ছুটি কাটাতে এসে একটা শহরের প্রেমে পড়ে যাওয়া, এমন একট শহর, যা নদী দিয়ে ঘেরা এক আধা শিল্পাঞ্চল যেখানে সাড়ে আটশ বছরের পুরনো ক্যাথিড্রাল থেকে শুরু করে শিল্প সংগ্রহশালা, সব কিছু আছে৷
বিজ্ঞাপন
হাফেল নদীর তীরে ব্রান্ডেনবুর্গ শহর
04:24
সেলিং করতে এসে ব্যার্ন্ড হেলমার্স হাফেল নদীর তীরে অবস্থিত ব্রান্ডেনবুর্গ শহরকে আবিষ্কার করেন৷ স্থির করেন, এখানেই বসবাস করবেন৷ একটি ওয়াটার স্পোর্টস সেন্টার খুলে এখানেই থেকে যান তিনি৷ তাঁর ওয়াটার স্পোর্টস সেন্টারে সেলিং বোটও ভাড়া পাওয়া যায়৷ ব্যার্ন্ড বলেন, ‘‘২০ বছরের বেশি ধরে আমি হাফেল নদীর তীরে ব্রান্ডেনবুর্গ শহরে বাস করছি৷ এ শহরের মজাই হলো এই যে, শহরটা নদী দিয়ে ঘেরা, চারপাশে অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য – সেই সঙ্গে একটা ছোট শহরের যত সুযোগসুবিধা: ভালো অবকাঠামো, সরকারি পরিবহণের মাধ্যমে পটসডাম, বার্লিন ইত্যাদি বড় বড় শহরের সঙ্গে যোগাযোগ৷ এ সবের ফলে এখানকার জীবন খুব সুন্দর৷''
ব্রান্ডেনবুর্গ ক্যাথিড্রাল
নদী থেকে ব্রান্ডেনবুর্গ খুব ভালো দেখা যায়, তা সে লঞ্চ, কানু কিংবা হাউসবোট, যা থেকেই হোক না কেন৷ হাফেল নদী প্রায় ২০ কিলোমিটার জুড়ে শহরটাকে ঘিরে রেখেছে৷ ব্রান্ডেনবুর্গ ক্যাথিড্রালটি একটি দ্বীপের উপর দাঁড়িয়ে৷ ক্যাথিড্রালটি টুরিস্টদের কাছে বড় আকর্ষণ৷ ক্যাথিড্রালটি ব্রান্ডেনবুর্গ প্রদেশের প্রাচীনতম গির্জাগুলির মধ্যে পড়ে৷
সাগরে শিক্ষা ট্যুর
এটা একটি বিশেষ ধরনের বিদেশ ভ্রমণ৷ সারা জার্মানি থেকে আসা ছাত্র-ছাত্রীরা অ্যাটলান্টিকের বুকে কাটায় দীর্ঘ ছয় মাস৷ সেখানে তারা বিদেশি সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারে৷ জাহাজেই চলে এই ক্লাস৷ এমনকি জাহাজটিও চালায় তারা নিজেরাই৷
ছবি: KUS-Projekt
‘টোর হায়ারডাল’
গত প্রায় ২৫ বছর যবত তিন-তিনটি মাস্তুল বিশিষ্ট ‘টোর হায়ারডাল’ নামের এই জাহাজ যুব শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে ছাত্র-ছাত্রীদের সাগরের ওপর দিয়ে নিয়ে গেছে বিশ্বের নানা দেশে৷ ২০০৮ সাল থেকে এই জাহাজটি অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ‘সাগরে ক্লাসরুম’ নামের এই প্রজেক্টটির জন্য ‘রিজার্ভ’ করা থাকে৷
ছবি: KUS-Projekt
দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য প্যাকিং
মোট ১৯০ দিন সাগরে বসবাস, কাজেই সবকিছু সাথে নিতে হয়৷ বলা বাহুল্য তার মধ্যে খাবার-দাবার অন্যতম৷ ভ্রমণের চারদিন আগে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের নতুন ‘বাড়ি’, মানে এই জাহাজে সব জিনিস-পত্র তোলার ব্যাপারে একে-অন্যকে সাহায্য করে থাকে৷
