জেন্ডার স্টিরিওটাইপিং-এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে চলেছে ব্রিটেনের অ্যাডভার্টাইজিং স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি৷ বিশেষ করে ছোটদের জন্য বিজ্ঞাপনে ছেলে ও মেয়েদের বৈষম্যমূলকভাবে দেখানো নিয়েই আপত্তি৷
বিজ্ঞাপন
শুধু ‘গুড মর্নিং অ্যামেরিকা' অনুষ্ঠানেই নয়, বিশ্বের সব মিডিয়া প্রতিষ্ঠানেই দৃশ্যত এই ছোট্ট খবরটা দায়িত্বশীলদের টনক নেড়েছে – যার একটা কারণ সম্ভবত মিডিয়ার জগতের সঙ্গে বিজ্ঞাপনের জগতের কুটুম্বিতার সম্পর্ক৷
মনে রাখা দরকার, বিষয়টা লিঙ্গবৈষম্য নিয়ে নয় – ছোটদের বিজ্ঞাপনে তারা আজ কী, ও ভবিষ্যতে কী হবে বা হবার স্বপ্ন দেখবে, তাই নিয়ে৷ ছোটরা খোঁজে আদর্শ বা রোল মডেল: তারা বাড়িতে যা দেখে, সেই বাবা-মা, দাদা-দাদি আদর্শ হতে পারেন; আবার বিজ্ঞাপনের জগতের ছোট ছোট ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে কাল্পনিক বাবা-মা, দাদা-দাদি, তারাও আদর্শ হতে পারেন৷
বিজ্ঞাপনে যখন দেখানো হয়, ওয়াশিং পাউডার যাইহোক না কেন, একটি পরিবারে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মহিলারা – শুধুই মহিলারা – ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ভরে আসছেন; পক্ষান্তরে পুরুষরা গাড়ি থেকে শুরু করে যান্ত্রিক করাত অবধি সব কিছু চালাচ্ছেন...
টিভি কমার্শিয়ালে ছেলেরা আজও সুপারম্যান সাজে; মেয়েরা তাদের ঘর সাজিয়ে, বার্বি পুতুলের চুল আঁচড়ে ‘সুপার মম' হবার প্রস্তুতি নেয়...
বেবিফুডের বিজ্ঞাপনে পর্যন্ত ন্যাপি পরা খুকি ব্যালেরিনার পোজ ধরে; ন্যাপি পরা খোকা আগামীর সায়েন্টিস্ট হতে যায়...
একেই বলে জেন্ডার স্টিরিওটাইপিং, যা ছেলে, মেয়ে, নারী, পুরুষ সবার পক্ষেরই স্বাধীন ও মুক্ত বিকাশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়৷
বিজ্ঞাপন যাতে এ ধরনের মান্ধাতার আমলের রোল মডেল ছোটদের মধ্যে ছড়াতে না পারে, সেজন্যই ব্রিটেনের কমিটি অফ অ্যাডভার্টাইজিং প্র্যাকটিস, অর্থাৎ যে কমিটি ব্রিটেনে বিজ্ঞাপনের মান নির্ধারণ করেন, তারা এবার বিজ্ঞাপন শিল্পের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একত্রে ছোটদের জন্য বিজ্ঞাপনের নতুন স্ট্যান্ডার্ড বা মান নিরূপণ করবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন৷ পরে অ্যাডভার্টাইজিং স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি – একটি নিরপেক্ষ কর্তৃপক্ষ – সেই নিয়মাবলী বলবৎ করবে৷
আসলে ছোটদের যে সহজ কথাটা বলা ও তাদের বোঝা দরকার, সেটা হলো: ‘‘তুমি ছেলে হও আর মেয়ে হও; তুমি যা হতে চাও, তুমি তাই হতে পারো৷''
এসি/ডিজি
ছেলেদের খেলনা, মেয়েদের খেলনা
বাচ্চাদের খেলনা কেনার জন্য যে কোনো বড় দোকান বা সুপারস্টোরের ঠিক কোন অংশে ছেলেদের আর কোথায় মেয়েদের খেলনা পাওয়া যাবে – সেটা রঙ দেখলেই বোঝা যায়৷ কিন্তু এতে করে কি লিঙ্গবিষম্য করা হচ্ছে না?
ছবি: Screenshot Lego Shop
গোলাপি মানেই...
হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন৷ ছবিতে একটি সুপারস্টোরের যে অংশ দেখতে পাচ্ছেন, সেখানে গেলে বাচ্চা মেয়েদের খেলনা পাওয়া যাবে৷ চারদিকে গোলাপি রঙয়ের ছড়াছড়িই সেটা বলে দিচ্ছে৷ ছেলেদের খেলনার অংশটি হলো নীল৷ খেলনার রঙে এই ভিন্নতার কারণে অনেকদিন ধরেই লিঙ্গবৈষম্যের অভিযোগ উঠছিল৷ তারই সূত্র ধরে মার্কিন সুপারস্টোর চেন ‘টার্গেট’ সম্প্রতি এই নিয়ম পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে৷
ছবি: cc-by-Josh Puetz
রঙ আর থাকবে না
গোলাপি আর নীলের এই খেলায় আর অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ‘টার্গেট’৷ টুইটারে ‘গার্লস বিল্ডিং সেট্স’ শীর্ষক প্রচারণা আর এ বিষয়ে একটি পিটিশনের পর, টার্গেট বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, তারা এখন থেকে স্টোরগুলোয় রঙ ব্যবহার করে ছেলে আর মেয়ের মধ্যে পার্থক্য করবে না৷ আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কথা জানিয়েছে টার্গেট৷
ছবি: AP
তবে বার্বি থাকছে...
টার্গেটের এই ঘোষণায় অবশ্য বার্বির উল্লেখ নেই৷ এর মানে, খেলনা হিসেবে ১৯৫৯ সাল থেকে মেয়ে চরিত্রের সমার্থক হয়ে ওঠা বার্বির বিক্রি বন্ধ করবে না তারা৷ বার্বির মাধ্যমে কোমলমতি মেয়ে শিশুদের মধ্যে একটি অবাস্তব নারী দেহের চিত্র তুলে ধরার সমালোচনা আছে বহুদিন ধরেই৷ অবশ্য বার্বির কিছু ইতিবাচক দিকও আছে৷ যেমন চিকিৎসক, মহাকাশবিজ্ঞানী, শিক্ষক – এ সব পেশার বার্বির মধ্য দিয়ে মেয়েদের আত্মনির্ভরতার কথা বলা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
লিঙ্গ নিরপেক্ষ বাজারজাতকরণ
এর আগে ২০১৩ সালে যুক্তরাজ্যের ‘টয়েস আর আস’ লিঙ্গ নির্ভর বাজারজাতকরণ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল৷ তারও আগে ২০১২ সালে ব্রিটিশ এই সুপারস্টোর তাদের সুইডেনে প্রকাশিত বড়দিনের ক্যাটালগে লিঙ্গ নিরপেক্ষ ছবি ব্যবহার করেছিল, যেমন উপরের ছবিটি৷
ছবি: top-toy.com
শুধু খেলনা নয়, ক্যান্ডিতেও
ছবিটি ভালো করে খেয়াল করুন৷ হাইহিল জুতা, নেল পলিশের বোতল দেখতে পাচ্ছেন? অথচ এটি কিন্তু ‘হারিবো’-র ফ্যান্টাসি সিরিজের একটি ক্যান্ডির প্যাকেট, যেখানে ডাইনোসর, গাড়ি ইত্যাদির ছবি থাকা উচিত ছিল৷ কিন্তু শুধু মেয়েদের জন্য (ছবিতে দেখুন পিংক এডিশন) বলেই এই ব্যবস্থা!
ছবি: DW/C. Bleiker
স্লিম, সুন্দরী
‘অ্যামেরিকাস নেক্সট টপ মডেল’-এর মতো প্রতিযোগিতাগুলো মেয়েদের মনে করিয়ে দেয়, মডেল মানেই স্লিম ও সুন্দর হতে হবে৷ জার্মান খেলনা প্রস্তুতকারক ‘প্লেমোবিল’ মেয়ে বাচ্চাদের জন্য এই ধরণের প্রতিযোগিতা খেলার মতো খেলনা নিয়ে এসেছে৷ আজকাল ছেলে মডেল বাছাইয়ের জন্য প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকলেও ছেলে শিশুদের জন্য এমন কোনো খেলনা এখনও বাজারে আনেনি প্রেমোবিল৷
ছবি: Screenshot playmobil.de
সাত বছরের মেয়ে বাচ্চার অভিযোগের পর
৭ বছরের শিশু শার্লটে বেনজামিন একবার ‘লেগো’-র কাছে এই বলে অভিযোগ জানিয়েছিল যে, তাদের খেলনার নারী চরিত্ররা শুধু বাসায় বসে থাকে, বিচে যায় আর শপিং করে৷ এরপর লেগো ২০১৪ সালে ‘রিসার্চ ইন্সটিটিউট’ নামে একটি খেলনা বের করে যেখানে মেয়েদের বিজ্ঞানী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়৷ বাজারের আসার কিছুদিনের মধ্যেই সেটি বিক্রি হয়ে যায়৷ এর মাধ্যমে ক্রেতাদের মনোভাবও বোঝা গেছে৷ অন্য কোম্পানিগুলো সেটি অনুসরণ করতে পারে৷