কনজারভেটিভ সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকা সত্ত্বেও নিশীথ অধিবেশনে ৩৬ ভোটের ব্যবধানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে পশ্চাদপসারণ সংক্রান্ত বিলটি পাস হলো৷
বিজ্ঞাপন
ইউরোপীয় ইউনিয়ন পশ্চাদপসারণ বিলটির উদ্দেশ্য হলো, ২০১৯ সালের মার্চ মাসে ব্রিটেন যেদিন ইইউ পরিত্যাগ করবে, সেদিন ইইউ-এর ১২,০০০ আইন ও বিধিনিয়মকে যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ আইনে পরিণত করা৷
সোমবার আট ঘণ্টা বিতর্কের পর হাউস অফ কমনস ৩২৬ বনাম ২৯০ ভোটে বিলটির সেকেন্ড রিডিং (দ্বিতীয় পাঠ) অনুমোদন করে, যার ফলে বিলটি সংসদীয় প্রক্রিয়ার পরবর্তী পর্যায়ে যেতে পারবে৷ বিরোধীপক্ষের কিছু ভোট ও কিছু সদস্য ভোট দেওয়া থেকে বিরত না থাকলে সরকারের পরাজয় ঘটার আশঙ্কা ছিল৷
ইতিপূর্বে ব্রেক্সিটসেক্রেটারি ডেভিড ডেভিস ঘোষণা করেন যে, ‘‘এই বিলের বিরুদ্ধে একটি ভোট হবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিশৃঙ্খলভাবে বিদায় নেওয়ার সপক্ষে একটি ভোট৷''
‘‘ব্রিটিশ জনগণ বিশৃঙ্খলার পক্ষে ভোট দেননি এবং পার্লামেন্টেরও তা করা উচিত নয়,'' বলেন ডেভিস৷
প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ভোটের ফলাফলকে স্বাগত জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘যদিও আরো কাজ বাকি আছে, কিন্তু এই সিদ্ধান্তের অর্থ, আমরা শক্ত ভিত্তি নিয়ে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যেতে পারব এবং আমরা পূর্বাপর যুক্তরাজ্যের সব অংশ থেকে আগত সাংসদদের এই গুরুত্বপূর্ণ আইনটির কল্যাণে একত্রে কাজ করার উৎসাহ দেবো৷''
অতঃপর বিলটি কমিটি পর্যায়ে যাবে, যেখানে বিলের প্রতিটি উপাদান খুঁটিয়ে দেখা হবে৷ এরপর হাউস অফ লর্ডস বিলটি বিবেচনা করবে৷ শেষমেষ বিলটি হাউস অফ কমনস বা সংসদের নিম্নকক্ষে প্রত্যাবর্তন করবে, যাকে সেকেন্ড রিডিং বা দ্বিতীয় পাঠ বলা হয়৷
মন্ত্রীদের ক্ষমতায়ন
বিলটিতে চলতি ‘অষ্টম হেনরি ক্ষমতার' বিস্তারিত ব্যবহারের কথা বলে হয়েছে, যার মাধ্যমে মন্ত্রীরা সংসদের পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা ছাড়াই আইন সংশোধন করতে পারবেন, অর্থাৎ মন্ত্রীরা ইইউ আইনের ‘কমতি' বা ‘ঘাটতি' পূরণ করার ক্ষমতা পাবেন, বিলের বিরোধীরা যাকে সরকারের ‘ক্ষমতা দখলের' সঙ্গে তুলনা করেছেন৷
লেবার সাংসদ ওয়েন ডেভিড হাউস অফ কমনসকে বলেন যে, বিলটি ‘অবিবেচিত, জটিল ও অগণতান্ত্রিক... সরকারের ক্ষমতা দখল৷''
এমনকি কিছু সমালোচক জার্মানিতে ১৯৩৩ সালে ‘ক্ষমতায়ন আইন' পাসের কথা স্মরণ করেছেন, যে আইনের বলে চ্যান্সেলর আডল্ফ হিটলারের মন্ত্রীসভা রাইখস্টাগ বা সংসদকে সংশ্লিষ্ট না করে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা পায়৷
অন্যান্যরা এ ব্যাপারে চিন্তিত যে, কনজারভেটিভ সরকার ইইউ-এর পরিবেশ ও কর্মসংস্থান সংক্রান্ত নিয়মাবলী বা মানবাধিকার সুরক্ষার মান শিথিল করার জন্য এই ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারেন৷
মুখ্য বিরোধী দল লেবার পার্টি ও অপেক্ষাকৃত ছোট বিরোধী দল লিবারাল ডেমোক্র্যাটরা বলেছে যে, তারা ইইউ পশ্চাদপসারণ বিলের বিরুদ্ধে ভোট দেবে, কিন্তু ভোটে জেতার জন্য তাদের শাসক কনজারভেটিভ দলের ইইউ সমর্থক সাংসদদের সাহায্যের প্রয়োজন পড়বে৷
শেষ নির্বাচনের পর কনজারভেটিভ পার্টি একটি সংখ্যালঘু সরকার গঠন করে ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির সঙ্গে একটি ‘আস্থা ও সরবরাহ' চুক্তি স্বাক্ষর করে,যা অনুযায়ী ডিইউপি-র ১০ জন সাংসদ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে কনজারভেটিভদের সঙ্গে ভোট দেবেন৷
এসি/এসিবি (রয়টার্স, এপি)
মীমাংসা ছাড়াই ব্রেক্সিট হতে চলেছে?
