পোল্যান্ড জানিয়েছে, আগের অঙ্গীকার করলেও এখন তারা শরণার্থী নিতে রাজি নয়৷ ব্রিটেনে উঠছে ইইউ ছেড়ে নিজেদের নিরাপদ রাখার দাবি৷ ব্রাসেলস হামলার কারণে ইউরোপে শরণার্থীদের সমস্যা কি বাড়বে?
বিজ্ঞাপন
ব্রাসেলস হামলার পর বৃহস্পতিবারই জরুরি বৈঠকে বসছেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) মন্ত্রীরা৷ হামলার ক্ষতি এবং নিরাপত্তা জোরদার করার উপায় নিয়েই মূলত আলোচনা হবে এ বৈঠকে৷
ব্রাসেলস হামলার তিন সন্দেহভাজনের মধ্যে দু’জন সহোদর৷ দুই ভাইয়ের একজন ইব্রাহিম এল বাকরাওয়ি ব্রাসেলস বিমানবন্দরে হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল৷ আর ইব্রাহিমের ভাই খালিদ হামলা চালায় মেট্রো স্টেশনে৷ এছাড়াও ইব্রাহিমের সঙ্গে আরো একজন ছিল৷ সেই তৃতীয় ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের জন্য খোঁজ চলছে৷
মঙ্গলবার সকালের তিনটি বোমা হামলার ক্ষত নিয়েই ধীরে ধীরে আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠছে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলস৷ কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যেই চলছে সব কিছু৷ কোথাও শহরের কেন্দ্রীয় বিমানবন্দর এবং বিমানবন্দর সংলগ্ন মেট্রো স্টেশনে বোমা হামলায় নিহত ৩১ জনের প্রতি নীরবে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন শান্তিপ্রিয় মানুষ, কোথাও বা সন্ত্রাসবিরোধী চেতনায় উদ্বুদ্ধরা সমস্বরে তুলছেন হত্যা ও ঘৃণার রাজনীতিবিরোধী আওয়াজ৷
তবে ব্রাসেলস হামলা আতঙ্ক অনেক বাড়িয়েছে৷ হামলাকারীরা আইএস জঙ্গি এবং বহিরাগত বলে পোল্যান্ড ইতিমধ্যে জানিয়েছে আগের অঙ্গীকার অনুযায়ী ৭ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীর মধ্যে অন্তত ৪০০ জনকে মার্চ-এপ্রিলের মধ্যেই নেয়ার কথা থাকলেও এখন সে অঙ্গীকার রক্ষা করা ঠিক হবে বলে তারা মনে করে না৷ পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বেয়াটা শিডলো বলেছেন, ‘‘ব্রাসেলসে যা ঘটে গেল তারপরও আমাদের পক্ষে বলা সম্ভব নয় যে, এখনো শরণার্থী গ্রহণে আমরা রাজি আছি৷''
তিনি মনে করেন, ঢালাওভাবে শরণার্থী গ্রহণ শুরু করার কারণেই ইউরোপে নিরাপত্তাসংকট দেখা দিয়েছে৷ এভাবে শরণার্থীদের স্বাগত জানিয়ে ইইউ অঞ্চলকে সমস্যায় ফেলার জন্য আঙ্গেলা ম্যার্কেলকেই দায়ী মনে করেন বেয়াটা শিডলো৷ এ জন্য জার্মান চ্যান্সেলের কঠোর সমালোচনাও করেছেন তিনি৷
'We should not be afraid'
02:53
এদিকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রতি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন না করার জন্য হাঙ্গেরি সরকারের সমালোচনা করেছে মানবাধিকার সংস্থা কর্ডেলিয়া ফাউন্ডেশন৷ এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, বিশেষ করে সিরিয়া, আফগানিস্তান ও সোমালিয়া থেকে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের হাঙ্গেরিতে অনেক ক্ষেত্রে নির্যাতনেরও শিকার হতে হয়৷
আফগান অভিবাসনপ্রত্যাশীরা অবশ্য তুরস্কেও ভালো নেই৷ গত সপ্তাহেও ৩০ জন আফগানকে জোর করে ফেরত পাঠিয়েছে তুরস্ক সরকার৷ ফিরে যেতে বাধ্য হওয়া অভিবাসনপ্রত্যাশীরা জানিয়েছিলেন, দেশে ফিরলে তালেবান তাদের হত্যা করতে পারে৷ তারপরও তাদের জোর করে ফেরত পাঠানোয় তুর্কি সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷
ইউরোপ জুড়ে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা
