দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর পর ব্রিটেনে রক্ষণশীল দলের ভরাডুবি ও লেবার দলের উত্থানের সম্ভাবনা উজ্জ্বল৷ পূর্বাভাস সত্য প্রমাণিত হলে ঋষি সুনাকের বদলে কিয়ের স্টারমার ব্রিটেনের আগামী প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন৷
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে রাজনৈতিক পালাবদল এক প্রকার নিশ্চিত – জনমত সমীক্ষার ভিত্তিতে এমনটাই ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ সেই হিসেব অনুযায়ী প্রায় ১৪ বছর ধরে একটানা ক্ষমতায় থাকার পর রক্ষণশীল টোরি দলের ভরাডুবি আসন্ন৷ সে ক্ষেত্রে ঋষি সুনাককে ক্ষমতাচ্যুত করে বিরোধী লেবার পার্টির নেতা কিয়ের স্টারমার ব্রিটেনের আগামী প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, টোরি পার্টি এতকাল ক্ষমতায় থাকলেও দলের মধ্যে চরম কোন্দল ও অস্থিরতা জনপ্রিয়তা কমার অন্যতম কারণ৷ গত আট বছরে পাঁচ বার প্রধানমন্ত্রী বদল হয়েছে৷ ফলে ভোটাররা অবশেষে দেশের নেতৃত্বে পরিবর্তন চাইছেন৷ সক্রিয়ভাবে লেবার পার্টিকে অনেকেই সমর্থন করছেন না৷ বরং টোরিদের বিরুদ্ধে ক্ষোভের ফায়দা তুলতে পারছে বিরোধী লেবার পার্টি৷ ক্ষমতায় এলেও সেই দলের ঘাড়ে বিপুল দায়িত্ব এসে পড়বে, এমনটা স্বীকার করে নিচ্ছেন স্টার্মার৷ নিউ স্টেটসম্যান সংবাদপত্রকে তিনি বলেন, ‘‘আজ ব্রিটেন নতুন অধ্যায় শুরু করতে পারে৷ আরো পাঁচ বছর রক্ষণশীলরা ক্ষমতায় থাকলে কিন্তু সেটা হবে না৷ একমাত্র লেবারকে ভোট দিলেই পরিবর্তন আসবে৷’’
যুক্তরাজ্যে হঠাৎ ভোট, প্রচারণা শুরু
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক তার নিজ দলের সাংসদসহ অনেককে অবাক করে ভোটের তারিখ ঘোষণা করেছেন৷ ৪ জুলাইয়ের ভোট সামনে রেখে এখন পুরো দেশ চষে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন দলের নেতারা৷
ছবি: Kin Cheung/AP Photo/picture alliance
ভোটের তারিখ ঘোষণা
চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ব্রিটেনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা৷ তবে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক প্রায় ছয় মাসে আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন৷ ৪ জুলাই ভোটগ্রহণ হবে বলে বুধবার ঘোষণা দেন তিনি৷ বিষয়টি তার দলের অনেক সাংসদকেই অবাক করেছে৷
ছবি: Hollie Adams/REUTERS
নির্বাচনি প্রচারণা শুরু
বুধবার নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার থেকেই প্রচারণা শুরু করেছে রাজনৈতিক দলগুলো৷ শুক্রবার সংসদ মুলতবি করা হবে৷
ছবি: Henry Nicholls/AP Photo/picture alliance
এত আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য কারণ
বিশ্লেষকেরা নানা কারণ খুঁজে বেড়াচ্ছেন৷ একদল বলছেন, সুনাক যেদিন ভোটের ঘোষণা দেন সেদিন ব্রিটেনে মূল্যস্ফীতির হারের সবশেষ তথ্য বের হয়েছে৷ এতে দেখা যাচ্ছে, এই হার এখন ২.৩ শতাংশ৷ ২০২২ সালের অক্টোবরে সুনাক যখন প্রধানমন্ত্রী হন তখন সেটি ছিল প্রায় ১১ শতাংশ৷ তবে বিরোধীরা বলছেন, সাগর পাড়ি দিয়ে ব্রিটেনে পৌঁছা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের রুয়ান্ডায় পাঠানোর বিষয়টি ব্যর্থ হওয়ার আগেই নির্বাচন করতে চান সুনাক৷
ছবি: Kin Cheung/AP Photo/picture alliance
সুনাক কী বলছেন?
