ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আদালতে চার দিন ধরে বিচারকাজ বন্ধ
৯ জানুয়ারি ২০২৩এর আগে এক দিনের কর্মবিরতি পালন করেছিল আদালতের কর্মচারী সমিতি৷ এ কারণে গত বুধবার থেকে আজ পর্যন্ত চার দিনে জেলার কোনো আদালতে বিচারিক কার্যক্রম হয়নি৷
যে বিচারকদের অপসারণ দাবি করেছে আইনজীবী সমিতি, তাঁরা হলেন জেলা জজ শারমিন নিগার এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের-১ বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ ফারুক৷ আর শাস্তি দাবি করা নাজির (বর্তমানে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের সেরেস্তাদার) হলেন মুমিনুল ইসলাম চৌধুরী৷
চার দিনের কর্মবিরতিতে বিচারপ্রার্থীরা জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আদালতে এসে নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন৷ আইনজীবী সমিতি জানিয়েছে, প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ হাজার বিচারপ্রার্থী সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। গত চার দিনের হিসাবে ৪০ থেকে ৬০ হাজার বিচারপ্রার্থী দুর্ভোগে পড়েছেন৷ আজ সোমবার বেলা তিনটায় আইনজীবী সমিতির সাধারণ সভা ডাকা হয়েছে৷ সাধারণ সভায় তারা পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবেন৷
জানা গেছে, গত ১ ডিসেম্বর শীতকালীন ছুটির আগে আদালতের শেষ কার্যদিবস ছিল৷ ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুকের আদালতে তিনটি মামলা গ্রহণ করা হয়নি৷ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিচারককে মামলা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন৷ তখন বিচারক তাঁদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ রয়েছে৷
ছুটি শেষে ২৬ ডিসেম্বর জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যকরী পরিষদের সভায় মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ ১ জানুয়ারি মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জন করেন আইনজীবীরা৷ এরপর ২ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর এজলাস চলাকালে বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের সঙ্গে আইনজীবীদের বাদানুবাদের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে৷
৩ জানুয়ারি জেলা জজ শারমিন নিগারের কক্ষে সব বিচারক সভা করেন৷ এতে আদালতের বিচারক কার্যক্রম দুপুর পৌনে ১২টার দিকে শুরু হয়৷ বেলা সাড়ে ১০টার দিকে আইনজীবীরা জেলা জজ শারমিন নিগারের আদালত এলাকার সামনে জড়ো হয়ে হইহুল্লোড় শুরু করেন৷ মুঠোফোনে এসব ভিডিও করতে এসে আইনজীবীদের হাতে লাঞ্ছিত হন আদালতের কর্মচারী মেহেদী হাসান৷
৪ জানুয়ারি বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন আদালতের সব এজলাসের দরজা ও প্রধান ফটকে তালা দিয়ে কর্মবিরতি পালন শুরু করে৷ একই দিন আগের ঘটনা ও কর্মচারীদের কর্মবিরতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে দুই বিচারকের অপসারণ ও নাজিরের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানান আইনজীবীরা৷ ৫ জানুয়ারি সকালে কর্মচারীরা তাদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন তবে ৫ জানুয়ারি আইনজীবীরা তিন কার্যদিবসের কর্মবিরতির ডাক দেন, যা আজ সোমবার পর্যন্ত চলছে৷
গত বুধ থেকে রোববার পর্যন্ত সরেজমিন আদালতে অবস্থান করে বিচারপ্রার্থী মানুষদের শীত উপেক্ষা করে আদালতে হাজির হয়ে হতাশা ও ক্ষোভ নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে দেখা গেছে৷
জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সোমবার বেলা তিনটার দিকে আইনজীবী সমিতির ভবনে সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হবে৷ আমাদের দাবি পূরণ না হলে পরবর্তী করণীয় প্রসঙ্গে সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷ আদালতে দীর্ঘদিন ধরে জাল কোর্ট ফি ও স্ট্যাম্প বিক্রি হচ্ছে৷ বিষয়টি তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে৷ কর্মচারীরা এজলাসের দরজা ও আদালতের ফটক তালাবদ্ধ করার অধিকার কোথায় পেল? কোন আইনে ও কোথা থেকে পেল?'
এনএস/কেএম (প্রথম আলো)