ছত্রাক সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষের জ্ঞান বেশ সীমিত৷ কারণ বেশিরভাগ ছত্রাকই চোখে দেখা যায় না৷ এক ব্রিটিশ জীববিজ্ঞানী ছত্রাকের বিস্ময়কর জগতের রহস্য উন্মোচন করে অনেক নতুন তথ্য তুলে ধরছেন৷
ছবি: David Herraez Calzada/Zoonar/picture alliance
বিজ্ঞাপন
মার্লিন শেলড্রেক মাশরুমের খোঁজে বের হন৷ সেটা তার কাজের অংশ৷ লন্ডনের এই জীববিজ্ঞানী মাইকোলজি অর্থাৎ মাশরুম সংক্রান্ত বিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ৷ কারণ খালি চোখে যা দেখা যায়, সে তুলনায় অনেক বেশি ছত্রাক চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে৷ এমনই একটি নমুনা তুলে ধরে শেলড্রেক বলেন, ‘‘এটিকে টিন্ডার ফাংগাস বা হর্স-শু ফাংগাস বলা হয়৷ এই ছত্রাকের অসাধারণ ইতিহাস রয়েছে৷ মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে নানাভাবে এটি ব্যবহার করছে৷''
এই মাশরুম ঔষধি হিসেবেও কাজে লাগানো হয়৷ যেমন এই মাশরুম ইমিউন সিস্টেম আরও শক্তিশালী করে মৌমাছির ঝাঁকের মৃত্যু এড়াতে সহায়তা করতে পারে৷ মার্লিন শেলড্রেক মনে করেন, ‘‘আসলে প্রাণী ও উদ্ভিদের মতো ছত্রাক জগতের বৈচিত্র্যও কম নয়৷ কিন্তু মনে রাখতে হবে বেশিরভাগ ছত্রাক কিন্তু মাশরুম উৎপাদন করে না৷ কিছু ছত্রাক প্রলম্বিত হয়ে যে মাশরুম সৃষ্টি করে, সেটা আসলে ফলের মতো৷’’
সত্যি ছত্রাক সব জায়গায় পাওয়া যায় – মাটিতে, আকাশে, এমনকি আমাদের শরীরের মধ্যেও৷ ছত্রাক ছাড়া অনেক জীবের অস্তিত্বই থাকতো না৷ সত্যি বলতে কি ছত্রাক ছাড়া এই গ্রহে প্রাণের অস্তিত্বই সম্ভব হতো না৷ কিন্তু ছত্রাক কীভাবে বাঁচে? শেলড্রেক জানালেন, ‘‘বেশিরভাগ ছত্রাক মাইসিলিয়াম হিসেবে জীবনের বেশি অংশ কাটায়৷ চোঙার মতো কোষের শাখাপ্রশাখার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ছত্রাক খোরাক সংগ্রহ করে৷’’
একমাত্র মাইক্রোস্কোপ দিয়েই বেশিরভাগ মাইসিলিয়াম দেখা যায়৷ এই ছত্রাক ধুলিকণার উপর গজায়৷ আবার বিশাল আকারও ধারণ করতে পারে৷ অ্যামেরিকার ওরিগন রাজ্যে দুই হাজার বছরের বেশি পুরানো মাইসিল নেটওয়ার্ক প্রায় নয় বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে৷ বিশ্বের অন্যতম বিশাল জীব হিসেবে সেটি পরিচিত৷
ছত্রাকের যত রহস্য
03:57
This browser does not support the video element.
তেমন চর্চার বিষয় না হলেও ছত্রাক বিস্ময়কর এক জীব৷ ‘ছত্রাক নিয়ে লেখা নিজের বইয়ে মার্লিন শেলড্রেক এই জীবকে পৃথিবীর গোপন শাসক বা নিয়ন্ত্রক হিসেবে বর্ণনা করেছেন৷ কারণ ব্যাখ্যা করে মার্লিন শেলড্রেক বলেন, ‘‘আমি শুধু মাশরুম এবং ছত্রাক থেকে মাশরুম সৃষ্টি নিয়ে কথা বলতে চাই নি৷ যে ছত্রাক মাশরুম সৃষ্টি করে না, এমন জীব সহজে চোখে পড়ে না, অথচ সেটি জীবনের বিবর্তনের চাবিকাঠি৷ ছত্রাকের নেটওয়ার্ক নিয়ে আমি অনেক ভাবনাচিন্তা করেছি৷ আমরা সরাসরি সচেতন না হলেও ছত্রাক আমাদের চারিপাশের জগতের অনেকটা জুড়েই রয়েছে৷’’
ছত্রাক যে সত্যি সব জায়গায় গজিয়ে উঠতে পারে, মার্লিন শেলড্রেক এক পরীক্ষার মাধ্যমে তা প্রমাণ করছেন৷ তিনি মাইসিলিয়ামের প্রলেপ দেওয়া একটি বইয়ের উপর অয়েস্টার মাশরুম বেড়ে উঠতে দিয়েছেন৷ ইলেকট্রনের মাধ্যমে তিনি সেই মাশরুম গজানোর শব্দও ধারণ করেছেন৷ তার ভাই সেই শব্দের ভিত্তিতে ‘এন্ট্যাংগলড লাইফ' নামের গান সৃষ্টি করেছেন৷