এত আগে ভোটের তারিখে ঘোষণার মাধ্যমে তিনি সাহস দেখিয়েছেন বলে জানান ঋষি সুনাক৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত৷ অনিশ্চিত সময়ে নিরাপত্তার জন্য সাহসী সিদ্ধান্তের দরকার হয়, যেটা আমার আছে৷’’ তবে অন্যরা এই সিদ্ধান্তকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ও ‘বোকামি’ বলছেন৷
ছবি: Henry Nicholls/AP Photo/picture alliance
জরিপের ফল
ভোটের তারিখে ঘোষণার পর করা প্রথম জরিপ বলছে, বিরোধী লেবার পার্টির প্রতি ৪৪ শতাংশ ভোটারের সমর্থন আছে৷ সুনাকের কনজারভেটিভ দলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ২৭ শতাংশ ভোটার৷ এরপর আছে ডানপন্থি দল রিফর্ম ইউকে পার্টি (১০%), লিবারেল ডেমোক্রেটস (৯%) ও গ্রিন পার্টি (৫%)৷ অর্থাৎ প্রায় ১৪ বছর পর লেবার দলের সরকারে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Jacob King/PA Wire/dpa/picture alliance
‘বিশৃঙ্খলা থামাবো’
লেবার পার্টি বলছে, টোরি শাসনামলে যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা তৈরি হয়েছে তাতে পরিবর্তন আনবে তারা৷ নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করে লেবার পার্টির প্রধান কিয়ার স্টারমার বলেন, ‘‘আমরা বিশৃঙ্খলা বন্ধ করবো৷’’ কনজারভেটিভরা যদি আবারও ক্ষমতায় যায় তাহলে কোনোকিছুতে পরিবর্তন আসবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
ছবি: Gareth Fuller/AP Photo/picture alliance
কনজারভেটিভদের হুমকি হতে পারে রিফর্ম ইউকে
জরিপে তিন নম্বরে থাকা দল ডানপন্থি পপুলিস্ট ঘরানার রিফর্ম ইউকে পার্টি ইংল্যান্ডের সাবেক শিল্পাঞ্চল এলাকায় কনজারভেটিভ পার্টির জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে৷ নাইজেল ফ্যারাজের সাবেক ব্রেক্সিট পার্টি হচ্ছে রিফর্ম ইউকে পার্টি৷ এর বর্তমান প্রধান রিচার্ড টাইস৷ তিনিও নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেছেন৷
ছবি: Kin Cheung/AP Photo/picture alliance
7 ছবি1 | 7
কোণঠাসা টোরি পার্টির নেতা ঋষি সুনাক মেয়াদ শেষ হওয়ার কয়েক মাস আগেই সাধারণ নির্বাচন ঘোষণা করে দলের মধ্যেও সমালোচনার মুখে পড়েছেন৷ দলের জনপ্রিয়তার অভাব কার্যত মেনে নিয়েই নির্বাচনের প্রচারে তিনি সরাসরি পুনর্নিবাচনের ডাক না দিয়ে লেবার দল ক্ষমতায় এলে দেশের কী দশা হবে, সে বিষয়ে ভোটারদের সতর্ক করে দিচ্ছেন৷ ভোটগ্রহণের দিনেও তিনি বলেন, লেবার আগামী সরকার গঠন করলে করের হার বাড়বে, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া থমকে যাবে এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার এই সময়ে ব্রিটেন আরো দুর্বল হয়ে পড়বে৷
ব্রেক্সিট, করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের মতো সংকটের কারণে ব্রিটেনে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার উপর গভীর প্রভাব ফেলছে৷ তবে প্রতিবাদ হিসেবে প্রতিবেশি ফ্রান্সের মতো সে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার উগ্র দক্ষিণপন্থি শিবিরের বদলে মধ্য বামপন্থি শক্তির প্রতি আস্থা দেখাচ্ছেন৷ জনমত সমীক্ষার পূর্বাভাস সত্য হলে লেবার পার্টি বিশাল ব্যবধানে জয়ের মুখ দেখবে৷ তবে ভোটগ্রহণের হার ও শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া ভোটারদের আচরণের উপর চূড়ান্ত ফল নির্ভর করবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ তার উপর ‘দ্য সান' নামের প্রভাবশালী ট্যাবলয়েড সংবাদপত্র স্টারমারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে৷
