কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ চলার সময় এক ফাউলে আহত হয়ে মাঠ ছাড়েন নেইমার৷ তারপর আর ফেরা হয়নি মাঠে৷ অনেকের মতে, তাঁর অনুপস্থিতির কারণেই সেমিফাইনালে ব্রাজিলকে আর ব্রাজিল মনে হয়নি৷ সে ম্যাচে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত হয় ব্রাজিল৷ পাঁচবারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নদের এমন ভরাডুবির জন্য কোচ স্কোলারিকেও দায়ী মনে করেন অনেকে৷ সমালোচকদের কেউ কেউ মনে করেন, খেলোয়াড় নির্বাচনে ভুল করেছিলেন স্কোলারি৷ কিন্তু নেইমার মনে করেন স্কোলারি দুর্দান্ত একজন কোচ, অসাধারণ এক নেতা, তাঁর ঘাড়ে ব্যর্থতার দায় চাপানো অন্যায়৷
রাশিয়া বিশ্বকাপেও সবাই তাঁদের দিকে তাকিয়ে৷ মেসি আর নেইমার৷ চলুন ২০১৪ বিশ্বকাপে তাদের কয়েকটি ম্যাজিক দেখে নিই ছবিঘরে৷
ছবি: Pedro Ugarte/AFP/Getty Images২০১৪ বিশ্বকাপে তারকার দ্যুতি কিন্তু প্রথমে নেইমারই দেখিয়েছেন৷ আসর শুরু হয়েছিল ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়ার ম্যাচ দিয়ে৷ আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়লেও পরে নেইমারের গোলেই ম্যাচে ফিরেছিল ব্রাজিল৷ গোল করার পর নেইমারের উল্লাস৷
ছবি: Reutersক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে সেদিন শুধু ব্রাজিলকে ম্যাচে ফেরাননি, আরেক গোল করে জয়ের দ্বারপ্রান্তেও নিয়ে গিয়েছিলেন নেইমার৷ গোলটি হয়েছিল পেনাল্টি থেকে৷ ছবিতে ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক স্টিপে প্লেটিকোসাকে নেইমারের শট রোখার ব্যর্থ চেষ্টা করতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reutersবিশ্বকাপ ২০১০ শুধু হতাশাই দিয়েছিল লিওনেল মেসিকে৷ সে আসরে আর্জেন্টিনা তো প্রত্যাশা মতো খেলতে পারেইনি, মেসিও পাননি বলার মতো কোনো সাফল্য৷ মেসির মতো খেলোয়াড় সেবার একটা গোলও পাননি, ভাবা যায়! ২০১৪-তে কিন্তু গোলখরা কাটাতে বেশি সময় নেননি৷ রিও ডি জেনেরোয় নিজেদের প্রথম ম্যাচে বসনিয়াকে ২-১ গোলে হারায় আর্জেন্টিনা৷ দু’গোলের মধ্যে একটি ছিল মেসির৷
ছবি: Reutersদ্বিতীয় ম্যাচে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ছিল ইরান৷ সহজ জয়ই ছিল প্রত্যাশিত৷ কিন্তু ইরান কোমর বেঁধে নামে গোল না খাওয়ার লড়াইয়ে৷ মেসি ছিলেন বলে রক্ষা৷ তাঁর একমাত্র গোলেই সেদিন জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে আর্জেন্টিনা৷ মেসির শট থেকে বল যাচ্ছে জালে, আপ্রাণ চেষ্টা করেও কিছু করতে করতে পারলেন না গোলরক্ষক আলী রেজা হাঘিঘি, শেষ রক্ষা হলো না ইরানের৷
ছবি: Reutersমেসি ছাড়া আর্জেন্টিনা প্রায় অচল – এটা এখন প্রায় প্রতিষ্ঠিত সত্য৷ ব্রাজিল দলে নেইমারের গুরুত্বও এখন এরকম৷ মেক্সিকোর বিপক্ষে নেইমার গোল পাননি৷ ব্রাজিলকে সেই ম্যাচ ড্র করেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে৷ গ্রুপ পর্বে পাঁচ বারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নদের শেষ ম্যাচটি ছিল ক্যামেরুনের বিপক্ষে৷ এ ম্যাচেও নেইমারের গোলেই এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা৷
