ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য অল্প পরিমাণ গাঁজা রাখা অপরাধ নয়। জানিয়ে দিলো ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট।
ব্রাজিলে কোর্ট প্রেসিডেন্ট লুইস রবার্তো বারোসো বলেছেন, বিচারপতিদের মতে, ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য অল্প গাঁজা রাখা অপরাধ বলে ধরা হবে না। ছবি: Eraldo Peres/AP Photo/picture alliance
বিজ্ঞাপন
তবে কতটা পরিমাণ গাঁজা রাখা যাবে, সে ব্যাপারে এবার সিদ্ধান্ত নেবে সুপ্রিম কোর্ট। তারা আপাতত জানিয়েছে, ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য গাঁজা রাখলে তা অপরাধ বলে ধরা হবে না।
তাছাড়া কবে থেকে এই রায় কার্যকর হবে সেটাও তারা জানাবেন। সম্ভবত বুধবার তারা এই দুইটি বিষয় স্পষ্ট করে নির্দেশ দিতে পারে সুপ্রিম কোর্ট।
এই রায়ের তাৎপর্য
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, তাদের এই রায়ের ফলে গাঁজা রাখা আইনসঙ্গত হচ্ছে না। তবে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য রাখলে তা অপরাধ বলে ধরা হবে না। তবে তার পরিমাণ নির্দিষ্ট করা থাকবে।
মাদকবিরোধীরা ক্যানাবিস অর্থাৎ গাঁজাকে খারাপ বলে মনে করেন৷ আবার কেউ কেউ গাঁজা সেবনকে সমর্থন করেন৷ তাদের দাবি, শণের মতো শুকনো গাছটির নানা অংশ নিরাময় করতে পারে৷ কয়েক দশক ধরে পুরাণের নানা গল্পে রয়েছে গাঁজা-চরসের উল্লেখ৷
ছবি: Bni Hmed/AP/picture alliance
গাঁজায় নিষেধ
গাঁজা শুনলে মনে হয় নিষিদ্ধ মাদক৷ তবে নেশা করার গাঁজা নির্দিষ্ট প্রজাতির গাছ থেকে পাওয়া যায়৷ জার্মানিতে শণজাতীয় এই প্রজাতির চাষ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত৷ ২০০ বছর আগেও জনসাধারণের চোখে পড়ত না এই গাছ৷ তাই গাঁজা নিয়ে নানারকম জনশ্রুতি তৈরি হয়৷
ছবি: Christian Charisius/dpa/picture alliance
ফরাসি সেনারা নিয়ে এসেছিল হাশিশ
ইউরোপের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, হাশিশ অথবা গাঁজার নেশার মতো বিষয়টি এ মহাদেশে তুলনামূলকভাবে নতুন৷ ফরাসি সেনারা ১৭৯৮ সালে নেপোলিয়নের মিশর অভিযানের সময় গাঁজা গাছের (স্ত্রী উদ্ভিদ) রজন (পাতা থেকে প্রাপ্ত আঠালো কষের মতো অংশ) থেকে তৈরি একটি অংশ নিয়ে আসেন৷ তারাই মূলত এগুলির ব্যবহার ছড়িয়ে দেন৷ নেপোলিয়ন মিশরে এটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও প্যারিসে এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে৷
ছবি: Christian Böhmer/dpa/picture alliance
ঋতুকালীন ব্যথা কমাতে গাঁজা!
১৯৯০ সাল থেকে যুক্তরাজ্য গাঁজার আইনি বৈধতার দিকটি নিয়ে ভাবছে৷ একসময় গুজব রটেছিল রানি ভিক্টোরিয়াকে নাকি ঋতুকালীন ব্যথা কমাতে গাঁজা ব্যবহারের কথা বলা হয়েছিল৷ এ কথার একটি প্রমাণও রয়েছে৷ ১৮৯০ সালে রানির ব্যক্তিগত চিকিত্সক জন রাসেল রেনল্ডস মেডিকেল জার্নালে একাধিক সমস্যা সমাধানে গাঁজার উল্লেখযোগ্য ব্যবহারের কথা লিখেছিলেন৷
ছবি: dpa
পার্চমেন্ট নাকি শণ?
