বৃহস্পতিবারের সংসদীয় নির্বাচনে কনজারভেটিভ কিংবা লেবার, কোনো দলই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না, বলে ধরে নেওয়া যায়৷ অপরদিকে স্কটিশ জাতীয়তাবাদীদের বিপুল সাফল্যের সম্ভাবনা৷
বিজ্ঞাপন
ব্রিটেনের রাজনীতি নাকি এবার ইউরোপের অন্যান্য দেশের বহুদলীয় গণতন্ত্র – এবং তার সঙ্গে যুক্ত অনিশ্চয়তা ও বিশৃঙ্খলার পথে যেতে চলেছে, বলে এক মহলের আশঙ্কা৷ ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার নিক ক্লেগ, যিনি লিবারাল ডেমোক্র্যাট দলের প্রধান, তিনি বলেছেন, কোনো স্থিতিহীন সংখ্যালঘু সরকার ক্ষমতায় এলে এ বছরেই আবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়াটাও আশ্চর্য নয়৷
বুধবার নির্বাচনি প্রচার অভিযানের শেষ দিন৷ কাজেই এদিন কনজারভেটিভ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও তাঁর লেবার প্রতিদ্বন্দ্বী এড মিলিব্যান্ড পড়তি-ঝড়তি ভোট সংগ্রহের আশায় সারা দেশে চক্কর দিচ্ছেন৷ তবে বিবিসি-র সর্বাধুনিক জরিপ বলছে, কনজারভেটিভরা পাবে ৩৪ শতাংশ ভোট এবং লেবার ৩৩ শতাংশ৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিরোধী ইউকিপ – অর্থাৎ ইউকে ইনডিপেন্ডেন্স পার্টি পেতে চলেছে ১৪ শতাংশ ভোট৷ চতুর্থ স্থানে বর্তমান সরকারি জোটের ছোট তরফ ‘লিবডেম'-রা পাবে মাত্র আট শতাংশ ভোট – এই হলো জরিপের ফলাফল৷
সেই সঙ্গে যোগ করা দরকার যে, স্কটল্যান্ডের জাতীয়তাবাদীরা এবার প্রায় সেই ল্যাম্পপোস্টকে প্রার্থী করে জেতার পর্যায়ে পড়বে, বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে! অর্থাৎ স্কটল্যান্ডে বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রবণতা পালে হাওয়া পাবে৷ ওদিকে ক্যামেরন আবার ঘোষণা করে বসে আছেন যে, তিনি জিতলে ব্রিটেনের ইইউ-তে থাকা কিংবা ছাড়া নিয়ে গণভোটের ব্যবস্থা করা হবে – সেই বিভীষণ ‘‘ব্রেক্সিট'', যার তুলনায় ‘‘গ্রেক্সিট'' হবে প্রায় ধানি পটকা!
স্কটল্যান্ডে গণভোট: সম্ভাবনা এবং অনিশ্চয়তা
গ্রেট ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতার পক্ষে, নাকি বিপক্ষে? ১৮ই সেপ্টেম্বর এ প্রশ্ন সামনে রেখেই স্কটল্যান্ডে গণভোট৷ তার আগে চলুন দু’পক্ষের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়নি এমন কিছু বিষয় এবং সার্বিক পরিস্থিতির দিকে একটু নজর দেয়া যাক৷
ছবি: Getty Images
আশা এবং উৎকণ্ঠা
স্বাধীনত দেশ হিসেবে অভ্যুত্থান শুধু যে স্কটল্যান্ডের জন্যই একটা বিরাট পরিবর্তন এনে দেবে – তা কিন্তু নয়৷ এমন একটা ঘটনা ব্রিটেন, ইউরোপ, এমনকি ন্যাটো-কেও দাঁড় করাবে নীতিগত পরিবর্তন এবং নতুন চ্যালেঞ্জের সামনে৷
ছবি: Andy Buchanan/AFP/Getty Images
স্কটল্যান্ডের হাতে
স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার সমর্থকরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, স্বাধীনতায় লাভই হবে, এর ফলে ক্ষতির কোনো আশঙ্কা নেই৷ উত্তর সাগরের তেল ক্ষেত্রের আয় দিয়ে দেশটি সহজেই নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে বলে বিশ্বাস তাঁদের৷ ব্রিটিশ সরকারে কাছে অবশ্য রাজস্ব হারানোর ব্যাপারটি বড় রকমের ক্ষতি৷
ছবি: Getty Images/J. J Mitchell
মিলে থাকাই ভালো?
