়ারানা বিক্রি করেন৷ তিনি ক্যাফেইন-সমৃদ্ধ এই বেরি জাতীয় ফল আদিবাসীদের ঐতিহ্য অনুযায়ী চাষ করার উপর জোর দেন৷ ক্রিস্টো বলেন, ‘‘আমরা এখানে রিও উরুপাজি কৃষি সমবায়ের পণ্য বিক্রি করি৷ আমরা গুয়ারানার ন্যায্য দাম পেতে এই হাটে আসি৷ কারণ একমাত্র ন্যায্য দাম পেলেই আমরা আমাদের জঙ্গলের সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারি৷''

গুয়ারানার নানাবিধ ব্যবহার

মানাউসে সহজেই গুয়ারানা পাওয়া যায়৷ ফলের রস মিশিয়ে ‘এনার্জি ড্রিংক' হিসেবে সেটি বিক্রি হয়৷ প্রত্যেক দোকানের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে৷ সফট ড্রিংকস শিল্প কয়েক দশক ধরে গুয়ারানা কাজে লাগাচ্ছে৷ তবে এখানকার মতো হাতে মিশিয়ে নয়, বন্ধ বোতলে লেমোনেড হিসেবে তা বিক্রি করা হয়৷

রিও মাউয়েশ ও রিও উরুপাজি নদীর পাড়েই গুয়ারানা চাষের আদি ক্ষেত্র৷ নৌকায় করে মানাউস থেকে সেখানে যেতে প্রায় ১৬ ঘণ্টা সময় লাগে৷

ঘন রেন ফরেস্টে ও আদিবাসীদের জন্য সংরক্ষিত এলাকার কাছে নাজারে ও সাঁও সেবাস্তিয়াঁও গ্রাম অবস্থিত৷ সেখানেই ক্রিস্টো জি অলিভেইরা ও তাঁর কৃষি সমবায় গুয়ারানার ফসল তোলে৷ সফট ড্রিংক শিল্পের রাসায়নিক নির্যাসের তুলনায় সেই ফলের মধ্যে চার গুণ বেশি ক্যাফেইন থাকে৷ গুয়ারানা চাষি হিসেবে ক্রিস্টো বলেন, ‘‘আমাদের গুয়ারানা প্লান্টেশন আসলে জংলি গাছ থেকে এসেছে৷ আমরা বীজ সংগ্রহ করে নতুন করে বপন করি৷ আমাদের গুয়ারানার মধ্যে এমনকি কফির তুলনায় বেশি ক্যাফেইন রয়েছে৷''

গুয়ারানা ব্যবহারের চিরায়ত প্রক্রিয়া

ফসল তোলার সময় নারী-পুরুষ সবাই কাজে হাত লাগায়৷ লাল রংয়ের বেরি জাতীয় ফলের খোসা ছাড়িয়ে সেগুলি চুলায় ঝলসাতে হয়৷ বীজগুলি দেখতে চোখের কালো মণির মতো৷ এর এক আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা রয়েছে৷ কাদামাটির চুলায় বীজগুলি হালকা গরম করা হয়৷ ভালো ঝোল রান্নার মতো উপাদানগুলি অক্ষত রাখতে এ ক্ষেত্রেও অনেকক্ষণ ধরে হাতা নাড়তে হয়৷

নদীর তীরে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী-অধ্যুষিত সাঁও সেবাস্তিয়াঁও গ্রামে গুয়ারানার ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয়৷ বীজগুলি হামানদিস্তায় পেষা হয়৷ নিখুঁতভাবে সেই মণ্ড মাখতে অভিজ্ঞ এক ব্যক্তি ধীরে ধীরে সাবধানে পানি ঢালেন৷ সেগুলি গোছা করে শুকানো হয়৷ তারপর তাতে পানি মিশিয়ে ‘সাপো' নামের চিরায়ত গুয়ারানা পানীয় তৈরি করা হয়৷

হাটে বিক্রি ও রপ্তানির জন্য গুয়ারানা গুঁড়া উপযুক্ত৷ সেটি যাতে জারিত হয়ে ক্ষতিকর না হয়ে ওঠে, তা নিশ্চিত করতে এয়ার-টাইট মোড়কে তা রাখতে হয়৷ ক্রিস্টো বলেন, ‘‘মাউয়েশ নামের জেলা সদরে ‘অ্যামেরিকান বেভারেজেস' নামের বহুজাতিক কোম্পানি সক্রিয় রয়েছে৷ সেখানে গুয়ারানার চারাগাছ ব্যবহার করা হয়, যার জন্য প্রচুর পরিমাণ সার ও কীটনাশকের প্রয়োজন হয়৷ বহুল প্রচলিত গুয়ারানা লেমনেডে সেটি ব্যবহার করা হয়৷ অরগ্যানিক পদ্ধতিতে আমরা যে গুয়ারানা চাষ করি, উচ্চ মান ও মৌলিক চরিত্র সত্ত্বেও শিল্পজগত তা কেনে না৷''

বিকল্প কৃষিকাজ

মাউয়েশ জেলার প্রায় আড়াই হাজার গুয়ারানা চাষিদের মাঝে রিও উরুপাজির চাষিরা এখনো ব্যতিক্রম রয়ে গেছেন৷ সফট ড্রিংক্স শিল্পের সরবরাহকারী হিসেবে অন্যান্য চাষিরা পরিবেশ বাঁচিয়ে কাজ করেন না৷

মানাউস বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানীরা কীটনাশকের বিকল্পের সন্ধানে গবেষণা চালাচ্ছেন৷ চারাগাছে সহজেই ছত্রাক ধরে যায়৷ বিশেষ এক ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে তার মোকাবিলার চেষ্টা চলছে৷ বায়ো-টেকনোলজিস্ট হিসেবে প্রো. পেদ্রো জি কেরিয়স কস্টা নেটো বলেন, ‘‘আমরা জৈব প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রণের আরও উন্নতি করতে চাই, যাতে বিষাক্ত ওষুধের মাত্রা কমানো যায়৷ কারণ অ্যামাজন এলাকার ইকোসিস্টেমের উপর তার গভীর প্রভাব রয়েছে৷''

জৈব ভিত্তিতে উদ্ভিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করাই এই গবেষণার মূল লক্ষ্য৷ রিও উরুপাজিতে তাঁর গুয়ারানা এই সব চারাগাছের তুলনায় আরও শক্তপোক্ত হওয়া সত্ত্বেও ক্রিস্টো জি অলিভেইরা-ও ল্যাবের পরীক্ষা সম্পর্কে আগ্রহী৷ ক্রিস্টো বলেন, ‘‘এই সব চারাগাছ থেকে যে গুয়ারানা গাছ গজিয়েছে, তা বছরে হেক্টরপ্রতি প্রায় ৪০০ কিলোগ্রাম উৎপাদন করে৷ আমাদের জংলি গুয়ারানা নিয়ে আমরা বছরে মাত্র আড়াইশো থেকে তিনশো কিলো পাই৷ কিন্তু আমাদের অরগ্যানিক পণ্যের বেশি দাম সেই ঘাটতি পুষিয়ে দেয়৷''

রিও উরুপাজির অরগ্যানিক চাষিরা একটি সমবায় প্রতিষ্ঠা করতে চান৷ তখন তাঁরা রপ্তানির অনুমতিও পাবেন৷ সেইসঙ্গে তাঁরা ব্র্যান্ড হিসেবে ‘অ্যামাজন গুয়ারানা'-র সুরক্ষার জন্য লড়াই করছেন৷

ডেটলেফ উর্বান/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