ব্রাসেলসে একাধিক সন্ত্রাসী হামলার পর ইউরোপ জুড়ে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা৷ বিশেষ করে বিমানবন্দর, ট্রেন স্টেশন, সীমান্ত এবং বিভিন্ন শহরের রাস্তায় পুলিশের বাড়তি উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/P. Golovkin
‘যুদ্ধে ইউরোপ’
ফরাসি প্রধানমন্ত্রী তো বলেই দিলেন, ইউরোপ এখন ‘যুদ্ধে আছে’৷ ব্রাসেলসের ঘটনার পর ইউরোপীয় নেতারা জরুরি নিরাপত্তা বৈঠক করেছেন এবং সর্বত্র নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি বাড়িয়েছেন৷ তাদের সঙ্গে রয়েছেন বোমা বিশেষজ্ঞ, প্রশিক্ষিত কুকুর এবং সাদা পোশাকের গোয়েন্দারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
সব বড় বিমানবন্দরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে
লন্ডন, প্রাগ, অ্যামস্টারডাম, ভিয়েনাসহ ইউরোপের সব বিমানবন্দরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে৷ লন্ডনের প্রধান বিমানবন্দর, হিথ্রোতে, পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে৷ পাশাপাশি, লন্ডনসহ বিভিন্ন শহরেও বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/epa/A. Rain
ডাচ পুলিশের সতর্ক অবস্থান
নেদারল্যান্ডসের অ্যামস্টারডাম বিমানবন্দরে নিরাপত্তা দিচ্ছে ডাচ মিলিটারি পুলিশ৷ ব্রাসেলস বিমানবন্দরে হামলার পরপরই সেখানকার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়৷ ব্রাসেলসে মঙ্গলবার একাধিক বিস্ফোরণে বেশ কয়েকজন নিহত এবং প্রায় দুই শত মানুষ আহত হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/epa/E. Elzinga
ব্রিটেনে সতর্কতা
লন্ডনের বিমানবন্দরে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/J. Mansfield
ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরে বাড়তি পুলিশ
জার্মান কর্তৃপক্ষও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা বাড়িয়েছে৷ বিশেষ করে বিমানবন্দর, ট্রেন স্টেশন আর বেলজিয়াম, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, লুক্সেমবুর্গ সীমান্তে পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে৷ তবে পুলিশের সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি চোখে পড়েছে জার্মানির সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরে৷ শহরটির ট্রেন স্টেশনেও পুলিশ অবস্থান নিয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Stache
রেল যোগাযোগ সাময়িক বন্ধ
বেলজিয়ামে হামলার পর জার্মানির জাতীয় ট্রেন ব্যবস্থা, ডয়চে বান, ব্রাসেলসের সঙ্গে তাদের উচ্চগতির ট্রেন সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়৷ ব্রাসেলসের বদলে জার্মানির সীমান্তের শহর আখেনে ট্রেনগুলো থামানো হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. A. Gekiere
প্যারিসে আবারো উচ্চ সতর্কর্তা
প্যারিসে গত নভেম্বর সন্ত্রাসী হামলায় অনেকে প্রাণ হারান৷ মঙ্গলবার ব্রাসেলসে হামলার পরপরই তাই সেখানকার নিরাপত্তা আরো বাড়ানো হয়৷ প্যারিসের মূল বিমানবন্দর এবং সংশ্লিষ্ট ট্রেন স্টেশন দু’টিতে নিরাপত্তা বাহিনীর পুরো দল নিয়োগ করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/epa/E. Laurent
রাশিয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুর্নমূল্যায়ন
রাশিয়ার যোগাযোগমন্ত্রী মাক্সিম সকোলভ জানিয়েছেন, ব্রাসেলসের ঘটনার পর সেদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও পুর্নমূল্যায়ন করা হবে৷ যদিও রাশিয়া আগে থেকেই বেশ সতর্ক৷