ছবি: KUS-Projekt
আনন্দদায়ক এক জাহাজ
জার্মানির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মোট ৩৪ জন ছাত্র-ছাত্রী ইটালির বিশিষ্ট নাবিক ক্রিস্টোফার কলোম্বাস এবং বিশ্বখ্যাত আবিষ্কারক আলেক্সান্ডার ফন হুমবোল্ড-এর পথ অনুসরণ করছে৷ ছবিতে দেখুন, কেমন করে তারা জার্মানির কিল শহর থেকে বিভিন্ন চ্যানেলের ভেতর দিয়ে ঢুকে পড়ছে নতুন জগতে৷
ছবি: KUS-Projekt
প্রথম দিন
সুন্দর আবহাওয়া, সাগরের জল শান্ত – ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি এমন একটি দিনে শিক্ষার্থীরা সমুদ্র পথে যাত্রা শুরু করে৷ তারা উত্তর সাগরের একটি চ্যানেলের মধ্যে দিয়ে থেকে ইংলিশ চ্যানেল এবং স্পেনের বিস্কায়া হয়ে টেনেরিফা পর্যন্ত পাড়ি দেয়৷
ছবি: KUS-Projekt
পাহাড়ের ছায়ায় ক্লাস
টেনেরিফার সেন্ট ক্রুজে জাহাজটি প্রথম এসে নাঙর ফেলে৷ সেখানে অতিথি বা ‘হোস্ট’ পরিবারে রাত কাটানোর পর শিক্ষার্থীরা স্পেনের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় ‘পিকো ডেল টেইডে’-র চূড়ায় ওঠতে থাকে৷ পথেই ওদের জীববিদ্যার ক্লাস হয়৷
ছবি: KUS-Projekt
সাগরের অনুভূতি
অ্যাটলান্টিক মহাসাগর বা অতলান্ত সাহর পার হওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের নিজেদের অনেকটা নাবিকদের মতোই লাগে৷ জাহাজ ক্রু’র নির্দেশনায় জাহাজের সমস্ত কাজ ছাত্র-ছাত্রীরাই করে৷ এমন কি রান্না এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজও৷
ছবি: KUS-Projekt
যথেষ্ট হয়েছে রোদ আর পামগাছ দেখা
ক্যারিবিকে পৌঁছানোর পর আনন্দ যেন আর ধরে না তাদের! দীর্ঘ ২৪ দিন সাগরে কাটানোর পর এই সবুজ দ্বীপে নাঙর ফেলে এবং এত সুন্দর একটা সমুদ্রসৈকত দেখে শিক্ষার্থীদের মন ভরে যায়৷ এমনটাই তো আশা করেছিল তারা! স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলে আলহামরা-খ্যাত গ্রানাডা শহরেও হোস্ট পরিবার বাড়িতে ওরা রাত কাটায়৷
ছবি: KUS-Projekt
ইন্ডিয়ানাদের সাথে বাস
শিক্ষার্থীরা পানামাতে কয়েকদিন হোস্ট পরিবারে থাকা এবং কফি বাগানে কাজ করার সুবাদে কুনা-ইন্ডিয়ানাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানা ও দেখার সুযোগ পেয়ে যায়৷
ছবি: KUS-Projekt
সাইকেলে কিউবা ঘুরে বেড়ানো
সাইকেল চালিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের অনেকেই কিউবার বিখ্যাত তামাক উৎপাদনকারী এলাকায় চলে যায়৷ সেখানে তারা কিউবার শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা করে, গল্প করে, আর আড্ডা মারতে মারতে ঘুরে দেখে রাজধানী হাভানা৷