ছত্রাকের জটিল জগত আরও ভালোভাবে বুঝতে ও অন্যদের বোঝাতে মার্লিন শেলড্রেক নানা পদ্ধতি কাজে লাগান৷ তার মতে, সংগীত আসলে শিল্প ও বিজ্ঞানের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটায় এবং তার মাথায় নিত্যনতুন আইডিয়ার জন্ম দেয়৷ শেলড্রেক বলেন, ‘‘ছত্রাকের জীবন কল্পনা করা সত্যি কঠিন৷ যে পরিবেশ তাদের সুযোগগুলিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে, সেটি আমাদের তুলনায় একেবারে ভিন্ন৷ তাই নিজেকে ছত্রাকের জায়গায় কল্পনা করতে আমাকে নানা ধরনের রূপক ও ভাবনার আশ্রয় নিতে হয়েছে৷ অবশ্যই কখনো তা জানতে পারবো না৷ কিন্তু সেই চেষ্টা করার সার্থকতা আছে বৈকি৷ শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হলেও আত্মকেন্দ্রিকতা ছেড়ে নিজেদের অন্য জীবের জায়গায় কল্পনা করা উচিত৷’’
তার বই ইতোমধ্যে জনপ্রিয়তার তালিকার শীর্ষে পৌঁছে গেছে এবং একাধিক পুরস্কার পেয়েছে৷ মার্লিন শেলড্রেক গোটা বিশ্বের মানুষের কাছে ছত্রাকের বিস্ময়কর জগত উন্মোচন করছেন৷
ডিয়ানা ওসিনস্কি/এসবি
সদ্য আবিষ্কৃত ১০টি নতুন প্রজাতি
জগতে বহু কিছুই মানুষের অনাবিষ্কৃত৷ তেমনই অনাবিষ্কৃত ১০টি নতুন প্রজাতির নাম ঘোষণা করল ‘কলেজ অফ এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ফরেস্ট্রি’৷ তালিকায় বৃহৎ বৃক্ষ থেকে ক্ষুদ্র সামুদ্রিক জীব এবং অতি ক্ষুদ্র জীবাণু সকলেই আছে৷
ছবি: picture-alliance/ESF International Institute for Species Exploration/Cédric d’Udekem d’Acoz
ইন্দোনেশিয়ার এপ
এশিয়া মহাদেশের ‘এপ’ পরিবারের ওরাংওটাং-এর কথা অনেকেই জানেন৷ ২০০১ সালে এদেরই ভিন্ন প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল সুমাত্রা এবং বর্নিওতে৷ এখন তৃতীয় প্রজাতিটিরও সন্ধান পাওয়া গিয়েছে৷ তাপানুলি ওরাংওটাং নামের এই প্রজাতি সুমাত্রার বাটাং টরু অঞ্চলে দেখা যায়৷ এই প্রাণী খুবই বিপন্ন প্রজাতির, মাত্র ৮০০টি ওরাংওটাংই রয়েছে৷
প্রায় ৪০ মিটার উঁচু আর ৫৬ হাজার কিলোগ্রাম ওজনের এমন দশাসই বৃক্ষের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে ব্রাজিলের আটলান্টিক অরণ্যে৷ ডিনিজিয়া-জুয়েইরানা-ফাকাও নামের এই প্রকাণ্ড বৃক্ষ এখন কমে আসছে, বলা যেতে পারে, মারাত্মকভাবে বিপন্ন৷ আটলান্টিক অরণ্যে মাত্র ২৫টি গাছেরই সন্ধান পাওয়া গিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/ESF International Institute for Species Exploration/Gwilym P. Lewis
পিঁপড়া নাকি গুবরেপোকা?
নিম্ফিসটার ক্রোনায়ুরি আদতে এক প্রকার ক্ষুদ্র গুবরেপোকার বৈজ্ঞানিক নাম৷ কোস্টা রিকার এই গুবরেপোকা পিঁপড়ে সমাজেই বাস করে৷ ১ দশমিক ৫ মিলিমিটার লম্বা এই গুবরেপোকার শরীর, রঙ এবং আকার সবটাই শ্রমিক পিঁপড়ের মতো৷ যাযাবর পিঁপড়েরা যখন নতুন স্থানে যাত্রা শুরু করে, এরাও সঙ্গে থাকে৷ তবে মজাটা হচ্ছে, সারাটা পথই এরা মুখ দিয়ে পিঁপড়েদের পেট আঁকড়ে থাকে৷ ফলে পথশ্রম হয় না এদের৷
ছবি: picture-alliance/ESF International Institute for Species Exploration/D. Kronauer
সত্যিই ‘গভীর জলের মাছ’!
পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের মারিয়ানা খাতের নাম কমবেশি সকলেরই জানা৷ পৃথিবীর সবচেয়ে গভীর অংশ বলে পরিচিত এই অঞ্চলে পাওয়া গেল ব্যাঙাচিসদৃশ এক মাছ৷ আকারে খুবই ক্ষুদ্র, প্রায় ৪ ইঞ্চির মতো, এই ‘সিউডোলিপারিস সিরেই’ নামক মাছ পৃথিবীর সবচেয়ে গভীর অংশের বাসিন্দা বলে স্বীকৃতি পেয়েছে৷ ৬,৮০০ থেকে ৭,৯০০ মিটার গভীরতায় যে জীব থাকে, তাকে অনায়াসে ‘গভীর জলের মাছ’ বলা চলে!
ছবি: ESF International Institute for Species Exploration/Mackenzie Gerringer
খাদ্যের সম্পর্ক
গাছেরা খাদ্যের ব্যাপারে সূর্যের উপর নির্ভরশীল৷ সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার দ্বারা গাছ নিজের খাদ্য নিজেই উৎপাদন করে৷ কিন্তু অনেক গাছই সেটা করে না৷ জাপানে এমনই এক গাছের সন্ধান পাওয়া গেল, যারা তাদের খাদ্য গ্রহণ করে অন্যদের থেকে৷ এস সুগিমতোই নামক এই গাছের সঙ্গে একটি ছত্রাকের মিথোজীবীতার সম্পর্ক৷ ছত্রাকের শরীর থেকেই এই গাছ পুষ্টি লাভ করে৷ জাপানের ইশিগাকি দ্বীপে অল্প সময়ের জন্য দেখা যায় এই গাছের গোলাপি ফুল৷
ছবি: picture-alliance/ESF International Institute for Species Exploration/Takaomi Sugimoto
উজ্জ্বল সামুদ্রিক প্রাণী
২ ইঞ্চি আকারের অতি ক্ষুদ্র অমেরুদণ্ডী প্রাণীটি অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ সংলগ্ন কুমেরু মহাসাগরের জমাট বাঁধা হিমশীতল জলের বাসিন্দা৷ অ্যাম্ফিপড প্রজাতির এই প্রাণীটির নাম এপিমেরিকা কোয়াসিমোডো৷ অমেরুদণ্ডী হলেও এর পিছন দিকের এর কাঁটা এবং উজ্জ্বল রঙের জন্য একে ড্রাগনের সঙ্গে তুলনা করা যায়৷
ছবি: picture-alliance/ESF International Institute for Species Exploration/Cédric d’Udekem d’Acoz
চুলের মতো দেখতে ব্যাকটেরিয়া
ক্যানারি দ্বীপে অগ্নু্ৎপাতের সময় এখানকার বাস্তুতন্ত্রের অনেকটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল৷ কিন্তু বি়জ্ঞানীরা সন্ধান পেয়েছিলেন ‘থায়োলাভা ভেনেরিস’ নামক নতুন প্রজাতির প্রোটিওব্যাকটেরিয়া৷ নতুন আবিষ্কৃত এই প্রোটিওব্যাকটেরিয়া চুলের মতো কাঠামো উৎপাদন করে৷
ছবি: picture-alliance/ESF International Institute for Species Exploration/Miquel Canals
অস্ট্রেলিয়ার জীবাশ্মে
২৩ মিলিয়ন বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের মুক্ত অরণ্যে যে সিংহ ঘুরে বেড়াতো, সম্প্রতি তারই জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়েছে৷ জীবাশ্মে পাওয়া এই সিংহের সঙ্গে বাস্তবের সিংহের মিল পাওয়া যাবে না৷ এই সিংহ আকারে সাইবেরিয়ার কুকুরের মতো৷ বেশিরভাগ সময়ই প্রাণীটি গাছে দিনযাপন করত৷ প্রাণীটির দাঁত দেখে অনুমান করা যায়, প্রাণীটি সম্পূর্ণভাবে মাংসের উপর নির্ভশীল ছিল না৷ বরং সর্বভুক ছিল৷
ছবি: picture-alliance/ESF International Institute for Species Exploration/Peter Schouten
নতুন এককোষীর সন্ধান
ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়েগো শহরের অ্যাকোরিয়ামের একটি প্রবালে পাওয়া গেল এককোষী প্রোটিস্ট৷ এর উৎস এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি৷
ছবি: ESF International Institute for Species Exploration/ Denis V. Tiknonenkov
গুহার বাসিন্দা
নতুন আবিষ্কৃত এই গুবরেপোকা জীবনের জন্য অন্ধকারকেই বেছে নিয়েছে৷ চীনের গুয়াংসি প্রদেশের একটি অন্ধকার গুহায় এমনই একটি অন্ধকারপ্রিয় গুবরেপোকার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে৷ এটি আকৃতিতে বাড়ে মাত্র ৯ মিলিমিটার অবধিই৷ দেখতেও বেশ বিচিত্র৷
ছবি: picture-alliance/Sunbin Huang/Mingyi Tian/ESF International Institute for Species Exploration/dpa