রাজনৈতিক প্রতিবাদ, অর্থনৈতিক কোন্দল, সামাজিক অবকাঠামো নিয়ে নানা প্রশ্নের মুখেও ২০১৪ সালের বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত ব্রাজিল৷ সঙ্গে ২০১৬ সালের অলিম্পিক গেমস-এর ‘কাউন্টডাউন’-ও শুরু হয়ে গেছে সেখানে৷
বিজ্ঞাপন
শনিবার থেকে গোনা শুরু করলে আর মাত্র এক হাজার দিন পরই ব্রাজিলে শুরু হচ্ছে অলিম্পিক গেমস ২০১৬-র আসর৷ তাই ২০১৪ সালের বিশ্বকাপের পাশাপাশি অলিম্পিক গেমস-এরও প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে ব্রাজিলে৷ তার সঙ্গে শুরু হয়েছে দিন গণনা, ঠিক যেমনটা হয়েছিল বেইজিং অথবা লন্ডন অলিম্পিক গেমস-এর আগে৷
পর পর দু-দুটি বিশ্বমানের ক্রীড়া আসর – বলা বাহুল্য, প্রথমে ফুটবল বিশ্বকাপ এবং তার দু'বছরের মাথাতেই অলিম্পিক গেমস আয়োজন করা, চাট্টিখানি কথা নয়! তাই ব্রাজিলে অলিম্পিক গেমস ২০১৬-র আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান কার্লস নুজম্যানের কথায়, ‘‘আমরা এরই মধ্যে বুঝতে পেরেছি যে কাজটা কতটা কঠিন হতে চলেছে৷ বিশ্বকাপের আয়োজন আমরা অনেকটাই গুছিয়ে এনেছি৷ কিন্তু অলিম্পিক গেমস-এর বেশিরভাগ প্রস্তুতি এখনও বাকি৷''
আনন্দে ভাসছে টোকিও
২০২০ সালের অলিম্পিক আয়োজনের সুযোগ পেয়েছে জাপান৷ ৪৮ বছর পর আবার ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় আয়োজনটি এলো টোকিওতে৷ জাপানের রাজধানী তাই ভাসছে আনন্দের বন্যায়৷
ছবি: Getty Images
‘আমরা পেরেছি, আমরা পেরেছি!’
আয়োজক হওয়ার লড়াই খুব কষ্টে জিততে হয়েছে টোকিওকে৷ সবাইকে অবাক করে গোপন ভোটাভুটির প্রথম পর্বে বাদ পড়ে যায় মাদ্রিদ৷ স্পেনের তখনই স্বপ্নভঙ্গ হলেও তুরস্ক টিকে ছিল৷ কিন্তু দ্বিতীয় পর্বে ইস্তানবুল পেয়েছে মাত্র ৩৬ ভোট আর টোকিও ৬০ ভোট৷ ফলে তুরস্কে নেমে আসে হতাশা আর টোকিওবাসি ভাসে আনন্দ-উল্লাসে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
সুখেও কেঁদে ওঠে মন...
অলিম্পিক-লড়াই জিততে জি-টোয়েন্টি সম্মেলন থেকে শিনজো আবে সরাসরি চলে গিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেসে৷ রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবুর্গ থেকে সেখানে গিয়ে অবশ্য মন খারাপ করে ফিরতে হয়নি জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে৷ টোকিওর আয়োজক হবার দাবি আদায় করেই ফিরেছেন৷ আনন্দে সবাই যেখানে হাসে, জাপানের প্রধানমন্ত্রী তখন অনেকটা কাঁদতে কাঁদতেই বলেছেন, ‘‘২০২০ অলিম্পিকের আয়োজক হয়ে আমরা নতুন আশার জন্ম দেবো৷ ’’
ছবি: picture alliance/dpa
‘আগামীকে আবিষ্কার করো’
২০২০ অলিম্পিকের স্লোগানটা কিন্তু দারুণ – আগামীকে আবিষ্কার করো৷ টোকিও অলিম্পিক স্টেডিয়ামের ডিজাইনেও রয়েছে ভবিষ্যৎ ভাবনার ছাপ৷ ডিজাইনার কিন্তু জাপানি নন৷ ইরাকি-ব্রিটিশ স্থপতি নারীর নাম জাহা হাদিদ৷ স্টেডিয়াম তৈরির কাজ এখনো শুরু হয়নি৷ জাহা হাদিদের ডিজাইনের বাস্তবায়ন শুরু হবে শিগগিরই৷
ছবি: Tokyo.jp
১৭ হাজার শয্যা
স্টেডিয়ামের মতো অলিম্পিক ভিলেজও থেমে আছে ডিজাইনারের কাগজে৷ তবে ছবির গ্রাফিক্স দেখেই অনুমান করা যায় ক্রীড়াবিদদের জন্য কী এলাহি কাণ্ড হতে চলেছে৷ আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা নিয়ে ক্রীড়াপল্লিটি তৈরি হবে ৪৪ হেক্টর জমির ওপর৷ সেখানে বিছানাই থাকবে ১৭,০০০টি৷
ছবি: tokyo2020.jp
ভয় নেই!
