শুধু আমাজনের আগুন নয়, ব্রাজিলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা বিশালাকারের মাদকচক্র, যার প্রসার ইউরোপ পর্যন্ত, বলছেন ডয়চে ভেলের আনাবেল হেরনান্দেজ৷
বিজ্ঞাপন
ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক দুই দিক দিয়েই বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম দেশ ব্রাজিল৷ খাদ্যপণ্য রপ্তানির হারে ব্রাজিল বিশ্বের পঞ্চম স্থানে, জানাচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড বা আইএমএফ৷
বর্তমানে ব্রাজিল বিশ্বের শিরোনামে জায়গা পাচ্ছেআমাজন বনাঞ্চলে লাগা ভয়াবহ আগুনের কারণে৷ কিন্তু এই মুহূর্তে, ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় সংকট তা নয়৷ লোকচক্ষুর আড়ালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরেই বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কোকেন ক্রেতার দেশ হয়ে উঠেছে ব্রাজিল৷ এর সাথে, এক লাখ জনে ৩০জন খুন হন সেখানে৷ শুধু ২০১৮ সালেই সেখানে ঘটেছে মোট ৬০ হাজার খুনের ঘটনা৷
আনাবেল জানাচ্ছেন, কোকেন বিক্রি ও ক্রয়ের এত বড় বাজার হয়ে ওঠার পেছনে রয়েছে ব্রাজিলের ভৌগোলিক অবস্থান৷ দেশটির চারপাশে রয়েছে পেরু, বলিভিয়া ও কলম্বিয়া, যে তিনটি দেশে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কোকেন তৈরি হয়৷ শুধুমাত্র কোলোম্বিয়া থেকেই আসে ৭০ শতাংশ কোকেন, জানাচ্ছে জাতিসংঘ৷
মাদক উৎপাদনে শীর্ষ কয়েকটি দেশ
জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনওডিসি (ইউনাইটেড নেশনস অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম) সম্প্রতি বিশ্বের শীর্ষ মাদক উৎপাদনকারী দেশের একটি তালিকা তৈরি করেছে৷
ছবি: Abdelhak Senna/AFP/Getty Images
মিয়ানমার
আফিম উৎপাদনকারী দেশের তালিকার শীর্ষস্থান দখল করেছে মিয়ানমার। নানা কারণে আফগানিস্তানে আফিমের আবাদ কমে যাওয়ায় মিয়ানমার এই অবস্থানে পৌঁছেছে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে। ইউএনওডিসির প্রতিবেদন মতে, মিয়ানমারের আফিম চাষীরা এখন অন্য যেকোনো পণ্য চাষের তুলনায় গড়ে প্রায় ৭৫ শতাংশ বেশি উপার্জন করছেন। দেশটিতে এখন প্রতি কেজি আফিম ৩৫৫ ডলারে বিক্রি হচ্ছে ।
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আফগানিস্তান
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আফিম চাষ হত আফগানিস্তানে৷ ২০২২ সালে তালেবান শাসক মাদকদ্রব্য ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর দেশটিতে আফিম চাষ ৯৫ শতাংশ কমে যায়।জাতিসংঘের হিসেবে, প্রতি বছর প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার টন কাঁচা আফিম উৎপাদন হত সেখানে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
কলম্বিয়া
কোকেন উৎপাদনে বিশ্বে সেরা কলম্বিয়া৷ জাতিসংঘের হিসেবে কলম্বিয়ায় প্রতি বছর তিন থেকে চার’শ টন কোকেন উৎপাদিত হয়৷ এছাড়া পেরু ও বলিভিয়াতেও কোকেনের চাষ হয়৷ ল্যাটিন অ্যামেরিকা, উত্তর অ্যামেরিকা আর ইউরোপ কোকেনের সবচেয়ে বড় বাজার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মরক্কো
উত্তর আফ্রিকার মরক্কোতে প্রতি বছর গড়ে প্রায় দেড় হাজার টন মারিজুয়ানা ও হাশিশ উৎপাদিত হয়৷ যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোতে সীমিত আকারে মারিজুয়ানা বা গাঁজার ব্যবহার বৈধ করায় এর চাষ আরও বেড়েছে৷
ছবি: Abdelhak Senna/AFP/Getty Images
গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল
মাদক উৎপাদনে এশিয়ার তিন দেশ মিয়ানমার, লাওস আর থাইল্যান্ড ‘গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল’ নামে পরিচিত৷ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই তিন দেশে প্রতিবছর গড়ে প্রায় এক হাজার টন আফিম উৎপাদিত হয়৷
ছবি: AP
যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো
মেথাম্ফেটামিন বা ক্রিস্টাল মেথ হলো এক ধরণের মাদক, যেটা এক ধরণের সুখানুভূতি এনে দেয় বলে মনে করেন এর সেবনকারীরা৷ ইদানীং এই মাদক সেবনের হার বাড়ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ৷ তবে কোন দেশে এটা সবচেয়ে বেশি তৈরি হয় তা জানা যায়নি৷ তবে ক্রিস্টাল মেথ ল্যাবেও তৈরি করা যায়৷ তাই সারা বিশ্বে পুলিশ এ ধরনের ল্যাবে অভিযান চালাচ্ছে৷ এ পর্যন্ত যত অভিযান হয়েছে, তার ৮০ ভাগই হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র আর মেক্সিকোর ল্যাবে৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
6 ছবি1 | 6
পরিসংখ্যান বলছে, ব্রাজিলে মাদক ব্যবহারকারীর সংখ্যা এই মুহূর্তে ৫৬ লাখ৷ এর কারণ শুধু কোকেনের বাড়ন্ত বাজারই নয়৷ ভাবতে হবে সিগারেটের বাড়তে থাকা দামও৷ এক গ্রাম কোকেনের দাম যেখানে এক মার্কিন ডলার, সেখানে সাধারন সিগারেট বিক্রি হয় পাঁচ মার্কিন ডলারে৷ অ্যামেরিকা বা অন্যান্য দেশে উচ্চদামের কারণে কোকেনের প্রতি আসক্তি দেখা যায় শুধুই উচ্চবিত্তদের মধ্যে৷ ব্রাজিলে কম দাম ও সহজলভ্য হওয়ায় কোকেন এখন সব শ্রেণীর হাতের নাগালে৷
মাদক ব্যবসায় সফল দেশগুলিতে দেখা যায়, মাদকের পাশাপাশি সেখানে রমরমিয়ে চলে চোরাকারবার৷ ব্রাজিলের ক্ষেত্রেও একথা সত্য৷ মাদকব্যবসার সাথে পাল্লা দিয়ে সেখানে বাড়ছে চোরাই গাড়ি ও অস্ত্রের কারবার৷ এই ধরনের ব্যবসা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষমতাশালী গ্যাং বা চক্রের দ্বারা৷ অনেক ক্ষেত্রেই এই চক্রের রয়েছে বিভিন্ন জেলখানার কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণের মতো প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতাও৷ ফলে, টেক্কা দিতে পারছে না স্থানীয় পুলিশ বা অন্যান্য কর্তৃপক্ষ৷ ইটালিয়ান বা অন্যান্য বিদেশি মাফিয়া চক্রের সাথে সুসম্পর্কের কারণে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করা যাচ্ছে না৷