ছবি: KUS-Projekt
দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে ঘরে ফেরা
সব শেষে বারমুডা এবং আৎসোরেন দ্বীপে ছোট্ট একটা বিরতির পর শিক্ষার্থীরা ফিরে আসে নিজ দেশে৷ সাগরে দীর্ঘদিনের এই শিক্ষা ভ্রমণ ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ায় তো কাজে লাগবেই, একজন সম্পূর্ণ মানুষ হতেও হয়ত সাহায্য করবে অনেকটাই৷
ছবি: KUS-Projekt
10 ছবি1 | 10
২০১৫ ছিল উৎসবের বছর, কেননা এ-বছর ব্রান্ডেনবুর্গ ক্যাথিড্রাল ৮৫০ বছরে পা দেয়৷ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় আড়াইশ কনসার্ট, প্রার্থনাসভা, প্রদর্শনী ইত্যাদির আয়োজন করা হয়েছিল৷ ব্যার্ন্ড জানালেন, ‘‘আমার পরামর্শ হলো, ব্রান্ডেনবুর্গ ক্যাথিড্রালটা দেখে যাবেন৷ এ বছর ৮৫০ বছরে পা দিচ্ছে, গোটা এলাকার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বলে পরিচিত এই ক্যাথিড্রাল৷ এখান থেকেই মার্ক ব্রান্ডেনবুর্গ পত্তন করা হয়েছিল৷ গির্জাটা একটা ছোট দ্বীপের ওপর অবস্থিত, যার চারধার দিয়ে হাফেল নদীর শাখা বয়ে যাচ্ছে৷ একটা পুরনো দুর্গের ভিতের ওপর গির্জাটা তৈরি করা হয়েছে৷''
গির্জার চারপাশে সে আমলের স্লাভ জেলেদের একটা গ্রাম ছিল৷ সেটাই আজ ব্রান্ডেনবুর্গ শহরের সবচেয়ে পুরনো এলাকা৷ ব্যার্ন্ড বলেন, ‘‘আমার কাছে এই ক্যাথিড্রালের দ্বীপটা হলো শহরের সবচেয়ে সুন্দর এলাকাগুলির মধ্যে একটি৷ কেননা এখানে ছোট ছোট, সুন্দর বাড়িঘরগুলো ছাড়াও প্রচুর গাছপালা আছে৷ বেশ একটা শান্তির অনুভূতি, চারপাশ সত্যিই সুন্দর৷''
শিল্প সংগ্রহশালা
শহরের কেন্দ্রে আরো একটি দর্শনীয় বস্তু আছে৷ সেটা হলো শিল্প সংগ্রহশালা৷ এখানে ১৯১৪ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রায় এক শতাব্দী ধরে ইস্পাত তৈরি করা হত৷ সাবেক পূর্ব জার্মানির বৃহত্তম ইস্পাত কারখানা ছিল এখানে৷ ব্যার্ন্ড জানালেন, ‘‘ব্রান্ডেনবুর্গের একটা হাইলাইট হলো এই শিল্প সংগ্রহশালা৷ ব্রান্ডেনবুর্গ শহরের ইতিহাস যেন এখানে জীবন্ত হয়ে ওঠে৷ ব্রান্ডেনবুর্গ এককালে ১ লক্ষ ২০ হাজার অধিবাসীর ইস্পাতনগরী ছিল৷ মানুষজনের অধিকাংশ ইস্পাতের কারখানায় কাজ করতেন৷ এ সব দেখে আজও বোঝা যায়, ইস্পাতকর্মীদের কাজটা কত শক্ত ছিল৷''
সবশেষে শহরের উচ্চতম স্থান: মারিয়েনব্যার্গ পাহাড়ের ওপর ফ্রিডেন্সভার্টে টাওয়ার৷ তৈরি হয়েছিল ১৯৭৪ সালে৷ মারিয়েনব্যার্গ আর ফ্রিডেন্সভার্টে মিলিয়ে প্রায় একশ মিটার উঁচু ওপর থেকে দেখা দৃশ্যটা যেন ব্রান্ডেনবুর্গের একটা প্যানোরামা৷