হেরে গেলেন বলসোনারো। বামপন্থি প্রতিদ্বন্দ্বী লুলার কাছে পরাজিত হলেন। যদিও এখনো হার স্বীকার করেননি বলসোনারো।
বিজ্ঞাপন
সামান্য ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বী বলসোনারোকে হারিয়ে ফের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে লুলা দ্য সিলভা। তিনি পেয়েছেন ৫০ দশমিক নয় শতাংশ ভোট। অন্যদিকে বলসোনারোর প্রাপ্ত ভোট ৪৯ দশমিক এক শতাংশ।
১৯৮৫ সালের পর এই প্রথম ব্রাজিলের কোনো প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্টের আসন ধরে রাখতে পারলেন না। লুলা এর আগে দেশ শাসন করেছেন। বলসোনারো ক্ষমতায় আসার পর দুর্নীতির অভিযোগে তাকে জেলেও যেতে হয়েছে। বামপন্থি লুলা ভোটের ফল প্রকাশিত হওয়ার পর বলেছেন, এ জয় মানুষের। ব্রাজিলের মানুষ গণতন্ত্রের জন্য ভোট দিয়েছেন। লুলার কথায়, ''ওয়ার্কার্স পার্টি কিংবা যে সমস্ত দল প্রচারে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, এই জয় তাদের নয়। এই জয় ব্রাজিলের মানুষের। গণতন্ত্রের লড়াইয়ে এতদিন যারা সামিল ছিলেন। ভোটের মাধ্যমে সেই জয় তারা ছিনিয়ে নিলেন।''
প্রেসিডেন্টের স্বপ্ন যাঁদের জন্য দুঃস্বপ্ন
ব্রাজিল প্রেসিডেন্ট জাইয়া বলসোনারো সম্প্রতি তাঁর স্বপ্নের কথা শুনিয়েছেন৷ তবে সেই কথা শুনে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন অ্যামাজনে বাস করা আদিবাসীরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/Brazil's National Indian Foundation Photo
প্রেসিডেন্টের স্বপ্ন
ব্রাজিল প্রেসিডেন্ট জাইয়া বলসোনারো গত বুধবার একটি নতুন বিল প্রস্তাব করেছেন৷ কংগ্রেসে এটি পাস হলে অ্যামাজনে খনি, কৃষিকাজ ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন সহজ হবে৷ তিনি আশা করছেন, তাঁর এই ‘স্বপ্ন’ পূরণ হবে৷
ছবি: AFP/S. Lima
আদিবাসীদের দুঃস্বপ্ন
ব্রাজিলের আদিবাসী সংগঠনের কর্মকর্তা সোনিয়া গুয়াজাজারা বলছেন, ‘‘বলসোনারোর স্বপ্ন আমাদের জন্য দুঃস্বপ্ন৷ এটা আমাদের সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেবে৷ খনি কোম্পানি মৃত্যু, রোগ আর কষ্ট নিয়ে আসে৷ এবং এটা আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ শেষ করে দেবে৷’’ ব্রাজিলে কমপক্ষে একশ আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাস, যাঁদের এখনও বাইরের বিশ্বের ছোঁয়া লাগেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/Brazil's National Indian Foundation Photo
‘ট্রপিক্যাল ট্রাম্প’
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ভাবনা যেমন, প্রায় তেমন ভাবনা ব্রাজিল প্রেসিডেন্টেরও৷ তাই অনেকে তাঁকে ‘ট্রপিক্যাল ট্রাম্প’ নামেও ডাকেন৷ গতবছর দায়িত্ব নেয়ার পর অ্যামাজন বিষয়ে বলসোনারোর নেয়া বিভিন্ন নীতির সমালোচনা করেছেন পরিবেশকর্মীরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Walsh
প্রেসিডেন্টের হুমকি
