বেলজিয়ামের রাজধানীতে বিমানবন্দর ও মেট্রো স্টেশনে আত্মঘাতী বোমা আক্রমণে মোট ৩১ জন নিহত হওয়ার দু'দিন পরে ব্রাসেলসে পুলিশ অভিযানে আরো ছ'জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
তাদের মধ্যে তিনজনকে দৃশ্যত ‘‘সরকারি কৌঁসুলির কার্যালয়ের সামনে'' গ্রেপ্তার করা হয়, বলে জানিয়েছেন এক মুখপাত্র৷ আর একজনকে ধরা হয় শহরের উপকণ্ঠে শেট এলাকায়, বাকি দু'জনকে ব্রাসেলসের অন্যত্র গ্রেপ্তার করা হয়৷ গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের সম্পর্কে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি৷
মার্কিন টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এনবিসি-র খবর অনুযায়ী যে দুই ভাই ব্রাসেলসের বিমানবন্দর ও মেট্রো স্টেশনে আক্রমণ চালিয়েছে, তারা নাকি যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত ডাটাবেসে অন্তর্ভুক্ত ছিল৷
ব্রাসেলস বিমানবন্দরের সিসিটিভি-তে তোলা ছবিতে ইব্রাহিম ও খালিদ এল বাকরাওয়ির সঙ্গে যে টুপি-পরা তৃতীয় ব্যক্তিকে দেখা গেছে, তার খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ৷ বৃহস্পতিবার ছ'জন গ্রেপ্তার হবার পর শুক্রবার আরো একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বলে জানাচ্ছে সরকারি আরটিবিএফ সংস্থা – রয়টার্সের খবর৷ এছাড়া নাকি তদন্তকারীরা একজন নতুন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছেন, বলে জানিয়েছে বেলজিয়ামের ডে মর্গেন দৈনিক৷ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সিরীয়; তার পরিচয় দেওয়া হয়েছে ২৮ বছর বয়সি নাইম আল-হামেদ হিসেবে৷ সে নাকি গত নভেম্বরের প্যারিস সন্ত্রাসের সঙ্গেও যুক্ত৷
Police raids in Brussels
00:41
ইউরোপ জুড়ে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা
ব্রাসেলসে একাধিক সন্ত্রাসী হামলার পর ইউরোপ জুড়ে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা৷ বিশেষ করে বিমানবন্দর, ট্রেন স্টেশন, সীমান্ত এবং বিভিন্ন শহরের রাস্তায় পুলিশের বাড়তি উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/P. Golovkin
‘যুদ্ধে ইউরোপ’
ফরাসি প্রধানমন্ত্রী তো বলেই দিলেন, ইউরোপ এখন ‘যুদ্ধে আছে’৷ ব্রাসেলসের ঘটনার পর ইউরোপীয় নেতারা জরুরি নিরাপত্তা বৈঠক করেছেন এবং সর্বত্র নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি বাড়িয়েছেন৷ তাদের সঙ্গে রয়েছেন বোমা বিশেষজ্ঞ, প্রশিক্ষিত কুকুর এবং সাদা পোশাকের গোয়েন্দারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
সব বড় বিমানবন্দরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে
লন্ডন, প্রাগ, অ্যামস্টারডাম, ভিয়েনাসহ ইউরোপের সব বিমানবন্দরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে৷ লন্ডনের প্রধান বিমানবন্দর, হিথ্রোতে, পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে৷ পাশাপাশি, লন্ডনসহ বিভিন্ন শহরেও বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/epa/A. Rain
ডাচ পুলিশের সতর্ক অবস্থান
নেদারল্যান্ডসের অ্যামস্টারডাম বিমানবন্দরে নিরাপত্তা দিচ্ছে ডাচ মিলিটারি পুলিশ৷ ব্রাসেলস বিমানবন্দরে হামলার পরপরই সেখানকার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়৷ ব্রাসেলসে মঙ্গলবার একাধিক বিস্ফোরণে বেশ কয়েকজন নিহত এবং প্রায় দুই শত মানুষ আহত হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/epa/E. Elzinga