ফুকুশিমার নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টের দুর্ঘটনা টোকিওর আয়োজক হবার পথ প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিল৷ তেজস্ক্রিয়তার আতঙ্ক একটু হলে দৌড় থেকে ছিটকে দিতো টোকিওকে৷ শিনজো আবে আশ্বস্ত করেছেন বলে রক্ষা৷ জাপানের প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি)-কে জানিয়েছেন, ফুকুশিমার পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে৷ তাছাড়া ফুকুশিমা যে টোকিও থেকে ২২৫ কিলোমিটার দূরে – এ কথা জানিয়ে সবাইকে নিশ্চিন্তও করেছেন তিনি৷
ছবি: Reuters/Tokyo Electric Power Co
মেগাসিটি
টোকিও যেনতেন কোনো রাজধানী শহর নয়৷ রীতিমতো মেগাসিটি৷ সর্বশেষ শুমারি অনুযায়ী টোকিওতে এখন ৯০ লাখ মানুষের বাস৷ শহর কেন্দ্রের বাইরের বৃহত্তর এলাকা জুড়ে রয়েছে সাড়ে তিন কোটি মানুষ৷ অসংখ্য সুউচ্চ ভবন রয়েছে টোকিওতে৷ এত লোকের বাস সম্ভব হয়েছে সে কারণেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জাপান পারে...
পৃথিবীর আর কোনো শহরে সম্ভবত টোকিওর মতো এত লোক এত সুশৃঙ্খলভাবে প্রতিদিন যাতায়াত করেন না৷ যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য টোকিও সবসময়ই বিশেষ প্রশংসিত৷ রাজধানীর শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ প্রতিদিন ট্রেনে চড়েন৷ অটোমেটেড গাইডওয়ে ট্রানজিট ‘ইউরিকামোম’ কী অসাধ্যই না সাধন করে চলেছে!
ছবি: picture-alliance/dpa
স্মরণে ১৯৬৪
টোকিওতে প্রথমবার অলিম্পিক হয়েছিল ১৯৬৪ সালে৷ অথচ তার ২৪ বছর আগে, অর্থাৎ ১৯৪০ সালেই হতে পারতো সেই সৌভাগ্য, কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযু্দ্ধের কারণে সুযোগটি সেবার হাতছাড়া হয়ে যায়৷ বিশ্বযু্দ্ধের ধকল কিছুটা সামলে ওঠা জাপানে ১৯৬৪ সালের অলিম্পিকে অংশ নিয়েছিল ৯৩টি দেশ৷ মোট প্রতিযোগী ছিল পাঁচ হাজার একশ একান্ন জন৷ ২০২০ সালের আসরে অংশগ্রহণকারী দেশ এবং প্রতিযোগী কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ার কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তাঁর হাতে অলিম্পিক মশাল
ইয়োশিনোরি সাকাই-এর জন্ম ১৯৪০ সালের এক কালো দিনে৷ সেদিন হিরোশিমায় আণবিক বোমা ফেলেছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ তাই জন্ম তাঁর মৃত্যুর বিভীষিকার মধ্যে৷ তবে এ জনম অনেকটা সার্থক হয় ১৯৬৪ সালে৷ অলিম্পিক মশাল টোকিওতে আসে তাঁর হাত ধরে, সারা বিশ্বের জন্য শান্তির বার্তাও ছিল সঙ্গে৷
ছবি: Getty Images
9 ছবি1 | 9
চার বছর আগে, ২০০৯ সালের ২রা অক্টোবর মাদ্রিদ, টোকিও এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শহর শিকাগোকে বাদ দিয়ে ব্রাজিলকেই ২০১৬ সালের অলিম্পিক গেমস-এর ভেন্যু হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছিল৷ তারপর থেকেই রাজধানী রিও ডি জানেইরো-তে চলছে সাজ সাজ রব৷ দেশের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন, যেমন শহরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে কাজ শুরু হয়ে গেছে৷ তারই মধ্যেই রয়েছে বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজন করার চাপ৷
জানা গেছে, দেশের প্রায় ৩০টি জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রতিযোগিতার ভেন্যুগুলি ঠিক করা হয়েছে৷ এর মধ্যে মারাকানার বিখ্যাত অত্যাধুনিক স্টেডিয়ামটি যেমন আছে, তেমনই আছে বিখ্যাত সমুদ্র সৈকত কোপাকাবানা অথবা পশ্চিমের বারা বা উত্তরে অবস্থিত ডেওডোরোর মতো শহর৷ আর সেই জায়গাগুলির মধ্যে যাতে সহজেই যাতায়াত করা যায়, তার জন্য মেট্রো বা পাতাল রেলের নতুন লাইন তৈরিতে নেয়া হয়েছে নতুন পরিকল্পনা৷
অলিম্পিক ২০১৬-র ‘বাজেট' সম্পর্কে এখনই একটা স্বচ্ছ ধারণা দেয়া না গেলেও, সেটা যে পাহাড়সম হবে – তা বলা বাহুল্য৷ তাই অতি ধনী আর অত্যন্ত গরিব দেশবাসীর এই দেশের মধ্যে প্রতিবাদ-কর্মসূচিও কম হয়নি, হচ্ছেও৷ তারপরও, ব্রাজিলকে বিশ্বে একটি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ কার্লস নুজম্যান৷
আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি আইওসি-র সদস্যরা অবশ্য ইতিমধ্যে পাঁচবার রিও ঘুরে গেছেন৷ দেখে গেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির কাজ এবং অবকাঠামোগত পরিকল্পনার নীলনক্সা৷ শোনা যাচ্ছে, ২০১৪ সালে তাঁরা আবারো ফিরে আসবেন এই ‘অনন্য সুন্দর' শহরটিতে৷