ছবি: Reutersক্রোয়েশিয়ার মতো ক্যামেরুনের বিপক্ষেও এক গোল করে সন্তুষ্ট থাকেননি নেইমার৷ এ ম্যাচেও জাগিয়েছিলেন হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা৷ কোচ স্কলারি অবশ্য নকআউট পর্বের কথা ভেবে দলের সেরা তারকাকে নিয়ে কোনো ঝুঁকি নেননি৷ দু’গোল করার পরই তুলে নেন নেইমারকে৷
ছবি: AFP/Getty Images‘এফ’ গ্রুপে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে নিজেদের শেষ ম্যাচে মেসির গোলেই এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা৷ তারপরও থামেননি আর্জেন্টাইন সুপারস্টার৷
ছবি: picture-alliance/dpaআর্জেন্টিনাকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছিল নাইজেরিয়া৷ ১-০ গোলে পিছিয়ে পড়ার পরের মিনিটেই মুসার গোলে সমতা ফেরায় তারা৷ তারপর আবার মেসি-ম্যাজিক৷ ফ্রি-কিক থেকে গোল করে আবার আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে নেন এই ফুটবলার৷ ছবিতে মেসির ফ্রি কিক নেয়ার দৃশ্য, বাঁক খেয়ে বল যাচ্ছে গোল পোস্টের দিকে৷
ছবি: Pedro Ugarte/AFP/Getty Images
‘ও গ্লোবো'-কে দেয়া সাক্ষাৎকারে নেইমার বলেন, ‘‘তাঁর মাঝে আমি অসাধারণ এক নেতা এবং ব্রাজিলের ইতিহাসের অন্যতম সেরা কোচকেই পেয়েছি৷'' বিশ্বকাপের পর পদত্যাগ করা স্কোলারির দল নির্বাচনে কোনো ভুল ছিল বলে মনে করেন না নেইমার৷ ২৩ বছর বয়সি ফরোয়ার্ড জানিয়েছেন, তাঁকে কোচ করা হলে তিনিও স্কোলারির বেছে নেয়া খেলোয়াড়দের নিয়েই দল গড়তেন৷
খেলোয়াড় নির্বাচনে ভুল না হলে জার্মানির বিপক্ষে ব্রাজিল কেন গোলবন্যায় ভাসলো? তাহলে কি স্কোলারির কৌশলে কোনো ভুল ছিল? বার্সেলোনার হয়ে ক্লাব ফুটবল খেলা নেইমার এ প্রসঙ্গেও দাঁড়িয়েছেন কোচের পাশে৷ এ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘সেলেসাওরা নির্দিষ্ট করে বলার মতো কোনো ভুল করেনি৷ তবে এটাও ঠিক, ফুটবলের ট্যাকটিকস বা কৌশল আমি খুব বেশি বুঝি না৷ ''
এভাবে দলের দায় সতীর্থ খেলোয়াড় এবং কোচের কাঁধ থেকে সরানোর পর ব্যর্থতার মূল কারণটাও বলেছেন ব্রাজিল বিশ্বকাপে চার গোল করা এই ফরোয়ার্ড৷ তাঁর মতে, ব্রাজিল ফুটবলে পিছিয়ে পড়ছে আর এটাই ব্যর্থতার মূল কারণ৷ নেইমার বলেন, ‘‘আমি মনে করি ব্রাজিলের ফুটবল পিছিয়েছে৷ আমাদের ফুটবলের মান জার্মানি এবং স্পেনের চেয়ে খারাপ৷ আমরা পিছিয়ে পড়েছি- এই সত্যটা স্বীকার করার মতো পৌরুষ আমাদের থাকতে হবে৷ ''
নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের কাছে ৫-১ গোলে হেরে বসা স্পেন অবশ্য এবারে বিশ্বকাপে ব্রাজিলের চেয়েও খারাপ করেছে৷ গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় ২০১০ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা৷ জার্মানির কাছে সেমিফাইনালে হারার পর তৃ্তীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের কাছেও (৩-০) হেরে ব্রাজিল হয়েছে চতুর্থ৷
এসিবি/জেডএইচ (এএফপি)