ম্যানচেস্টারের আত্মঘাতী হামলাকারীর ভাই ও বাবাকে গ্রেপ্তার করেছে লিবিয়ার পুলিশ৷ তদন্তের গোপন তথ্য ফাঁস করে রোষের মুখে মার্কিন গোয়েন্দারা৷ ব্রিটেনে জিহাদি নেটওয়ার্কের খোঁজে তদন্ত চলছে৷
বিজ্ঞাপন
ম্যানচেস্টারে সন্ত্রাসী হামলা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এর পেছনে এক জিহাদি নেটওয়ার্ক আছে, যা আরও হামলার ছক কষছে – এমন সন্দেহের ভিত্তিতে ব্রিটেনের নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ তাদের ধরতে জোরালো অভিযান চালাচ্ছে৷ পুলিশ এই নিয়ে ৭ জনকে আটক করেছে৷ তাদের মধ্যে ৬ জন পুরুষ ও এক জন নারী৷ ম্যানচেস্টার শহরের বাইরেও তদন্ত চলছে৷ শহরের দক্ষিণে তল্লাশি চালানোর সময় তারা একটি নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে৷
এদিকে লিবিয়ায় হামলাকারী সালমান আবেদির বাবা রামাদান ও ছোট ভাই হাশেমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ লিবীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হাশেম তার ভাইয়ের হামলার ষড়যন্ত্রের কথা জানতো৷ গত প্রায় দেড় মাস ধরে হাশেমের উপর পুলিশ নজর রাখছিল৷ ত্রিপোলি শহরে সে হামলার ষড়যন্ত্র করছিল বলে সেখানকার কর্তৃপক্ষ সন্দেহ করছিল৷ দুই ভাই তথাকথিত ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর সদস্য বলে লিবিয়া দাবি করছে৷ হাশেম সে কথা স্বীকারও করেছে বলে শোনা যাচ্ছে৷ সে ব্রিটেনে গিয়ে তার ভাইকে হামলার প্রস্তুতির কাজে সহায়তা করেছে৷
তাদের এক আত্মীয় জানিয়েছেন, হামলার ৪ দিন আগে সালমান আবেদি লিবিয়া থেকে ম্যানচেস্টার পৌঁছেছিল৷ ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরার কলোঁব জানিয়েছেন, সালমান সম্ভবত লিবিয়া থেকে সিরিয়ায় গিয়েছিল৷ তাঁর মতে, আইএস-এর সঙ্গে তার যোগসূত্রনিয়ে এখন আর তেমন সন্দেহ নেই৷
ম্যানচেস্টারে হামলার পর ব্রিটিশ পুলিশ তদন্তের স্বার্থে হামলাকারীর পরিচয়সহ অনেক তথ্য প্রথমদিকে গোপন রাখতে চেয়েছিল৷ কিন্তু মার্কিন সূত্রে সে সব সংবাদ মাধ্যমের কাছে ফাঁস হয়ে যায়৷ নিউ ইয়র্ক টাইমস এমনকি হামলায় ব্যবহৃত ডিটোনেটরসহ অনেক বস্তুর ছবি প্রকাশ করেছে৷ মার্কিন প্রশাসন থেকে সেসব তথ্য ফাঁস হয়ে গেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে৷
এর ফলে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ চরম বিরক্তি ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে৷ বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনের সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করবেন বলে শোনা যাচ্ছে৷ তার আগে তিনি লন্ডনে কোবরা কমিটির এক জরুরি বৈঠক ডেকেছেন৷ এমনকি ভবিষ্যতে দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে তথ্যের আদানপ্রদান প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে বলে কিছু মহল মনে করছে৷
ছবিতে ম্যানচেস্টার বিস্ফোরণ
ব্রিটেনের ম্যানচেস্টার শহরে ২২ শে মে রাতে অ্যারিয়ানা গ্র্যান্ডি-র কনসার্টে ২১ হাজার ছেলেমেয়ে জড়ো হয়েছিল৷ কনসার্ট শেষ হওয়ার ঠিক আগে বিস্ফোরণ হলে কমপক্ষে ২২ জন নিহত ও ৫০ জনেরও বেশি আহত হয়৷ কী হয়েছিল সেখানে? দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Getty Images/C. Furlong
কনসার্ট অ্যারেনায় বিস্ফোরণ
রাত তখন সাড়ে দশটা৷ ম্যানচেস্টার অ্যারেনায় জনপ্রিয় মার্কিন পপ গায়িকা অ্যারিয়ানা গ্র্যান্ডি-র লাইভ কনসার্টের ঠিক শেষ পর্যায়ে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে বিস্ফোরণে৷ বিস্ফোরণের ধাক্কায় অনেকেই মাটিতে পড়ে যায়৷ অ্যারেনায় প্রবেশমুখের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে কাঁচের টুকরো৷
ছবি: picture-alliance/abaca
আতঙ্কে হুড়োহুড়ি
বিস্ফোরণের পর কনসার্ট এলাকা ছাড়তে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়৷ গ্র্যান্ডি-র ভক্তদের মধ্যে বেশিরভাগই অল্পবয়সি ছেলেমেয়ে৷ তাই তাদের নিয়ে যেতে ভেন্যুর বাইরে অপেক্ষা করছিলেন অভিভাবকরা৷ পুলিশ জানিয়েছে, বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত ২২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷ আহত অন্তত ৫০ জন৷ যাদের আঘাত গুরুতর নয়, তাদের ঘটনাস্থলেই চিকিৎসা দেয়া হয়, বাকিদের পাঠানো হয় হাসপাতালে৷
অ্যারিয়ানা গ্র্যান্ডির পুরোনো ছবি এটি৷ এই মার্কিন গায়িকার বয়স মাত্র ২৩ বছর৷ ওয়ার্ল্ড ট্যুরে বেরিয়েছেন তিনি, যার নাম ‘ডেঞ্জারাস ওমেন ট্যুর’৷ তাঁর পরবর্তী কনসার্ট ছিল লন্ডনে, আগামী ২৫ মে৷ ম্যানচেস্টার বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা পর গ্র্যান্ডি টুইট করেন, ‘‘আমি ভেঙে পড়েছি৷ আমি আমার হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে দুঃখপ্রকাশ করছি৷ আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি৷’’
ছবি: GettyImages/Samir Hussein
সবাই আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে
বিস্ফোরণের পরপরই আহত বা ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে সক্রিয় হয়ে ওঠেন৷ ভেন্যুর আশেপাশের হোটেলগুলো এমন অনেকেরই থাকার ব্যবস্থা করেছিল, যারা তাদের বাবা-মা কে খুঁজে পায়নি৷ এছাড়া #RoomforManchester হ্যাশট্যাগের সাহায্যে আটকে পড়া দর্শকদের আশ্রয় দেয়ার আহ্বান জানানো হয়৷ ট্যাক্সি কোম্পানিগুলি টুইটারে বিনামূল্যে দর্শকদের গন্তব্যে পৌঁছে দেবার ঘোষণা দেয়৷
এই বিস্ফোরণকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ বলে ধারণা করছে পুলিশ৷ এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি৷ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে মঙ্গলবার সকালে এক বিবৃতিতে জানান, ‘‘পুলিশের কাছে কেন এটা সন্ত্রাসী হামলা মনে হচ্ছে, সে সম্পর্কে সব তথ্য জোগাড় করার আহ্বান জানিয়েছি৷’’