একদা শত্রু বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস এবার বঙ্গে নির্বাচনি সমঝোতা করেছে৷ রবিবার তাদের যৌথ ব্রিগেড সমাবেশ৷ ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে৷
বিজ্ঞাপন
পশ্চিমবঙ্গে বামশাসনের সেই সময়ে বছরে অন্তত একটা ব্রিগেড সমাবেশ হতো নিজেদের রাজনৈতিক শক্তি জাহির করার জন্য৷ বিশাল সব মিছিল বের হতো কলকাতা শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে৷ মিছিল আসতো বিভিন্ন জেলা থেকে৷ ব্রিগেড ছাপিয়ে সেই জনসমাবেশ ছড়িয়ে পড়তো গোটা শহর জুড়ে৷ কিন্তু বামেদের সেই প্রভাব, প্রতিপত্তি আর নেই৷ এখন তারা ৬–৭%-এর চেয়ে বেশি ভোট পায় না৷ একদা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনি জোটের কারণেও সমালোচিত হচ্ছে বামেরা৷ যদিও রাজনীতিতে আগের ‘বন্ধু' এখন ‘শত্রু’, কিংবা আগের ‘শত্রু’ এখন বন্ধুর দৃষ্টান্ত আরো আছে৷ এ প্রসঙ্গে তৃণমূল আর বিজেপির অতীত সম্পর্কের বিষয়টিও আলোচনায় তুলে আনেন অনেকে৷
পশ্চিমবঙ্গের ভোটে কে কোথায় দাঁড়িয়ে
পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট আসন্ন। হাই-ভোল্টেজ লড়াইয়ে প্রধান দুই প্রতিপক্ষ তৃণমূল ও বিজেপি। বাম-কংগ্রেস কি কিছু করতে পারবে?
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
ভোটের দামামা
এপ্রিল-মে মাসে বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা পশ্চিমবঙ্গে। সব দলই প্রচারে নেমে গেছে। প্রধান দুই প্রতিপক্ষ তৃণমূল এবং বিজেপি। তবে যত দিন যাচ্ছে, শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে বাম এবং কংগ্রেস।
ছবি: Getty Images/AFP/D. Dutta
তৃণমূলের জোর
২০১১ সালে ক্ষমতায় এসেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল। সেই থেকে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক নির্বাচনে ৪০ শতাংশের উপরে ভোট পেয়েছে তারা। গত বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল পরিমাণ আসন পেয়েছিল তৃণমূল।
ছবি: Getty Images/D. Sarkar
বিজেপির শক্তি
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে প্রধান বিরোধী শক্তি হয়ে ওঠে। তারাও ৪০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছে। এবারের নির্বাচন ব্যাপক প্রচার শুরু করেছে বিজেপি। রাজ্য জুড়ে চলছে রথযাত্রা।
ছবি: Payel Samanta/DW
ধর্মীয় মেরুকরণের নির্বাচন
বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, পশ্চিমবঙ্গে এবার ধর্মীয় মেরুকরণের নির্বাচন হবে। বিজেপি ধর্মীয় তাস খেলছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তার উত্তর দিতে গিয়ে ধর্মীয় মেরুকরণ বৃদ্ধি করছেন।
ছবি: Imago Images/Pacific Press Agency/S. Paul
শাহ-মোদীর লক্ষ্য
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে পশ্চিমবঙ্গের রণনীতি তৈরি করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ। ৪০টিরও বেশি সভা করেছিলেন তাঁরা। এবারের ভোটেও একই ভাবে প্রচারের পরিকল্পনা করেছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় নেতাদের এনে প্রচারের ঝাঁজ বাড়াতে চাইছে তারা। সঙ্গে চলছে তৃণমূলের নেতাদের বিজেপিতে নিয়ে আসার কাজ।
ছবি: Dibyangshu Sarkar/AFP/Getty Images
বারবার আসছেন শাহ
অমিত শাহ এখন বারবার পশ্চিমবঙ্গে আসছেন। ভোটের দিন ঘোষণার আগে তিনি প্রচারের জমি তৈরি করছেন। পরে মোদী প্রচারের ঝড় তুলবেন। আসছেন নাড্ডাও। তাছাড়া অন্য রাজ্যের নেতাদেরও নিয়ে আসা হবে পশ্চিমবঙ্গে।
ছবি: Payel Samanta/DW
রবীন্দ্রনাথ, নেতাজি ও বাঙালিয়ানা
মোদী, শাহ, নাড্ডার মুখে বারবার শোনা যাচ্ছে রবীন্দ্রনাথ, নেতাজির নাম। উঠে আসছে বাংলা ও বাঙালিয়ানার প্রশংসা। তৃণমূল লড়াইটাকে বাঙালি বনাম অ-বাঙালিতে পরিণত করার চেষ্টা করছিল। তার জবাবে, বাঙালি-প্রেম দেখাতে চাইছেন মোদী-শাহরা।
ছবি: DW/P. Samanta
মমতার পাল্টা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাই একশ। রাজ্য জুড়ে সভা শুরু করে দিয়েছেন তিনি। নির্বাচন স্ট্র্যাটেজিস্ট প্রশান্ত কিশোর সময় সময় পরামর্শ দিচ্ছেন মমতাকে। গত কয়েক মাসে দুয়ারে সরকার এবং সকলের জন্য স্বাস্থ্যবীমা জনমনে সাড়া ফেলেছে।
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
বাম-কংগ্রেস জোট
কংগ্রেস এবং বামের ভোট গত ১০ বছরে চোখে পড়ার মতো কমেছে। ২০১৬ সালে তাদের জোট বিশেষ কাজে আসেনি। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ২০২১ সালে তাদের জোট আগের চেয়ে ভালো ফল করবে। বিজেপি এবং তৃণমূলের ভোট বাম-কংগ্রেস জোট সমান ভাবে কাটতে পারলে ফলাফলে তার যথেষ্ট প্রভাব পড়বে।
ছবি: Zumapress/Imago Images
সমীক্ষার ফলাফল
এখনো পর্যন্ত যতগুলি ভোটের আগের সমীক্ষা হয়েছে, তাতে অল্প হলেও এগিয়ে আছে তৃণমূল। তবে বিজেপি ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে। লড়াই হাড্ডাহাড্ডি। প্রশান্ত কিশোরের স্ট্র্যাটেজি কি তৃণমূলের ভোট-মার্জিন বাড়াতে পাড়বে?