জলবায়ু পরিবর্তন রোধে অ্যামাজন রক্ষা করতে চান পরিবেশবাদীরা৷ তাই নতুন বিল উত্থাপন করতে গিয়ে তাঁদের একহাত নিয়েছেন বলসোনারো৷ তিনি বলেছেন, ‘‘আমি জানি পরিবেশকর্মীরা আমাদের উপর চাপ দেবে৷ পারলে আমি তাঁদের অ্যামাজনে বন্দি করে রাখতাম, কারণ তাঁরা পরিবেশ খুব পছন্দ করেন৷’’
ছবি: Reuters/U. Marcelino
আইন সহজ করেছেন
গবেষক ব্রেন্ডা ব্রিতো বলছেন, ব্রাজিলের আইন জমি দখল ও বন ধ্বংসকারীদের পক্ষে৷ ‘‘এটি (এই আইন) আপনাকে জমি দখলের অনুমতি দেয়, যদি আপনি একে কাজে (বৈধ কাজ) লাগানোর ভান করেন, এবং এরপর জমির মালিকানা দখল করে নেন৷’’ বলসোনারো এই আইন আরও সহজ করে জমি দখলের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছেন৷ এছাড়া আগে যেখানে ২০০৮ সাল পর্যন্ত জমি নিয়ন্ত্রণে থাকলে মালিক হওয়া যেত সেখানে নতুন আইনে ঐ সময়সীমা বাড়িয়ে ২০১৪ সাল করা হয়েছে৷
ছবি: AFP/C. de Souza
এলাকা দ্বিগুন হয়েছে
বলসোনারো আসার পর গতবছর ১১ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অ্যামাজন ধ্বংস হয়েছে৷ আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চার হাজার ২১৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা ধ্বংস হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুনেরও বেশি৷
ছবি: AFP/R. Alves
প্রতিবাদ করলে হুমকি
স্থানীয়রা জমি দখল ও বন ধ্বংসের প্রতিবাদ করলে তাঁদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়৷ যেমন স্থানীয় নেতা দে মেলো থাকেন নভো প্রোগ্রেসো এলাকায়৷ গতবছর ঐ এলাকার অ্যামাজনে আগুন লাগার ঘটনা বিশ্ব গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিল৷ দে মেলো প্রতিবাদ করায় তাঁর ছেলেকে মারধর করা হয়েছে৷ এছাড়া ২০১৮ সালে তাঁর গ্রামের তিনজনকে হত্যা ও অন্তত ১৬ জনকে হুমকি দেয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/M. Carwardine
7 ছবি1 | 7
ভোটে জিতেইলুলা জানিয়েছেন, তার প্রথম কাজ হবে সকলের কাছে খাদ্য সুরক্ষিত করা। দ্বিতীয় বড় কাজ, অ্যামাজনের জঙ্গল বাঁচানো। লুলার ঘোষণা, ব্রাজিল আবার তার আগের জায়গায় ফিরে যাবে। পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেবে।
বস্তুত, গত কয়েকবছরে এর ঠিক বিপরীত কাজ করেছেন দক্ষিণপন্থি বলসোনারো। অ্যামাজনের জঙ্গল কেটে নগরায়ন ছিল তার ঘোষিত নীতি। সে কাজ তিনি করতেও শুরু করেছিলেন। জলবায়ু পরিবর্তনকে গুরুত্ব দেননি তিনি। একইসঙ্গে করোনার সময় অতিমারীকেও পাত্তা দেননি। যার জন্য ব্রাজিলে করোনা ভয়াবহ চেহারা নিয়েছিল। তখন থেকেই বোঝা যাচ্ছিল, দ্বিতীয়বার নির্বাচনে খুব ভালো ফলাফল করতে পারবেন না তিনি। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, যে পরিমাণ ভোট তিনি পেয়েছেন, তা-ও আশা করা যায়নি।
বলসোনারো অবশ্য এখনো পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি। তিনি আগেই জানিয়েছিলেন, নির্বাচনে হারলে ফলাফল তিনি মেনে নেবেন না। ফলে আদৌ এই ফল তিনি গ্রাহ্য করবেন কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।