২০১৯ সালের মার্চ মাসে ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করছে৷ অথচ তার আগে দুই পক্ষের মধ্যে বোঝাপড়ার আশা কমেই চলেছে৷ শেষ পর্যন্ত কোনো রফা ছাড়াই এই বিচ্ছেদ সম্পূর্ণ হবে – এমন আশঙ্কা আরও দানা বাঁধছে৷
ছবি: Getty Images/L Neal
আগে বিচ্ছেদ, তারপর ভবিষ্যৎ সম্পর্ক
ইউরোপীয় ইউনিয়ন শুরু থেকেই স্পষ্ট করে দিয়েছে, যে সবার আগে ‘ব্রেক্সিট’ বা বিচ্ছেদ সংক্রান্ত বিষয়গুলির ক্ষেত্রে দুই পক্ষকে বোঝাপড়ায় আসতে হবে৷ যথেষ্ট অগ্রগতি হলে তবেই ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হবে৷ কিন্তু ব্রিটেন দু’টি বিষয় নিয়ে একসঙ্গে দর কষাকষি করতে আগ্রহী, যা ইইউ-র কাছে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়৷
ছবি: Reuters/File Photo/Y. Herman
একই আলোচনা, ভিন্ন মূল্যায়ন
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে তৃতীয় দফার আলোচনার শেষে ইইউ-র শীর্ষ প্রতিনিধি মিশেল বার্নিয়ে বলেন, বিচ্ছেদ সংক্রান্ত আলোচনায় যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটেনি৷ ফলে আপাতত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা শুরু হচ্ছে না৷ অন্যদিকে ব্রেক্সিট মন্ত্রী ডেভিড ডেভিস কিছু ক্ষেত্রে স্পষ্ট অগ্রগতির উল্লেখ করেন৷
তৃতীয় দফার আলোচনার আগে ভবিষ্যৎ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে ব্রিটেন যে অবস্থান প্রকাশ করেছে, তাকে ‘অসম্ভব’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন ইইউ-র মিশেল বার্নিয়ে৷ বিচ্ছেদের পরেও একক বাজারে প্রভাব, ইউরোপীয় আদালতের এক্তিয়ার নিয়ে ‘অবাস্তব’ প্রস্তাব নিয়ে বিরক্ত ইইউ প্রতিনিধিরা৷
ছবি: Reuters/F. Lenoir
আয়ারল্যান্ডে ইইউ-র বহির্সীমানা
ব্রেক্সিটের পর আইরিশ প্রজাতন্ত্র ও ব্রিটেনের উত্তর আয়ারল্যান্ডের সীমান্ত ইইউ-র বহির্সীমানা হয়ে উঠবে৷ তার ফলে দুই অংশের মধ্যে নিবিড় অর্থনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য যা বড় এক হুমকি৷ দুই পক্ষই একটা সমাধানসূত্র চাইলেও এখনো এই প্রশ্নে যথেষ্ট অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Faith
নাগরিকদের অধিকার
ব্রিটেনে বসবাসরত ইইউ নাগরিকরা ব্রেক্সিটের কারণে চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছেন৷ ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তাঁদের সুবিচারের আশ্বাস দিলেও তাঁদের অধিকারের প্রশ্নে চূড়ান্ত নিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছে না৷ ইইউ দেশগুলিতে বসবাসরত ব্রিটিশ নাগরিকদের অধিকার নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে৷ জটিল এই প্রশ্নের স্থায়ী সমাধানসূত্র চাইছে ইইউ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Pedersen
‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’?
ব্রাসেলসে আলোচনায় অগ্রগতির অভাবে ব্রিটেন সরাসরি ফ্রান্স ও জার্মানির মতো ইইউ সদস্য দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে ব্রিটেনের ‘দ্য ডেলি টেলিগ্রাফ সংবাদপত্রের ইঙ্গিত পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ৷ তাঁর স্পষ্ট অবস্থান: ইইউ-র প্রধান মধ্যস্থতাকারী মিশেল বার্নিয়ে ব্রেক্সিট সংক্রান্ত আলোচনার একমাত্র সহযোগী৷