ছবি: Hindustan Times/Imago Images
আসরে ফুরফুরা শরিফ
এরই মধ্যে ইসলামিক প্রতিষ্ঠান ফুরফুরা শরিফের পিরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি নিজের দল তৈরি করেছেন। তিনি বিজেপি এবং তৃণমূল কাউকেই সমর্থন করছেন না। বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের আলোচনা চলছে।
ছবি: Naushad Bhai
11 ছবি1 | 11
অবশ্য সমালোচনা সত্ত্বেও কংগ্রেস আর বামফ্রন্ট তাদের অবস্থানে অটল, যে বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেস আদতে একই মুদ্রার দুটি পিঠ৷ ওদিকে তৃণমূলের কটাক্ষ, বিজেপির সুবিধে করে দিতেই বাম–কংগ্রেস মিলে বিরোধী ভোট কাটার খেলায় নেমেছে৷ এই পরিস্থিতিতে, ভোটের আগে প্রথম ব্রিগেড সমাবেশ রবিবার৷
বাম কর্মী-সমর্থকরা এবার নানাভাবে চেষ্টা করছেন ব্রিগেডের সভার প্রচারপর্ব থেকেই মানুষকে পাশে পাওয়ার৷ পুরনো দিনের বাম কর্মীরা যেমন নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নজর কাড়তেন, এবারও সেই উদ্যোগ কলকাতা শহরে এবং বিভিন্ন জেলায় চোখে পড়ছে৷ সময়ের দাবি মেনে আধুনিকতা এসেছে সেই প্রচারে৷ বিদেশি কায়দায় ‘ফ্ল্যাশ মব’ দিয়ে আকৃষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে মানুষকে৷ বামফ্রন্টের বড় শরিক দল সিপিআইএম–এর যিনি এই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অন্যতম প্রধান হোতা, সেই সুদীপ সেনগুপ্ত যদিও বললেন, আজ বলে নয়, প্রতিবারই তাঁদের জনসভায় এবং তার প্রচারের সময় নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ওরা করেন৷ তবে এই প্রথম, এই কাজে তারা সোশাল মিডিয়াকেও কাজে লাগাচ্ছেন৷ ফলে বেশি মানুষের চোখে পড়ছে৷ তিনি বললেন, ‘‘প্রত্যেকটি সমাবেশ, প্রত্যেকটি নির্বাচনের আগে, সাধারণত বামপন্থিরাই এটা করে, আমাদের অনেক নতুন নতুন গান হয়, নতুন কবিতা লেখা হয়, অনেক প্রবন্ধ লেখা হয়৷ কিন্তু তার প্রচারটা আমরা পাই না৷ যে কারণে আমরা ঠিক করেছিলাম, এবার আমরা নিজেরাই বিকল্প ব্যবস্থা করে নেবো৷’’
ঠিক করেছিলাম, নিজেরাই বিকল্প ব্যবস্থা করে নেব: সুদীপ সেনগুপ্ত, বাম সাংস্কৃতিক কর্মী
তবে রাস্তায় নেমে কাজ করতে অসুবিধে হচ্ছে, যেহেতু সরকার, বা পুলিশ অনুমতি দিচ্ছে না৷ জানালেন সুদীপ সেনগুপ্ত৷ একমাত্র কলকাতার যাদবপুর, যেখানকার বিধায়ক বামফ্রন্টের, সেখানে বৃহস্পতিবার থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রচার শুরু হয়েছে৷ ফ্ল্যাশ মবের মাধ্যমে নবীন বাম কর্মীরা ব্রিগেডের সভায় আসার যে ডাক দিয়েছেন, সোশাল মিডিয়া বাহিত হয়ে তা ছড়িয়েছে রাজ্যের সর্বত্র এবং রীতিমতো ভাইরাল হয়েছে সেই ভিডিও৷ আরো অন্তত ২০টি গান একইভাবে ছড়ানো হয়েছে ব্রিগেড সমাবেশের প্রচারে৷ ঠিক কতজন লোক আশা করছেন উদ্যোক্তারা? সিপিএম–এর কলকাতা জেলা কমিটির হিসেব, অন্তত তিন লক্ষ লোক তো হবেই৷ ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড জুড়ে লাউডস্পিকারই বসছে ৭০০–র কাছাকাছি৷
এদিকে ৭ মার্চ কলকাতা আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ তিনিও ব্রিগেডে জনসভা করবেন৷ বিজেপি সূত্রে জানা গেছে, সেই সভায় অন্তত সাত লক্ষ লোকের সমাবেশ ঘটানোর চেষ্টা করছে তারা৷ বাম-কংগ্রেসের সভা জনসংখ্যায় না হোক, উদ্যম এবং উদ্দীপনায় তাকে টেক্কা দিতে পারে কিনা, সেদিকেই এখন নজর রয়েছে সবার৷