ব্রিটেনে সতর্কতা
লন্ডনের বিমানবন্দরে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/J. Mansfield
ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরে বাড়তি পুলিশ
জার্মান কর্তৃপক্ষও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা বাড়িয়েছে৷ বিশেষ করে বিমানবন্দর, ট্রেন স্টেশন আর বেলজিয়াম, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, লুক্সেমবুর্গ সীমান্তে পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে৷ তবে পুলিশের সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি চোখে পড়েছে জার্মানির সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরে৷ শহরটির ট্রেন স্টেশনেও পুলিশ অবস্থান নিয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Stache
রেল যোগাযোগ সাময়িক বন্ধ
বেলজিয়ামে হামলার পর জার্মানির জাতীয় ট্রেন ব্যবস্থা, ডয়চে বান, ব্রাসেলসের সঙ্গে তাদের উচ্চগতির ট্রেন সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়৷ ব্রাসেলসের বদলে জার্মানির সীমান্তের শহর আখেনে ট্রেনগুলো থামানো হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. A. Gekiere
প্যারিসে আবারো উচ্চ সতর্কর্তা
প্যারিসে গত নভেম্বর সন্ত্রাসী হামলায় অনেকে প্রাণ হারান৷ মঙ্গলবার ব্রাসেলসে হামলার পরপরই তাই সেখানকার নিরাপত্তা আরো বাড়ানো হয়৷ প্যারিসের মূল বিমানবন্দর এবং সংশ্লিষ্ট ট্রেন স্টেশন দু’টিতে নিরাপত্তা বাহিনীর পুরো দল নিয়োগ করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/epa/E. Laurent
রাশিয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুর্নমূল্যায়ন
রাশিয়ার যোগাযোগমন্ত্রী মাক্সিম সকোলভ জানিয়েছেন, ব্রাসেলসের ঘটনার পর সেদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও পুর্নমূল্যায়ন করা হবে৷ যদিও রাশিয়া আগে থেকেই বেশ সতর্ক৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/P. Golovkin
8 ছবি1 | 8
অপরদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি মস্কো থেকে ফেরার পথে পাঁচ ঘণ্টার জন্য ব্রাসেলসে এসেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বেলজিয়ামের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য৷ যুগপৎ তিনি গত মঙ্গলবার ব্রাসেলসের সন্ত্রাসী আক্রমণে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন৷ কেরির বিমান ব্রাসেলস বিমানবন্দরেই নামে৷ নামার পর কেরি তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর বিরুদ্ধে সংগ্রামে ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন৷
ব্রাসেলসে বোমাবাজির পর জাতিসংঘের সিরিয়া সংক্রান্ত মধ্যস্থ স্তাফান দে মিস্তুরা বলেছিলেন যে, ‘‘সন্ত্রাসবাদকে পরাজিত করতে হলে, সিরিয়ায় একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বার করতে হবে''৷ দশ দিন আলাপ-আলোচনার পর জেনেভায় সিরিয়া শান্তি বৈঠক আবার স্থগিত রাখা হয়েছে – তবে ‘‘কোনো নাটক বা ওয়াকআউট ছাড়াই'', দে মিস্তুরা তা-তেই খুশি৷
এসি/ডিজি (এপি, রয়টার্স, এএফপি)
বিশ্ব কি ধ্বংসের পথে?