টোরি দলের সম্ভাব্য ভরাডুবির পেছনে দক্ষিণপন্থি রিফর্ম ইউকে দলের নেতৃত্বে নাইজেল ফারাজের আচমকা আবির্ভাবকেও দায়ী করা হচ্ছে৷ মধ্যপন্থি লিব ডেম পার্টিও নির্বাচনে ভালো ফল করতে পারে৷ স্কটল্যান্ডে ভালো ফল করার পর লেবারের মধ্যেও আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে গেছে৷ বৃহস্পতিবার নীয় সময় রাত নয়টায় ভোটগ্রহণ শেষ হলে দশটা থেকে এক্সিট পোল প্রকাশ করা হবে৷
এসবি/কেএম (রয়টার্স, এএফপি)
কোন দেশের নির্বাচনে কত ব্যয়?
যুক্তরাষ্ট্রের ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ১৪.৪ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছিল৷ এটিই এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল নির্বাচন৷
ছবি: Steffi Loos/Getty Images
ভারত
২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচন ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল নির্বাচন ছিল৷ নতুন দিল্লির সেন্টার ফর মিডিয়া স্টাডিজ বলছে, ঐ নির্বাচনে প্রায় আট বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে৷ রাজনীতিবিদেরা বিজ্ঞাপন, ব়্যালি, উপহার খাতে অনেক অর্থ খরচ করেছেন বলে জানিয়েছে সংস্থাটি৷
ছবি: Reuters/A. Dave
যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সংস্থা ‘সেন্টার ফর রেসপনসিভ পলিটিক্স’ বা সিআরপির (বর্তমান ওপেনসিক্রেটস নামে পরিচিত) হিসেব বলছে, ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ১৪.৪ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে৷ ২০১৬ সালে ব্যয় হয়েছিল প্রায় আট বিলিয়ন ডলার৷
ছবি: Jerry Mennenga/ZUMAPRESS.com/picture-alliance
ব্রাজিল
ল্যাটিন অ্যামেরিকার সবচেয়ে বড় দেশ ব্রাজিলে ২০২২ সালের নির্বাচনে প্রার্থীরা ২.৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছিলেন৷
ছবি: Leandro Chemalle/TheNews2/IMAGO
যুক্তরাজ্য
২০১৯ সালের নির্বাচনের আগে প্রচারণার সময়কাল ছিল এক মাসের কিছু বেশি৷ নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের ব্যয়ের বিষয়ে কঠোর সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল৷ সে কারণে দেশটির নির্বাচন কমিশনের হিসেবে ২০১৯ সালের নির্বাচনে প্রার্থী, রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো মাত্র ৬৮ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছিলেন৷ যুক্তরাষ্ট্রের সিআরপি বলছে, ২০২২ সালে মিসৌরি রাজ্যে সেনেট নির্বাচনে খরচ হয়েছিল ৬৫ মিলিয়ন ডলার৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Akmen
ফ্রান্স
দেশটিতেও খরচের বিষয়ে কঠোর নীতিমালা রয়েছে৷ ২০২২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ১২ জন প্রার্থী ৮৮ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছিলেন বলে দেশটির সরকার জানিয়েছে৷ এর মধ্যে প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ সবচেয়ে বেশি ১৬.৭ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছিলেন৷
ছবি: Eric Gaillard/REUTERS
জার্মানি
২০১৭ সালের সংসদ নির্বাচনে দলগুলো ১০৯.৬ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছিল বলে কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান কার্যালয় জানিয়েছে৷ ২০২১ সালের সবশেষ অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে সেটি বেড়ে ১১৬ মিলিয়ন ডলার হতে পারে বলে জানিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