জনশ্রুতি রয়েছে যে আমেরিকান স্বাধীনতাপত্র যে কাগজে লেখা হয়েছিল সেটি এই গাছের তন্তু থেকে তৈরি৷ তবে এটি সম্পূর্ণ সত্যি নয়৷ নথিটি ভ্যাকুয়ামের মাধ্যমে সিল করা হয়েছিল ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল আর্কাইভসের কাচের মোটা প্যানের পিছনে৷ এটি পার্চমেন্ট কাগজে লেখা হয়েছিল৷ স্বাধীনতাপত্রের প্রথম দুটি খসড়া সম্ভবত শণ প্রজাতির গাছের আঁশের তৈরি কাগজে লেখা হয়েছিল৷
ছবি: Rauchwetter/dpa/picture alliance
রিফার ম্যাডনেস
১৯৩৬ সালে অ্যামেরিকা প্রচারমূলক একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করে৷ চলচ্চিত্রে অর্থ বিনিযোগ করেছিল গির্জার একটি গোষ্ঠী৷ এতে দেখানো হয়েছিল নতুন প্রজন্ম সহজেই নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে৷ গাঁজা সেবন করলেই তারা হিংস্র হয়ে যাচ্ছে৷ খানিকটা অতিরঞ্জিত করে হাস্যরস মিশিয়ে নির্মিত হয়েছিল সেই চলচ্চিত্র৷ ভুল তথ্যও ছিল তাতে৷ ফলে সে সময়ে গাঁজা নিয়ে যে আতঙ্ক ছিল, এই চলচ্চিত্র তার প্রমাণ৷
ছবি: Richard Vogel/AP Images/picture alliance
বর্ণবৈষম্যমূলক মনোভাব
ইউএস ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রধান ছিলেন হ্যারি অ্যান্সলিঙ্গার৷ তিনি বর্ণবৈষম্যে বিশ্বাস করতেন৷ ১৯৩০ সাল থেকে গাঁজা নিষিদ্ধ করতে লড়াই করছিলেন৷ অভিযোগ উঠেছিল মেক্সিকান এবং আফ্রিকান অ্যামেরিকানরা গাঁজা সেবন করতেন৷ অ্যান্সলিঙ্গার বলেছিলেন, গাঁজা সেবনের ফলে কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিরা মনে করেন, তারা শ্বেতাঙ্গদের মতো ভাল৷ ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে,অ্যামেরিকার ড্রাগ নীতির কারিগর তিনি৷
ছবি: Mary Evans Picture Library/picture alliance
ধর্মের ছায়া
অন্যান্য সংস্কৃতি সম্ভবত গাঁজার নেশা সংক্রান্ত প্রভাব সম্পর্কে অনেক খোলামেলা৷ হিন্দু দেবতা শিব সম্পর্কে পবিত্র গ্রন্থে বলা হয়েছে যে তিনি নাকি গাঁজা সেবন করতেন৷ জীবনের বাকি সব আনন্দ তিনি ত্যাগ করেছিলেন৷ যদিও একাধিকবার ব্যবহারে গাঁজার প্রতি আসক্তি জন্মাতে পারে, এমন দাবিও রয়েছে৷
ছবি: Mukhtar Khan/AP Photo/picture alliance
গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা
গাঁজা অর্থাৎ ক্যানাবিসে থাকা রাসায়নিক যৌগ নিয়ে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা৷ আদৌ কোনো ভেষজ গুণ রয়েছে কি, গবেষণা করে দেখছেন তারা৷ এই ক্যানাবিস প্রজাতির শণ থেকে শুকনো দড়ি বানানো হত৷ শণের আঁশ দিয়ে পোশাকের ব্যবহারের কথাও উল্লেখ রয়েছে একাধিক বইয়ে৷
ছবি: Ivan Stajkovic/ Zoonar/picture alliance
8 ছবি1 | 8
ব্রাজিলে বর্তমানে যে আইন আছে, তাতে স্পষ্ট করে বলা নেই, কতটা পরিমাণ গাঁজা ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য রাখা যাবে। আর কতটা রাখলে তা মাদকপাচার বলে মনে করা হবে। প্রথমটির ক্ষেত্রে কমিউনিটি সার্ভিসের করার কথা বলা হয়েছে। মাদকপাচার করা হলে তাতে কারাদণ্ড হবে।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বলেছেন, বর্তমান আইনের ফলে যুবকদের ক্ষতি হচ্ছে। অল্প পরিমাণ মারিজুয়ানা রাখার জন্য যুব বা কৃষ্ণাঙ্গদের শাস্তি হচ্ছে।