স্বাধীনতার বিপক্ষের সবাই একতার শক্তিতে বিশ্বাসী৷ তাঁরা বলছেন, স্কটল্যান্ড আর ব্রিটেনের মধ্যে অমিলের চেয়ে মিলই বেশি৷ তাছাড়া, স্বাধীনতার পরিনামে অর্থনৈতিক যে ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দেবে তা নিয়েও তাঁরা চিন্তিত৷ স্কটল্যান্ডের অংশে তেল আর গ্যাসের যে মজুদ রয়েছে এটাও গণভোটের বড় নিয়ামক৷
ছবি: Getty Images/A. Buchanan
মুদ্রা নিয়ে প্রশ্ন
স্কটল্যান্ড স্বাধীন হলে মুদ্রা নিয়েও জটিলতা দেখা দেবে৷ দুটো উপায় খোলা – হয় ইউরোজোনে থেকে বর্তমান মুদ্রা পাউন্ডকে রেখে দাও, অথবা নতুন মুদ্রা চালু করো৷ স্বাধীন স্কটল্যান্ড কোন পথ ধরবে?
ছবি: Getty Images/J. J Mitchell
আণবিক অস্ত্রমুক্ত এলাকা?
গ্লাসগোর উত্তর-পশ্চিমের ফ্যাসলেন নৌ-ঘাঁটিতে যে নিউক্লিয়ার সাবমেরিন রয়েছে সেগুলোর কী হবে? স্কটল্যান্ড কিন্তু আগে থেকেই আণবিক অস্ত্র রাখার বিপক্ষে৷
ছবি: AFP/Getty Images/A. Buchanan
রানি থাকবেন?
এমনও হতে পারে, স্কটল্যান্ড স্বাধীন হলো এবং স্বাধীন দেশেও সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের অংশ হিসেবে মাথার ওপরে থেকে গেলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ৷ সে সম্ভাবনা অবশ্য কম৷ বেশির ভাগ স্কটই যে প্রজাতন্ত্র চান!
ছবি: imago/i Images
নাগরিকত্ব এবং ঋণ
গণভোটের মাত্র কয়েকদিন বাকি, অথচ স্কটল্যান্ডের অনেকেই স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়াবেন, নাকি বিপক্ষে – এ নিয়ে বেশ দোদুল্যমান৷ স্বাধীনতা নতুন দেশের জন্য কিছু সংকটও ডেকে আনতে পারে! যুক্তরাজ্যের যে পরিমাণ জাতীয় ঋণ তার কতটা দায় উত্তরাধিকার সূত্রে স্কটল্যান্ড নেবে? দ্বৈত নাগরিকত্ব কি অনুমোদন পাবে? এ সব প্রশ্নের উত্তর আজও অজানা৷
ছবি: imago/United Archives
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে, নয়ত বাইরে
কোনো দেশ স্বাধীন হলে আপনা-আপনিই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য হয়ে যাবে – এমন কোনো বিধান নেই৷ আগের কোনো দৃষ্টান্ত নেই বলে এ নিয়েও বিতর্ক আছে৷ ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবেদন করেই স্কটল্যান্ডকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য হতে হবে৷
ছবি: Getty Images
8 ছবি1 | 8
জরিপ নিয়ে যারা মাথা ঘামান, তারা বলছেন, কনজারভেটিভরা লেবারের চেয়ে বেশি আসন পাবে বলেই ধরে নেওয়া যায়, যদিও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য তা কুলোবে না৷ লিবডেম-রাও প্রত্যাশার চেয়ে ভালো ফলাফল করবে, এমন একটা সিনারিও-ও শোনা যাচ্ছে৷ তবে ২৭শে মে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ যখন পার্লামেন্টে ভাষণ দেবেন, তার মধ্যেই সরকার গঠন সম্পর্কে একটা নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ার কথা৷
অপ্রীতিকর ঘটনাও যে ঘটছে না, এমন নয়৷ দক্ষিণ ইংল্যান্ডের নর্থ ইস্ট হ্যাম্পশায়ারের কনজারভেটিভ প্রার্থী রনিল জয়বর্ধেনা সম্পর্কে তাঁর ইউকিপ প্রতিদ্বন্দ্বী রবার্ট ব্লে মন্তব্য করেছেন, জয়বর্ধেনা ব্রিটেনের প্রথম এশীয় প্রধানমন্ত্রী হলে ব্লে নাকি শ্রীলঙ্কান বংশোদ্ভূত জয়বর্ধেনাকে গুলি করে মারবেন – কেননা ব্লে-র মতে জয়বর্ধনা পর্যাপ্ত পরিমাণে ‘ব্রিটিশ' নন৷ ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে যাবার পর ইউকিপ ব্লে-কে সাসপেন্ড করেছে৷
তিন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মহিলা এই নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন: রোশনারা আলি, রূপা হক এবং টিউলিপ সিদ্দিক, যিনি শেখ মুজিবের নাতনি৷