চলতি বছরের শুরুতেই সন্ত্রাসী হামলার ব্যাপকতা দেখে এই প্রশ্ন জাগতেই পারে৷ গত বছরের নভেম্বরে প্যারিসে হামলায় নিহত হন ১৩০ জন৷ সেই ঘটনার পর একের পর এক হামলায় তটস্থ বিশ্ব৷
ছবি: Reuters/U. Bektas
ইস্তানবুলে বোমা হামলা: জানুয়ারি ১২
ইস্তানবুলের এক জনপ্রিয় চত্বরে আত্মঘাতী বোমা হামলায় প্রাণ হারান ১৩ ব্যক্তি, আহত বেশ কয়েকজন৷ নিহতদের মধ্যে কয়েকজন বিদেশি ছিলেন৷ আত্মঘাতী হামলাকারী ছিল তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএস অনুসারী সিরীয় নাগরিক নাবিল ফাদিলা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Kneffel
জাকার্তায় হামলা: জানুয়ারি ১৪
ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় সিরিজ বোমা হামলায় প্রাণ হারান কমপক্ষে আট ব্যক্তি, আহত ২৪৷ ‘ইসলামিক স্টেট’ সেই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷
ছবি: Getty images/AFP/Str
ওয়াগাডুগুর হোটেলে হামলা: জানুয়ারি ১৫
আল-কায়দা সমর্থিত জঙ্গিরা বুর্কিনা ফাসোর রাজধানী ওয়াগাডুগুতে একটি হোটেল হামলা চালায়৷ এতে ১৮টি দেশের কমপক্ষে ২৩ ব্যক্তি নিহত হন৷ ফরাসি এবং সেদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ অপারশনে হোটেলটি জঙ্গিমুক্ত হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Elsen
আঙ্কারায় হামলা: ফেব্রুয়ারি ১৭
তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় বাসের বহরে হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘কুর্দিশ ফ্রিডম ফ্যালকনস’ বা টিএকে৷ হামলায় ২৯ ব্যক্তি নিহত এবং কমপক্ষে ৬০ ব্যক্তি আহন হন যাদের মধ্যে সাধারণ মানুষ ছাড়াও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন৷
ছবি: Reuters/Ihlas News Agency
মোগাদিশুতে হোটেলে হামলা: ফেব্রুয়ারি ২৬
সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিশুর একটি হোটেলের মধ্যে নিজের গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটায় এক আত্মঘাতী বোমারু৷ এতে ১৫ ব্যক্তি নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হন৷ আল-শাবাব জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্তরা এই হামলা চালিয়েছে বলে জানা গেছে৷
ছবি: Reuters/F. Omar
আইভরি কোস্টে হোটেলে গুলিবর্ষণ: মার্চ ১৩
আল-কায়দার উত্তর আফ্রিকা শাখার সদস্যরা আইভরি কোস্টের গ্রান্ড ব্যাসামে একটি হোটেলে গুলিবর্ষণ করে৷ এতে ১৮ ব্যক্তি নিহত এবং ৩৩ জন আহত হন৷
ছবি: Reuters/L. Gnago
আঙ্কারায় বোমা হামলা: মার্চ ১৩
তুরস্কে একের পর এক বোমা হামলা ঘটছে৷ সেদেশের রাজধানীর কেন্দ্রে বিস্ফোরকভর্তি একটি গাড়ির বিস্ফোরণ ঘটে ১৩ মার্চ৷ এতে প্রাণ হারান ৩৭ ব্যক্তি, আহত ১২৭৷ এই হত্যাকাণ্ডেরও দায় স্বীকার করেছে টিএকে৷
ছবি: Reuters/U. Bektas
ব্রাসেলসে হামলা: মার্চ ২২
ব্রাসেলসে একাধিক সন্ত্রাসী হামলায় নিহত কমপক্ষে ৩৪ ব্যক্তি, আহত ১৭০৷ সেদিন সকাল আটটার দিকে ব্রাসেলস বিমানবন্দরে দু’টি বিস্ফোরণ ঘটে৷ আর তার একঘণ্টা পর মোলেনবেক মেট্রো স্টেশনে আরেকটি বিস্ফোরণ ঘটে৷ জঙ্গি গোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ এ সব হামলার দায় স্বীকার করেছে৷