বুধবার দুপুরে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের চত্বরে একজন পুলিশকর্মীকে ছুরি মারার পর, আততায়ীকে গুলি করে মারে সশস্ত্র পুলিশ৷ অন্যদিকে ওয়েস্টমিন্সটার ব্রিজে একটি গাড়ি পথচারীদের ওপরে গিয়ে পড়লো আহত হন অন্ততপক্ষে ডজনখানেক মানুষ৷
বিজ্ঞাপন
পুলিশ প্রথম ঘটনাটিকে একটি সন্ত্রাসী আক্রমণ বলে গণ্য করছে৷ দ্বিতীয় ঘটনাটি প্রথম ঘটনার সঙ্গে যুক্ত কিনা, তা বোঝা যাচ্ছে না৷ অর্থাৎ ছুরি হাতে আক্রমণ ও গাড়ি চালিয়ে মানুষজনকে আহত করার ঘটনা দু’টির মধ্যে কোনো যোগ আছে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়৷
ডোনাল্ড টুস্কের মন্ত্রীসভার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাদোস্লাভ সিকর্স্কি অকুস্থলে একটি ভিডিও তুলে পরে তা পোস্ট করেছেন৷
এক রয়টার্স ফটোগ্রাফার ওয়েস্টমিন্সটার ব্রিজের ওপর অন্তত এক ডজন মানুষকে পড়ে থাকতে দেখেছেন, বলে জানিয়েছেন৷ তাঁর ছবিতে কয়েকজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখা গেছে, তাদের মধ্যে একজনকে একটি বাসের নীচে৷
স্কাই নিউজ জানাচ্ছে, আততায়ী দৃশ্যত পার্লামেন্টের সিকিউরিটি গেট দিয়ে জোর করে ঢুকে একজন পুলিশ অফিসারকে আক্রমণ করে৷
অন্যদিকে বিবিসি এবং অন্যান্য মিডিয়া জানায় যে, পুলিশ গুলি চালিয়ে আততায়ীকে গুরুতরভাবে আহত করে৷
এই ঘটনার জেরে ব্রিটেনে আতঙ্ক ছড়িয়েছে৷ বাইরে গুলির আওয়াজ শোনা যাওয়ার পর পার্লামেন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ পার্লামেন্টের ভিতরে যে সমস্ত রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক এবং কর্মীরা আছেন, তাঁদের বাইরে না আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ টুইটারে রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিকরা জানিয়েছেন যে, তাঁরা গুলির শব্দ শুনেছেন৷
Attacks outside of UK parliament
01:08
প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে অক্ষত অবস্থায় আছেন, বলে তাঁর কার্যালয়ের তরফ থেকে জানানো হয়৷ তবে তিনি ঠিক কোথায় আছেন, তা জানা যায়নি৷
শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, দু’টি ঘটনায় মোট চারজন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে৷ এদের মধ্যে আততায়ী ছাড়াও আছেন একজন পুলিশ অফিসার ও একজন নারী৷ উনি গাড়ির ধাক্কায় নিহত হন৷ এছাড়া অন্ততপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে বলে খবর৷
পার্লামেন্ট স্কোয়ারে একটি অ্যাম্বুলেন্স হেলিকপ্টার নেমেছে ও সশস্ত্র পুলিশ ঢাল সহ পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকেছে৷
হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রিপোর্টারদের বলেছেন যে, তাঁকে লন্ডনের ঘটনাবলী সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে৷
এ হামলা দু’টির পিছনে কারা ছিল – তা তদন্ত করে দেখছে একটি বিশেষ দল৷
এসি/ডিজি (ডিপিএ, এপি, রয়টার্স, এএফপি)
সন্ত্রাস দমনে ইউরোপের প্রস্তুতি
১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে সাম্প্রতিক কালেও একের পর এক সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে ইউরোপ৷ ইউরোপের একাধিক দেশে এমন পরিস্থিতি সামলাতে প্রস্তুত বিশেষ সন্ত্রাস-দমন বাহিনী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
হামলার শিকার ইউরোপ
প্যারিস, ব্রাসেলস, নিস – ইউরোপের একের পর এক শহরের মানুষ ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে৷ শোক সামলে নেওয়ার পর বার বার প্রশ্ন উঠেছে, এমন হামলা কি প্রতিরোধ করা যেত? অথবা আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া কি সম্ভব হতো?
