ব্রাজিলে চামড়া ছাড়া জুতা উৎপাদনের উদ্যোগ
৫ মার্চ ২০২৪
স্ট্যান্ড ডট আর্থ সংগঠনের গবেষক গ্রেগ হিগস বলেন, ‘‘বাজারের ইচ্ছা ও বাজারের প্রয়োজনীয়তার মধ্যে বিশাল ফারাক রয়েছে৷ বাজার পরিবেশ দূষণ চায় না৷ মানুষ জুতা চায়, হ্যান্ডব্যাগ চায়, কিন্তু আবার অ্যামাজন রেইন ফরেস্ট ধ্বংসও করতে চায় না৷''
বড় আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলি অ্যামাজন ধ্বংসের জন্য আংশিকভাবে দায়ী৷ স্ট্যান্ড ডট আর্থ সেটা খুঁজে বার করেছে৷ তারা গোটা বিশ্বে একশো কোম্পানির চামড়ার সরবরাহ বিশ্লেষণ করে৷
২০২২ সালে অ্যামাজন অরণ্যে প্রায় ১২,০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা ধ্বংস করা হয়েছে৷ মূলত গবাদি পশুপালন ও চামড়া উৎপাদন এমন অবস্থার জন্য দায়ী৷ গ্রেগ হিগস বলেন, ‘‘ব্র্যান্ড ও বন নিধনের মধ্যে সম্পর্ক তুলে ধরাই আমাদের সাপ্লাই চেইন বা সরবারহ শৃঙ্খল সম্পর্কে অনুসন্ধান চালাতে উৎসাহ জুগিয়েছে৷ কারণ ব্র্যান্ডগুলি সরবরাহকারীদের কাছে সরকারের উপর চাপ বাড়ানোর দাবি করতে পারে৷''
ব্রাজিলের অন্যতম প্রধান কোম্পানি হিসেবে আরেজো বন নিধনের সঙ্গে নিজেদের জুতার কোনো সংযোগ দেখতে চায় না৷ কয়েক বছর আগে সেই কোম্পানি আলমে নামের এক ব্র্যান্ড চালু করেছে, যা চামড়ার বিকল্প হিসেবে সুতি ও কৃত্রিম উপাদান ব্যবহার করে৷
কিন্তু অন্যান্য ব্র্যান্ডগুলির জন্য আরেজোর চামড়ার প্রয়োজন৷ তবে কোথা থেকে সেই চামড়া আসছে, কোম্পানি সে বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠেছে৷ আরেজো কোম্পানির কর্মকর্তা সুয়েলেন জোনার বলেন, ‘‘২০২৬, ২০৩০ সাল পর্যন্ত বড় এক প্রকল্প চলবে৷ এর আওতায় লেদারের উৎস জানার প্রক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে৷ আরেজোর চামড়া কারখানায় যাবতীয় ব্র্যান্ডগুলির জন্য যে উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলির সঙ্গে যাতে বন নিধনের কোনো সম্পর্ক না থাকে, তা নিশ্চিত করাই এর উদ্দেশ্য৷''
বিশ্বের সর্বত্র প্রাণীর চামড়ার বিকল্পের সন্ধান চলছে৷ ইতোমধ্যেই এক ল্যাবে ব্যাকটিরিয়ার সাহায্যে ‘ভিগান লেদার' সৃষ্টি করা হয়েছে৷ মাত্র তিন সপ্তাহে এত পরিমাণ কৃত্রিম চামড়া প্রস্তুত করা সম্ভব হয়েছে, যা তিন বছর ধরে গরু পালন করে পাওয়া সম্ভব৷ আনারসের মতো খাদ্যের তন্তু বিভিন্ন ডিজাইন পণ্য উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়৷ সেগুলির উপরিভাগ চামড়ার মতোই দেখায়৷
তাছাড়া ছত্রাক দিয়ে তৈরি লেদার এখনই জুতার দোকানে পাওয়া যায়৷ ছত্রাক মাইসেলিয়াম নামের এক উপাদান সষ্টি করে, যা দেখতে চামড়ার মতো হলেও তার জন্য কোনো রাসায়নিকের প্রয়োজন পড়ে না৷
রিও গ্রান্দে দো সোল ব্রাজিলের জুতা উৎপাদনের প্রাণকেন্দ্র৷ জুতা শিল্প প্রায় ৮৩,০০০ মানুষের কর্মসংস্থান করে৷ সেখানেও ভিন্নভাবে জুতা তৈরির প্রথম প্রচেষ্টা চলছে৷ ‘আর্বান ফ্লাওয়ার্স নামের কোম্পানি চামড়া ব্যবহার করতে অস্বীকার করছে৷ তবে প্রাণীর চামড়া ছাড়াও যে উচ্চ মানের জুতা তৈরি করা সম্ভব, সবার আগে কোন্পানিটিকে সে বিষয়ে নিশ্চিত করতে হয়েছে৷ কোম্পানির প্রতিনিধি ফেলিকে ভাইলার বলেন, ‘‘খুব সুন্দর, তাই না? কারখানা খোলার সময় জুতা শিল্পে আমাদের প্রবেশ বিশাল চ্যালেঞ্জ ছিল৷ কারণ এই জুতা শিল্পক্ষেত্রে লেদার ও প্রাণীজ উপাদানের বড় ঐতিহ্য রয়েছে৷ আমরা সেই বুদবুদ থেকে বেরিয়ে এসে নিজস্ব আইডিয়া সম্বল করে নিজস্ব কোম্পানি গড়ে তুলেছি৷''
মানের পাশাপাশি কাচামালের অপচয় এড়ানোও এই উদ্যোগের লক্ষ্য৷ আর্বান ফ্লাওয়ার্সের ক্রেতারা সচেতনভাবে চামড়ার জুতা না পরার সিদ্ধান্ত নেন৷
মারিনা অলিভেটো/এসবি