ছবি: Reuters/E. Gaillard
জার্মানির ‘জিএসজি ৯’
বন শহরের কাছে জার্মানির বিশেষ কমান্ডো বাহিনী ‘জিএসজি ৯’-এর ঘাঁটি৷ সন্ত্রাস দমনের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই ইউনিট জার্মানিতে সন্ত্রাসী হামলা ঘটলে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়, যেমনটা সম্প্রতি মিউনিখে দেখা গেছে৷ ১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকের সময় ইসরায়েলি পণবন্দি নাটকের পর এই বাহিনী গঠন করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
অস্ট্রিয়ার ‘একো কোবরা’
অস্ট্রিয়ার কেন্দ্রীয় ফেডারেল পুলিশ বাহিনীর এই ইউনিট সন্ত্রাসী হামলা মোকাবিলার জন্য সর্বদা প্রস্তুত৷ জার্মানির মতোই অস্ট্রিয়াও মিউনিখ অলিম্পিকে হামলার পরও নড়েচড়ে বসে৷ ১৯৭৮ সালে প্রথমে ‘জিইকে’ নামের বাহিনী তৈরি হয়৷ ২০০২ সালে তার নাম বদলে রাখা হয় ‘একো কোবরা’৷
ছবি: Getty Images
ফ্রান্সের ‘জিআইজিএন’
ফ্রান্সের জাতীয় পুলিশ বাহিনীর বিশেষ ‘ইন্টারভেনশন ফোর্স’ সন্ত্রাসী হামলা, জিম্মি পরিস্থিতি, জাতীয় হুমকি ইত্যাদির সময় হস্তক্ষেপ করে৷ এই বাহিনী গঠনের পেছনেও কাজ করেছে ১৯৭২ সালে মিউনিখ হামলার ঘটনা৷ ১৯৭৪ সালে ‘জিআইজিএন’ বাহিনী গড়ে তোলা হয়৷
ফ্রান্সের আদলে ইটালিতেও ১৯৭৭ সাল থেকে এক ‘ইন্টারভেনশন ফোর্স’ সক্রিয় রয়েছে৷ সন্ত্রাসী হামলা ঘটলে আকাশপথে দ্রুত মোতায়েন করা যায় এই বিশেষ বাহিনী৷ ভিআইপি-দের সুরক্ষার কাজেও লাগানো হয় এই বাহিনী৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Solaro
নেদারল্যান্ডস-এর ‘ডিএসআই’
২০০৬ সালে জাতীয় পুলিশ বাহিনীর ছত্রছায়ায় ‘ডিএসআই’ নামের এই বিশেষ ‘ইন্টারভেনশন ফোর্স’ গঠন করা হয়৷ সন্ত্রাসবাদ ও চরম হিংসার পরিস্থিতিতে এই বাহিনী দ্রুত হস্তক্ষেপ করতে পারে৷ এর আগে বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের প্রক্রিয়ার দুর্বলতা কাটিয়ে তুলতে এই ইউনিট গঠন করা হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Van Dijl
স্পেনের ‘ইউইআই’
স্পেনে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার জন্য ‘ইউইআই’ নামের ‘ইন্টারভেনশন ফোর্স’ কাজ করছে ১৯৭৮ থেকে৷ সন্ত্রাসবাদ থেকে শুরু করে জিম্মি নাটক – যে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি সামলাতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এই ইউনিটকে৷ এই বাহিনী সম্পর্কে প্রকাশ্যে বেশি তথ্য প্রকাশ করা হয় না৷